মতামত

রুয়েটের উপাচার্য নিয়োগে এত গড়িমসি কেন

রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত উপাচার্যের পদ শূন্য থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে একাডেমিক ও প্রশাসনিক অচলাবস্থা বিরাজ করছে। জানা যায়, গত বছরের জুলাইয়ে উপাচার্য রফিকুল ইসলামের মেয়াদ শেষ হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে রুয়েটের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ও অ্যাপ্লায়েড সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ অনুষদের ডিন মো. সাজ্জাদ হোসেনকে উপাচার্যের দৈনন্দিন কার্যসম্পাদনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি শুধু চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ায় শিক্ষকদের নিয়োগ, পদোন্নতি ও আপগ্রেড বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেননি।

ফলে প্রশাসনিক অচলাবস্থা তৈরি হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পদোন্নতি ও আপগ্রেড বঞ্চিত শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে প্রায় ১০ মাস পর চলতি বছরের মে মাসে চলতি দায়িত্ব পালনকারী উপাচার্য সাজ্জাদ হোসেন পদত্যাগ করেন। সাধারণত প্রতিবছর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিক্ষকদের পদোন্নতি ও আপগ্রেড করে রুয়েট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত উপাচার্য না থাকায় গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে শেষ বিজ্ঞপ্তির পর আর কোনো বিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি।

উপাচার্য নিয়োগের দীর্ঘসূত্রতায় যে শিক্ষার্থীর পরীক্ষা এক দিন পেছাচ্ছে, সে তাঁর কর্মজীবন থেকে এক দিন হারিয়ে ফেলছেন, চাকরির বাজারে এক দিন পিছিয়ে যাচ্ছেন, এর দায় কি উপাচার্য বা নিয়োগ কর্তৃপক্ষ নিবে? উপাচার্য নিয়োগে কেন এই গড়িমসি? এই প্রশ্ন শুধু রুয়েটের শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকদের নয়, এ দেশের সব বিদ্যোৎসাহী সচেতন নাগরিকের। একটি রুটিন দায়িত্বে এই দীর্ঘসূত্রতা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

সব শর্ত পূরণ করেও অনেক শিক্ষক তাঁদের ন্যায্য পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অনেকে ছুটি নিতে না পেরে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য বিদেশ গমন করতে পারছেন না।

শুধু শিক্ষকদের পদোন্নতি বা ছুটিই নয়, নিয়মিত উপাচার্য না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক—উভয় ক্ষেত্রেই চরম অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। নিয়মিত উপাচার্যের মেয়াদ শেষের পর কোনো সিন্ডিকেট সভা কিংবা একাডেমিক কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। শিক্ষক মহল উপাচার্য নিয়োগের জন্য দাবি জানিয়ে আসছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য থাকাকালে ক্লাস, পরীক্ষা বা ফলাফল প্রকাশ স্বাভাবিকভাবেই চলছিল। যদিও প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও গবেষণা সরঞ্জাম (ইকুইপমেন্ট) কেনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য বনভোজন, খেলাধুলাসহ সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড বিঘ্নিত হচ্ছিল। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য পদত্যাগের পর বিশ্ববিদ্যালয়টি পুরোপুরি অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে এবং পরীক্ষা, ফলাফল প্রকাশসহ অন্যান্য বিষয়ে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি দেন।

বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় প্রাচীনতম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এটি। বিশ্ববিদ্যালয়কে দীর্ঘদিন পূর্ণাঙ্গ উপাচার্যবিহীন রাখা মোটেও সমীচীন নয়। উপাচার্য ছাড়া শিক্ষার কার্যক্রম অব্যাহত রাখা দুরূহ হয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। এমনিতেই করোনার প্রকোপে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষার কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। সময়মতো ক্লাস ও পরীক্ষা না দিতে পেরে অনেক শিক্ষার্থীর মাঝে মানসিক চাপ তৈরি হয়েছে। ইদানীং দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। সেই পরিস্থিতিতে উপাচার্য নিয়োগসংক্রান্ত জটিলতায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন করে হতাশা তৈরি হচ্ছে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত।

উপাচার্য নিয়োগের দীর্ঘসূত্রতায় যে শিক্ষার্থীর পরীক্ষা এক দিন পেছাচ্ছে, সে তাঁর কর্মজীবন থেকে এক দিন হারিয়ে ফেলছেন, চাকরির বাজারে এক দিন পিছিয়ে যাচ্ছেন, এর দায় কি উপাচার্য বা নিয়োগ কর্তৃপক্ষ নিবে? উপাচার্য নিয়োগে কেন এই গড়িমসি? এই প্রশ্ন শুধু রুয়েটের শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকদের নয়, এ দেশের সব বিদ্যোৎসাহী সচেতন নাগরিকের। একটি রুটিন দায়িত্বে এই দীর্ঘসূত্রতা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

  • ফরিদ খান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক
    ই-মেইল: faridecoru@yahoo.co.uk