দ্য নিউইয়র্ক টাইমস তাঁকে একজন প্রতিশ্রুতিশীল নেতা বলে বর্ণনা করে বলেছে যে ‘নিজেকে তুলে ধরার এমন সম্মোহনী ক্ষমতা তাঁর রয়েছে, যেটা ডোনাল্ড ট্রাম্পের কখনো ছিল না।’ টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক নিবন্ধে তাঁর সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘তাঁদের জন্য তিনি একজন রকস্টার, যাঁরা ভাবেন যে ক্যানসেল কালচার বা খারিজি সংস্কৃতি প্রতিটি ক্ষেত্রে আমেরিকানদের জীবন হুমকির মুখে ফেলছে।’
সুবক্তা, বিতার্কিক ও নিজের ওপর দারুণ আত্মবিশ্বাস—এই তিন গুণের কারণে ট্রাম্পকে পছন্দ করা বিবেক রামাস্বামী যে রিপাবলিকানদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর বাছাই দৌড়ে নতুন প্রিয় মানুষ হিসেবে আবির্ভূত হবেন, সেটা মোটেই বিস্ময়কর নয়।
রিপাবলিকানদের প্রার্থিতা দৌড়ে রামাস্বামী তৃতীয় (১০ পয়েন্ট) অবস্থানে রয়েছেন। জনমত জরিপ ওয়েবসাইট ফাইভথার্টিএইট জানাচ্ছে, রামাস্বামী খুব শিগগির ট্রাম্পের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবা ফ্লোরিডার রন ডিস্যান্টোসকে (১৪ পয়েন্ট) ছাড়িয়ে যাবেন।
রিপাবলিকান শিবিরে প্রথমে থাকা ট্রাম্পের (৪০ পয়েন্ট) চেয়ে অনেক পেছনে রয়েছেন রামাস্বামী। কিন্তু একেবারে অপরিচিত একজন প্রার্থীর জন্য এই সমর্থন অবশ্যই হঠাৎ জোয়ারের মতো একটা বিষয়।
৩৮ বছর বয়সী শতকোটিপতি রামাস্বামী ভারতীয় বংশোদ্ভূত রাজনীতিবিদ। নির্বাচনী দৌড়ে তিনি কি পারবেন ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর যে বিস্তর ফারাক, সেটা ঘোচাতে?
রামাস্বামী এমন এক রাজনীতিবিদ, যাঁকে ‘পরিষ্কার বহিরাগত’ বলে চিহ্নিত করা যায়। সরকারে কাজ করার অভিজ্ঞতা তাঁর নেই। হার্ভার্ড ও ইয়েল ল স্কুল থেকে স্নাতক শেষ করেছেন তিনি। ওষুধশিল্পে বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ করার আগে ওয়াল স্ট্রিট-এ অর্থলগ্নি করেছিলেন তিনি। ফোর্বস ম্যাগাজিনের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের ধনীদের তালিকায় ৩৭তম অবস্থানে রামাস্বামী। তিনি জীবন যাপন করেন এমন এক ভুবনে, যেটিকে তিনি তাঁর ভাষায় বলেছেন, আমেরিকার স্বপ্ন।
যা-ই হোক, রামাস্বামী যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ আট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বের হওয়া স্নাতকেরা যেমনটা হন, সে রকম নন। মার্কিন র্যাপশিল্পী এমিনেমের মতো তিনি র্যাপ গাইতে পারেন। আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন সম্পর্কে তাঁর মত হলো, ‘আমেরিকার আধুনিক ইতিহাসে, সম্ভবত সমগ্র ইতিহাসে সবচেয়ে অবমূল্যায়িত প্রেসিডেন্ট।’
এশিয়ার ক্ষেত্রে রামাস্বামী যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনকে পুরোপুরিভাবে অর্থনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে দিতে চান। তিনি চান, ওয়াশিংটন যেন আরও বেশি আগ্রাসীভাবে বেইজিং ও মস্কোর মধ্যে ব্যবধান তৈরিতে কাজ করে। তিনি বলেন, ‘বেইজিংয়ের দিক থেকেই সবচেয়ে বড় সামরিক হুমকি আমরা দেখতে পাচ্ছি।’
আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ট্রাম্পকে একুশ শতকের সবচেয়ে সেরা প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রশংসায় ভাসালেও তিনি ট্রাম্পকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে চাইছেন। তিনি মনে করেন, ট্রাম্পের অ্যাজেন্ডা তিনি আরও ভালো করে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।
রামাস্বামী নিজেকে একজন খাঁটি জাতিবাদবিরোধী প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন। নিজেকে একজন ‘অশ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী’ বলে পরিচয় দিলেও খুব কঠোরভাবে আধুনিক প্রগতিবাদী আন্দোলনের বিরুদ্ধে কথা বলেন।
রামাস্বামী ঘোষণা দিয়েছেন যে সব গাত্র বর্ণের ভোটারের কাছেই তিনি ভোট চাইবেন। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টসকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘বর্ণের ওপর ভিত্তি করে চালু থাকা বৈষম্য বন্ধের সঠিক রাস্তা হলো...বর্ণভিত্তিক গড়ে ওঠা বৈষম্যের অবসান।’
রামাস্বামী বলেছেন, প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে জিতে গেলে তিনি পুরো দেশকে ১৭৭৬ সালে প্রণীত আদর্শের ওপর ভিত্তি করে নতুন একটি বিপ্লব করবেন। তাঁর অনেক নীতি, বিশেষ করে বিপ্লবের নীতি সরাসরি প্রাতিষ্ঠানিকতাবিরোধী।
দৃষ্টান্ত হিসেবে রামাস্বামী কেন্দ্রীয় সরকারের ৭৫ শতাংশ জনবল কমানোর কথা বলেছেন। এফবিআই ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংস্থাগুলো বিশাল অপচয়ের সংস্থা বলার পাশাপাশি ব্যবস্থাপক শ্রেণি পুরো সমাজের জন্য প্লেগ হয়ে উঠেছে বলে দাবি করেন তিনি। রামাস্বামীর অ্যাজেন্ডার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি দিক হলো, অভিবাসীদের মতো করে ২৫ বছর হওয়ার আগে নাগরিকত্ব জ্ঞান বিষয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করানো।
রামাস্বামী মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি একটি ধাপ্পাবাজি ব্যাপার। কয়লা, উচ্চ চাপে শিলা থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস আহরণ ও পারমাণবিক শক্তিকে আমেরিকার জ্বালানি নিরাপত্তার সমাধান বলে ঘোষণা দেন তিনি।
অভিবাসনের ক্ষেত্রে গ্রিন কার্ড লটারিব্যবস্থার অবসান চান। প্রতিবছর সারা বিশ্ব থেকে ৫০ হাজার মানুষকে আমেরিকা গ্রিন কার্ড দেয়। এর বদলে তিনি মেধাভিত্তিক আবাসন চালু করতে চান। যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে সামরিক বাহিনীর নিয়োগ চান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় পররাষ্ট্রনীতির সাফল্য নিয়ে সন্দিহান রামাস্বামী। ইউক্রেনকে যে বিপুল পরিমাণ সহায়তা দিচ্ছে আমেরিকা, তাতে লাগাম টেনে ধরতে চান তিনি। রামাস্বামী বলেন, রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সবচেয়ে বাজে স্বার্থকে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে অগ্রাধিকারের স্বার্থ করা মোটেই ঠিক নয়।
কোরীয় যুদ্ধ সমাপ্তির ক্ষেত্রে যে চুক্তি হয়েছিল, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের ক্ষেত্রেও সেই ধরনের একটি চুক্তি চান তিনি। যুদ্ধ বন্ধে তাঁর সূত্র হলো, রাশিয়া ইউক্রেনের যতটা ভূমি দখলে নিয়েছে, তার পুরোটা মস্কোর কাছে ছেড়ে দিতে হবে। এর বিনিময়ে রাশিয়া চীনের সঙ্গে করা চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসবে।
এশিয়ার ক্ষেত্রে রামাস্বামী যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনকে পুরোপুরিভাবে অর্থনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে দিতে চান। তিনি চান, ওয়াশিংটন যেন আরও বেশি আগ্রাসীভাবে বেইজিং ও মস্কোর মধ্যে ব্যবধান তৈরিতে কাজ করে। তিনি বলেন, ‘বেইজিংয়ের দিক থেকেই সবচেয়ে বড় সামরিক হুমকি আমরা দেখতে পাচ্ছি।’
রাজনৈতিক পরিসংখ্যানবিদ নেট সিলভার মনে করেন, রামাস্বামী ভোটের দৌড়ে নিশ্চিতভাবেই আরও অনেক দূর যাবেন। বিশেষ করে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়বে। অবশ্য এই জনপ্রিয়তার কারণে তাকে লক্ষ্যবস্তুও বানানো হচ্ছে।
এরই মধ্যে উত্তাপটি রামাস্বামী টের পাচ্ছেন। ওয়াশিংটন পোস্ট-এর কলাম লেখক জর্জ এফ উইল উপহাস করে রামাস্বামীকে বলেছেন, তুলনামূলকভাবে নিতান্তই শিশু।
থমাস গিফট সহযোগী অধ্যাপক এবং সেন্টার অন ইউএস পলিটিকসের পরিচালক