সম্প্রতি মালদ্বীপ সফরে গিয়েছিলেন মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। মালদ্বীপ থেকে ফিরে তিনি দেশটি নিয়ে প্রথম আলো’র মতামত পাতায় একটা লেখা লিখেন। লেখাটা সেটারই ধারাবাহিকতা। লেখায় তিনি মালদ্বীপের উন্নয়নের পথরেখা, পর্যটনের বিকাশ, অর্থনীতি ও রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করেন।
মালদ্বীপ বিষয়ে আমার আগের লেখা সম্পর্কে সহৃদয় পাঠক দুটি বিষয় জানতে চেয়েছেন—এক. মালদ্বীপ কীভাবে উন্নত হয়েছে, তাদের উন্নয়নের পথ কী ছিল? দুই. সেখানে কীভাবে পর্যটনের প্রসার ঘটেছে? মালদ্বীপে অবস্থানকালে দুটি বিষয়েই আলাপ হয়েছিল বিগত সরকারের প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমানে দ্য হ্যাপিনেস ক্লাবের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ শিহাব ও মালদ্বীপ ইসলামি ব্যাংকের তরুণ ব্যাংকার জিয়ার (আমার ভাগনে মারুফের সহকর্মী ও বন্ধু) সঙ্গে। স্থানাভাবে তা আগের লেখায় দেওয়া সম্ভব হয়নি। আসুন, তাঁদের জবানিতেই মালদ্বীপের উন্নয়নের গল্প শুনি।
আগের লেখায়ই মালদ্বীপের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, বিশেষত অপেক্ষাকৃত কম আয়বৈষম্যের কথা বলেছি। এখানে দুটি বিষয় কাজ করেছে। এক. শিক্ষার প্রসার। সাবেক প্রতিমন্ত্রী শিহাব তাঁর সরকারের বিনা মূল্যে উচ্চশিক্ষা কর্মসূচির কথা উল্লেখ করেন। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিনা মূল্যে উচ্চশিক্ষা প্রদানের পাশাপাশি সরকারি–বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় এ জন্য মাথাপিছু ব্যয়ের সমপরিমাণ অর্থ ভর্তুকি দেওয়া হয়।
দুই. সরকারি ন্যূনতম মজুরি আইন ও সার্ভিস চার্জের সমবণ্টন। বর্তমানে মালদ্বীপে মাসিক ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার ৭০০ রুফিয়া (৩৬৯ মার্কিন ডলার), সরকারি চাকরিতে ৭ হাজার রুফিয়া (৪৫৩ মার্কিন ডলার), মাঝারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ৮ হাজার রুফিয়া (৫১৮ মার্কিন ডলার) ও বৃহৎ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ১০ হাজার ২০০ রুফিয়া (৬৬০ মার্কিন ডলার)। ক্ষুদ্রতম ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে ন্যূনতম মজুরিকাঠামোর বাইরে রাখা হয়েছে। রিসোর্টগুলোয় ১০ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ ধার্য করা হয়েছে, যা ম্যানেজার থেকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী—সবার মধ্যে সমপরিমাণে (সমহারে নয়) বণ্টন করতে হয়। সম্ভবত এ কারণেই একটি রিসোর্টে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত একজন বাংলাদেশি আমাকে জনান্তিকে জানিয়েছেন, তিনি এখানে ইউরোপ–আমেরিকার সমপরিমাণ অর্থ আয় করছেন।
দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ প্রথমেই তার পোতাশ্রয়গুলোর উন্নয়ন করে। নদীতে পাথর ফেলে মহাসাগরের ঢেউ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। প্রতিটি দ্বীপে নৌযান চলাচলের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে এসব নৌযান আরব আমিরাতের সঙ্গে যৌথভাবে মালদ্বীপে নির্মাণ করা হচ্ছে। দূরতম দ্বীপটিতেও যাতে দিনে দিনে যাওয়া-আসা করা যায়, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। গাড়ি ও পণ্য পরিবহনের জন্য ফেরি চালু করা হয়েছে।
প্রতিটি দ্বীপে বিদ্যুৎ, পয়োনিষ্কাশন ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি দ্বীপের অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলোকে পাকা করা হয়েছে। নৌপরিবহনের ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করা হয়। এ জন্য তাদের ভর্তুকি দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে চীনা সহায়তায় মালে-হুলুমালে-ভেলেনা বিমানবন্দরকে সংযুক্ত করে সেতু ও সড়ক নির্মাণ করা হয়। সামগ্রিকভাবে দ্বীপগুলোয় দেশি-বিদেশি ব্যবসা ও বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা হয়।
এবার পাঠকদের দ্বিতীয় জ্ঞাতব্যে আসি। পর্যটনের ক্ষেত্রে মালদ্বীপের পর্যটনের বড় সম্পদ হলো এর সুনীল জলরাশি, মহাসাগরের পানির নিচে প্রবাল, উদ্ভিদ ও নানাবিধ প্রাণী। মালদ্বীপ পরিবেশকে সংরক্ষণ করেছে। আমাদেরও নদী ও সমুদ্রসম্পদ ছিল। ভ্রান্ত নীতি, অপরিকল্পিত উন্নয়ন, অতিমাত্রায় লোভ ও অপরিণামদর্শিতার কারণে এসব সম্পদকে আমরা প্রায় ধ্বংস করে ফেলেছি।
বলে রাখা ভালো, মালদ্বীপ কোনো সস্তা পর্যটন গন্তব্য নয়। প্রায় অর্ধেক খরচে আমাদের আশপাশের দেশে ঘোরা যায়। মালদ্বীপে প্রায় সবকিছুই আমদানি করতে হয়। নির্মাণ ব্যয় বেশি বলে সবকিছুই দুর্মূল্য। এসব সত্ত্বেও মালদ্বীপের পর্যটনে ব্যয়িত অর্থ উশুল হয়ে যায়।
একটা উদাহরণ দিই। মাফুশি থেকে আমরা আধা বেলা একটি ট্রিপ নিই, যার ব্যয় ছিল ৩৫ মার্কিন ডলার। যার মধ্যে ছিল বিয়াধো রিফ ও কুদা গিরিতে স্নোরকেলিং, ডলফিন দর্শন, গুলহি দ্বীপ ভ্রমণ। এর মধ্যে আরও অন্তর্ভুক্ত ছিল স্পিডবোটে প্রায় তিন ঘণ্টা যাতায়াত, স্নোরকেলিং প্রশিক্ষক সেবা, পানীয়সহ দুপুরের খাবার, যাবতীয় সরঞ্জাম ও লাইফ ভেস্ট, টাওয়েল, ছাতি ও মহাসাগরের নিচে প্রবাল ও মাছ দেখার ব্যক্তিগত সব ছবি।
বয়স ও শারীরিক সীমাবদ্ধতার কারণে সাগরের তলায় প্রাণী ও উদ্ভিদ দেখার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে পারিনি। সহযাত্রী তরুণেরা যাঁরা এ সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছেন, তাঁরা একে ‘জীবনে একবার’ অভিজ্ঞতা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হাওয়াইতে একই ধরনের ট্রিপ ১০০ মার্কিন ডলারেও পাওয়া সম্ভব নয়।
মালদ্বীপে গেলে মনে হবে, আপনি সম্পূর্ণ নিরাপদ। সবাই আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছে। কোনো হকার, কোনো দালাল আপনার কাছে কিছু বিক্রি করতে, গছিয়ে দিতে চেষ্টা করবেন না। কোনো হোটেলমালিক বা ম্যানেজার পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে আপনার গাঁট কাটার চেষ্টা করবেন না! মালদ্বীপ ও অন্য দ্বীপগুলোর কোথাও প্রকাশ্যে পুলিশ দেখলাম না। তবে তারা যে কার্যকর, তা বোঝা যায়। ছোট্ট মাফুশি দ্বীপে একটা বড় কারাগার দেখলাম।
তথাকথিত মেগা প্রকল্পের নামে অর্থের অপচয় না করে, এর একটিতে ব্যয়িত অর্থের এক ভগ্নাংশ দিয়ে বাংলাদেশের উপকূলীয় দেশগুলো নিয়ে মালদ্বীপের মতো সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হলে জনকল্যাণের পাশাপাশি দেশে পর্যটনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে মালদ্বীপ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
মালদ্বীপের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা আসলেই দুরূহ। আমদানিনির্ভর, দেশীয় সম্পদের অপ্রতুলতা দেশটিকে দেশি-বিদেশি ঋণনির্ভর করেছে। কর জিডিপির অনুপাত ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ (বাংলাদেশের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি) হলেও করভিত্তি ছোট। আবার শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো সামাজিক খাতে ব্যাপক ভর্তুকি থাকায় ২০২৩ সালে বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ছিল জিডিপির ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ। দেশটিকে উন্নয়ন ব্যয় মেটাতে উচ্চ সুদের সূত্র থেকে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করতে হচ্ছে।
২০২২ সালে মালদ্বীপের মোট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা জিডিপির ১১৮ শতাংশ। যার মধ্যে ২০২৩ সালে মালদ্বীপের বৃহত্তম একক ঋণদাতা চীনের রপ্তানি-আমদানি ব্যাংকের হিস্যা ছিল ২৫ দশমিক ২ শতাংশ। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল মালদ্বীপকে তাদের ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক ঋণ সম্পর্কে সতর্ক করে সরকারকে নীতি সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে। মালদ্বীপের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার একটি ভালো দিক হলো নিম্ন মূল্যস্ফীতি। ১৯৮৬ থেকে ২০২৪ মেয়াদকালে দেশটির মূল্যস্ফীতির গড় হার ছিল ৪ দশমিক ৯৩।
জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় প্রথম সারিতে রয়েছে মালদ্বীপ। বিশ্বব্যাংক আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, ২১০০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার বাড়তে পারে। ফলে পুরো দেশই জলমগ্ন ও দ্বীপগুলো বসবাসের অযোগ্য হতে পারে। এর ফলে সমুদ্রের তলদেশে প্রবাল, উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এ বিষয়ে সচেতনতা রয়েছে।
২০০৯ সালে মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদসহ ১১ জন মন্ত্রী স্কুবা গিয়ার পরে সমুদ্রের ৪ মিটার গভীরতায় নেমে মন্ত্রিপরিষদের সভা করেন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার জন্য সে দেশে জলবায়ু তহবিল গঠন করে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
মালদ্বীপের সাধারণ মানুষ জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে খুব বেশি ভাবিত নন। তাঁরা বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে বিশ্বাস করেন না। তাঁদের মতে, সমুদ্রেই তাঁরা বেড়ে উঠেছেন; জলবায়ুর যত পরিবর্তনই হোক না কেন, প্রকৃতির সঙ্গে আপস ও লড়াই করে তাঁরা মালদ্বীপেই বসবাস করবেন। একই মতের সমর্থন মিলল সাবেক প্রতিমন্ত্রী শিহাবের কথায়।
সাম্প্রতিক কালে মালদ্বীপ ও ভারতের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে মোহামেদ মুইজ্জু প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে ভাটা পড়েছে। তাঁর আগে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ইব্রাহিম মোহাম্মদ সালিহ। সে সময় সরকার ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’ নীতি অনুসরণ করেছে।
অন্যদিকে মোহামেদ মুইজ্জু ‘ইন্ডিয়া আউট’ স্লোগান দিয়েই ভোটে লড়েন। নির্বাচনে জেতার পর প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর সিদ্ধান্তে দুই দেশের সম্পর্কে ক্রমেই দূরত্ব বেড়েছে। মুইজ্জুকে ‘চীনের কাছের মানুষ’ বলে মনে করা হয়।
মালদ্বীপের মানুষকে আমার কাছে ইসলাম ধর্মে গভীরভাবে বিশ্বাসী ও পালনে তৎপর, তবে গোঁড়া মনে হয়নি। তাঁদের ভারত–বিরোধিতা ধর্মীয় কারণে নয়। ভারত–বিরোধিতার তিনটি কারণ আমার মনে হয়েছে।
এক. ইব্রাহিম সালিহসহ পূর্ববর্তী সরকারগুলোর ভারতীয় আজ্ঞাবহতা মালদ্বীপের মানুষ ভালোভাবে নেয়নি।
দুই. ভারতের দক্ষিণপন্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিজেপি মুইজ্জুর সরকারকে ‘চীনা পুতুল সরকার’ বলে আক্রমণ করে। মালদ্বীপের দেশপ্রেমিক বাসিন্দারা এর পাল্টা জবাব দেন। সরকারের তিনজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও এতে যোগ দেন। তাঁরা নরেন্দ্র মোদির তীব্র সমালোচনা করেন। মালদ্বীপ সরকার অবশ্য এই কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করেছে।
তিন. কাশ্মীর ইস্যু ও ভারতে মুসলমানদের নিগ্রহ সহধর্মী মালদ্বীপের বাসিন্দাদের গভীরভাবে আহত করেছে। এমনকি ভারতপন্থী সালিহ সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী শিহাবও তাঁর সরকারের ভারত তোষণনীতি ও মোদির শাসনামলে ভারতীয় মুসলমানদের নিগ্রহের সমালোচনা করেছেন।
মালদ্বীপের ‘ইন্ডিয়া আউট’ আন্দোলনের নেপথ্যে তিনটি কারণ রয়েছে। এক. মালদ্বীপে ভারতের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা ও এটা নিয়ে চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। দুই. মালদ্বীপের উন্নয়ন প্রকল্পের ভাগাভাগি নিয়ে ভারত ও চীনের ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতা। তিন. মালদ্বীপের সরকারকে দিয়ে গোপন ও বৈষম্যমূলক চুক্তি সম্পাদন করানো।
এ প্রসঙ্গে তিনটি অসম চুক্তির কথা উল্লেখ করা যায়। এক. হাইড্রোগ্রাফিক জরিপের নামে ভারত, মালদ্বীপের জলসীমা, বন্দর ও পোতাশ্রয় নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে, যা দ্বীপবাসী তাঁদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেবে মনে করে। দুই. ডর্নিয়ার উড়োজাহাজ সরবরাহের আড়ালে মালদ্বীপে ভারতীয় সেনা মোতায়েন, যা দ্বীপের অধিবাসীরা ভারতের সম্প্রসারণবাদী আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করার হাতিয়ার বলে মনে করেন। তিন. ইউটিএফ চুক্তি, যার অধীনে মালদ্বীপ প্রতিরক্ষা বাহিনীকে ভারতীয় সহায়তার নামে নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব করা হয়।
এ ছাড়া ভারতীয়রা মালদ্বীপের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে মালদ্বীপবাসীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতীয় কোম্পানি জিএমআরকে মালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উন্নয়ন ও পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা মালদ্বীপের বাসিন্দাদের ওপর উন্নয়ন ফি আরোপ করে।
অতিগোপনীয়তার সঙ্গে সম্পাদিত এসব চুক্তি স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ফাঁস করে দেয়। এর ফলে টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশের জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়েন, দমন-পীড়ন ও বেআইনি ঘোষণা করা সত্ত্বেও ‘ইন্ডিয়া আউট’ আন্দোলন বেগবান হয়। ফলে ভারতপন্থী প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম সালিহ পরাজিত হন ও মোহামেদ মুইজ্জু তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। পরবর্তী সময়ে মুইজ্জু ও তাঁর কোয়ালিশনের শরিকেরা সংসদ নির্বাচনেও বিজয়ী হয়।
মালদ্বীপের রাজনৈতিক নেতৃত্ব একই সঙ্গে জাতীয়তাবাদী ও বাস্তববাদী। মুইজ্জু সরকারের দাবি অনুযায়ী ভারতীয় সেনা প্রত্যাহার করা হয়েছে। মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুসা জমির সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য ভারত সফরে গেছেন। চীনের ওপর একক নির্ভরতা হ্রাসের জন্য তুরস্ক, সৌদি আরব, আরব আমিরাতসহ অন্যান্য মুসলিম দেশের সঙ্গে মালদ্বীপ সম্পর্ক উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আমরাও চাই আমাদের প্রতিবেশী মালদ্বীপ ও ভারতের সম্পর্ক স্বাভাবিক হোক। এ জন্য ভারতকে মালদ্বীপের নির্বাচনকে প্রভাবিত করা, তাদের পছন্দের সরকারকে ক্ষমতায় বসানো ও অপছন্দের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা এবং সরকার পরিচালনায় হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকতে হবে।
জবরদস্তিমূলক কূটনীতি নয়, এ জন্য ভারতকে সব প্রতিবেশীর ক্ষেত্রে গুজরাল ডকট্রিনে বর্ণিত পাঁচ দফা রোডম্যাপে ফিরে যেতে হবে। এটাই হবে প্রতিবেশী দেশগুলোয় ভারতের স্বার্থরক্ষার সর্বোত্তম উপায়। আবার মালদ্বীপের সরকার ও জনগণকে ভারতবিরোধী বাগাড়ম্বরপূর্ণ কথাবার্তা বলা থেকে সরে আসতে এবং চীন ও ভারতের সঙ্গে ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
পরিশেষে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ভূস্বর্গ মালদ্বীপ তার অর্থনৈতিক, সামাজিক ও কূটনৈতিক সমস্যা কাটিয়ে এগিয়ে যাক—এই কামনা করি। আর একটা কথা, আপনার ভ্রমণতালিকার শীর্ষে মালদ্বীপকে রাখুন। আমি নিশ্চিত, ভ্রমণ শেষে আপনি আমাকে পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ জানাবেন।
মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান অর্থনীতিবিদ ও সাবেক সচিব