পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পিবিএস) আর পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) মধ্যকার বিদ্যমান দ্বৈত ব্যবস্থাপনার কারণে বেশ কয়েক বছর ধরেই কিছু সমস্যা ও সংকট তৈরি হয়েছে। গ্রাহকসেবা উন্নত করতে হলে আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যা ও সংকট দূর করতে হবে। সেক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে তা নিয়ে লিখেছেন মোশাহিদা সুলতানা
২০০৬ সালের ১২ এপ্রিল। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে বিদ্যুৎ–সংকট, উচ্চমূল্য ও অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে আন্দোলনরত কৃষকদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। এ ঘটনায় ১৪ বছর বয়সী বাবু, ১১ বছর বয়সী আনোয়ারসহ মোট ১৩ জন নিহত এবং বহু মানুষ গুরুতর আহত হয়েছিলেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষকেরা সে সময় দিনে মাত্র তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ পেতেন। এ কারণে সেচের অভাবে ধান শুকিয়ে যেত। ট্রান্সফরমার চুরি হলে গ্রাহকদেরই খরচ বহন করতে হতো এবং বিদ্যুৎ না থাকলেও সংযোগ চার্জ ও মিটার ভাড়া দিতে হতো। এই অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বোর্ড বারবার আরইবিতে বোর্ড প্রস্তাব প্রেরণ করলে আরইবি তা নাকচ করে দেয়। ফলে সমাধান না পেয়ে কৃষকেরা প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন এবং পুলিশের গুলিতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। অবশেষে আন্দোলনের চাপে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড চাঁপাইনবাবগঞ্জে মিটার ভাড়া বাতিল এবং ট্রান্সফরমারের নিরাপত্তা নিশ্চিতের ব্যবস্থা করে। কিন্তু সারা দেশের অন্য এলাকায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত মিটার ভাড়া বাধ্যতামূলক থেকে যায়।
কানসাটের সেই ঘটনার ১৪ বছর পর ২০২০ সালে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) আওতাধীন ৪৬২টি উপজেলার গ্রিডভুক্ত এলাকায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্পন্নের ঘোষণা আসে। কিন্তু এর মধ্যে দিয়ে গ্রামীণ জনপদগুলোয় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হয়নি। ঘন ঘন লোডশেডিং এবং সঞ্চালন লাইনে ত্রুটির কারণে ভোগান্তি পোহাতে হয় গ্রামের মানুষদের। সেই সময় প্রশ্ন ওঠে, শতভাগ বিদ্যুতায়নের পরও গ্রামের মানুষ কেন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না। কেন ট্রান্সফরমার বারবার পুড়ে যায়? ঝড়–বৃষ্টি হলে কেন ঘন ঘন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়?
লক্ষণীয় হলো, বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়ার বিষয়টি গ্রামের মানুষের জন্য স্বপ্নই রয়ে যায়। আগে বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা কম—এই কারণ দেখিয়ে গ্রামীণ গ্রাহকদের প্রবোধ দিতে পারলেও শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা ও অলস পরে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্রমবর্ধমান ক্যাপাসিটি চার্জের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রাহকদের আর প্রবোধ দিয়ে রাখা যায়নি। গ্রামে গ্রামে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি আগেও চাপের মধ্যে ছিল, কিন্তু এরপর তাদের ওপর চাপ ক্রমাগত বাড়তে থাকে।
■ সমিতিগুলোতে আরইবির নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্বপরায়ণ মনোভাবের কারণে পিবিএসের মধ্যে যেসব অসন্তোষ দিন দিন তৈরি হয়েছিল, সেগুলো প্রকাশ করা কিংবা সমাধানের মতো কোনো পরিবেশ ছিল না। ■ স্বৈরাচারের আমলে যে ব্যক্তিদের ‘উন্নয়নবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে দমন করার চেষ্টা করা হয়েছিল, সেই একই ব্যক্তিদের আবার ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে কেন গ্রেপ্তার করা হলো? ■ সংস্কার বিষয়ে সমিতির দাবির যৌক্তিকতা আরইবির চোখে দেখলে হবে না; যাঁরা মাঠপর্যায়ে দিন–রাত কাজ করে গ্রাহকসেবা দেন, তাঁদের বক্তব্য শুনতে হবে।
এ রকম অবস্থায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পিবিএস) আর পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের মধ্যকার বিদ্যমান দ্বৈত ব্যবস্থাপনার সংকট আরও ঘনীভূত হতে থাকে। বাংলাদেশে আরইবি এবং পিবিএস একটি বিকেন্দ্রীভূত কাঠামোর অধীন পরিচালিত হয়, যা ১৯৭৮ সালে আমেরিকান রুরাল ইলেকট্রিফিকেশন মডেল অনুসরণ করে প্রতিষ্ঠিত। আরইবি গ্রামীণ বিদ্যুৎ সরবরাহের অবকাঠামো নির্মাণ, বিদ্যুৎ সরঞ্জাম সরবরাহ ও বিতরণের তদারক করে, রেগুলেটরের (নিয়ন্ত্রক) ভূমিকা পালন করে এবং বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড থেকে বিদ্যুৎ কিনে পিবিএসের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেয়।
অন্যদিকে পিবিএসের কাজগুলোর মধ্যে নতুন সংযোগ প্রদান, বিদ্যুৎ সরবরাহ, বিল সংগ্রহ এবং রক্ষণাবেক্ষণ অন্তর্ভুক্ত। তবে মিটার ভাড়া, লোডশেডিং, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং সরবরাহে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে গ্রাহকদের ক্ষোভ সাধারণত পিবিএসকর্মীদের ওপর পড়ে। সমিতি বোর্ড স্থানীয় গ্রাহকদের নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে গঠিত এবং তাদের কাজ হলো নীতি প্রণয়ন, তদারকি ও সুপারিশ করা। পিবিএসের যদিও স্বাধীনভাবে কাজ করার কথা, বাস্তবে আরইবি তাদের নিয়ন্ত্রণ করে।
দ্বৈতব্যবস্থাপনার এ সমস্যার সমাধান না করে ২০২০ সালের মধ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমের আওতায় দেশের শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্পন্ন করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০১৩ সালে আরইবি আইন পাস করানো হয়। এর ফলে আরইবি আরও শক্তিশালী হয়। নতুন নতুন পদ সৃষ্টি করে প্রতিষ্ঠানটিকে মাথাভারী করা হয়। কিন্তু অন্যদিকে পিবিএসে জনবলের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও তা থেকে যায় পূর্বের অবস্থায়।
পিবিএসগুলো শক্তিশালী করা তো দূরের কথা, মনগড়া নীতিমালা তৈরি করে ক্রমান্বয়ে দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে। আরইবির তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ৭৫ লাখ থেকে ৫ গুণ বেড়ে ৩ কোটি ৬০ লাখ হয়েছে ও বিতরণ লাইন প্রায় সোয়া ২ লাখ কিলোমিটার থেকে প্রায় ৩ গুণ বেড়ে ৬ কিলোমিটার হয়েছে। এই সময়ে আরইবির কাঠামোগত পরিবর্তন ও জনবল বৃদ্ধি পেলেও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে গ্রাহক ও লাইন অনুপাতে জনবল যথেষ্ট বাড়ানো হয়নি।
সমিতিগুলোতে আরইবির নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্বপরায়ণ মনোভাব প্রতিষ্ঠার কারণে পিবিএসের মধ্যে যেসব অসন্তোষ দিন দিন তৈরি হয়েছিল, সেগুলো প্রকাশ করা কিংবা সমাধানের মতো কোনো পরিবেশ ছিল না। যেমন বারবার ট্রান্সফরমার কেন পুড়ে যায়, বিনা কারণে ইনস্যুলেটর কেন ক্র্যাক করে এবং কেন এলাকাভেদে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ডিজাইন ক্রাইটেরিয়া ভিন্ন হতে হবে—এগুলো নিয়ে যাঁরা মাঠপর্যায়ে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন, তাঁরা তাঁদের সমস্যার কথাগুলো উচ্চপর্যায়ে পৌঁছানোর সুযোগ পাননি।
ক্রয় বিভাগের সঙ্গে তাঁদের দূরত্ব আরইবি নির্ধারিত একজন ইনভেস্টিগেটরের একদিনের পর্যবেক্ষণে পরিষ্কার হয় না। তাই দিনের পর দিন প্রযুক্তিগত প্রয়োজনীয়তা ও সরবরাহের সমন্বয়হীনতার অভাবে সমস্যা সমাধান না হয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে পেশাগত দ্বন্দ্ব দিন দিন বাড়তে থাকে। আরইবি কর্তৃক সমিতির কর্মীদের জন্য অদৃশ্য এক ভীতির বলয় সৃষ্টি করা হয়, যে কারণে তাঁদের অভিযোগ, সমস্যা দিনের পর দিন আরও জটিল হতে থাকে।
সম্প্রতি ইউএসএইডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘দ্বৈত ব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিযোগিতা ও বিরোধপূর্ণ বিষয়ে সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্বাধীনভাবে মতামত প্রদান করতে পারেন না ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ভয়ে।’ অর্থাৎ আমেরিকান মডেলে পল্লী বিদ্যুৎ পরিচালিত হয় বলা হলেও কার্যত সেখানে গণতান্ত্রিক চর্চার সুযোগ রাখা হয়নি।
পিবিএসের কর্মীরা প্রায় একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হলেও তাঁদের একত্র হওয়ার বা একে অপরের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা সমৃদ্ধ করার সুযোগ নেই। আবার ট্রেড ইউনিয়ন নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে যোগাযোগহীনতা এক ধরনের শূন্যতা তৈরি করেছে। এ কারণে দিন দিন কর্মচারী ও শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়েছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সরাসরি গ্রাহকসেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও কোনো ধরনের নীতি প্রণয়নের সুযোগ না থাকা, বোর্ড কর্তৃক সমিতির জন্য মনগড়া চাকরিবিধি প্রণয়ন, উন্নত কর্মপরিবেশ সৃষ্টিতে অনীহা, সুযোগ-সুবিধা প্রদানে স্বেচ্ছাচারিতা এবং সর্বোপরি বোর্ডের দমন–পীড়নের কারণে স্বাধীনভাবে কাজের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে পদপদবির সমতা এবং অন্যান্য বৈষম্য নিরসনের জন্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। সে সময় ভোলা পিবিএসের দুজন এজিএমকে (সহকারী মহাব্যবস্থাপক) বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তী সময় গ্রাহকসেবা চালু রেখে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পাঁচ দিন কর্মবিরতি পালন করলে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে সমঝোতা এবং সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়।
এরপর প্রায় ৪০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর গণস্বাক্ষর সংবলিত স্মারকলিপি বোর্ড এবং বিদ্যুৎ বিভাগে প্রেরণ করা হয়। প্রতিবার অধিকার আদায়ের আন্দোলন করা থেকে দূরে এসে পিবিএস মে মাসে দ্বৈতব্যবস্থার কাঠামো পরিবর্তন করে একটি স্থায়ী সমাধানের দিকে যেতে আগ্রহী হয়ে ওঠে ও একীভূতকরণের দাবি তুলে স্মারকলিপি প্রদান করে।
দীর্ঘ দুই মাস অতিবাহিত হলেও সমাধানের অগ্রগতি না হওয়ায় ১ জুলাই থেকে আবারও গ্রাহকসেবা চালু রেখে ১০ দিন কর্মবিরতি পালন করে পিবিএস। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ বিভাগ ৯ সদস্যের একটি সংস্কার কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির প্রথম সভায় আরইবি উপস্থিত না থাকায় ২৪ আগস্ট ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে গণছুটির কর্মসূচি দেয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। তবে ২৭ আগস্ট সরকারের আহ্বানে তা প্রত্যাহার করা হয়।
পরবর্তী সময় ওই কমিটির চারটি সভা অনুষ্ঠিত হলেও বাস্তবে নিরপেক্ষ এবং দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। চলমান পরিস্থিতিতে সংকট নিরসনের ব্যবস্থা না করেই গত ১৭ অক্টোবর আকস্মিক সমিতির একজনকে গ্রেপ্তার এবং ২৪ জন কর্মকর্তাকে কোনোরূপ পূর্ব নোটিশ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করা হয়। এ ছাড়া রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়।
এসবের প্রতিবাদে বিভিন্ন সমিতিতে শাটডাউনের ঘটনা ঘটে। এই শাটডাউনের পেছনের কারণ অনুসন্ধান করতে হবে রাজনৈতিক দল–মতের ঊর্ধ্বে গিয়ে। আরইবি কর্তৃক নির্বিচারে সমিতির ১৭১ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে মামলা, সাময়িক বরখাস্ত, স্ট্যান্ড রিলিজসহ সংযুক্তির মাধ্যমে ৬৩ জনকে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া দূরবর্তী অঞ্চলে বদলির জন্যও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে বর্তমানে অস্থিরতা বিরাজ করছে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে যাঁদের গ্রেপ্তার, চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, স্ট্যান্ড রিলিজ দেওয়া হয়েছে, মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করার মাধ্যমে যে আতঙ্ক বিরাজ করছে, তা যথাযথ বিদ্যুৎসেবা প্রদানে বাধা তৈরি করছে। এখনই সংকটের টেকসই সমাধান না করলে সামনের দিনে এই বিশাল অভিজ্ঞ জনবলের কর্মক্ষমতা ও কর্মস্পৃহা কমে যাবে এবং তার নেতিবাচক প্রভাব পুরো ব্যবস্থার ওপর পড়বে।
পিবিএসের দাবি অনুযায়ী, পিবিএস ও আরইবি একীভূত হলে ক্রয় বিভাগ, পরিকল্পনা বিভাগ ও মাঠপর্যায়ে প্রকৌশলীরা যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে গ্রাহক সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারবে। তখন এককভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে অন্যায্যভাবে দায়বদ্ধ থাকবে না।
আরইবির কেনা সামগ্রীর জন্য পিবিএসের যে দায় নিতে হয়, তা নিতে হবে না; বরং ক্রয় বিভাগ ও পিবিএস উভয়ই জবাবদিহির আওতায় থাকবে। অর্থনৈতিক অবস্থায় ভারসাম্য সৃষ্টি হলে লোকসানও হ্রাস পাবে। এখন যেভাবে পিবিএস তার প্রয়োজনীয় লোকসান পূরণের বরাদ্দ চাইলে আরইবি ইচ্ছামাফিক বরাদ্দ দেয়, ঋণের অর্থ কেটে রাখে, অনুদান নিয়ে অস্বচ্ছ আদান–প্রদান করে, তা করতে পারবে না।
এতে পিবিএসের তারল্য–সংকট কমে যাবে, দিনের পর দিন লোকসান দেখিয়ে সমস্যা সমধানে সময়ক্ষেপণ হবে না। গ্রাহক যেমন দ্রুত সেবা পাবেন, তেমনই কর্মচারীরাও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার পরিবেশ পাবে। মালামাল ক্রয়ে দুর্নীতি রোধের একটা মেকানিজম তৈরি হবে এবং জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতা থাকবে। মাঠপর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতা নীতিনির্ধারণে কাজে লাগবে। সর্বোপরি বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের মান বাড়লে, বিদ্যুৎ–বিভ্রাটের পরিমাণ কমবে ও প্রযুক্তির বিকাশ ঘটবে। এ ধরনের সমন্বয় গ্রাহকদের সেবাকেই নিশ্চিত করবে।
বর্তমানে আরইবি ও পিবিএসের সমস্যা যে মাত্রায় এসেছে, তা থেকে দ্রুত উত্তরণ প্রয়োজন। কানসাটের আন্দোলন দেখিয়ে দিয়ে গেছে, এ দেশে গ্রাহকেরা দিনের পর দিন শোষণ সহ্য করবেন না। অসন্তোষ কোনো না কোনোভাবে বের হয়ে আসবে। এর সমাধানে আলোচনা প্রয়োজন।
পল্লী বিদ্যুতের কাঠামো পুনর্মূল্যায়নে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে হবে, স্বৈরাচারের আমলে যে ব্যক্তিদের ‘উন্নয়নবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে দমন করার চেষ্টা করা হয়েছিল, সেই একই ব্যক্তিদের আবার ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে কেন গ্রেপ্তার করা হলো?
সংস্কার বিষয়ে সমিতির দাবির যৌক্তিকতা আরইবির চোখে দেখলে হবে না; যাঁরা মাঠপর্যায়ে দিন–রাত কাজ করে গ্রাহকসেবা দেন, তাঁদের বক্তব্য শুনতে হবে। আগের মতো শুধু কমিটি গঠন করলেই হবে না, কমিটি যাতে পক্ষপাতদুষ্ট না হয়ে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। পল্লী বিদ্যুতের সংস্কার ও গণতান্ত্রিক চর্চা নিশ্চিত করতে হলে ভয় বা শঙ্কা সৃষ্টি করে নয়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য কর্মোপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
●মোশাহিদা সুলতানা সহযোগী অধ্যাপক, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়