মাফ চাই, এই কৌতুকগুলো বাংলাদেশের নয়

কমিউনিজমের আমলে সোভিয়েত কৌতুকগুলো খুবই মারাত্মক ছিল। বলা হয়ে থাকে, কৌতুকগুলোই তখনকার শৃঙ্খলিত মানুষদের বাঁচিয়ে রাখত। এখন কমিউনিজম নাই, তবে পুতিন আছেন। কতগুলো রুশ কৌতুক আগে বলে নিই:

১. ভ্লাদিমির পুতিন নতুন অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। এর উদ্দেশ্য হলো জনগণকে বড়লোক করে তোলা। জনগণের তালিকা পরের পৃষ্ঠায় দেওয়া হলো।

২. একজন আমেরিকান আর একজন রাশিয়ান তর্ক করছেন। তর্কের বিষয়: কোন দেশে বাক্‌স্বাধীনতা বেশি।

আমেরিকান বলল, আমাদের দেশে বাক্‌স্বাধীনতা এত বেশি যে আমি হোয়াইট হাউসের সামনে গিয়ে চিৎকার করে বলতে পারব, বাইডেন, আমি আপনার শাসন পছন্দ করি না।

রাশিয়ান বলল, এত খুব সোজা। আমি হোয়াইট হাউসের সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করব, মিস্টার বাইডেন, আমি আপনার শাসন পছন্দ করি না।

৩. একটা দৌড় প্রতিযোগিতা হচ্ছে। দুজন মাত্র অংশ নিচ্ছে। একজন রাশিয়ান, একজন আমেরিকান। আমেরিকানটা প্রথম স্থান অধিকার করল। রাশিয়ার কাগজে ছাপা হলো, এবার দৌড় প্রতিযোগিতায় রাশিয়া খুব ভালো করেছে। তারা দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। আমেরিকা খুব খারাপ করেছে। আমেরিকান দৌড়বিদ শেষের জনের সামনে ছিল।

৪. রাশিয়ার একটা ইঁদুর দৌড়ে পালাচ্ছে। পালাতে পালাতে সে পোল্যান্ডে চলে গেল। পোল্যান্ডের ইঁদুর জিগ্যেস করল, তুমি দৌড়াচ্ছ কেন?
আর বোলো না। আমাদের দেশে সব উট ধরে নিয়ে জেলে পুরছে।
তা তোমার ভয় কী? তুমি তো আর উট নও।
আরে আমি কেমন করে প্রমাণ করব যে আমি উট নই।

৫. স্তালিনের আমলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে পুশকিনের একটা ভাস্কর্য গড়া হবে। মডেল বানানো হলো। পুশকিন বসে আছেন। হাতে তাঁর কবিতার বই। পলিটব্যুরো ভাস্কর্যটা পর্যালোচনা করতে বসল। না, বড় বেশি ভাববাদী হয়ে যাচ্ছে। তখন ভাস্কর্যটাকে সংশোধন করা হলো। পুশকিন বসে স্তালিনের বই পড়ছে। আবারও পর্যালোচনা। পুশকিনের আমলে তো স্তালিনের বই ছিল না। তখন ভাস্কর্যটা পাল্টানো হলো। স্তালিন বসে পুশকিনের বই পড়ছে। আবারও বিচার-বিশ্লেষণের পালা এল। সবাই বলল, স্তালিন যদি পুশকিনের কবিতা পড়েন, তা ভাববাদকে উৎসাহিত করবে। পরিশেষে ভাস্কর্যটা দাঁড়াল, স্তালিন বসে স্তালিনের বই পড়ছেন।

৬. সোভিয়েত স্টাইলে নির্বাচন শুরু হয়েছে কবে থেকে?
যেদিন ইভকে সৃষ্টি করে অ্যাডামকে বলা হয়েছিল, স্ত্রী বেছে নাও।

৭. সুখের রকমফের নিয়ে এই কৌতুকটা। একজন ইংরেজ দিনের শেষে কর্মক্লান্ত বাড়ি ফেরে। স্ত্রীর সঙ্গে নৈশভোজ সারে। তারপর কুকুর নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। তারা সুখী।
একজন জার্মান কাজের শেষে বাড়ি ফেরে। স্ত্রীর সঙ্গে ডিনার করে। তারপর বাতি নিভিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। তারা সুখী।

একজন ফরাসি দিনের শেষে বাড়ি ফেরে। স্ত্রীর সঙ্গে ডিনার করে। তারপর বান্ধবীর সঙ্গে বেরিয়ে পড়ে। তারা সুখী।

একজন রাশিয়ান দিনের শেষে বাড়ি ফেরে। তারপর বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া করে। একটু পরে দরজায় নক।

কে?
কেজিবির লোক। আপনার পদবি কি পেত্রোভ? আপনাকে গ্রেপ্তার করা হলো।
না। আমার পদবি পেত্রোভ নয়। পেত্রোভ আমার ওপরের ফ্ল্যাটে থাকে।
একটু পরে এই দম্পতি দেখল, পেত্রোভকে কেজিবির লোকেরা ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এখন এই দম্পতি সুখী।

৮. স্তালিনের চুরুট হারিয়ে গেছে। সাংঘাতিক অবস্থা। ৪০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো। এই সময় স্তালিন জানালেন, চুরুট পাওয়া গেছে। বিছানার নিচে পড়ে ছিল।
কিন্তু স্যার ৪০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে চুরুট চুরির দায়ে।
ওদের ছেড়ে দাও।

কিন্তু স্যার, ৩৯৯ জন স্বীকার করেছে যে তারা চুরুট চুরি করেছে।
কী সর্বনাশ। একজন কেন স্বীকার করল না? আমরা কি ঠিকভাবে জেরা করতে পারিনি। তদন্ত চালিয়ে যাও।

৯. পাভেল জোরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল! শালার অভিশপ্ত জীবন।
কেজিবির লোক তাকে ধরে ফেলল! হ্যান্ডস আপ।
আরে আমি তো আমেরিকার জীবনের কথা বলছিলাম!
বললেই হলো! আমরা জানি না অভিশপ্ত জীবন কোথায়?

১০. ১০ নম্বরটা সোভিয়েতদের পক্ষে।মহাকাশে মাধ্যাকর্ষণ বল কাজ করে না। ফলে কলম দিয়ে লেখা যায় না। বলপেন দিয়েও লেখা যায় না। আমেরিকানরা এই সমস্যার সমাধান করল এক বিলিয়ন ডলার খরচ করে একটা কলম বানাল, যা দিয়ে মহাকাশে লেখা যায়। আর রাশিয়ানরা খরচ করল দুই রুবল। তারা সঙ্গে নিয়ে গেল কাঠপেনসিল।

৭ নম্বর কৌতুক ‘সুখের রকমফের’ আরেকটু বাড়ানো যায়। একজন বাঙালি দিনের শেষে বাড়ি ফিরল। তারপর স্ত্রীর সঙ্গে নৈশভোজ সারল। তারপর দুজনেই ফেসবুক নিয়ে পড়ে রইল। দুজনেই সুখী।

  • আনিসুল হক প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও কবি