অসংখ্য ড্রোন ভূপাতিত করে ইউক্রেনের সঙ্গে ইলেকট্রনিক যুদ্ধে এরই মধ্যে এগিয়ে গেছে রাশিয়া। এ মাসে ফোর্বস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদনের বরাতে ডেভিড এক্স লিখেছেন, রাশিয়া তার ইলেকট্রনিক যুদ্ধের সক্ষমতা দিয়ে বেশির ভাগ ইউক্রেনীয় ড্রোন নিষ্ক্রিয় করে ফেলেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৪ ফেব্রুয়ারি আগ্রাসন শুরুর আগে ইউক্রেন যে ড্রোন সংগ্রহ করেছিল, তার ৯০ শতাংশই গ্রীষ্মকালের মধ্যে রাশিয়া হয় গুলি করে ভূপাতিত করেছে, নয় ধ্বংস করে ফেলেছে। রাশিয়ার ইলেকট্রনিক যুদ্ধ প্রযুক্তি গোয়েন্দাব্যবস্থাকেও ভোঁতা করে দিয়েছে।
মে মাসে ফোর্বস-এ প্রকাশিত আগের নিবন্ধে বলা হয়েছিল, রাশিয়ার সেনা অবস্থানের ওপর খুব সুনিপুণভাবে ইউক্রেনের ড্রোনগুলো গোলাবর্ষণ করছে। সীমিত গোলাবারুদ দিয়ে কীভাবে সর্বোচ্চ কৌশলগত সফলতা পাওয়া যায়, ইউক্রেনীয় বাহিনী তারই দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে। যুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে এই কৌশল ব্যবহার করেই কিয়েভকে রক্ষা করেছিল ইউক্রেন।
প্রথম পর্বে ড্রোন যুদ্ধে ইউক্রেনীয় বাহিনী সাফল্য পেয়েছিল। কিন্তু ইলেকট্রনিক যুদ্ধব্যবস্থার সুবিধা কাজে লাগাতে পারায় জুলাই মাস থেকে পরিস্থিতি বদলে যেতে শুরু করে
কিন্তু এক্স তাঁর সাম্প্রতিক নিবন্ধে জানিয়েছেন, ইউক্রেনের ড্রোনগুলো আকাশে আশঙ্কাজনকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে যাচ্ছে। এতে রাশিয়ার সেনা লক্ষ্যবস্তুতে গোলা নিক্ষেপ বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনীয় বাহিনীর অগ্রসরতা যেমন কমছে, অন্যদিকে রাশিয়ান বাহিনীর টিকে থাকার সামর্থ্য বেড়ে যাচ্ছে এবং পরবর্তী আক্রমণের জন্য নিজেদের শক্তি তারা সংহত করতে পারছে।
ইউক্রেনের বাহিনী অন্ধের মতো গোলা নিক্ষেপ করায় তাদের মজুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সহযোগিতা ছাড়া যুদ্ধে টিকে থাকাটা সম্ভব হচ্ছে না। এক্স লিখেছেন, রাশিয়া তাদের ইলেকট্রনিক যুদ্ধের সক্ষমতা আধুনিক করায় ইউক্রেনের বিমানবাহিনীও বেকায়দায় পড়েছে। ইউক্রেনের যুদ্ধবিমানের পাইলটরা দেখছেন যে তাঁদের আকাশ থেকে আকাশ ও আকাশ থেকে ভূমির যোগাযোগব্যবস্থা জ্যাম হয়ে যাচ্ছে, বিমান চালানোর সরঞ্জামে ত্রুটি দেখা যাচ্ছে এবং রাডারে গোলযোগ তৈরি হচ্ছে।
এ প্রতিবেদন থেকে যে ইঙ্গিত মিলছে তা হলো, ইউক্রেনে ড্রোন যুদ্ধের গতিমুখ ঘুরে গেছে। কয়েক মাস আগে, এশিয়া টাইমস-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছিল, তুরস্কের তৈরি বায়রাক্টার টিবি-২ ড্রোন ব্যবহার করে যুদ্ধে ইউক্রেন কীভাবে সফলতা পেয়েছে। যুদ্ধে রুশ বাহিনীর সবচেয়ে বড় ক্ষয়ক্ষতি এই ড্রোন হামলার মাধ্যমেই হয়েছিল। রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রবাহী জাহাজ মস্কোভা ও ফ্রিগেট অ্যাডমিরাল এসেনের বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির কারণ ছিল এই ড্রোন।
যাহোক, যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের প্রাথমিক সফলতার পেছনে বায়রাক্টার টিবি-২ ড্রোনের কার্যকারিতার চেয়েও রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর অক্ষমতা বেশি দায়ী। সূত্রগুলো বলছে, রাশিয়ার সেনাবাহিনী ইলেকট্রনিক যুদ্ধের সক্ষমতা উন্নত করে একটি বিস্তৃত আকারের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলেছে।
যুদ্ধক্ষেত্রে এই কৌশলের প্রয়োগের কারণে ড্রোন হামলার বিপর্যয় থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছে রাশিয়া। সোভিয়েত আমলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার আধুনিকায়ন ঘটিয়ে আকাশযুদ্ধে ইউক্রেনের ওপর পুরোপুরি আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে মস্কো।
যুদ্ধ শুরুর দিকে সমন্বয় ও সরঞ্জামের ঘাটতি এবং দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণ–ব্যবস্থার কারণে চোরাগোপ্তা হামলা ও ড্রোন হামলায় বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল রাশিয়ান বাহিনী। টিবি-২ ড্রোন এত ক্ষুদ্র আর কম্পনহীন যে সোভিয়েত আমলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সেটি শনাক্ত করতে পারছিল না।
এ ছাড়া রাশিয়ার প্রথাগত সেনা ইউনিটগুলোর সঙ্গে ইলেকট্রনিক যুদ্ধ ইউনিটের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি ছিল। সে কারণেই প্রথম পর্বে ড্রোন যুদ্ধে ইউক্রেনীয় বাহিনী সাফল্য পেয়েছিল। কিন্তু ইলেকট্রনিক যুদ্ধব্যবস্থার সুবিধা কাজে লাগাতে পারায় জুলাই মাস থেকে পরিস্থিতি বদলে যেতে শুরু করে।
এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
গ্যাব্রিয়েল হোনরাডা এশিয়া টাইমস-এর জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তাবিষয়ক প্রতিবেদক