আমার দিনের একটা বড় অংশ যায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহারে।
এ কারণে আদার ব্যাপারী হয়ে জাহাজের খবর না নিতে চাইলেও এখন নিতে হয় ইকো সিস্টেমের কারণে।
এই এআই সিস্টেমগুলোর মাসিক সাবস্ক্রিপশন বেশ চড়া। গ্লোবালি মোট বিদ্যুৎ ব্যবহারের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় হচ্ছে বিভিন্ন ডেটা সেন্টারে, যেখানে এআই–সমর্থিত সিস্টেমগুলোর ব্যবহার বেড়েই চলেছে।
এই ব্যবহার ক্রমে বৃদ্ধি পাওয়ায় ‘প্রচলিত’এবং ‘সনাতন’পদ্ধতিতে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
এখন এই ‘বাড়তি চাহিদা’ মেটাতে প্রচলিত বিদ্যুৎ উৎপাদনপদ্ধতি যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে গুগল, অ্যামাজন, মাইক্রোসফটের মতো টেক-জায়ান্টরা আধুনিক ও নিরাপদ নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর ক্রয়ের দিকে ঝুঁকছে। কেনাকাটা চলছে নিউক্লিয়ার মার্কেটে।
আমার ধারণা, এই পদক্ষেপ তাদের নিজস্ব বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ তৈরি করবে, যেটা বিক্রি করা যাবে অন্য ডেটা সেন্টারে।
গবেষণা বলছে, গুগলের মতো কোম্পানি নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর থেকে উৎপাদিত অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিক্রি করে একটি নতুন ব্যবসা মডেল তৈরি করতে পারে।
সনাতন রিঅ্যাক্টরগুলোতে নিরাপত্তাজনিত সমস্যা থাকার কারণে আধুনিক নিউক্লিয়ার শক্তির দিকে এই ঝোঁক পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
যদিও নিউক্লিয়ার বর্জ্য একটি উদ্বেগের বিষয়, তবু এটা ফসিল জ্বালানি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের তুলনায় কম কার্বন নিঃসরণ করে। আধুনিক প্রযুক্তি নিউক্লিয়ার বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকেও আরও নিরাপদ এবং অনেকটাই কার্যকর করেছে।
বর্তমান নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরগুলো অনেকটাই উন্নত নিরাপত্তা মান অনুসরণ করে তৈরি করা হয়। গত কয়েক দশকে নিউক্লিয়ার প্রযুক্তিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে, যা এই শক্তি উৎসকে আগের তুলনায় অনেক বেশি নিরাপদ করেছে বলে ওয়ার্ল্ড নিউক্লিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের ডকুমেন্ট বলছে।
আধুনিক রিঅ্যাক্টরগুলোতে স্বয়ংক্রিয় নিরাপত্তাব্যবস্থা, উন্নত কোর ডিজাইন এবং ‘এক্সটেন্ডেড’ দুর্ঘটনা প্রতিরোধক্ষমতা রয়েছে।
এ ছাড়া কঠোর নিয়ন্ত্রক নীতিমালা ও নিয়মিত ‘ইন্সপেকশন’ এই শক্তি কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা আরও নিশ্চিত করে।
যদিও আধুনিক নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর অনেক বেশি নিরাপদ, তবু এর স্থাপন ও পরিচালনা একটি জটিল ও ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া।
এ ছাড়া জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার, ইন্ডাস্ট্রি ও গবেষকদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এআই ও নিরাপদ বিদ্যুৎ উৎপাদনের মধ্যে এই সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও গভীর হবে। উন্নত নিউক্লিয়ার প্রযুক্তি, যেমন ছোট মডুলার রিঅ্যাক্টর (এসএমআর) ও ফিউশন রিঅ্যাক্টর, ভবিষ্যতে আরও নিরাপদ ও দক্ষ বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা তৈরি করছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই বাড়তি ব্যবহার ও এর জন্য দরকারি ‘বিপুল’ পরিমাণ বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে টেক-জায়ান্টদের উন্নত ও নিরাপদ নিউক্লিয়ার শক্তির দিকে ঝোঁক একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।
এই পদক্ষেপ শুধু তাদের নিজেদের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানো নয়, বরং সামগ্রিক শক্তি খাতে একটি নতুন যুগের সূচনা করতে পারে।
‘এআই ইজ দ্য নিউ অয়েল’, অথবা ‘এআই হচ্ছে নতুন ইলেকট্রিসিটি’। সেদিক থেকে এই এআই আমাদের নতুন শক্তির পাশাপাশি শক্তির জন্য এআই জিনিসটাও সমার্থক।
রকিবুল হাসান টেলিকম ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক লেখক ও একটি ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা