উমর, আহাদের গল্প আর আজকের রাজনীতি

ঈদের ছুটি চলছে। কাজ নেই তেমন। এ ধরনের অলস সময়ে যা হয় আর কি—মুঠোফোন ঘাঁটতে ঘাঁটতে একটি ভিডিওতে চোখ আটকে গেল। লাল রঙের একটা ছাদখোলা এসইউভির ওপর দাঁড়িয়ে চারপাশে জমে যাওয়া মানুষগুলোর দিকে কমলা ছিটিয়ে যাচ্ছেন এক ব্যক্তি। তিনি যাচ্ছেন সংসদ নির্বাচনে সন্তানের মনোনয়নপত্র জমা দিতে। ওই ভদ্রলোক নিজেও ‘রাজনীতিবিদ’ এবং ছিলেন সংসদ সদস্য। দৃশ্যটি দেখে মনে পড়ে গেল আমার ছোটবেলার একটি স্মৃতি।

আমাদের পরিবার একেবারেই মিশুক ছিল না। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবারগুলোর স্বাভাবিক যে কালচার, এটা তার বড় একটি ব্যতিক্রম তো বটেই। কালেভদ্রে অতি ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন ছাড়া না যাওয়া হতো কোথাও, না তেমন কেউ আসতেন বেড়াতে। আমার বয়স যখন ছয় কি সাত হবে। বাবা একদিন বললেন ‘তোমাকে অনেক বড় একজন মানুষের বাসায় নিয়ে যাব।’

‘বড় মানুষ’বোঝাতে আমাদের বাড়িতে যা বলা হতো, তাকে শুদ্ধ বাংলায় লিখতে গেলে হবে—জ্ঞানে, গুণে, পাণ্ডিত্যে উজ্জ্বল আর আদর্শ, চিন্তা, বিশ্বাসের প্রতি প্রগাঢ় আস্থা ও একনিষ্ঠতায় অনন্য। ‘বড় লোক’ আর ‘ধনী লোকের’ পার্থক্য একেবারে ছোটবেলা থেকেই আমার মগজে গাঁথা। যা হোক, সেদিন যার কথা বাবা বলেছিলেন, তিনি একাধারে শিক্ষক, লেখক, চিন্তাবিদ, এমনকি খাঁটি দেশপ্রেমী একজন রাজনীতিবিদও বটে।

বাড়ির গেট পর্যন্ত গেল না গাড়ি। আমি আর বাবা হেঁটে গেলাম বেশ খানিকটা সরু পথ। দোতলা বা তিনতলা একটি পুরোনো বাড়ি, এখন আর স্পষ্ট মনে পড়ে না। বাড়ির নিচে আমাদের রিসিভ করার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন সৌম্য দর্শন একজন ছোটখাটো মানুষ। তাঁর মধ্যে কিছু একটা ছিল, বাবার ইশারার অপেক্ষা না করেই ছোট্ট আমি পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলাম তাঁকে।

ওপরে দুই কামরার ছোট একটি ফ্ল্যাট, বসার ঘরে বেতের দুটি চেয়ার আর কাঠের একটি চৌকি পাতা। উড়ে যাওয়া পর্দার ফাঁক গলে পাশের ঘরে যেটুকু নজর পড়ে, সেটিও একেবারেই সাদামাটা শোয়ার ঘর। বাড়িতে তিনি ছাড়া আর কাউকে দেখতে পেয়েছিলাম বলে মনে পড়ে না।

অলি আহাদ

আমাদের বাড়িও খুবই সাদামাটা; কিন্তু তারপরও তাঁর জীবনযাপন আলাদাভাবেই নজর কেড়েছিল আমার; আর সে কারণেই হয়তো এত বছর পর লিখতে বসেও মনে হচ্ছে যেন চোখের সামনেই ভাসছে সবটুকু। বাবার সঙ্গে তাঁর সেদিন দীর্ঘ আড্ডায় কী কথা হয়েছিল, সেটি বোঝার কোনো কারণ ছিল না, তবে এটুকু হলফ করে বলতে পারি, তাঁর জীবনযাপন গভীরভাবে ছাপ ফেলেছিল মনে। বলছিলাম বদরুদ্দীন উমরের কথা।

বর্ধমানের বিখ্যাত এক রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম উমরের। রাজনীতি নিয়ে ন্যূনতম পড়াশোনা আছে, এমন কেউ তাঁর বাবা আবুল হাশিমের নাম শোনেননি সেটি প্রায় অসম্ভব। আবুল হাশিম ছিলেন মুসলিম লীগের নেতা এবং চল্লিশ দশকের শেষ দিকে বাংলার প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক। একদিকে বাবা মুসলিম লীগের নেতা, অন্যদিকে বাংলার অনেক বিখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা জন্ম নিয়েছে এই পরিবারে সান্নিধ্যে এসে।

শৈশবে যেমন বাবার সঙ্গে মুসলিম লীগের জনসভায় দেখা গেছে তাঁকে, তেমনি আবার বাড়ির বাম ঘরানার রাজনীতিবিদদের সঙ্গে মিলে কমিউনিস্ট পার্টির রাজনৈতিক ক্লাসেও উপস্থিত হয়েছেন তিনি। ১৯৫৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনের প্রভাষক হিসাবে যোগদানের পর তরুণ উমর চলে যান অক্সফোর্ডে দর্শন, অর্থনীতি ও রাজনীতি পড়তে।

আমাদের সমাজে সাফল্য-ব্যর্থতার মাপকাঠি খুব সহজ। রাজনীতি করবে কিন্তু বেশুমার টাকার মালিক হবে না, বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থতারই ইঙ্গিত বহন করে। কিংবা রাজনীতিতে আর ভোটের মাঠে কালোটাকা, পেশিশক্তি, ভীতি ছড়ানো, প্রশাসন কেনা ইত্যাদি অস্ত্র ব্যবহার করে নিদেনপক্ষে একবার সংসদে যে ঢুকতে পারে না, তাঁকে রাজনীতিবিদের স্বীকৃতি দেওয়ার মতো ‘মূর্খ’ নয় আমাদের সমাজ।

ফিরে আসার পর তাঁর লেখা তিনটি গ্রন্থ সাম্প্রদায়িকতা, সংস্কৃতির সংকট এবং সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা ভীষণভাবে আলোচিত হয়। পরবর্তী সময়ে অবশ্য তাঁর প্রায় প্রতিটি লেখাই দেশ, সমাজ, রাজনীতি, ইতিহাস, সংস্কৃতিসহ বাঙালির জীবন, আত্মপরিচয় ও রাজনীতি বুঝতে প্রামাণ্য দলিল হয়ে থাকবে।

একদিকে অতি বিখ্যাত রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম, অন্যদিকে পাশ্চাত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা—কোনোটাই একচুল বদলাতে পারেনি মানুষটির নজরে পড়ার মতো অতিসাধারণ জীবনযাপন। পশ্চিমের বিশ্বখ্যাত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রিত সম্মানিত বক্তা হিসেবে তিনি যতটা স্বচ্ছন্দ, ঠিক ততটাই স্বচ্ছন্দ দেশের কোনো পাবলিক বাসে, লঞ্চের ডেকে অথবা ট্রেনের তৃতীয় শ্রেণির কামরায়।

কেউ কেউ মনে করেন ‘না’ বলতে পারা উমরের চরিত্রের অন্যতম একটি গুণ। তাঁর সঙ্গে প্রথম দেখা হওয়ার প্রায় দুই দশক পরে তাঁর এই ‘না’ বলতে পারার সঙ্গে পরিচয় হয় আমার, বাবার মৃত্যুর ঠিক তিন দিন পর। বলার অপেক্ষা রাখে না সেই পরিচয় খুব সুখকর মনে হয়নি আমার কাছে কিন্তু আজ বহু বছর পর পেছনে তাকালে মনে হয়, তাঁর সেই রূঢ় ‘না’ বলাটাই আসলে তিনি।

বদরুদ্দীন উমর

উমরের চিন্তা, আদর্শ আর রাজনীতির সঙ্গে আমার বাবার রাজনীতির দর্শন এক না হলেও যাঁর যাঁর চিন্তা ও বিশ্বাসের প্রতি শতভাগ সততা, সাদামাটা জীবনযাপন (বাবার ভাষায় প্লেইন লিভিং হাই থিঙ্কিং) আর পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ কাছাকাছি এনেছিল দুজনকে।

আমার বাবা রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান ছিলেন না। আমার দাদা ছিলেন ডিস্ট্রিক্ট রেজিস্ট্রার। চাচারা সবাই ৩০ ও ৪০ দশকে পশ্চিমের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে তিনজন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস আর দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন।

ছোটবেলায় চাচা-ফুফু কিংবা মামা-খালাদের যে জীবনাচার (লাইফস্টাইল) আমি দেখেছি, তাঁর সঙ্গে কোনো মিল ছিল না আমাদের। সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক পরিবার থেকে আসা, আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা শেষ করা আমার মা তাঁর আজন্ম যাপিত জীবন থেকে পুরোপুরি ভিন্ন এক জীবন অসাধারণভাবে মেনে নিয়েছিলেন। তাঁর মানিয়ে নেওয়ার একটি ছোট্ট উদাহরণ দিয়ে শেষ করছি।

২০০০-২০০১ সালের কথা। গুলশানে ফ্ল্যাট তখন আজকের মতো অতি দামি হয়ে ওঠেনি। মা তাঁর পেনশনের টাকা দিয়ে চমৎকার একটি ফ্ল্যাট বুকিং দিয়েছিলেন গুলশানে। বাবা স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে রাজনৈতিক আদর্শে তিনি বিশ্বাস করেন, একজন রাজনীতিকের যে জীবনাচার তিনি মেনে চলেন, তাতে উঠতি ব্যবসায়ীদের ক্লাবপাড়ায় তাঁর পক্ষে থাকা অসম্ভব; আর তাই এত বছরের সংসারে আলাদা হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। সংসার জীবনে এতটা কঠিন কথা বাবা আর কখনোই বলেননি। মা বাতিল করে দেন সেই বুকিং; কিন্তু সেটি নিয়ে কখনো কোনো কথা মাকে বলতে শুনিনি।

এ তো গেল এক ধারার রাজনীতির কথা। তখনো এই ধারার বাইরে থাকা রাজনীতিবিদ যে ছিলেন না, তেমন নয়। তবে আজকের মতো চরম নির্লজ্জ বহিঃপ্রকাশ তখন সত্যিই ছিল না। এর একটি বড় কারণ সম্ভবত এই যে তখনো করপোরেট রাজনীতির এতটা জয়জয়কার দেখা দেয়নি। যাঁরা রাজনীতিতে যুক্ত হতেন, তাঁদের বড় একটা অংশের শিক্ষাদীক্ষা, পারিবারিক ঐতিহ্য আজকের রাজনীতিবিদদের চেয়ে একেবারেই আলাদা ছিল।

তবে হ্যাঁ, এ প্রশ্ন উঠতেই পারে যে রাজনীতিবিদ হিসেবে এতক্ষণ যাঁদের কথা বললাম, তাঁরা কি সফল রাজনীতিবিদ? তাঁরা সফল কি ব্যর্থ সেই আলোচনায় যাওয়ার আগে এ দেশের মানদণ্ডে চোখ বুজে সফল বলা যায় এমন একজন রাজনীতিবিদের কথা বলি। তাঁর বাবা ছিলেন সোয়ারীঘাটের পান বিক্রেতা। বাবার সঙ্গে পান বিক্রির মধ্য দিয়ে ব্যবসায় হাতেখড়ি। পান বিক্রি অবশ্যই খারাপ কিছু নয়।

স্বাধীনতার পরও পান বেচেই সংসার চলত পরিবারটির। কিন্তু একপর্যায়ে একটি কোমল পানীয়ের এজেন্সি খুলে বসলেও নকল পানীয় বিক্রির অভিযোগ ওঠে তাঁদের বিরুদ্ধে। সে সময় পুলিশের হাতে সপরিবারে আটকও হন তাঁরা। জালিয়াতির অভিযোগে জেল খাটার পর ছাড়া পেয়ে সিমেন্টের ব্যবসায় নামেন তিনি। সেই ব্যবসাতেও সিমেন্টের সঙ্গে বালি আর মাটি মেশানোর এন্তার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে।

একপর্যায়ে শুরু করেন ফলের ব্যবসা। ১৯৯৪ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশনের কমিশনার নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন নেন এবং বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। ক্ষমতার ছত্রচ্ছায়ায় ফুলেফেঁপে উঠতে থাকে তাঁর ব্যবসা ও সম্পদ।

৯৯৯ সালের মধ্যেই তাঁর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত টার্নওভার দাঁড়ায় ৬০০ কোটি টাকায়। জোর করে মানুষের বাড়ি ও জমি দখল করে তালা ঝোলানোর ফলে তাঁর নামের সঙ্গে ‘তালা’ শব্দটি জুড়ে যায়। এমনকি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গোটা একটা হল পর্যন্ত গিলে ফেলেছেন তিনি।

বিভিন্ন জায়গায় জমি দখল করে একটির পর একটি বিশাল ভবন, মার্কেট, টাওয়ার নির্মাণে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। এমনকি কুখ্যাত এরশাদ শিকদারের সঙ্গেও ব্যবসা করেছেন এই রাজনীতিবিদ। ২০০১ সালে অল্প ভোটে নির্বাচনে হেরে বিদেশে গা ঢাকা দেন তিনি। ২০০৮ সালে মামলা জটিলতায় নির্বাচন করতে না পারলেও ২০১৪ সালে ঠিকই স্বতন্ত্র নির্বাচন করে এমপি হয়ে বসেন। এরপর ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ আবারও তাঁকে মনোনয়ন দিয়ে এমপি করে।

যখন ২০১৮ সালে তিনি এমপি হন। তার দুই বছর আগে থেকেই শারীরিক সমস্যার কারণে কথা বন্ধ হয়ে যায় তাঁর। কিন্তু তিনি সাংসদ হয়েছেন, আওয়ামী লীগের মতো বড় দল তাঁকে মনোনয়ন দিতে বাধ্য হয়েছে, এতটাই অপরিহার্য তিনি। যে রাজনীতিবিদের কমলা ছিটানোর কথা দিয়ে কলামটা শুরু করেছি, তিনিই হলেন সেই রাজনীতিবিদ। বলে রাখা ভালো—ব্যক্তি বদরুদ্দীন উমর, অলি আহাদ কিংবা হালের এই এমপি আমার আলোচনার বিষয় না। উদাহরণগুলো টানা হয়েছে রাজনীতির দুটি ধারা বোঝাতে। একটি ক্ষয়িষ্ণু, মৃতপ্রায় ধারা; অন্যটি সর্বগ্রাসী।

আমাদের সমাজে সাফল্য-ব্যর্থতার মাপকাঠি খুব সহজ। রাজনীতি করবে কিন্তু বেশুমার টাকার মালিক হবে না, বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থতারই ইঙ্গিত বহন করে। কিংবা রাজনীতিতে আর ভোটের মাঠে কালোটাকা, পেশিশক্তি, ভীতি ছড়ানো, প্রশাসন কেনা ইত্যাদি অস্ত্র ব্যবহার করে নিদেনপক্ষে একবার সংসদে যে ঢুকতে পারে না, তাঁকে রাজনীতিবিদের স্বীকৃতি দেওয়ার মতো ‘মূর্খ’ নয় আমাদের সমাজ।

সে কারণেই অবলীলায় প্রশ্ন তোলা যায় উমর বা আহাদ রাজনীতিবিদ হিসেবে কতটা সফল, যেখানে এসব রাজনীতিবিদ তাঁদের সফলতার গল্প নিয়ে উজ্জীবিত করে যান সেই সব তরুণকে, যাঁরা প্রান্তিক অবস্থা থেকে উঠে এসে রাতারাতি ভাগ্য বদলাতে চান রাজনীতিকে পুঁজি করে।

প্রশ্ন ওঠে সৎ, যোগ্য, মেধাবী তরুণদের রাজনীতিতে আকৃষ্ট কেন করতে পারছি না আমরা? উত্তর খুব সহজ। রাজনীতিতে যে মডেলকে আমরা প্রতিষ্ঠিত করেছি, সফল বলে স্বীকৃতি দিয়েছি, দুর্নীতি করে বানানো অঢেল সম্পদ আর ক্ষমতার অপব্যবহারকে যেভাবে তাঁদের ‘যোগ্যতা’ বলে মেনে নিয়েছি এবং দৃশ্যত সালাম করেছি, তাতে এই মডেলই হয়ে গেছে রাজনীতির মূলধারা; কিংবা বাংলাদেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে ‘নিউ নরমাল’।

বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা যে ধরনের রাজনীতিবিদের চাহিদা তৈরি করছে, বলা বাহুল্য, জোগানও আসছে সে রকমই। তাই এই ‘নিউ নরমাল’ নতুন করে রাজনীতি করতে চাওয়া বেশির ভাগ রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর কাছে অনেকটাই কাঙ্ক্ষিত, তাঁদের মনে কোনো ধরনের প্রশ্ন তৈরি করা দূরে থাকুক।

তবে ধারণা করি, রাজনীতির বাইরের নাগরিকদের প্রায় সবাই এই চরম স্খলনের কালেও এই নিউ নরমালকে অপছন্দ করেন, যদিও তার দৃশ্যমান কোনো বহিঃপ্রকাশ আমি দেখি না। কিন্তু এ কথা নির্দ্বিধায় বলাই যায় যে দীর্ঘকাল এমন পরিস্থিতি চলতে থাকা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য এক বিরাট ঝুঁকি তৈরি করবে। আজ যে রাজনীতিশূন্যতা নিয়ে নানা জায়গা থেকে উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে, তার পেছনেও এই নতুন বাস্তবতাই দায়ী বলে আমি মনে করি।

খুব বিরূপ পরিস্থিতিতে ক্রমাগত বাস করতে থাকলে মানুষ তার সহজাত প্রবণতা অনুযায়ী পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে অভিযোজিত করে ফেলতে শুরু করে। ফলে রাজনীতির নিউ নরমাল পরিস্থিতি মানুষ পছন্দ না করে ফেললেও সেটির সঙ্গেও নিজেদের অভিযোজিত করে ফেলে মানুষ। তখন সেই পরিস্থিতি মানুষের মধ্যে আর কোনো ক্ষোভ, বিরক্তি বা হতাশা তৈরি করে না। চরম দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির প্রতি একেবারে গা সওয়া হয়ে গিয়ে পরিবর্তনের তাড়নাহীন একটি জাতি নিজ রাষ্ট্রের সার্বিক পতনের জন্য যথেষ্টর চেয়ে অনেক বেশি বড় কারণ।

  • রুমিন ফারহানা সাবেক সংসদ সদস্য, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বিএনপির নেত্রী