মতামত

পুতিন ও ট্রাম্পের সত্যিই কি বিচার হবে?

২০১৭ সালে জার্মানিতে জি–২০ সম্মেলনে ভ্লাদিমির পুতিন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প
ছবি : রয়টার্স

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইউক্রেন থেকে শিশুদের তাড়িয়ে দেওয়ার মতো যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার দুই সপ্তাহ পর নিউইয়র্কের গ্র্যান্ড জুরি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে মুখ বন্ধ রাখতে অর্থ দেওয়াসংক্রান্ত একটি মামলায় অভিযুক্ত করেছেন।

এ মামলা দুটিতে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে রাজনীতির ওপর আইনের ক্রমবর্ধমান সম্ভাব্য ভয়ানক প্রাধান্য বিস্তারের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।

দুটি ঘটনাই যুগান্তকারী। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ গঠন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে যেকোনো সাবেক ও বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রে প্রথম ঘটনা। একইভাবে আন্তর্জাতিক আদালতগুলো এর আগে হাতে গোনা কয়েকটি দুর্বল দেশের সরকারপ্রধানদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিলেও পরাশক্তিগুলোর সরকারপ্রধানদের মধ্যে এই প্রথম কোনো নেতাকে গ্রেপ্তার করতে আদালত আদেশ দিয়েছেন।

এ দুটি ঘটনায় যদি দুজনের একজনও দোষী সাব্যস্ত না হন, তাহলেও চলমান আইনি পদক্ষেপগুলো এমন গুরুত্বপূর্ণ নজির সৃষ্টি করবে, যার সুদূরপ্রসারী প্রভাব থাকবে। এখন প্রশ্ন হলো, সেই নজিরগুলো সুখকর হবে কি না এবং সেগুলোর ফলাফল ভারসাম্যের দিক থেকে ইতিবাচক হবে কি না।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গঠিত নুরেমবার্গ ট্রায়াল থেকে এখন পর্যন্ত যুদ্ধকালীন কর্মকাণ্ডের আইনভিত্তিক জবাবদিহির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণই আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের মূল লক্ষ্য হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। অধিকাংশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অধীন। তার মানে দাঁড়ায়, এসব আদালতকে নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো দেওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচ স্থায়ী সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার সুযোগ নেই। কিন্তু আইসিসি তার গঠনগত নকশা অনুযায়ী জাতিসংঘের আওতাধীন নয়। যদিও রাশিয়া কখনোই আইসিসির এখতিয়ারকে স্বীকৃতি দেয় না।

আইসিসির কৌঁসুলি করিম এ এ খান মনে করছেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মানুষের মনে এ আশা জাগিয়ে তুলছে যে পুতিনকে ইউক্রেনে শিশুদের নির্যাতন করা এবং হয়তো আরও অনেক অপরাধে নির্দেশ দেওয়ার জন্য ‘জবাবদিহি’ করা হবে। এমনকি পুতিনকে যদি কোনো দিন হেগের আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে না–ও হয়, তারপরও এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইউক্রেনে আইসিসির ভাষায়, ‘ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ ঠেকাতে অবদান রাখবে।’

মামলার দুর্বলতার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, অ্যাটর্নি ব্র্যাগের ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ আছে এবং এই প্রেক্ষাপট সামনে রেখে মামলাটিকে রিপাবলিকান পার্টির লোকেরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা হিসেবে দাবি করছেন। এতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সরকারি নথি চুরি করার আরও যে মামলা আছে, তা–ও হালকা হয়ে যেতে পারে।

ইয়েল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন উপদেষ্টা হ্যারল্ড কোহ বলেছেন, এই পরোয়ানা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পুতিনের বৈধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে এবং তাঁকে আরও একঘরে করবে। অবশ্য মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক সাবেক আইন উপদেষ্টা ও বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের নীতিপ্রধান স্টিফেন পম্পার মনে করেন, পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি আন্তর্জাতিক মহলে ভয়ানক ‘নেতিবাচক প্রভাব’ ফেলবে।

পম্পার মনে করেন, এতে পুতিন আরও ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠতে পারেন। বিশেষ করে, যদি এই পরোয়ানা আদালতকে সমর্থনদানের প্রশ্নে আন্তর্জাতিক বিশ্বকে বিভক্ত করে ফেলে অথবা রাষ্ট্রগুলো যদি সুযোগ পাওয়ার পরও পুতিনকে গ্রেপ্তার করতে এবং হেগে হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে আইসিসির মর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে।

ট্রাম্পের বিচারকাজের মধ্যেও একই ধরনের ঝুঁকি আছে। ট্রাম্প যদি নিউইয়র্কের অপরাধ আইন লঙ্ঘন করে থাকেন, তাহলে কারাদণ্ড তাঁর প্রাপ্য। তিনি যে একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট, তা এ ক্ষেত্রে অর্থহীন এবং এ ধরনের একজন ক্ষমতাবান লোকের সাজা হওয়া আইনের শাসনের জন্য অধিক মর্যাদা বয়ে আনবে। এই অভিযুক্তি ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের ক্ষতি করতে পারে এবং প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই করার জন্য তাঁকে অযোগ্য করতে পারে।

তবে এর উল্টো প্রতিক্রিয়াও আছে। নিউইয়র্ক কাউন্টি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি আলভিন এল ব্র্যাগের এই মামলাকে ইতিমধ্যে ব্যাপকভাবে খুব দুর্বল মামলা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

মামলার দুর্বলতার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, অ্যাটর্নি ব্র্যাগের ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ আছে এবং এই প্রেক্ষাপট সামনে রেখে মামলাটিকে রিপাবলিকান পার্টির লোকেরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা হিসেবে দাবি করছেন। এতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সরকারি নথি চুরি করার আরও যে মামলা আছে, তা–ও হালকা হয়ে যেতে পারে।

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, ইংরেজি থেকে অনূদিত

জ্যাক গোল্ডস্মিথ হার্ভার্ড ল স্কুলের আইনের অধ্যাপক এবং হুভার ইনস্টিটিউশনের একজন সিনিয়র ফেলো