ইন্টারনেট ও ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর যোগাযোগব্যবস্থার অভূতপূর্ব বিকাশের ফলে একদিকে তথ্য আদান-প্রদান অনেক বেশি সহজ ও সুবিধাজনক হয়েছে, অন্যদিকে এই যোগাযোগমাধ্যমের ওপর ডিজিটাল নজরদারি, নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব বিস্তারেরও নানা রকম সুযোগ তৈরি হয়েছে। ইন্টারনেট কেন, কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়, তা নিয়ে লিখেছেন কল্লোল মোস্তফা
একসময় মনে করা হতো, প্রচলিত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ওপর সরকারের যে নিয়ন্ত্রণ থাকে, সে ধরনের নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্যের বাইরে তথ্য আদান-প্রদানের বিকল্প মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগব্যবস্থা। হয়তো সেই আকাঙ্ক্ষা একটা মাত্রা পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়েছে।
বিপুল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি স্বীকার না করে আজকের যুগে সরকারগুলোর পক্ষে তথ্যপ্রবাহে সরাসরি বাধা দেওয়া সহজ নয়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে ইন্টারনেট ও ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর যোগাযোগব্যবস্থা সব ধরনের নিয়ন্ত্রণ ও খবরদারির বাইরে।
ডিজিটাল প্রযুক্তি ও যোগাযোগব্যবস্থাকে সরকারবিরোধীরা যেমন তথ্য সংগ্রহ ও প্রচার-প্রচারণার কাজে লাগাতে পারে, সরকার বা অন্য যেকোনো প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি, সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানও একইভাবে নিজ নিজ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারে। সম্পদ, অর্থ ও ক্ষমতা যার যত বেশি, বাস্তব দুনিয়ার মতো অনলাইন বা ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ার ওপরেও তার পক্ষে তত বেশি নিয়ন্ত্রণ ও বেশি প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব হয়।
বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে জেনেও নিয়ন্ত্রণবাদী শাসকগোষ্ঠী কোনো কোনো ক্ষেত্রে গণবিক্ষোভ দমনের উপায় হিসেবে গোটা ইন্টারনেট-ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়। আবার দেশ থেকে ইন্টারনেটভিত্তিক জনপ্রিয় বিভিন্ন অ্যাপে প্রবেশ সুবিধা বন্ধ করে দিয়েও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানে বাধা তৈরি করে।
এ ছাড়া তারা মেটা বা গুগলের মতো তথ্যপ্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যবহারকারীদের পরিচয় জানতে চেয়ে এবং বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে কনটেন্ট বা আধেয় সরানো বা ব্লক করার জন্য সারা বছর ধরেই অনুরোধ করে থাকে।
বিশ্বজুড়ে ব্যবসা বিকাশের স্বার্থে এসব প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানও বিভিন্ন দেশের স্থানীয় আইনকানুন ও নীতিমালা মেনে চলার ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক স্বার্থ ও নিজস্ব নীতিমালা বিবেচনায় নানাভাবে সাড়া দিয়ে থাকে।
দেখা যায়, কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলোর দিক থেকে প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এ ধরনের অনুরোধ তুলনামূলক বেশি করা হয়। যেমন গুগলের স্বচ্ছতা প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০২৩ সালে রাশিয়া গুগলের কাছে ৬৩ হাজার ১০৯টি অনুরোধে মোট ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৬৫৭টি কনটেন্ট সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানায়। একই সময়ে গুগল যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে ৮০৯টি আবেদনের মাধ্যমে ১৯ হাজার ৬৩৪টি কনটেন্ট সরানোর অনুরোধ পায়।
তবে তথ্যপ্রবাহের ওপর নিয়ন্ত্রণবাদী সরকারের নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি এখন কেবল ইন্টারনেট, ইন্টারনেটভিত্তিক অ্যাপ কিংবা অ্যাপগুলোর কনটেন্ট সরানো বা ব্লক করার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বই কিংবা সংবাদপত্র নিষিদ্ধ করার মতো, ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি ও শাসনব্যবস্থার ধরনভেদে সরকারগুলো বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও অ্যাপস বিভিন্ন মাত্রায় ব্লক করে। কিন্তু ইন্টারনেটের ওপর নিয়ন্ত্রণ কায়েমের এটাই একমাত্র পদ্ধতি নয়।
সরকারের জন্য বিপজ্জনক তথ্যপ্রবাহে নানা ধরনের বাধা তৈরি করা ছাড়াও জনগণের চিন্তার ওপর নিয়ন্ত্রণ কায়েমের আরও যেসব উপায় আছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পরিকল্পিতভাবে জনগণকে নানা অগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ব্যস্ত রাখা, সরকারি বক্তব্য বা অবস্থানকে নিরপেক্ষ মতামত বা সংবাদ হিসেবে প্রচার করা, ভাড়াটে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি।
এ ধরনের কাজ প্রচলিত গণমাধ্যমে ব্যবহার করেও করা হয়। কিন্তু ইন্টারনেট মাধ্যমের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগিয়ে এই তৎপরতাগুলোকে প্রচলিত গণমাধ্যমের চেয়ে অনেক সহজে ও স্বল্প ব্যয়ে ব্যাপক ভিত্তিতে প্রয়োগ করা যায়।
সরকারগুলো ইন্টারনেটকে অনেক সময় ‘জনপ্রিয়’ মতামত তৈরির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। এর উদ্দেশ্য বহুবিধ: নাগরিক অসন্তোষ হ্রাস, সরকারি কেলেঙ্কারি থেকে জনগণের মনোযোগ সরানো, গণতন্ত্রের প্রলেপ দিয়ে রাষ্ট্রীয় নীতিমালার বৈধতা তৈরি বা সরকারি সিদ্ধান্তের পেছনে ঐক্যবদ্ধ জনসমর্থনের বিভ্রম তৈরি, বিরোধী পক্ষের দুর্নাম রটানো, ভিন্নমত দমন ইত্যাদি।
আর এসব লক্ষ্য পূরণের প্রাথমিক উপায় হলো অ্যাস্ট্রোটার্ফিং বা আসল অথবা জাল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে কোনো নির্দিষ্ট সাইটকে মন্তব্যের বন্যায় ভাসিয়ে বা সংখ্যার জোরে সরকারি পদক্ষেপকে বৈধতা দেওয়া।
অ্যাস্ট্রোটার্ফিং কথাটি এসেছে অ্যাস্ট্রোটার্ফ নামের খেলার মাঠের কৃত্রিম ঘাসের আচ্ছাদন প্রস্তুতকারী একটি প্রতিষ্ঠানের নাম থেকে। মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘স্পোর্টস গ্রুপ’-এর সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রোটার্ফ। এরা খেলার মাঠের জন্য কৃত্রিম তৃণ বা ঘাসের আচ্ছাদন তৈরি করে।
সরকার বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ তেমনই কৃত্রিমভাবে ‘তৃণমূলের’ সমর্থন দেখানোর জন্য ভাড়াটে বা দলীয় অনলাইন সমর্থকদের ব্যবহার করে সরকারি নীতিমালা বা অবস্থানের সপক্ষে অনলাইনে বিভিন্ন মন্তব্য ও পোস্টের মাধ্যমে এমন একটি আবহ তৈরি করে, যেন মনে হয় ওই নীতিমালা বা অবস্থানের পক্ষে ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে।
কর্তৃত্ববাদী শাসকদের ইন্টারনেট-জগতের ওপর প্রভাব বিস্তারের একটি উপায় হলো ইন্টারনেট ট্রল। বিভিন্ন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী মন্তব্য ও ছবির মাধ্যমে যারা ইন্টারনেটে বিভেদ তৈরি করে ও মানুষকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে, সেগুলোকে বলা হয় ‘ইন্টারনেট ট্রল’। তারা হলো অনলাইন-জগতের ‘গুন্ডা’। যেসব ব্যক্তিকে তারা সরকার বা ‘দেশবিরোধী’ মনে করে, তাদের ওপরেই আক্রমণ চালায়। তাদের অনেকেরই ফলোয়ার বা অনুসারীর সংখ্যা অনেক।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই ট্রলগুলো বেনামে থাকে। কিন্তু কিছু স্বনামেই পরিচালিত হয়, যারা অনেক ক্ষেত্রে আক্রমণের নেতৃত্ব দেয়। তারা কোনো ব্যক্তিকে আক্রমণ শুরুর পরেই দেখা যায় একগাদা বেনামি ট্রল-আক্রান্ত ব্যক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মূল অভিযোগটি ধরে অথবা তার সঙ্গে আরও নতুন কিছু অভিযোগ যুক্ত করে বারবার আক্রমণ করতে থাকে। বিশেষ করে নারীদের বিরুদ্ধে বেনামি আক্রমণগুলোর ক্ষেত্রে রগরগে যৌন হিংসাত্মক ভাষা ব্যবহার করা হয়। আক্রান্ত ব্যক্তি যত বিখ্যাত হন, আক্রমণ তত নোংরা হয়।
সরকারগুলোর পক্ষে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অভিমত সম্পর্কে জানা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে সহজ হয়ে গেছে। এই কাজে সরকারগুলো নিজস্ব সংস্থার মাধ্যমে নজরদারি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের সাহায্য নিয়ে থাকে।
এভাবে সংগৃহীত তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে আন্দোলন দমন থেকে শুরু করে দীর্ঘ মেয়াদে জনমত প্রভাবিত করা ইত্যাদি নানা ধরনের কাজে ব্যবহার করা হয়। কেউ কেউ মনে করেন, নজরদারির নতুন নতুন পদ্ধতি এবং সরঞ্জামের প্রধান সুবিধাভোগী হলো রাষ্ট্র।
২০১০ থেকে ২০১৩ সালের আরব বসন্ত ও ‘অকুপাই’ আন্দোলনের প্রাথমিক ধাক্কা এবং তা থেকে পাওয়া শিক্ষা নিয়ে অধিকাংশ রাষ্ট্রই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম-চালিত প্রতিবাদ ও ডিজিটাল আন্দোলনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ চীনের ‘গ্রেট ফায়ারওয়াল’-এর কথা বলা যায়। এটা আসলে বিভিন্ন ধরনের ফিল্টারিং এবং নজরদারি পদ্ধতির সমন্বয়ে তৈরি একটি ব্যবস্থা। এই গ্রেট ফায়ারওয়ালের মাধ্যমে ‘ডিপ প্যাকেট ইন্সপেকশন’ বা ডিপিআইয়ের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর তালিকা এবং কি-ওয়ার্ড নিরীক্ষা করা যায় এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সামাজিক আন্দোলন ও জমায়েতের ধরন শনাক্ত করা যায়।
এ ছাড়া চীন সম্প্রতি পুলিশের জন্য এমন একধরনের চশমা তৈরি করেছে, যা ব্যবহার করে আইন প্রয়োগের উদ্দেশ্যে নাগরিকদের মুখমণ্ডল তৎক্ষণাৎ শনাক্ত করা যায়। রাশিয়ার আছে এসওআরএম (সিস্টেম ফর অপারেটিভ ইনভেস্টিগেটিভ অ্যাকটিভিটিস) নামের একটি আইন।
এর মাধ্যমে বিনা পরোয়ানায় সব ধরনের অ্যানালগ এবং ইলেকট্রনিক যোগাযোগের ওপর পরিপূর্ণ নজরদারি চালানো যায়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং নিরাপত্তার নামে বিভিন্ন মাত্রায় নেটওয়ার্ক পর্যবেক্ষণ, বাল্ক ডেটা বিশ্লেষণ, সংগ্রহ এবং তালিকাভুক্ত করার কাজ করে।
গণতান্ত্রিক ও কর্তৃত্ববাদী—উভয় ধরনের রাষ্ট্রই ব্যাপক বিস্তৃত গণনজরদারির কাজে লিপ্ত থাকে। তবে আইনি সুরক্ষার মাত্রায় ও ধরনে এদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। যেমন ব্রিটেনের ইনভেস্টিগেটরি পাওয়ার অ্যাক্ট (আইপিএ) আইন অনুসারে, ব্রিটেনের জাতীয় নিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার্থে নিরাপত্তা এজেন্সিগুলো আড়ি পাততে পারে এবং ব্যক্তিগত গোপন তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।
কিন্তু এর জন্য সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা সংস্থার প্রধানকে ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করতে হয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আবার এর আইনি বৈধতা যাচাইয়ের জন্য একজন জুডিশিয়াল কমিশনারের কাছে পাঠাতে হয়। রাজনৈতিক ও আইনি—উভয় ধরনের এই তদারকি ব্যবস্থাকে বলা হয় ‘ডাবল-লক’ মোকানিজম।
নিরাপত্তা সংস্থাগুলো আড়ি পাতার ক্ষেত্রে এ প্রক্রিয়াগুলো যথাযথ মেনে চলছে কি না, তার তদারকির জন্য রয়েছে একজন স্বাধীন ‘ইনভেস্টিগেটরি পাওয়ারস কমিশনার’, যাকে সহযোগিতা করেন একদল ‘জুডিশিয়াল কমিশনার’।
কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে নাগরিকদের ওপর আড়ি পাতার ক্ষেত্রে সাধারণত এ ধরনের বহুস্তরভিত্তিক রাজনৈতিক ও আইনি সুরক্ষার কোনো বালাই থাকে না। দেখা যায়, নিরাপত্তা সংস্থাগুলো খেয়ালখুশিমতো জাতীয় নিরাপত্তার নামে নাগরিকদের ওপর আড়ি পাততে পারে। এর ফলে অনেক সময় আড়ি পাতার ক্ষমতার রাজনৈতিক অপব্যবহার ঘটে থাকে।
রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও সক্ষমতার সমন্বয়ে প্রযুক্তি এমন এক ‘ইলেকট্রনিক পুলিশি রাষ্ট্রব্যবস্থার’ জন্ম দিয়েছে, যার হাতে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় নাগরিকদের সম্পর্কে অনেক বেশি পরিমাণ ডেটা বা উপাত্ত থাকে। এর মধ্যে স্বাস্থ্যসম্পর্কিত তথ্য থেকে শুরু করে ভোগের আচরণ, ভোটারের আচরণ ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত থাকে।
অধিকাংশ রাষ্ট্রই নাগরিকদের মেটা ডেটা সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে কিংবা সরাসরি নাগরিকদের তাৎক্ষণিকভাবে অনুসরণ করতে পারে। এমনকি জাতীয় নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে করা হলেও যে মাত্রায় এবং যত বিস্তারিত আকারে নাগরিকদের সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয়, তাতে ব্যক্তিস্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা হুমকির মুখে পড়ে।
ইন্টারনেট ও ডিজিটাল প্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে নতুন ধরনের কর্তৃত্ববাদী ও নজরদারি পুঁজিবাদী তৎপরতার বিকাশ ঘটছে। নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য এগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি। জবাবদিহিহীন কর্তৃত্ব বাস্তব দুনিয়ার মানুষের জন্য যেমন ক্ষতিকর, ইন্টারনেটের ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ার জন্যও তা একইভাবে ভয়ংকর। বিশেষ করে বাস্তব ও ভার্চ্যুয়াল যখন একাকার হয়ে যায়, তখন তা আরও মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে।
বাস্তব দুনিয়ার কর্তৃত্ববাদী শাসনের মতো ডিজিটাল দুনিয়ায় কর্তৃত্ববাদকেও তাই প্রতিরোধের জন্য যথাযথ আইনি কাঠামো থেকে শুরু করে জনসচেতনতা ও গণনজরদারির ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
নিরাপত্তা সংস্থাগুলো যেন রাজনৈতিক ও আইনি তদারকি ছাড়া নাগরিকের ওপর নজরদারি করতে না পারে, নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও তাদের সংগৃহীত ডেটার সুরক্ষা বিষয়ে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
কল্লোল মোস্তফা লেখক ও গবেষক
সূত্র:
১. দ্য নেট ডিলিউশন: হাউ নট টুলিবারেট দ্য ওয়ার্ল্ড (পেঙ্গুইন, ২০১২), ইভজেনি মোরজোভ
২. সেন্সরড: ডেস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডাইভারশন ইনসাইড চায়নাস গ্রেট ফায়ারওয়াল (প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০১৮), মার্গারেট ই. রবার্টস
৩. আই এম আ ট্রল: ইনসাইড দ্য সিক্রেট ওয়ার্ল্ড অব দ্য বিজেপি’স ডিজিটাল আর্মি (জগারনট পাবলিকেশন, ২০১৬), স্বাতী চতুর্বেদী
৪. পলিটিকস অব ডিজিটাল সার্ভিল্যান্স, ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রাইভেসি, সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড ফরেন পলিসি স্টাডিজ, ২০১৮, হামিদ আকিন উনভার
৫. অ্যাস্ট্রোটার্ফিং: হাউ গভর্নমেন্টস ফ্যাব্রিকেট ‘পপুলার’ অপিনিয়ন অনলাইন, হাফপোস্ট, ২০১৬ অ্যান্টনি হান্টার ক্রুজ
৬. ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদ, নজরদারি পুঁজিবাদ ও মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার ভবিষ্যৎ, কল্লোল মোস্তফা, আদর্শ, ২০২২