মতামত

দক্ষিণ চীন সাগরের মতো চাঁদেও এলাকা দখল করতে চায় চীন

অভিযান শেষে পৃথিবীতে ফিরে আসা চীনের চন্দ্রযান
ছবি: রয়টার্স

চীন তার চন্দ্রাভিযান কর্মসূচির একটি নতুন বিশদ পথরেখা প্রকাশ করার পর আমেরিকান মহাকাশ কর্মকর্তারা বলছেন, দক্ষিণ চীন সাগরে কৃত্রিম দ্বীপ গড়ে চীনের সামরিক বাহিনী যেভাবে সেখানে আধিপত্য গড়ে তোলার প্রতিযোগিতায় নেমেছে, নতুন চন্দ্রাভিযান কর্মসূচির মাধ্যমে চীন চাদের মাটিতেও সেই একই ধরনের সীমানা দখলের খেলায় মেতে উঠতে পারে।

মার্কিন মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্র ন্যাশনাল অ্যারোনটিকস অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (নাসা) প্রশাসক বিল নেলসন সম্প্রতি পলিটিকো ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘বাস্তবতা হলো আমরা একটি মহাকাশ দখলের প্রতিযোগিতায় আছি।’ তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, বৈজ্ঞানিক গবেষণার নামে যদি চীনারা চন্দ্রপৃষ্ঠের কোনো একটি জায়গা দখল করে গেড়ে বসতে পারে, তাহলে তারা এখন যা বলছে, তাতেই থমকে থাকবে এমন সম্ভাবনা খুবই কম।

তারা (চীনারা) বলবে, ‘এটা আমাদের এলাকা, এখান থেকে দূরে থাকুন। আপনাদের যদি এ বিষয়ে সন্দেহ থাকে, তাহলে স্পার্টলি দ্বীপপুঞ্জে তারা কী করেছিল, সেদিকে একবার নজর বোলান।’

পলিটিকো ওয়াশিংটনের মহাকাশ নীতিনির্ধারণী মহলের আরও কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির যেসব উদ্ধৃতি দিয়েছে, তাতেও একই ধরনের বক্তব্য উঠে এসেছে। তবে ওয়াশিংটনে চীনের দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেঙ্গিউ এসব হুঁশিয়ারি বার্তাকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বহিঃস্থ মহাকাশ (আউটার স্পেস) কোনো কুস্তির মাঠ নয়।

বহিঃস্থ মহাকাশে অভিযান চালানো এবং এর শান্তিপূর্ণ ব্যবহার সমগ্র মানবজাতির সাধারণ কল্যাণনির্ভর বিষয় এবং তার সুবিধা পৃথিবীর সব মানুষের ভোগ করা উচিত। চীন সব সময়ই বহিঃস্থ মহাকাশের শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের পক্ষে কথা বলে; সেখানে অস্ত্রসজ্জার প্রতিযোগিতার বিরোধিতা করে এবং সেখানে সবার অংশগ্রহণে মানবগোষ্ঠীর জন্য কল্যাণকর একটি সর্বপক্ষীয় সম্প্রদায় গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে।’

লিউয়ের ভাষায় চীন ‘স্বাভাবিক ও বৈধ মহাকাশ অভিযান’ পরিচালনা করছে। এর মাধ্যমে তারা ২০২৮ সাল নাগাদ চঁাদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে একটি গবেষণা ঘাঁটি গড়ে তুলতে চায় এবং চন্দ্রপৃষ্ঠে পানি অনুসন্ধানের জন্য দূর থেকে নিয়ন্ত্রণযোগ্য গবেষণাযান ব্যবহার করতে চায়। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭২ সালে চঁাদের মাটিতে সর্বশেষ মানুষ পাঠানোর পর প্রথমবারের মতো ২০২৫ সালে আবার নভোচারী পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। চঁাদের দক্ষিণ মেরুতে পানি অনুসন্ধান করাও তাদের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে।

উ গত নভেম্বরে বলেছিলেন, আগামী ১০ বছরের মধ্যে চাঁদে নভোচারীদের পাঠানোর বিষয়ে চীন একটি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে ফেলেছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সেখানে চীনা নভোচারীরা যাওয়ার পর সেটি চীনা নভোচারীদের মঙ্গলগ্রহে যাত্রার ‘ট্রানজিট’ হবে। এ ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অস্বস্তি কাজ করছে। এটিকে তারা চীনের একটি নতুন শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা হিসেবে দেখছে।

চীনের মহাকাশবিষয়ক গবেষণা সংস্থা দ্য চায়না ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (সিএনএসএ) বলেছে, এ বছরই তারা তাদের চতুর্থ চন্দ্রাভিযান প্রকল্পের যাত্রা শুরু করবে এবং দ্বিতীয়বারের মতো ২০২৫ সালে চাঁদের মাটি থেকে কিছু নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে আনবে।

সিএনএসএ বলছে, ২০২৫ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত তারা তিনটি চন্দ্রাভিযান শেষ করবে এবং সেই মিশনগুলো ভবিষ্যতে চঁাদের মাটিতে চীনা নভোচারীদের অবতরণের জোরালো ভিত্তি হবে। চীনাদের চন্দ্রদেবী চ্যাংইর নামানুসারে বানানো চ্যাংই-৪ নভোযানটি চীন ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে উৎক্ষেপণ করে এবং সেটি ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে চঁাদের মাটিতে অবতরণ করে। ২০২০ সালে পাঠানো চ্যাংই-৫ সফলভাবে চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে ১.৭৩ কিলোগ্রাম নমুনা নিয়ে সফলভাবে ফিরে আসে। গত সোমবার সিএনএসএ শিগগিরই আরও রোবটচালিত নভোযান চাঁদে পাঠাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।

চ্যাংই-৬ নভোযানের প্রধান নকশাকার উ উইরেন বলেছেন, ২০২৫ সাল নাগাদ চ্যাংই-৬ চঁাদের উদ্দেশে রওনা হবে এবং কমপক্ষে দুই কেজি চঁাদের মাটিসহ নমুনা নিয়ে ফিরে আসবে।

তিনি বলেছেন, চ্যাংই-৭ চঁাদের দক্ষিণ মেরুতে পানির খোঁজে ২০২৬ সালে সেখানে নামবে এবং ঠিক একই স্থানে ২০২৮ সালে চ্যাংই-৮ নামবে। এরপর সেটি চ্যাংই-৭–এর সঙ্গে একযোগে সেখানে একটি গবেষণা ঘাঁটি তৈরি করবে।

উ গত নভেম্বরে বলেছিলেন, আগামী ১০ বছরের মধ্যে চাঁদে নভোচারীদের পাঠানোর বিষয়ে চীন একটি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে ফেলেছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সেখানে চীনা নভোচারীরা যাওয়ার পর সেটি চীনা নভোচারীদের মঙ্গলগ্রহে যাত্রার ‘ট্রানজিট’ হবে। এ ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অস্বস্তি কাজ করছে। এটিকে তারা চীনের একটি নতুন শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা হিসেবে দেখছে।

এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

  • জেফ পাও এশিয়া টাইমস–এর চীনবিষয়ক (হংকং) সম্পাদক