রমজান মাস রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুল (সা.) ছিলেন সব মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় দানশীল। যখন রমজান আসত, তখন হজরত জিবরাইল (আ.) প্রতি রাতেই রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর কাছে আসতেন, কোরআনের দারস তালিম করতেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রবাহিত বায়ু অপেক্ষা অধিক হারে দান–খয়রাত ও ভালো কাজ করতেন।’
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘রমজান এলে রাসুল (সা.) এত বেশি দান–দক্ষিণা করতেন, যেন তা প্রবাহিত বায়ু।’ (বুখারি: ৪৭১১; মুসলিম: ২৩০৮)
আল্লাহর রহমত পেতে সৃষ্টির প্রতি রহমশীল হতে হবে। প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমরা দুনিয়াবাসীর প্রতি রহম করো, আসমানওয়ালা তোমাদের প্রতি রহম করবেন।’ (তিরমিজি: ১৯২৪; আবু দাউদ: ৪৯৪১; আহমাদ: ৬৪৯৪)
মহান আল্লাহর নামাবলি আত্মস্থ করার বা ধারণ করার অর্থ হলো সেগুলোর ভাব ও গুণ অর্জন করা এবং সেসব গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্য নিজের কাজে, কর্মে, আচরণে প্রকাশ করা তথা নিজেকে সেসব গুণের আধার বা অধিকারী হিসেবে গড়ে তোলা
আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সিফাতে জামালি বা সৃজনশীল গুণাবলির অন্যতম প্রধান সিফাত রহমত। রহমত অর্থ দয়া, মায়া, কৃপা, করুণা, অনুকম্পা, অনুগ্রহ ইত্যাদি। কোরআন–হাদিসে এ শব্দের দুটি রূপ ব্যবহৃত হয়েছে, তা হলো ‘রহমান’ ও ‘রহিম’। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রহমান (আল্লাহ)! কোরআন শেখাবেন বলে, মানুষ সৃষ্টি করলেন।’ (সুরা-৫৫ আর রহমান, আয়াত: ১-৩)
আল্লাহ তাআলার অন্যতম প্রধান গুণ বা বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো রহমত। আল্লাহর গুণাবলিসমূহ দুই প্রকার: জামালি ও জালালি। দয়ামায়া, স্নেহ, করুণা, সৃজন, লালন ইত্যাদি হলো সিফাতে জামালি বা ইতিবাচক সৌন্দর্যমণ্ডিত গুণাবলি। মহিমা প্রতাপ, প্রভাব প্রতিপত্তি, প্রতিকার প্রতিবিধান, ধ্বংসলীলা, শাস্তিদান ইত্যাদি হলো সিফাতে জালালি বা নেতিবাচক সৌন্দর্যমণ্ডিত গুণাবলি।
রহমান অর্থ পরম করুণাময়। এ শব্দটি দুনিয়ার সব মুসলিম–অমুসলিম, বাধ্য–অবাধ্য, নারী–পুরুষ, জীব–নির্জীব সবার জন্যই সমভাবে প্রযোজ্য; যার দয়া বা রহমত কারও প্রতি একমুহূর্তের জন্যও বন্ধ করে দেন না—তিনি রহমান।
রহিম অর্থ অতীব মেহেরবান, অতিশয় দয়ালু। যাঁরা দুনিয়ার জীবনে আল্লাহ ও রাসুল (সা.)–কে মেনে ইসলামের অনুশাসন বা রীতিনীতি অনুসারে জীবনযাপন করেছেন, শুধু তাঁরাই মৃত্যুর পর কবর, মিজান, পুলসিরাত ও হাশরের ময়দানে আল্লাহর ‘রহিম’ নামক দয়া বা অনুগ্রহে ধন্য হয়ে নাজাত পেয়ে জান্নাতের যাবেন। যাঁরা ইচ্ছাকৃতভাবে কখনো ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতে মুয়াক্কাদা এমনকি সুযোগ পেলে নফলও আদায় করতে গাফিলতি করেননি। তাঁরাই হবেন এর অধিকারী।
আল্লাহ চান তাঁর বান্দা তাঁর গুণাবলি অর্জন করে সে গুণে গুণান্বিত হয়ে আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি সেই গুণের প্রকাশ ঘটাক। আল্লাহ তাআলা কোরআন মজিদে বলেন, ‘আল্লাহর রং! আর আল্লাহর রং অপেক্ষা চমৎকার আর কোনো রং হতে পারে?’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৩৮) যেহেতু মানুষ আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি, তাই তাকে খেলাফতের দায়িত্ব পালনের যোগ্য হতে হলে অবশ্যই সেসব গুণ অর্জন করতে হবে। আল্লাহর রং বা গুণ কী? তা হলো আল্লাহ তাআলার অসংখ্য গুণবাচক নাম। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে: নিশ্চয় আল্লাহ তাআলার নিরানব্বইটি নাম রয়েছে, যারা এগুলো আত্মস্থ করবে; তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুত্তাফাকুন আলাইহি)
মহান আল্লাহর নামাবলি আত্মস্থ করার বা ধারণ করার অর্থ হলো সেগুলোর ভাব ও গুণ অর্জন করা এবং সেসব গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্য নিজের কাজে, কর্মে, আচরণে প্রকাশ করা তথা নিজেকে সেসব গুণের আধার বা অধিকারী হিসেবে গড়ে তোলা। আল্লাহ আমাদের প্রতি দয়া করবেন, আমাদেরও তাঁর সৃষ্টির প্রতি দয়া করতে হবে। কোরআন মজিদে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘দয়ার বিনিময় দয়া ছাড়া আর কী হতে পারে?’ (সুরা-৫৫ আর রহমান, আয়াত: ৬০)।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
smusmangonee@gmail.com