খেয়ে-পরে বাঁচার মজুরিও শ্রমিকেরা কেন পাবে না?

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় ব্যাপক বৃদ্ধির কারণে গার্মেন্ট শ্রমিক সংগঠনগুলো মজুরি বোর্ড গঠন করে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছে
ছবি : প্রথম আলো

দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় ব্যাপক বৃদ্ধির কারণে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ভীষণ কষ্টের মুখে পড়েছেন। এ পরিস্থিতিতে দেশের গার্মেন্ট শ্রমিক সংগঠনগুলো মজুরি বোর্ড গঠন করে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছেন। সম্প্রতি গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (জি-স্কপ) ও ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিল (আইসিবি) ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা এবং ১০টি গার্মেন্ট শ্রমিক সংগঠনের জোট গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকার আন্দোলন ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়েছে। এর আগে গত বছরের মাঝামাঝি মিরপুর, উত্তরাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পোশাকশ্রমিকেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে দ্রব্যমূল্য হ্রাস ও মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন।

এ অবস্থায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ২৬ জানুয়ারি মজুরি বোর্ড গঠনের লক্ষ্যে শ্রমিক ও কারখানা মালিকপক্ষের প্রতিনিধিদের নামের তালিকা চেয়ে চিঠি পাঠানোর খবর প্রকাশিত হয়েছে। যথারীতি পোশাক কারখানার মালিকদের পক্ষ থেকে বলা শুরু হয়ে গেছে যে গ্যাস, বিদ্যুতের দাম দফায় দফায় বাড়ার পর নতুন মজুরি তাদের উপর বাড়তি চাপ তৈরি করবে, তাদের ব্যবসার প্রতিযোগিতা সক্ষমতা আরও কমে যাবে ইত্যাদি। (গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর উদ্যোগ, আসছে নতুন মজুরি বোর্ড, দা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩)

এই বিষয়টি অবশ্য নতুন কিছু না, মজুরি বৃদ্ধির দাবি উঠলেই মালিকগোষ্ঠীর দিক থেকে শঙ্কা প্রকাশ করা হয় যে, মজুরি বাড়ালেই তাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে যাবে, তাদের অনেকের ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হবে, ফলে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে যাবে ইত্যাদি। অনেকের নিশ্চয়ই মনে আছে, ২০০৬ সালে যখন গার্মেন্ট সেক্টরের ন্যূনতম মজুরি ৯০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৬৬২ টাকা করা হয়েছিল (শ্রমিকেরা চেয়েছিলেন ৩ হাজার টাকা) তখনও এই শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল, এরপর ২০১০ সালে ৩ হাজার টাকা, ২০১৩ সালে ৫ হাজার ৩০০ টাকা এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালে ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা ধার্য করার সময় তৈরি পোশাকশিল্প ধ্বংসের জিকির তোলা হয়েছিল। বাস্তবে তৈরি পোশাকশিল্প ধ্বংস হয়নি আর লাখ লাখ শ্রমিকও বেকার হননি।

মজুরি বাড়ালে শিল্প ধ্বংস হওয়া কিংবা বেকারত্ব বেড়ে যাওয়ার বিতর্কের বাইরে ভিন্ন একটি দিক থেকেও মজুরি প্রশ্নটি বিবেচনা করা দরকার। পণ্য উৎপাদনের জন্য শ্রম ছাড়াও আরও অনেক উপাদানের প্রয়োজন হয়, সেগুলোর মূল্য বৃদ্ধি হলে মালিকপক্ষ কী করে সেই দিকটিতে সবার মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাই। পণ্য উৎপাদনের অন্যান্য উপকরণ যেমন সুতা, কাপড় ও রং ইত্যাদি কাঁচামাল, জ্বালানি কিংবা যন্ত্রপাতির দাম যখন বেড়ে যায়, তখন কি মালিক পক্ষ সেই পণ্যগুলোর বিক্রেতাদের বলতে পারে, আমরা বাড়তি দাম দেব না, এ রকম বাড়তি দাম দিলে আমাদের লোকসান হবে, আমরা প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে পারব না!

সামান্য কিছু মজুরি বৃদ্ধির জন্য শ্রমিকদের দিনের পর দিন রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করতে হয়, মালিকগোষ্ঠী ও পুলিশের নিপীড়নের শিকার হতে হয়। বাংলাদেশে অর্থনীতির উচ্চ প্রবৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু সেই প্রবৃদ্ধির ভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমজীবী মানুষের ভাগে জুটছে না। দেশের অর্থনীতির সুষম বিকাশের জন্য অবিলম্বে দ্রব্যমূল্য ও জীবনযাপনের ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মানবিক জীবনযাপনের জন্য সকল খাতের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের কৌশল দাঁড় করাতে হবে এবং প্রতিবছর সেই অনুযায়ী মজুরি সমন্বয় করতে হবে।

বাজার অর্থনীতির নিয়মেই কিন্তু তা পারে না। প্রকৃতই যদি কাঁচামাল বা যন্ত্রপাতির দাম বাড়ার জন্য মালিকদের লোকসানের মুখে পড়ার উপক্রম হয়, তখন মালিক পক্ষ বাধ্য হয় বাড়তি খরচ পুষিয়ে নেওয়ার জন্য  পণ্যের দাম বাড়াতে অথবা উৎপাদনের কৃতকৌশলের উন্নয়ন ঘটানোর মাধ্যমে কম খরচে বেশি পণ্য উৎপাদন করতে। যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল বা অন্য যেকোনো উপকরণ কেনার বেলায় কারখানামালিক বাড়তি দাম প্রদান করলেও টালবাহানা কেবল শ্রমিকের কাছ থেকে কেনা শ্রমশক্তির ন্যায্য দাম পরিশোধ করার বেলায়!

আর দশটা পণ্যের মতোই শ্রমশক্তির দাম শ্রমশক্তির উৎপাদন ব্যয়ের ওপর নির্ভর করে। শ্রমশক্তির উৎপাদন ব্যয় কীভাবে নির্ধারিত হয়? শ্রমিককে শ্রমিক হিসেবে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এবং শ্রমিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যে খরচ পড়ে, তা–ই হলো শ্রমশক্তির উৎপাদনের ব্যয়। কাজেই শ্রমিকের শ্রমের দাম তার নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম দিয়ে নির্ধারিত। এখন শ্রমিককে যদি তার খরচ করা শ্রমশক্তি পুনরুৎপাদনের জন্য যতটুকু খাদ্য, পুষ্টি, বিশ্রাম, আনন্দ ও বিনোদনের প্রয়োজন হয়, তা ক্রয় করার জন্য ন্যূনতম প্রয়োজনীয় মজুরিটুকু প্রদান করা না হয়, তাহলে শ্রমিক ও তাঁর পরিবারকে কম খেয়ে কম পরে সেই একই পরিমাণ শ্রমশক্তি পুনরুৎপাদন করতে হয় বলে শ্রমিক ও তার পরিবার অপুষ্টিতে ভোগে, তাদের জীবনশক্তি কমতে থাকে, শরীর ক্ষয় হতে থাকে, সব মিলিয়ে শ্রমিক ও তাঁর পরিবার হয়ে পড়ে জীর্ণ–শীর্ণ।

বর্তমানে বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষদের পরিস্থিতি কী? তাঁদের যে মজুরি দেওয়া হয়, তা কি মানবিক জীবনযাপন করে শ্রমশক্তি পুনরুৎপাদনের জন্য যথেষ্ট? বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)–এর সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, খাদ্য, বাসস্থান ও চিকিৎসাসহ মৌলিক চাহিদা পূরণে যতটা প্রয়োজন, তার চেয়ে অর্ধেক আয় করেন দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকেরা। ২০২২ সালের এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে তাঁরা মাসে গড়ে ৯ হাজার ৯৮৪ টাকা আয় করেছেন। এ সময় তাদের ‘লিভিং ওয়েজ’ বা মোটামুটি মানসম্মত জীবনযাপনের জন্য যে আয় দরকার, তা বসবাসের এলাকাভেদে ছিল ১৯ থেকে ২৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ, প্রকৃত আয় ও ন্যূনতম চাহিদা পূরণে দরকারি অর্থ চাহিদার মধ্যে পার্থক্য ছিল ৫১ থেকে ৬০ শতাংশ। (মানসম্মত জীবনযাপনে যা দরকার, তার চেয়ে অর্ধেক আয় করেন পোশাকশ্রমিকেরা: সানেম, ১ জানুয়ারি ২০২৩, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন বাংলা)  

গত বছর বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) করা গবেষণা অনুযায়ী, ঢাকার কেন্দ্রস্থলে বসবাসরত একজন ব্যক্তির মাসিক খাবারের খরচ ৫ হাজার ৩৩৯ টাকা। ফলে চারজনের একটি পরিবারের ক্ষেত্রে এই খরচ দাঁড়ায় ২১ হাজার ৩৫৮ টাকা। আর যদি কোনো পরিবার পুরো মাসে একবারও মাছ, গরুর মাংস, খাসির মাংস ও মুরগি না খায়, তাহলেও খরচ ৮ হাজার ১০৬ টাকা। খাবারের সঙ্গে ঘরভাড়া, গ্যাস-বিদ্যুতের বিল, চিকিৎসা ব্যয়, স্বাস্থ্য সুরক্ষার পণ্য ক্রয়, সন্তানের পড়ালেখার খরচ, যাতায়াত, মুঠোফোন ইত্যাদি বাবদ খরচ যোগ করলে ঢাকার আশপাশের এলাকায় চার সদস্যের একটি পরিবারের মাসিক খরচ আরও অনেক বেশি। বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা তো দূরের কথা, দেশের কোনো শিল্প খাতের শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরিই স্রেফ চার সদস্যের পরিবারের এক মাসের খাবারের খরচ অর্থাৎ ২১ হাজার ৩৫৮ টাকার কাছাকাছি নয়।

এমনকি মাছ, গরুর মাংস, খাসির মাংস ও মুরগি বাদ দিয়েও মাসিক ৮ হাজার ১৬ টাকা খাবার খরচও কোনো কোনো খাতের শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি দিয়ে মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। গত বছর  আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যেখানে ন্যূম্নতম মজুরি আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমার নিচে। শুধু তাই নয়, ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যায়ে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মজুরি বৃদ্ধি না পাওয়ায় বাংলাদেশের শ্রমিকদের প্রকৃত ন্যূনতম মজুরি এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হারে কমেছে।

প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে শ্রমিক পরিবারের চলছে কী করে? এর উত্তর হলো—কম খেয়ে, কম পরে, নিজেদের জীবনী শক্তি ক্ষয় করে, মানবেতর জীবনযাপন করে। সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের জীবনযাপনের জন্য যে সব উপকরণ শ্রমিক পরিবারের জন্য অত্যাবশ্যক, মজুরি তার তুলনায় অনেক কম হওয়ার কারণে শ্রমিক পরিবারের পক্ষে সেসব উপকরণ সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। এ বিষয়ে গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির এক গবেষণা থেকে দেখা যায়—ভালো মানের চাল, সবজি, মাছ, মাংস কখনোই শ্রমিকের আওতায় থাকে না। দাম বেশি হওয়ায় আমিষজাতীয় খাবার কম খেতে পান শ্রমিকেরা। কর্মশক্তির জন্য শর্করাজাতীয় খাবারের ওপরই তাঁরা নির্ভর করেন বেশি। কিন্তু আটা, ময়দা, চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় সেই শর্করাজাতীয় খাবারের পরিমাণও কমাতে হচ্ছে তাঁদের। ফলে শ্রমিকের শরীরে পুষ্টিঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। (পোশাকশিল্পের সুবাতাস শুধু মালিকদের জন্য, ১ জুলাই ২০২২, প্রথম আলো) সুষম খাবার না খেয়ে, সন্তানের শিক্ষার পেছনে প্রয়োজনীয় ব্যয় কাটছাঁট করে, অসুখবিসুখ হলে যথাযথ চিকিৎসা না করে, সুস্থ বিনোদনের জন্য তেমন অর্থ ব্যয় না করেই কোনো রকমে চলতে থাকে, ক্ষয় হতে থাকে শ্রমিক ও তার পরিবারের জীবন।

নির্মম বাস্তবতা হলো, কারখানার মালিক ও তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তিরা আর সব কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিকতার বিষয়টি বুঝলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে যে শ্রমশক্তির উৎপাদন খরচ বাড়ে এবং তার কারণে মজুরি বা বেতন বৃদ্ধির যৌক্তিকতা তৈরি হয়, তা বুঝতে নারাজ। তাঁরা মাথা নাড়াতে নাড়াতে বারবার একটাই মুখস্থ কথা বলতে থাকেন—সবই বুঝলাম, কিন্তু মজুরি বাড়ালে তো কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে! বুঝে বলুন না বুঝে বলুন, আলটিমেটলি তাঁদের এই অবস্থানের অর্থ একটাই—শ্রমজীবী মানুষ যেন ‘শিল্পের স্বার্থে’ অর্থাৎ কারখানা মালিকের মুনাফা অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে আরেকটু যেন কম খেয়ে, কম পরে, সন্তানের শিক্ষা, চিকিৎসা ও বিনোদনের খরচ আরেকটু কমিয়ে হলেও আগের মূল্যেই তার শ্রমশক্তিটুকু বিক্রি করেন! আর এভাবে নিয়মিত উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে শ্রমশক্তি বিক্রি করতে করতে শ্রমিক ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা যদি অপুষ্টিতে ভোগেন, যদি রোগাক্রান্ত হয়ে যান, যদি জীর্ণশীর্ণ হয়ে অল্প বয়সেই কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন, তাতে তাঁদের কিছুই যায় আসে না!

পরিতাপের বিষয় হলো বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের অর্ধশতাব্দী পরেও জাতীয় ন্যূনতম মজুরি বলে কোনো কিছু এখন পর্যন্ত ধার্য করা হয়নি, বেশির ভাগ সেক্টরই ন্যূনতম মজুরির আওতার বাইরে থেকে গেছে। যে অল্প কয়েকটি সেক্টরে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে সে ক্ষেত্রেও শ্রমিকের মানবিক জীবনযাপনের চেয়ে মালিকপক্ষের মুনাফা নিশ্চিত করার দিকেই জোর দেওয়া হয়েছে বলে শ্রমিক সংগঠনগুলোর অভিযোগ। বর্তমানে ৪২টি খাতের জন্য ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা আছে, যার মধ্যে ১৮টি খাতের ন্যূনতম মজুরিকাঠামোর নির্ধারিত পাঁচ বছর সময়সীমা পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে ১০টির মেয়াদ ১০ বছর পেরিয়েছে। (ক্রয়ক্ষমতা কমছে, কষ্টে শ্রমিকেরা, প্রথম আলো, ১৬ আগস্ট ২০২২)

শ্রম আইন ২০০৬ অনুসারে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে ‘জীবনযাপন ব্যয়, জীবনযাপনের মান, উৎপাদন খরচ, উৎপাদনশীলতা, উৎপাদিত দ্রব্যের মূল্য, মুদ্রাস্ফীতি, কাজের ধরন, ঝুঁকি ও মান, ব্যবসায়িক সামর্থ্য, দেশের এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় বিবেচনা’ করার কথা বলা হলেও তার জন্য কোনো স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য ফর্মুলা দাঁড় করানো হয়নি, বরাবরই বিভিন্ন সংঘবদ্ধ শক্তির ক্ষমতার জোর ও অস্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন সেক্টরের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ বা পুননি৴র্ধারণ করা হয়। আর সামান্য কিছু মজুরি বৃদ্ধির জন্য শ্রমিকদের দিনের পর দিন রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করতে হয়, মালিকগোষ্ঠী ও পুলিশের নিপীড়নের শিকার হতে হয়। বাংলাদেশে অর্থনীতির উচ্চ প্রবৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু সেই প্রবৃদ্ধির ভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমজীবী মানুষের ভাগে জুটছে না। দেশের অর্থনীতির সুষম বিকাশের জন্য অবিলম্বে দ্রব্যমূল্য ও জীবনযাপনের ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মানবিক জীবনযাপনের জন্য সকল খাতের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের কৌশল দাঁড় করাতে হবে এবং প্রতিবছর সেই অনুযায়ী মজুরি সমন্বয় করতে হবে।

  • কল্লোল মোস্তফা বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবেশ ও উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক লেখক, প্রকাশিত গ্রন্থ: ‘বাংলাদেশে উন্নয়নের রাজনৈতিক অর্থনীতি’, ‘ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদ, নজরদারি পুঁজিবাদ ও মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার ভবিষ্যৎ’। ই-মেইল: kallol_mustafa@yahoo.com