সপ্তাহখানেক আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, গাজা যুদ্ধে শিগগিরই ‘অস্ত্রবিরতি’ হতে যাচ্ছে এবং ৪ মার্চের মধ্যেই তা কার্যকর হবে। নিউইয়র্কে আইসক্রিম খেতে খেতে বাইডেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আমাকে বলেছেন, আমরা যুদ্ধবিরতি চুক্তি করার খুব কাছাকাছি আছি।’
বাইডেন যে আইসক্রিম খাচ্ছিলেন, সেটি মিষ্টি থাকুক না থাকুক; গাজার ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধে তাঁর প্রকৃত অবস্থান যে মোটেও মিষ্টি ছিল না, তা বোঝা যাচ্ছে। বাইডেনের বক্তব্যের পরপরই তাঁর প্রশাসনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছিলেন, সাময়িকভাবে যুদ্ধ স্থগিত করার প্রস্তাব ইসরায়েল ‘মৌলিকভাবে সম্মত হয়েছে’।
কিন্তু ৪ মার্চ পর্যন্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের পরিচালক কায়রোয় শান্তি আলোচকদের পাঠাতে অস্বীকার করেছে। অথচ কায়রোতেই হামাসের সঙ্গে শান্তি আলোচনা চলমান রয়েছে।
অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির পথ খুঁজে বের করার বিষয়ে অগ্রগতি দাবি করার বিষয়ে বাইডেন প্রশাসনের আগ্রহ ইঙ্গিত দেয়, তারা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার অবসানের বিষয়ে কী পরিমাণ বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ চাপ অনুভব করছে।
একই সঙ্গে রাফাহ এলাকায় জড়ো হওয়া শরণার্থীদের ওপর নতুন হামলা ঠেকানো, গাজা অবরোধের অবসান এবং তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাপক মাত্রার মানবিক সহায়তার অবাধ ব্যবস্থার বিষয়েও চাপে আছে বাইডেন প্রশাসন।
৪ মার্চের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আশা নিরর্থক হয়েছে। এখন ১০ মার্চ শুরু হতে যাওয়া পবিত্র রমজানের শুরু থেকে তা কার্যকরের আশা করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এখনো সে ধরনের অস্ত্রবিরতির চুক্তি অধরা রয়ে গেছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে, বাইডেন কাতার এবং মিসরের নেতাদের বলেছেন, যুদ্ধবিরতির বিষয়ে তিনি ইসরায়েলের ওপর চাপ দিয়ে যাচ্ছেন।
তবে ইসরায়েলের ওপর বাইডেন চাপ দিচ্ছেন বলে যে দাবি করা হচ্ছে, তার বিশ্বাসযোগ্যতা ক্রমেই ফিকে হয়ে যাচ্ছে। কারণ, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যতবার যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব উঠেছে, ততবারই যুক্তরাষ্ট্র তাতে ভেটো দিয়েছে।
সর্বশেষ গত ২০ ফেব্রুয়ারি নিরাপত্তা পরিষদে আরব গ্রুপের পক্ষ থেকে আলজেরিয়া যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব তুলেছিল। সেই প্রস্তাবে বেসামরিক লোকদের ওপর ইসরায়েলের সব ধরনের হামলা এখনই বন্ধের প্রস্তাব করেছিল।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তাতে ভেটো দেয়। শুধু তা–ই নয়, গাজায় বেসামরিক লোকদের ওপর হামলা চালানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র এখনো ধারাবাহিকভাবে অর্থ এবং অস্ত্র সমানতালে দিয়ে যাচ্ছে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত বাইডেনের দূত লিন্ডা টমাস গ্রিনফিল্ড আলজেরিয়ার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট দেওয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সেখানে বিকল্প একটি প্রস্তাবের খসড়া পেশ করেছেন। তিনি দাবি করেন, তাঁর পেশ করা খসড়া প্রস্তাবটিও অস্ত্রবিরতিকে সমর্থন করে।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের পেশ করা প্রস্তাবে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের গণহত্যা চালানো অবিলম্বে বন্ধ করা কিংবা স্থায়ী যুদ্ধবিরতির কোনো আহ্বান নেই। সে প্রস্তাবে রাফায় ইসরায়েলি আক্রমণে বাধা দেওয়ার কথা নেই। গাজায় ইসরায়েলি অবরোধের অবসান ঘটানোর কথা নেই।
মার্কিন খসড়ার অনুচ্ছেদগুলোতে বাইডেন প্রশাসনের প্রকৃত উদ্দেশ্য উঠে এসেছে। ইসরায়েলের হামলা চালিয়ে যাওয়া এবং অস্ত্রবিরতি হলেও তা সীমিত সময়ের জন্য করাকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি তাদের খসড়ায় উঠে এসেছে।
মার্কিন প্রস্তাবটি গাজার বিরুদ্ধে ইসরায়েলি গণহত্যার যুদ্ধের সমাপ্তিকে মাথায় রেখে কিংবা কায়রোতে চলমান আলোচনায় অস্ত্রবিরতি চুক্তি সম্পাদনের কথা মাথায় রেখে ডিজাইন করা হয়নি।
মার্কিন খসড়ার অনুচ্ছেদগুলোতে বাইডেন প্রশাসনের প্রকৃত উদ্দেশ্য উঠে এসেছে। ইসরায়েলের হামলা চালিয়ে যাওয়া এবং অস্ত্রবিরতি হলেও তা সীমিত সময়ের জন্য করাকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি তাদের খসড়ায় উঠে এসেছে।
মার্কিন খসড়া প্রস্তাবে ‘যুদ্ধবিরতি’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, যদিও হোয়াইট হাউস কয়েক মাস ধরে ইসরায়েলের ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পরও একবারও ইসরায়েলকে বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে বলেনি।
এই খসড়ায় তারা ‘যত দ্রুত সম্ভব’ যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর কথা বলেছে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট করে কোনো তারিখ বা সময় উল্লেখ করেনি। সেখানে স্থায়ী কোনো যুদ্ধবিরতির কথাও বলা হয়নি।
অর্থাৎ একটি ধোঁয়াশাপূর্ণ ভাষায় প্রস্তাবটি তৈরি করা হয়েছে, যা প্রকারান্তরে ইসরায়েলকে তার গণহত্যা অনির্ধারিত সময় পর্যন্ত চালিয়ে যেতে সমর্থন দেবে।
● ফিলিস বেনিস ওয়াশিংটন ডিসিতে ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্টাডিজের ফেলো
আল–জাজিরা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে অনূদিত