সামরিক শক্তি দিয়ে ফিলিস্তিনিদের দমানো যাবে না

গাজায় স্থল অভিযানে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর ট্যাংক
ছবি: এএফপি

৭ অক্টোবরের হামলার পর ইসরায়েল নিঃসন্দেহে ধাক্কা খেয়েছে এবং এটি এখন স্পষ্ট, ফিলিস্তিনে তারা সামরিক অভিযান চালিয়ে এলেও এ সংকটের সমাধান হবে না।

ইসরায়েল ৭ অক্টোবরের আগে থেকেই বিভক্ত জাতি ছিল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তাঁর বিচার বিভাগীয় অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে ৯ মাস ধরে ইসরায়েলি নাগরিকদের টানা বিক্ষোভ চলছিল। এর জেরে ইসরায়েলি মেরুকরণ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ছিল। নেতানিয়াহুর সরকারের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভের পরিসর বলা যায় ইসরায়েলের অর্ধেকের বেশি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। সেনাবাহিনী, মোসাদের সাবেক কর্মকর্তাদের পাশাপাশি অন্য পেশাজীবীরাও এতে শরিক হয়েছেন।

মনে হচ্ছিল, মাস কয়েকের মধ্যেই নেতানিয়াহুর সরকারের পতন হয়ে যাবে। তাঁর সরকারের বিচারিক আইন পরিবর্তনের বৈধতার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিতে যাচ্ছিলেন, সেদিকেই সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল। মিসরের গোয়েন্দারা হামাস হামলা চালাতে পারে বলে ইসরায়েলকে সতর্ক করলেও কেউ গাজার দিকে তখন নজর দেয়নি। কিন্তু ৭ অক্টোবরের হামলার পর সবার দৃষ্টি এখন যুদ্ধের দিকে। গাজায় সামরিক অভিযান চালানোর মধ্য দিয়ে ইসরায়েল শেষ পর্যন্ত কী করতে চায়, সেটিই এখন সবার কৌতূহলের বিষয়।

ইসরায়েলের একটি অভ্যন্তরীণ নথি গত ১৩ অক্টোবর দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এসেছে। সেখানে ‘হামাসের প্রত্যাশিত পরাজয়ের’ পর ইসরায়েল কী করবে, তার একটি পরিকল্পনার কথা বলা আছে। সেই নথিতে বলা হয়েছে, গাজায় সামরিক অভিযান মূলত তিনটি ধাপে পরিচালনা করা হবে।

প্রথম ধাপে গাজার উত্তরাঞ্চলে নিরবচ্ছিন্নভাবে বোমাবর্ষণ করার কথা বলা হয়েছে। এর পরের ধাপে হামাসের সুড়ঙ্গ, বাংকারসহ সব ধরনের ভূগর্ভস্থ যোগাযোগব্যবস্থা ধ্বংস করতে স্থল অভিযান চলবে।

একেবারের শেষ ধাপে ফিলিস্তিনের সব বেসামরিক মুসলমানকে তাড়িয়ে সিনাই উপদ্বীপে পাঠিয়ে দেওয়া হবে এবং সেখান থেকে আর তাদের ফিরতে দেওয়া হবে না।

কয়েক দিন ধরে আমরা এই তিন ধাপবিশিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইসরায়েলকে বর্বরোচিতভাবে গাজাকে ধ্বংস করে ফেলতে দেখছি। এ লেখা যখন লিখছি, তখন গাজায় ১১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। কয়েক লাখ লোক আহত হয়েছেন এবং এখনো তিন হাজারের বেশি মানুষ বিধ্বস্ত বাড়িঘরের নিচে চাপা পড়ে আছেন।

ইসরায়েলের ক্রোধের কোনো সীমা নেই। ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলিদের অমানবিক আচরণ কোনো সামাজিক শক্তির লক্ষণ নয়। বরং এটি ইহুদিবাদের সামাজিক কাঠামোর একটি মারাত্মক ব্যাধি। আমি বিশ্বাস করি, এ ব্যাধিই ইসরায়েলের বিলুপ্তি ঘটাবে।

খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই ইসরায়েল সামরিক শক্তি খাটিয়ে এ সমস্যার সমাধান করতে পারবে বলে মনে হয় না। তবে ইসরায়েলের নাগরিকদের সামষ্টিক জনমানস দৃশ্যত এ সত্য বুঝতে পারছে না। হয়তো সে কারণেই গাজা থেকে সব ফিলিস্তিনিকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে ফেলার মধ্যেই তারা ‘সমাধান’ খুঁজছে। ইতিমধ্যে ইসরায়েলি কয়েক মন্ত্রী গাজায় নির্বিচার গণহত্যা চালানোর পক্ষে কথা বলেছেন।

বহু ফিলিস্তিনিকে তাদের ভিটা থেকে তাড়ানোর পরও এখনো সাগর ও নদীর মাঝখানের ভূখণ্ডে ৪০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি আরব বাস করছেন। বহু বছর আগে থেকেই তাদের সেখান থেকে তাড়ানোর পরিকল্পনা লিখিত আকারেই হয়ে আছে। ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্ররা এবং তাদের রাজনৈতিক ও নৈতিক অপরাধের সহচরেরা সেই পরিকল্পনাপত্র না পড়েই তাতে সই করে দিয়েছে। তারা যদি মনে করে যে এটি ইসরায়েলকে সাহায্য করবে এবং এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা আনবে, তবে তারা অবশ্যই ভুলের রাজ্যে আছে।

আল–জাজিরা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে অনূদিত

হাইম ব্রেশিথ জাবনার জুইশ নেটওয়ার্ক ফর প্যালেস্টাইনের (ইউকে) একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য