যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শীতল যুদ্ধ নাকি শীতল শান্তি?

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সাম্প্রতিক চীন সফরকে দুটি বৈশ্বিক পরাশক্তির সর্বকালের সর্বনিম্ন স্তরে নেমে যাওয়া সম্পর্ক স্থিতিশীল করার চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। সফরটি ভালো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে এবং এই সফরসূচিতে ব্লিঙ্কেন ও প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের একটি বৈঠকও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্কটি চিরকালই জটিল গোছের। বরাবরই তারা এক পা এগোলে দুই পা পিছিয়ে যায়। এবারও তাই হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে ‘স্বৈরাচার’ বলে আখ্যায়িত করার পর বেইজিং তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বাইডেনের বক্তব্যকে কাণ্ডজ্ঞানহীন ও উসকানিমূলক মন্তব্য বলে অভিহিত করেছে। ফলে দুই দেশের সেই সাপে-নেউলে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করেছে।

এরপরই ওয়াশিংটনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বাইডেন প্রশাসন লালগালিচা সংবর্ধনা দিয়েছে। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতিতে চীনবিরোধী জোটে ভারতকে আরও দৃঢ়ভাবে যুক্ত করার ইচ্ছা প্রতিফলিত হয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের গতিপথ কোন দিকে যাবে, তা নিয়ে আবারও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ বিষয় নিয়ে ইদানীং বিস্তর বইপত্র লেখালেখি হচ্ছে। এই দুই শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতা শেষ পর্যন্ত নতুন একটি শীতল যুদ্ধে গড়াবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। উভয় পক্ষ না চাইলেও এই উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত অনিবার্যভাবে সামরিক সংঘাতে গড়াবে কি না, সেই প্রশ্নও দেখা দিচ্ছে।

ভারী সামরিক সজ্জায় সজ্জিত তাইওয়ানের আশপাশের এলাকায় ভুল–বোঝাবুঝির কারণে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সংঘাত বেধে যেতে পারে—এমন আশঙ্কা এশিয়া ও এশিয়ার বাইরের দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে। তবে দুই দেশের সংঘাত এড়ানো গেলেও তাদের অশান্ত সম্পর্ক বিশ্ব অর্থনীতি ও বিশ্বরাজনীতিকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।

বিশ্বের জটিলতম এই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে একটি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। কোল্ড পিস: অ্যাভয়েডিং এ নিউ কোল্ড ওয়ার। লেখক কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মাইকেল ডয়েল। এই বইয়ে লেখক চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নতুন শীতল যুদ্ধ লাগবে কি না এবং সেই সম্ভাব্য শীতল যুদ্ধ বিগত শীতল যুদ্ধ থেকে কতটা আলাদা হবে, তা দেখানোর চেষ্টা করেছেন। ডয়েল এই ধরনের শীতল যুদ্ধের ভয়াবহতার বিষয়ে বিশদে আলোচনা করেছেন। তবে এই যুদ্ধ যে অনিবার্য তা তিনি মনে করেন না। তার বদলে তিনি মনে করেন, যদি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে উভয় পক্ষ সমঝোতার নীতি গ্রহণ করে, তাহলে তাদের মধ্যে একটি ‘শীতল শান্তি’ প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।

ডয়েল বলেছেন, অতীতের শীতল যুদ্ধের মতো ভবিষ্যতের শীতল যুদ্ধও হবে ‘অসামরিক লড়াই’য়ের আদলে। এই লড়াই হবে প্রভাব-প্রতিপত্তি ও শক্তি অর্জনের লড়াই।

ডয়েল বলেছেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শীতল যুদ্ধ হলে তা অতীতের শীতল যুদ্ধের মতো হবে না। কারণ, পরস্পর নির্ভরশীল এই বিশ্বে এই যুদ্ধ থেকে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং সে কারণে সবাই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসবে। তিনি মনে করেন, দ্বিতীয় শীতল যুদ্ধের হাত থেকে বিশ্বকে বাঁচাতে জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলার মতো অভিন্ন স্বার্থ–সংশ্লিষ্ট বিষয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রকে আরও বেশি যুক্ত করতে হবে এবং এই ইস্যুতে ঘন ঘন তাদের আলোচনার টেবিলে বসতে হবে। এ ছাড়া এই যুদ্ধ এড়াতে ইউক্রেন ও রাশিয়ার লড়াইয়ের বিষয়ে একটি সমঝোতার পথ খোঁজা জরুরি।

ডন থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ

● মালিহা লোধি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘে নিযুক্ত পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত