দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রাজনীতি থেকে দুর্নীতিকে আলাদা করা যায় না। দুর্নীতি এখন এসব দেশের রাজনীতির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রাজনীতি ও দুর্নীতির সম্পর্ক নিয়ে লিখেছেন আলতাফ পারভেজ
কিছুদিন আগে বাংলাদেশে বহুল প্রচারিত একটি সংবাদ অনেকেই হয়তো দেখেছেন। একজন রাজনীতিবিদ নির্বাচনী হলফনামায় যখন ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় দেখালেন এক কোটি টাকার কম, তখন যুক্তরাজ্যে তাঁর ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেশি দামের সম্পত্তির তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল। এতে অবশ্য নির্বাচনে প্রার্থী হতে বা জিতে আসতেও তাঁর কোনো সমস্যা হয়নি।
বাংলাদেশের এই এমপি দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক বাস্তবতার খুব বেশি ব্যতিক্রমী চরিত্র নন। তাঁর নামের সঙ্গে অর্থবিত্তের যে অঙ্কটা আলোচনায় আসে, সেটাও চলতি সময়ে আঞ্চলিক মানদণ্ডে খুব বেশি বড় নয়!
পাকিস্তানে সদ্য প্রেসিডেন্ট হওয়া আসিফ জারদারির কথাই ধরা যাক। দেশটির সর্বশেষ নির্বাচনের আগের নির্বাচনে তিনি যে হলফনামা জমা দিয়েছিলেন, তাতে অস্ত্রপাতিই ছিল কয়েক কোটি টাকার। সেখানে দুবাইয়ে একটা প্লটেরও উল্লেখ আছে। তবে দেশটির অনেকে তখন বলছিলেন, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সেও তাঁর বাড়ি আছে—যা হলফনামায় বলা হয়নি।
১৯৯৮ সালের ৯ জানুয়ারি নিউইয়র্ক টাইমস সাড়া জাগানো এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখিয়েছিল কীভাবে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর এই স্বামী রাষ্ট্রীয় কেনাকাটায় প্রভাব খাটিয়ে কয়েক শ মিলিয়ন ডলার ‘আয়’ করে নিয়েছেন।
পরবর্তীকালে খুন, দুর্নীতি ইত্যাদি অভিযোগে ১১ বছর কারাগারেও কাটিয়েছেন এই ‘পোলো খেলোয়াড়’। এসব সত্ত্বেও সামরিক শাসক জেনারেল মোশাররফের সঙ্গে ২০০৭ সালে চমৎকারভাবে সমঝোতা করে আবার ক্ষমতাচক্রে ফেরেন তিনি। এরপর গত ১০ মার্চ তাঁর নতুন করে প্রেসিডেন্ট হতেও কোনো সমস্যা হয়নি।
জারদারি পাকিস্তানের সেই বিরল বেসামরিক ব্যক্তি, যিনি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে দ্বিতীয়বার দেশটির প্রেসিডেন্ট হলেন। গত সপ্তাহজুড়ে তিনি বিপুল আন্তর্জাতিক অভিনন্দনও কুড়িয়েছেন এই পদ পেয়ে। প্রেসিডেন্ট হয়ে তিনি এ–ও ঘোষণা করেছেন, দেশের আর্থিক দুর্দশার কারণে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন গ্রহণ করবেন না।
■ দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠার পথে দুর্নীতি বড় কোনো বাধা নয়।
■ ভোট এখানে রাজনৈতিক দুর্নীতি রুখতে পারছে না এবং দুর্নীতিগ্রস্তদেরও থামাতে পারছে না।
■ জাতিবাদ ও ধর্মবাদ দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সমাজকে মাতিয়ে রাখতে পারছেন রাজনীতিবিদেরা।
■ রাজনীতিকে নৈতিক পরিসর হিসেবে না দেখে যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে দেখছেন অনেকে।
জারদারির এই সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশে-বিদেশে অনেকেই কৌতুক করছেন বটে, কিন্তু বাস্তবতা হলো দক্ষিণ এশিয়ায় এ রকম লোকরঞ্জনবাদ বেশ কাজে দেয়। জনগণের একটা বড় অংশ এসব নেয়! এ ক্ষেত্রে ভারতের উদাহরণও আমলযোগ্য। সেখানে ২০১৪ সালে কংগ্রেস সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে ক্ষমতায় এসেছিল বিজেপি।
প্রায় ৯ বছর পর এখন নির্বাচনী বন্ড কেলেঙ্কারি থেকে দেখা যাচ্ছে ২০১৯-এ চালু হওয়ায় এই ব্যবস্থায় শত শত কোম্পানি থেকে দলটি হাজার হাজার কোটি রুপি পেয়েছে। সংগত কারণে বিরোধী দলের দাবি, বন্ড কিনে বিজেপিকে দান করা কোম্পানিগুলোকে প্রাপ্ত চাঁদার বিনিময়ে বড় ধরনের কিছু সুযোগ-সুবিধা দিতে হয়েছে সরকারকে।
গত কয়েক বছর ভারতে অনেক কোম্পানির বিরুদ্ধে সরকারি সংস্থাগুলো দুর্নীতির তদন্তে নেমেছিল। কৌতুককর হলো, সদ্য প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, সেসব কোম্পানিই ‘বন্ড’ কিনেছে এবং পছন্দের দলকে দিয়েছে। এরপর কী ঘটেছে, সেটা অনুমান অযোগ্য নয়।
নিয়ম অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলো কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানি থেকে এ রকম বন্ড পেলে সেটা ১৫ দিনের মধ্যে ভাঙাতে পারত। বিজেপি গত চার-পাঁচ বছর বিরোধীদলীয় শত শত এমএলএকে দলে ভিড়িয়ে বাহবা নিয়েছিল। বিরোধী দলগুলো এখন বলছে, ওই সব ছিল বন্ডের অর্থে রাজনৈতিক ‘কেনাকাটা’ মাত্র। কংগ্রেসের দাবি কতটা সত্য, সেটা কোনো দিন জানা যাবে বলে মনে হয় না।
কৌতুককর ব্যাপার হলো ২০১৪ সালে ভারতে দুর্নীতিবিরোধী জন–আন্দোলন থেকে জন্ম নেওয়া আম আদমি পার্টিও এই নির্বাচনী বন্ডের ‘সুবিধা’ পেয়েছে বেশ বড় অঙ্কে। সাদাসিধা জীবনধারার জন্য খ্যাতি কুড়ানো ‘বাংলার মেয়ে’ মমতা ব্যানার্জির দল নির্বাচনী বন্ড কেলেঙ্কারিতে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। বলা বাহুল্য, ২০১৯ থেকে বিজেপি, তৃণমূল কংগ্রেস এবং আম আদমি পার্টি তিনটি দলই নির্বাচনী রাজনীতিতে ভালো করেছে।
অন্যদিকে একই সময়ে নির্বাচনী বন্ড থেকে একদম সুবিধা নেয়নি যারা, সেই বামপন্থীরা ভারতজুড়ে দুর্বল হয়েছে। তাদের প্রতি জনসমর্থন কমেছে। এ রকম বিপরীতমুখী চিত্র এটাই স্পষ্ট সাক্ষী দেয়, দক্ষিণ এশিয়ার সমাজে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতির ক্ষমতাবান হতে কোনো বাধা নেই। বরং তাদের সম্ভাবনাই বেশি।
ভারতের এই দৃশ্য দেখে বাংলাদেশে অনেকের হয়তো মনে পড়বে জেনারেল এরশাদের কথা। রাষ্ট্রপ্রধান থাকাকালে পাওয়া উপহারসামগ্রী আত্মসাৎ, জাপানি নৌযান কেনায় দুর্নীতি, রাডার ক্রয়ে অনিয়মসহ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বহু ধরনের তদন্তে অভিযুক্ত ছিলেন তিনি।
কিন্তু এরপরও নির্বাচনে একই সঙ্গে পাঁচটি আসনে জিতেছিলেন এবং মৃত্যু পর্যন্ত জাতীয় রাজনৈতিক পাশা খেলায় বেশ ভালো দক্ষতা দেখিয়ে গেছেন। তাঁর সেই ‘দক্ষতা’ জাতীয় পার্টি আজও অনেকটা ধরে রাখতে পেরেছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় এরশাদের মতো চরিত্র বহু আছে। অনেকের স্মৃতিতে হয়তো ২০২২ সালের শ্রীলঙ্কায় রাজাপক্ষেদের ক্ষমতাচ্যুতি ও পলায়নের কথা সজীব আছে। সমৃদ্ধ দেশকে দুর্নীতিতে দেউলিয়া করে দিয়েছিল এই পরিবার।
গত বছর নভেম্বরে সেখানকার কয়েকটি সামাজিক সংগঠনের আবেদনের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ আদালতও এই মর্মে রায় দিয়েছিলেন, অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের জন্য গোতাবায়া, মাহিন্দা এবং বাসিল নামের তিন রাজাপক্ষে ভাই দায়ী। এঁরা তিনজন একই সময়ে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ছিলেন।
সামনে শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন। আবার পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে না পারলেও দক্ষিণের সিংহলি সমাজের সমর্থন নিয়ে এই রাজাপক্ষেরা আবারও দেশটির রাজনীতিতে চালকের আসন নিতে পারেন বলে শঙ্কা রয়েছে। এ রকম শঙ্কা সত্যি হলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। ‘মিস্টার টেন পার্সেন্ট’ বলে খ্যাত আসিফ জারদারি প্রেসিডেন্ট হতে পারলে রাজাপক্ষেদেরও হয়তো সিংহলিরা হারিয়ে যেতে দেবেন না।
এ রকম নজির যে কেবল বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ভারত, পাকিস্তানে আছে তা–ও নয়। মালদ্বীপের এখনকার জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু নির্বাচনে জিতে এসেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়ামিন আবদুল গাইয়ুমের মদদে।
দুর্নীতির অভিযোগে ১১ বছর সাজাপ্রাপ্ত প্রগ্রেসিভ পার্টি অব মালদ্বীপের নেতা ইয়ামিন নির্বাচন করতে না পারায় তাঁর সমর্থকেরা মুইজ্জুকে জিতিয়ে এনেছেন। মোদ্দাকথা, দুর্নীতি দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠার পথে বড় কোনো সমস্যা নয়।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অবস্থা খুব খারাপ। বার্লিনভিত্তিক এই সংস্থার বার্ষিক ‘দুর্নীতির ধারণা সূচকে’ বাংলাদেশের সর্বশেষ স্কোর হয়তো অনেকেরই মনে আছে—১০০তে ২৪ নম্বর। অবস্থানের হিসাবে সেটা ছিল ১৮০ দেশের মধ্যে ১৪৯তম।
ভারতের স্কোর ছিল ৩৯, পাকিস্তানের ২৯, মালদ্বীপের ৩৯ এবং শ্রীলঙ্কার ৩৪। ১৮০ দেশের মধ্যে ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী শেষোক্ত এই চার দেশের অবস্থান যথাক্রমে ৯৩, ১৩৩, ৯৩ ও ১১৫। বাংলাদেশসহ এই পাঁচ দেশকে টিআই ‘উদ্বেগজনক দুর্নীতির দেশ’ হিসেবে শনাক্ত করেছে। কিন্তু খোদ এসব দেশের জনগণ কি এতে আদৌ উদ্বিগ্ন?
জাতিবাদ ও ধর্মবাদ দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সমাজকে ঠিকই মাতিয়ে রাখতে পারছেন রাজনীতিবিদেরা। যেমন শিগগির অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ভারতীয় ‘মাদার অব অল ইলেকশনে’ প্রায় ৯৬ কোটি ভোটার যে রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিনিধিত্বের জন্য বাছাই করবেন, সেগুলোর মালিক যে আসলে কয়েক শ কোম্পানি তথা কিছু ব্যবসায়ী, সেটা তো ‘নির্বাচনী বন্ড’ কেনাবেচার তালিকা দেখলেই বোঝা যায়।
আরও সরাসরি বললে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য বিখ্যাত ভারতে রাজনীতির মালিক আসলে সান্টিয়াগো মার্টিনের মতো কিছু ব্যবসায়ী। যাঁরা রাজনৈতিক দলগুলোকে শত শত কোটি রুপি দিয়েছেন। এই মুহূর্তে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত এক চরিত্র মার্টিন।
আন্দামানে জন্ম নেওয়া এই ভারতীয় ‘লটারি-কিং’ একসময় রেঙ্গুনে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। আর ভারতে এখন তিনি রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘সর্বোচ্চ দাতা’র অনানুষ্ঠানিক স্বীকৃতিতে ভাসছেন। মার্টিনের পুত্র চার্লস বিজেপিতে আছেন। রাজনীতি ও ব্যবসা বেশ হাত ধরাধরি করে চলছে।
নির্বাচনী বন্ড কেলেঙ্কারি ফাঁসের পর দেখা গেল লটারি ব্যবসায়ী মার্টিনের কোম্পানি একাই প্রায় চৌদ্দ শ কোটি রুপির বন্ড কিনেছিল। লটারির মাধ্যমে ভাগ্য বদলাতে চাওয়া গরিবদের অর্থে কেনা ঐ বন্ড ব্যবসায়িক সুবিধা পেতে মার্টিন কাকে দিয়েছেন, সেসব এখন ভারতীয় মিডিয়ায় বেশুমার আলোচিত হচ্ছে।
একই মিডিয়া এই অনুমানও জানাচ্ছে, আসন্ন নির্বাচনে বিজেপি হয়তো আবারও জিতবে। এমনকি ৫৪৫ আসনের লোকসভায় এবার গতবারের প্রায় তিনশর চেয়ে আসন বেশি পাওয়াও বিচিত্র নয়।
এ যেন পাকিস্তানের সঙ্গে মিলে যাওয়া দৃশ্য। ‘ভুট্টো’ ও ‘শরিফ’রা দুর্নীতির বহু অভিযোগ আর বহুদিন জেল খাটার মধ্যেও যে এখনো বহু মানুষের পছন্দের তালিকায় আছে, সেটা ইতিমধ্যে স্পষ্ট।
যে বাংলাদেশের একটি উপজেলায় একমাত্র স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একমাত্র এক্স-রে মেশিনটি সাত বছর এবং অ্যানেসথেসিয়া মেশিনটি দশ বছর নষ্ট ছিল (‘সরঞ্জাম ও জনবলসংকট আট বছরেও কাটেনি’, ১৩ জুন ২০২০, দৈনিক ইত্তেফাক), সেখানকার জনপ্রতিনিধিরই যুক্তরাজ্যে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার সম্পদের গল্প শুনতে হয়েছিল এ বছর।
প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন এমন হচ্ছে? দক্ষিণ এশিয়ার সমাজ কি তবে নিজেই অনিয়ম আর অস্বচ্ছতায় আসক্ত? ব্যক্তিপর্যায়ে লোভ ও স্বার্থপরতাই কি তবে বেশি সহজাত? মানুষ কি তবে বাস্তবতার সঙ্গে সমন্বয় করে চলতে শিখছে কেবল—যে বাস্তবতায় সম্পদশালী হওয়ার পথ হলো ক্ষমতাশালী হওয়া?
সম্পদ ও ক্ষমতার এই রাষ্ট্রীয় যোগসূত্র বুঝতে পেরেই কি তবে দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত তরুণ-তরুণীরা কেবল বিসিএস বা এ ধরনের পরীক্ষা দিয়ে আমলা হতে চায়?
এই ঔপনিবেশিক জের টিকিয়ে রাখতেই কি তবে রাজনীতিতে সততা ও স্বচ্ছতার চেয়েও বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে কথিত ‘জাতীয়’ আবেগ, ‘জাতীয়’ গৌরব, নেতৃত্বের পুরুষালি ভঙ্গি, ‘অপর’ ধর্ম ও ‘অপর’ জাতির বিপরীতে শ্রেষ্ঠত্বের কল্পিত কাহিনি? সে কারণেই এসব কৌশল কি ভোটের রাজনীতির পাটাতন?
এ রকম প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ শুনিয়েই হয়তো আরএসএস পরিবারের একজন ভারতে নেহরুকে অতিক্রম করে যাবেন কয়েক মাস পর। একই পথে পাকিস্তানে ‘মি. টেন পার্সেন্ট’কে দেখে যেতে হবে দেশের সর্বোচ্চ পদে, শ্রীলঙ্কায় গোতাবায়ারা সিংহলি সমাজকে শোনাবেন ‘ফেরা’র স্বপ্নের কথা।
সব মিলে এ যেন নিকোলো মেকিয়াভেলির ‘প্রিন্স’দের সোনালি সময়। রাজনীতি যখন স্রেফ ‘প্রিন্স-লরেঞ্জোনামা’। যে লরেঞ্জোনামা দাঁড়িয়ে আছে রূঢ় এক লক্ষ্যের ওপর: ‘জয়ী হতে হবে, যেকোনো মূল্যে’। রাজনীতিকে নৈতিক পরিসর হিসেবে না দেখে যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে যে দেখতে চায়। সুনামের চেয়েও শক্তি সেখানে জরুরি।
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গণতন্ত্রের দুর্দশা এবং চীন ও রাশিয়া মডেলের উত্থানও একইভাবে মেকিয়াভেলির শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করছে। যে শ্রেষ্ঠত্বের মধ্যে রাষ্ট্র, রাজনীতি ও জনমনের আমূল সংস্কার ছাড়া ভোটব্যবস্থা অনেকখানি অর্থহীন হয়ে গেছে।
ভোট এখানে আসিফ জারদারি ও নওয়াজ শরিফদের ঠেকাতে পারেনি। ভোট এখানে নির্বাচনী বন্ডের মতো রাজনৈতিক দুর্নীতি রুখতে পারে না এবং দুর্নীতিগ্রস্তদেরও থামাতে পারে না।
ভোটের মাধ্যমেই দূর-পল্লির চিকিৎসাসংকটে থাকা জনগণের ‘প্রতিনিধি’ বনে যান লন্ডনের বিলাসী বাড়ি আর বিপুল সম্পদের মালিক।
ভোটভিত্তিক রাজনীতির এ রকম ফাঁকফোকর নিয়ে মার্টিন ও জারদারিরা কি আদৌ জনগণকে পুনর্ভাবনার সুযোগ দেবে?
বাংলাদেশে যখন স্বাধীনতার ৫৩ বছর পূর্তি হচ্ছে, ভারত-পাকিস্তানে ৭৭ এবং শ্রীলঙ্কাতে ৭৬ বছর পার হচ্ছে। দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতির জন্য দক্ষিণ এশিয়া আর কত অপেক্ষা করবে?
●আলতাফ পারভেজ লেখক ও দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসবিষয়ক গবেষক