মতামত

মধ্যপ্রাচ্যে বাইডেনের কূটনীতি কতটা সফল হবে? 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যপ্রাচ্য কৌশল নীতি ‘উত্তেজনা প্রশমন’ মতবাদ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ওয়াশিংটন তার শত্রু তেহরানের সঙ্গে ছোট আকারের চুক্তি করেছে। ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ নিয়ন্ত্রিত লেবাননের মধ্যে সমুদ্র সীমানার বিরোধ নিষ্পত্তিতে চুক্তি সই করতে মধ্যস্থতাও করেছে। কিন্তু আরব উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের শান্তিচুক্তির প্রসঙ্গ এলে যুক্তরাষ্ট্র একটি সমন্বিত ‘বড় চুক্তির’ প্রত্যাশা করে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সহযোগিতায় সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া যে শুরু হয়েছে, তার প্রাথমিক লক্ষণ দেখা গিয়েছিল এ বছরের জানুয়ারি মাসে। সৌদি আরবের কর্মকর্তারা তাঁদের জাতীয় স্বার্থ কী হবে, সে বিষয়ে একটি রূপরেখা তৈরি করেছেন। এতে তিনটি বিষয় রয়েছে। এক. সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি কার্যকর সামরিক জোট গড়ে তোলা। দুই. রাজনীতিমুক্তভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সৌদি আরবে অস্ত্র বিক্রি করা। তিন. ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণসহ পারমাণবিক কর্মসূচির অনুমোদন।

ওয়াশিংটন যদি এই তিন শর্তে রাজি হয়, তাহলে এর প্রতিদানে সৌদি আরব ইসরায়েলের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে পারে। সৌদি আরবের প্রস্তাবটি মধ্যপ্রাচ্যে বাইডেনের ‘আঞ্চলিক সংহতি’ প্রতিষ্ঠার যে কৌশল নীতি তার বিরোধী। কেননা, তেহরানকে বাদ দিয়ে ওয়াশিংটনের পক্ষে এটা অর্জন সম্ভব নয়। বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্র নীতি যাঁরা প্রণয়ন করেন, তাঁরা আব্রাহাম অ্যাকর্ড বা সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের সঙ্গে ইসরায়েলের শান্তিচুক্তির সফলতা সম্পর্কে খুব বেশি আশাবাদী হতে পারেননি। প্রকৃতপক্ষে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার আট মাস পর চুক্তিটি সম্পর্কে প্রথম কথা বলেন। 

সৌদি আরবের ব্যাপারে আগের অবস্থান থেকে সরে এসে ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদির সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে বাইডেন প্রশাসন যে ঝটিকা কূটনৈতিক তৎপরতা নিয়েছে, সেটার প্রশংসা করা উচিত। কিন্তু ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি স্থাপনের ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনিদের কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে হবে, সে বিষয়টিকে তারা খাটো করে দেখছে।

যদিও দৃশ্যপটে বাইডেনের কূটনীতিকেরা আবার তৎপর হয়ে উঠেছেন। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বেশ কিছু অভূতপূর্ব অগ্রগতি ঘটেছে। সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে ইসরায়েলের পর্যটনমন্ত্রী হায়েম কাটজ রিয়াদে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ পর্যটন সম্মেলনে যোগ দেন। অন্যদিকে ফিলিস্তিনে সৌদি আরবের অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত নায়েফ আল-সাদিরান রামাল্লাহ সফরে যান। ১৯৬৭ সালের পর এই প্রথম সৌদি আরবের কোনো প্রতিনিধি পশ্চিম তীরে সফরে গেলেন।

সৌদি আরব ঘোষণা দিয়েছে যে তারা তাদের আঁতুড়ঘরে থাকা পারমাণবিক কর্মসূচির নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের মান নিশ্চিত করবে। সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ফক্স নিউজকে বলেন, তাঁর দেশ ধারাবাহিকভাবে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কাছাকাছি অবস্থানে পৌঁছেছে। এর কয়েক ঘণ্টা পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ভবিষ্যদ্বাণী করেন, বিশ্ব একটা নাটকীয় পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান অবশ্য সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খুব তাড়াতাড়ি বড় কোনো পরিবর্তন’ হচ্ছে এমনটা তিনি আশা করেন না। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস সতর্ক করে দেন যে ফিলিস্তিনের জনগণ যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের সম্পূর্ণ আইনসম্মত ও জাতীয় অধিকার না পাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যে কোনো শান্তিপ্রক্রিয়া টেকসই হবে না।

সৌদি আরবের ব্যাপারে আগের অবস্থান থেকে সরে এসে ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদির সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে বাইডেন প্রশাসন যে ঝটিকা কূটনৈতিক তৎপরতা নিয়েছে, সেটার প্রশংসা করা উচিত। কিন্তু ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি স্থাপনের ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনিদের কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে হবে, সে বিষয়টিকে তারা খাটো করে দেখছে।

ওয়াশিংটনকে অবশ্যই এমন চুক্তি থেকে সরে আসতে হবে, যেখানে একটি বা দুটি দেশ জয়ী হয়। ওয়াশিংটন মধ্যপ্রাচ্যে যে সমন্বিত বড় চুক্তি করতে চায়, তার জন্য ছোট ছোট চুক্তি করেই এগোতে হবে।

এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত

হোসেন আবদুল-হোসেন ওয়াশিংটনের ফাউন্ডেশন ফর দ্য ডিফেন্স অব ডেমোক্রেসির রিসার্চ ফেলো