ইসরায়েলের মিথ্যাচার নতুন কিছু নয়

ইসরায়েলি হামলায় আহত এক ফিলিস্তিনি শিশু
ইসরায়েলি হামলায় আহত এক ফিলিস্তিনি শিশু

পশ্চিমা রাজনীতিক ও সংবাদমাধ্যম এমনভাবে কাজ করছে যেন তারা স্থায়ীভাবে ঠিক করেই নিয়েছে, ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করলেও তারা তা অস্বীকার করে যাবে এবং ইসরায়েল যা কিছুই করুক না কেন, তারা তাদের সমর্থন দিয়ে যাবে। রুশ বিপ্লবের নেতা লেনিন বলেছিলেন, ‘বারবার বলা মিথ্যা একসময় সত্য হয়ে যায়’। মনে হচ্ছে, পশ্চিমের মিডিয়া সেই নীতিতেই হাঁটছে।

ফিলিস্তিনিদের ঘাড়ে দোষ চাপাতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী যুগের পর যুগ অবলীলাক্রমে মিথ্যা বলে আসছে। আর সেটিই মহা উৎসাহে পশ্চিমা গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়ে আসছে। কয়েক দিন আগে তার সর্বশেষ নজির দেখা গেছে। গত মঙ্গলবার গাজার আল আহলি ব্যাপ্টিস্ট হাসপাতালে ইসরায়েল বোমা ফেলে রোগীসহ কয়েক শ মানুষ মেরে ফেলার পরও তার দায় এড়াতে ইসরায়েল মিথ্যা বলে যাচ্ছে। গাজার মুসলমানরা মনে করেছিল, অন্তত খ্রিষ্টানদের পরিচালিত এই হাসপাতালে বোমা হামলা হবে না। কিন্তু সেখানে ইসরায়েলের স্পষ্ট আক্রমণ হলেও তারা বলেছে, এই হামলা তারা করেনি, এটি নাকি ফিলিস্তিনি সংগঠন ইসলামিক জিহাদ করেছে। 

ইসরায়েলের এই মিথ্যা প্রচারকে সহজ করে দিচ্ছে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো। দুই সপ্তাহের বেশি সময় আগে যখন ইসরায়েলে উচ্চমাত্রার বিস্ফোরকসমৃদ্ধ বোমা গাজায় ফেলতে শুরু করে তখন ইসরায়েলের নেতাদের বক্তব্যে এই হামলার উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। সে সময় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী গাজার বাসিন্দাদের ‘নররূপী জানোয়ার’ আখ্যায়িত করে ‘সবকিছু নিশ্চিহ্ন’ করে ফেলার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

আরেকজন নেতা গাজাকে ‘তাঁবুর শহরে’ পরিণত করে ফেলা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। আর ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগ গাজায় ইসরায়েলি হামলাকে হামাসের হামলার যোগ্য প্রত্যাঘ্যাত বলে আখ্যায়িত করে বলেছেন, ‘আমরা তাদের মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলব।’

ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের গাজার উত্তরাঞ্চলের অর্ধেকটা জায়গা খালি করে সরে যেতে বলেছে। ইতিমধ্যে গাজার ছয় লাখ ফিলিস্তিনি গৃহহীন হয়ে পড়েছে। গাজার হাসপাতালটিতে ইসরায়েল যে বোমা ফেলেছে, তার ভিডিও চিত্রে সব পরিষ্কার দেখা গেছে। কিন্তু দিবালোকের মতো সেই সত্যকে ইসরায়েল উড়িয়ে দিয়ে বলেছে, এটি ইসলামিক জিহাদের কাজ। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এই হাসপাতালে ‘সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি’ ছিল। অদ্ভুত বিষয় হলো, ইসরায়েলের এই দাবির সমর্থনে অনেক মিডিয়া এমন সব তথ্য–উপাত্ত দিয়ে সংবাদ প্রচার করেছে যে অগণিত মানুষ এই হামলা ইসরায়েল চালিয়েছে কি না, তা নিয়ে ধন্দে পড়ে গেছে। 

ফিলিস্তিনি শিশুদের হত্যা করাটা ইসরায়েলের পক্ষে নতুন কিছু নয়। এবার গাজার উপকূলবর্তী একটি স্থাপনায় ইসরায়েলি বোমায় শতাধিক শিশু নিহত হওয়ার পর ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সেখানে হামাসের দপ্তর ছিল। তাদের হত্যা করতে গিয়ে ‘দুর্ঘটনাবশত’ শিশুরা নিহত হয়েছে। কিন্তু ইসরায়েলের এই কথা যে সম্পূর্ণ মিথ্যা, তা কয়েকজন পশ্চিমা সাংবাদিকের কথায় স্পষ্ট হয়েছে। আসলে এ ধরনের মিথ্যাচার ইসরায়েল ঐতিহ্যগতভাবেই করে থাকে। ২০০৬ সালে লেবাননে হামলা চালানোর সময় ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করে তারা বহু বেসামরিক লোক মেরেছিল। সে সময় তারা ক্লাস্টার বোমা ব্যবহারের কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছিল। 

১৯৮২ সালে লেবাননের ফিলিস্তিনিদের শরণার্থীশিবির সাবরা ও শাতিলা ক্যাম্পে গণহত্যা চালানোর বিষয়ে তারা মিথ্যাচার করেছে। যেহেতু ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের জন্ম হওয়ার আগে থেকেই মিথ্যা তাদের আচ্ছন্ন করে আছে, সে কারণে কেউ তাদের মিথ্যাচারে এখন আর অবাক হয় না। 

মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত আকারে অনূদিত

জনাথন কুক ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতবিষয়ক গবেষক ও লেখক