গত জুনের শেষে আন্তর্জাতিক সংহতির ওপর অনুষ্ঠিত একটি ঐতিহাসিক সম্মেলন ‘প্যারিস অ্যাজেন্ডা ফর পিপল অ্যান্ড দ্য প্ল্যানেট’–কে উপসংহার হিসেবে গ্রহণ করেছে। দিন কয়েক আগে কেনিয়ায় অনুষ্ঠিত প্রথম আফ্রিকা জলবায়ু সম্মেলনে ‘নাইরোবি ঘোষণাকে’ পরিগ্রহণ করার মধ্য দিয়ে আফ্রিকার নেতারাও প্যারিস জলবায়ু চুক্তির গতিশীলতার প্রতিধ্বনি করেছেন।
চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ১৮ ও ১৯ তারিখের এসডিজি সম্মেলন, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের সামিট ফর দ্য ফিউচার এবং ২০২৫ সালে চতুর্থ ফিন্যান্সিং ফর দ্য ডেভেলপমেন্ট কনফারেন্স সামনে রেখে নয়াদিল্লিতে চলমান (৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর) জি–২০ শীর্ষ সম্মেলন এই অ্যাজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রধান মাইলফলক হিসেবে কাজ করছে। প্যারিস সম্মেলন আমাদের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, তা হলো: আমরা এমন একটি বিশ্ব গড়ব, যেখানে দারিদ্র্য থাকবে না; আমাদের এই গ্রহের ‘স্বাস্থ্য’ হবে সুরক্ষিত এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও সংঘাতের প্রভাবসংশ্লিষ্ট চ্যালেঞ্জগুলো নাজুক হয়ে পড়া দেশগুলো আরও ভালোভাবে মোকাবিলা করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারবে।
লক্ষ্যগুলো পূরণের জন্য আমাদের অবশ্যই সরকারি উন্নয়ন সহায়তা, অভ্যন্তরীণ সম্পদ এবং ব্যক্তিপর্যায়ের বিনিয়োগসহ সব ধরনের অর্থনৈতিক উত্সকে কাজে লাগাতে হবে। এ ছাড়া আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। পারস্পরিক বিভক্তি রোধে আন্তর্জাতিক আর্থিক অবকাঠামো ব্যবস্থাপনাকে অধিকতর দক্ষ, অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলক, অধিকতর ন্যায়সংগত এবং আজকের বিশ্বের জন্য অধিকতর উপযুক্ত হিসেবে রূপান্তরিত করতে হবে।
দিল্লির এই জি–২০ সম্মেলনের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি। কারণ, বৈশ্বিক জলবায়ু সংকটকে স্বীকার করে নেওয়ার বিষয়ে বৈশ্বিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৪ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর নাইরোবিতে বসা সম্মেলনে আমাদের আফ্রিকার অংশীদারদের পাশে জি–২০ দাঁড়িয়েছে।
এই তহবিল ব্যবহারে আমাদের আরও দক্ষ হতে হবে। আমরা মনে করি, বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এমডিবি) মাধ্যমে দেওয়া ঋণের প্রতিটি ডলারের বিপরীতে প্রাইভেট খাতের অন্তত এক ডলার পরিপূরক হিসেবে নিয়োজিত হওয়া উচিত। সেটি হলে আমরা আশা করতে পারি, উন্নয়নশীল এবং উদীয়মান অর্থনীতিতে প্রতিবছর কমপক্ষে অতিরিক্ত আরও এক লাখ কোটি ডলার যুক্ত হতে পারবে।
আমরা এ বিষয়ে নিশ্চয়তা দিতে স্থিরপ্রতিজ্ঞ যে আমরা জি–২০ সংগঠনটির রূপান্তরগত যে পরিবর্তনের প্রস্তাব করছি, তা লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান দেশগুলোসহ সব অঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ ও নাজুক অর্থনীতির উন্নয়নশীল দেশগুলোর উপকারে আসবে।
এই লক্ষ্যে আমরা চারটি নীতি চিহ্নিত করেছি, যা আমাদের সামনের পথ দেখাতে সাহায্য করবে:
১. দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করার এবং ধরিত্রীকে রক্ষা ও সংরক্ষণের দায়িত্ব কোনো একক দেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া উচিত হবে না।
২. বিভিন্ন প্রয়োজনের মুখোমুখি হয়ে জি–২০ দেশগুলো বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তনমুখী পথ অনুসরণ করতে পারে এবং এর মধ্য দিয়ে ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্যগুলো পূরণ করা যেতে পারে।
৩. এটি মেনে নিতে হবে যে নাজুক অর্থনীতিগুলোকে সহায়তা করতে এবং তাদের জনগণকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে অধিকতর আর্থিক সম্পদ দরকার।
৪. গ্রিনহাউস গ্যাসের শূন্য মাত্রার নির্গমন অর্জন থেকে শুরু করে আর্থিক বৈষম্য কমানো পর্যন্ত আজকের তাবৎ বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সাফল্য উদীয়মান ও উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে ব্যক্তি খাতের পুঁজি প্রবাহ বৃদ্ধির ওপর নির্ভর করবে।
গত জুনে প্যারিসে এবং চলতি মাসে নাইরোবিতে এ বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে যে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য একটি শক্তিশালী বৈশ্বিক আর্থিক উদ্দীপনা প্রয়োজন। সৌভাগ্যের বিষয়, বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য, বিশেষ করে আফ্রিকার জন্য আমরা ইতিমধ্যে এক লাখ কোটি ডলারের তহবিল গঠনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পেরেছি। এই বছর জলবায়ু মোকাবিলায় এক লাখ কোটি ডলারের তহবিল গঠনের যে লক্ষ্য রয়েছে, সেটিও পূরণ হবে বলে জোরালো আশা রয়েছে। আমরা এই তহবিল গঠনের লক্ষ্যপূরণের বিষয়টি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করব এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে তাদের ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া নিশ্চিত করার চেষ্টা করব।
তবে এই তহবিল ব্যবহারে আমাদের আরও দক্ষ হতে হবে। আমরা মনে করি, বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এমডিবি) মাধ্যমে দেওয়া ঋণের প্রতিটি ডলারের বিপরীতে প্রাইভেট খাতের অন্তত এক ডলার পরিপূরক হিসেবে নিয়োজিত হওয়া উচিত। সেটি হলে আমরা আশা করতে পারি, উন্নয়নশীল এবং উদীয়মান অর্থনীতিতে প্রতিবছর কমপক্ষে অতিরিক্ত আরও এক লাখ কোটি ডলার যুক্ত হতে পারবে।
আমরা আশা করতে পারি, আগামী ১০ বছরে এমডিবিগুলোর ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা সামগ্রিকভাবে দুই লাখ কোটি ডলারে বৃদ্ধি পাবে। এমডিবিতে এখন যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, তা বাস্তবায়িত হলে এসব প্রতিষ্ঠানের আরও মূলধনের প্রয়োজন হতে পারে।
আমাদের অল্প আয়ের দেশগুলোর জন্য ঋণ পুনর্গঠন সমন্বয় প্রক্রিয়ার সময়ানুবর্তিতা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থনৈতিক পূর্বাভাসযোগ্যতা উন্নত করতে হবে। প্রয়োজনের সময় আমাদের ঋণ স্থগিতকরণ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে হবে, যাতে ঋণসংকটে থাকা দেশগুলোর জন্য আর্থিক সুযোগ বাড়ানো সম্ভব হয়।
এখানে এটা স্পষ্ট যে বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফ-এর মিশনে জলবায়ু সংকটের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা গেলে তা এসব সংস্থার প্রকল্পগুলোকে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে সক্ষম করবে। এটি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দরিদ্র দেশগুলোকে সহায়তা করবে।
এর বাইরে বাস্তুসংস্থান পরিসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমাদের বন ও বনায়ন খাতে নতুন একটি আন্তর্জাতিক অর্থায়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এই ধরনের বিনিয়োগের ঝুঁকি প্রশমিত বা হ্রাস করাও প্রয়োজন হবে।
প্রতিশ্রুতিগুলো যাতে সুনির্দিষ্ট সাফল্যে রূপান্তরিত হতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থা, দেশ এবং নাগরিক সমাজ নিয়ে একটি যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করেছি।
জি–২০ সম্মেলনকে অবশ্যই স্বীকার করে নিতে হবে ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক লক্ষ্য অর্জনে প্যারিস অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে প্রস্তুত এবং আন্তরিক।
স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত আকারে অনূদিত
● আজালি আসুমানি কমোরোসের প্রেসিডেন্ট ও আফ্রিকান ইউনিয়নের চেয়ারপারসন। এমানুয়েল মাখোঁ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এবং বোলা তিনুবু নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট