মতামত

ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার নির্বাচন নাকি আনুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থা, কোনটা?

জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য আসনভিত্তিক সংখ্যাগরিষ্ঠতার যে পদ্ধতি আমরা বাংলাদেশে ব্যবহার করি, এর নাম ‘ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট’। এই নাম এসেছে মূলত ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা থেকে, যেখানে সবার প্রথমে যে ঘোড়াটি পোস্ট, অর্থাৎ ফিনিশ লাইন অতিক্রম করবে, সেটিই প্রতিযোগিতায় জিতবে। পেছনের অন্য সব ঘোড়া কত সামনে বা কাছাকাছি ছিল, সেগুলোর কিছুই এখানে বিবেচনা করা হয় না। বিজয়ী নির্ধারণের এই পদ্ধতিকে সে জন্য ‘উইনার টেকস অল’ ব্যবস্থা হিসেবে দেখা হয়। সংসদীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রথম দেখায় এই পদ্ধতিকে বেশ সহজ ও ন্যায্য মনে হলেও আসলে তা নয়। এই পদ্ধতিতে একটি আসনে সব প্রার্থীর মধ্যে যিনি বেশি ভোট পান, তিনিই ওই আসনে জয়ী হন। কিন্তু সমস্যা হলো ভোটাররা প্রায় সব সময়ই আসলে তাঁর আসনের প্রার্থীকে নয়, বরং তিনি যে জাতীয় দলের সদস্য, সে দলের জন্য সেই দলের মার্কাতে ভোট দেন। তাই কোনো দলের দেশব্যাপী জনসমর্থন থাকলেও, দলটি যদি নির্দিষ্টসংখ্যক আসনে তুলনামূলক সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট (প্লুরালিটি ভোট) না পায়, তাহলে জাতীয় সংসদে তারা তাদের জনসমর্থনের অনুপাতে আসন পায় না।

গত কয়েকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বোঝা যাক। ২০০৮ সালে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পায়। কিন্তু বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থার কারণে মহাজোট আসন পায় ২৬৩টি ও চারদলীয় জোট মাত্র ৩৩টি (ছবি ১)।

কারণ, অনেক আসনেই চারদলীয় জোট সামান্য ব্যবধানে হারে এবং ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট পদ্ধতির কারণে ওই আসনগুলোর প্রতিটিতে চারদলীয় জোটের পাওয়া কোনোই ভোটই আসলে তাদের কাজে আসেনি। ৫০ শতাংশের সামান্য বেশি জনসমর্থন নিয়ে মহাজোট জাতীয় সংসদে প্রায় ৯০ শতাংশ আসন পায় এবং এই সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ২০১১ সালে একাই সংবিধানে সংশোধনী এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। কেবল সেই এক সংশোধনী থেকেই আজ বাংলাদেশের গত ১৫ বছরের বিভিন্ন রাজনৈতিক সমস্যা ও স্বৈরাচারের মূল খোঁজে পাওয়া কঠিন নয়।

যদি ভোটের শতাংশ অনুসারে জাতীয় সংসদে আসন বণ্টন হতো, তবে মহাজোট পেত ১৬৯ আসন (আওয়ামী লীগ ১৪৪) এবং চারদলীয় জোট পেত ১১৩ আসন (বিএনপি ৯৮)। সংবিধান সংশোধনের জন্য যেহেতু সংসদ সদস্যদের মোট সংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন হয়, আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের পক্ষে চারদলীয় জোটের সমর্থন ছাড়া কোনোভাবেই সংবিধান সংশোধন করা সম্ভব হতো না। ২০১৪ সালের নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনই হতে পারত এবং দেশে হয়তো এখনো গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বজায় থাকত।

২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলভিত্তিক ভোটপ্রাপ্তির পরিসংখ্যান
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলভিত্তিক ভোটপ্রাপ্তির পরিসংখ্যান

এই সমস্যা কেবল ২০০৮ সালের নির্বাচনের নয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ৪১ শতাংশ ও আওয়ামী লীগ ৪০ শতাংশ ভোট পায়। দেশব্যাপী মাত্র ৫ লাখের (১ শতাংশের কম) মতো ভোট বেশি পেয়ে বিএনপি ১৩১ আসন বেশি পায় (বিএনপি ১৯৩, আওয়ামী লীগ ৬২)। যদি ভোটের শতাংশ অনুসারে আসন বণ্টন করা হতো, তবে বিএনপির আসন হতো ১২৩টি, আওয়ামী লীগের ১২০টি, জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্য ফ্রন্টের ২২টি, জামায়াতের ১৩টি।

একইভাবে, ১৯৯৬–এর জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আসন হতো ১১২টি, বিএনপি ১০১, জাতীয় পার্টি ৪৯ ও জামায়াত ২৬টি। অন্যদিকে ১৯৯১–এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৯০, বিএনপি ৯২, জাতীয় পার্টি ৩৬ ও জামায়াত ৩৬।

তাই সরকার গঠনের জন্য জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের ভূমিকা হতো অপরিহার্য। সে ক্ষেত্রে বিএনপি বা আওয়ামী লীগ কারও পক্ষেই এককভাবে যেমন সরকার গঠন যেমন সম্ভব হতো না, তেমনি সরকারে থেকে স্বেচ্ছাচারী কায়দায় শাসন করাও এত সহজ হতো না।

একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার এই যে নির্বাচন পদ্ধতি, এতে সব সময়ই বড় একটি দল অন্যায্যভাবে লাভবান হয়। দ্বিতীয় দলটি (কিংবা একাধিক দল) অধিকাংশ আসনেই সামান্য ব্যবধানে হারে বলে দেশব্যাপী তাদের জনসমর্থনের ব্যাপ্তি সংসদে প্রতিফলিত হয় না। অনেক সময়ই যেটা দেখা যায়, বড় নেতাদের তথাকথিত ‘নিশ্চিত আসনের’ ভোটাররা ভোট দিতে আগ্রহ পান না, আবার অন্য দলগুলো সেই আসনে গিয়ে প্রচারণাও চালায় না।

অন্যদিকে ছোট দলগুলো বিভিন্ন আসনে বিজয়ী হওয়ার মতো যথেষ্ট ভোট পায় না বলে দেশব্যাপী তাদের যথেষ্ট জনসমর্থন থাকলেও দিন শেষে তার সংসদে হয়তো কোনো আসনই পায় না। তাই অন্য বড় দলের সঙ্গে জোট বাঁধা এবং সেই জোট থেকে বরাদ্দ নির্দিষ্ট কিছু আসন ছাড়া সংসদীয় নির্বাচনে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সত্যিকার কোনো উপায়ই থাকে না। ভোটাররাও জানে যে বড় দুই দল ছাড়া অন্যদের আসলে সরকার গঠনের সম্ভাবনা নেই। তাই অনেক সময় একটি আসনে পছন্দের প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়ালেও যে বড় দল বেশি অপছন্দ, সেটাকে আটকানোর জন্য ভোটাররা অন্য বড় দলকে ভোট দেন (ট্যাক্টিকাল ভোটিং)।

বড় দুই দলের এই ডুয়োপলির কারণে তাই ছোট দলগুলোর প্রকৃত জনসমর্থন ভোটের সংখ্যাতেও পরিলক্ষিত হয় না এবং এই দলগুলো বড় হওয়ার সুযোগ পায় না। বিকল্পের অভাবে বড় দুটি দলই ঘুরেফিরে সরকার গঠন করে এবং বড় দুই দলের বাইরে কোনো বিকল্প তৈরি হওয়ার সুযোগই হয় না।

২.

তাহলে সমাধান কোথায়? বিশ্বের অধিকাংশ গণতান্ত্রিক দেশে আমাদের মতো আসনভিত্তিক সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নির্বাচন হয় না। যুক্তরাজ্যের ইলেকটোরাল রিফর্ম সোসাইটির দেওয়া তথ্যমতে, ১০০–এর অধিক দেশ (ইউরোপের যেমন অধিকাংশ দেশই) তাদের নির্বাচনী ব্যবস্থায় কোনো না কোনো আনুপাতিক আসনবিন্যাস ব্যবস্থা ব্যবহার করে। এসব ব্যবস্থায় কোনো দলকে সংসদে আসন পেতে সাধারণত একটি নির্দিষ্ট শতাংশের বেশি ভোট পেতে হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশের মতো আসনভিত্তিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা ব্যবহার হয় পঞ্চাশটির কম দেশে। এগুলো মূলত ব্রিটিশ সিস্টেম থেকে অনুপ্রাণিত ব্যবস্থা, যেমন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান ইত্যাদি।

আনুপাতিক আসনবিন্যাসের নানা ধরন আছে। সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো দলীয় তালিকাভিত্তিক আনুপাতিক ব্যবস্থা (লিস্ট–পিআর)। এই পদ্ধতি নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, সুইডেন, অস্ট্রিয়া, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়ার মতো ৭৭টি দেশে ব্যবহার করা হয়। এ ক্ষেত্রে দল বা দলীয় প্রার্থীকে দেওয়া ভোট দলের ভোট হিসেবে গণ্য হয়। সব আসনের ভোট গণনা শেষে দলগুলোকে নির্দিষ্টসংখ্যক আসন বণ্টন করা হয়। সংসদে আসন পেতে হলে কোনো দলকে ন্যূনতম কিছু শতাংশ ভোট পেতে হয়। দেশভেদে তা এক আসন জেতার মতো ভোট (বাংলাদেশের জন্য শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ) থেকে শুরু করে ৫ থেকে ১০ শতাংশ হতো পারে।

আসনগুলোতে দলের পূর্বনির্ধারিত ক্রমতালিকা অথবা নিজ নিজ আসনে দলের প্রার্থীদের পাওয়া ভোটের শতাংশের ক্রমানুসারে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। ফলে একটা দেশে কোনো দলের প্রতি মানুষের যে জনসমর্থন, সংসদে তার পূর্ণাঙ্গ প্রতিফলন ঘটে। তবে এতে সব সময় সংসদীয় আসনের সঙ্গে নির্বাচিত সংসদ সদস্যের যোগসূত্র থাকে না। এ ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

এই দুই সমস্যার সমাধানের জন্য আসনভিত্তিক ও দলভিত্তিক ভোটের সমন্বয় ব্যবহার করা হয় জার্মানি, ইতালি, জাপান, সাউথ কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড, মেক্সিকোর মতো প্রায় ৩০টি দেশে।

এই ব্যবস্থায় প্রত্যেক ভোটার নির্বাচনে দুটি ভোট দেন। একটি ভোট আসনের প্রার্থীর জন্য এবং আরেকটি ভোট দলের জন্য। কেউ চাইলে তাঁর দলীয় ভোট পছন্দের দলকে দিয়ে আসনের ভোট অন্য কাউকে দিতে পারেন। প্রতিটি আসনে প্রার্থীদের মধ্যে যিনি সর্বোচ্চ ভোট পান, তিনি নির্বাচিত হন।

সাধারণত সংসদের অন্তত অর্ধেক বা তার বেশি আসন সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রার্থীদের জন্য বরাদ্দ থাকে। বাকি আসনগুলোতে দলের পূর্বনির্ধারিত তালিকা থেকে বা যেসব প্রার্থী তাঁদের আসনে জিততে পারেননি কিন্তু অনেক ভোট পেয়েছেন তাঁদের দেওয়া হয়। কোন দল কত শতাংশ দলীয় আসন পাবে, তা একেক দেশে একেকভাবে নির্ধারিত হয়। কিছু দেশে কেবল দলীয় ভোটের শতাংশ অনুসারে আসন দেওয়া হয়। আবার কিছু দেশে এমনভাবে আসনবিন্যাস করা হয় যেন পূর্ণ সংসদে প্রতিটি দলের সরাসরি নির্বাচিত ও দলীয় ভোট থেকে প্রাপ্ত মোট আসন দলের পাওয়া মোট ভোটের যথাসম্ভব সমানুপাতিক হয়।

৩.

এই দুই প্রধান ব্যবস্থার বাইরেও আরও কিছু ব্যবস্থা আছে, যেখানে ভোট ও আসনবিন্যাস আরেকটু জটিল। এই জটিলতা আসে ভোট এবং আসনের বিন্যাসে কোন বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তার ওপর। বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতিতে কেবল নির্দিষ্ট এলাকার প্রতিনিধি আসাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, পুরো দেশকে নয়। আবার দলীয় তালিকা পদ্ধতিতে (পার্টি লিস্ট পিআর) পুরো দেশকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু ভৌগোলিক অঞ্চলের সঙ্গে প্রার্থীর সম্পর্ক পুরোপুরি থাকছে না। তা ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জেতা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আসনভিত্তিক ও দলভিত্তিক ভোটের সমন্বয় করা হলে দেখা যেতে পারে কিছু আসনে দ্বিতীয় এমনকি তৃতীয় হওয়া দল/প্রার্থী শেষমেশ ওই আসনের প্রতিনিধিত্ব করবে। এমনটা অনেকের কাছে, বিশেষ করে ওই এলাকার মানুষের জন্য ন্যায্য না–ও মনে হতে পারে। এই সমস্যাগুলো মাথায় রেখে বাংলাদেশের জন্য আনুপাতিক আসনবিন্যাসের নিচের জন্য পদ্ধতিটি ভাবা যেতে পারে।

প্রস্তাবিত এই পদ্ধতিতে পুরো দেশকে জেলাভিত্তিক অনেক নির্বাচনী অঞ্চলে ভাগ করা হবে। বড় জেলাগুলোতে সিটি করপোরেশনকে আলাদা এলাকা ধরা হবে এবং ছোট জেলাগুলোর ক্ষেত্রে কয়েকটি জেলাকে যুক্ত করে ৫ থেকে ১৫ আসনের নির্বাচনী অঞ্চল তৈরি করা যেতে পারে। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক বর্তমানের ঢাকা-১১ থেকে ঢাকা-১৮–এর সমন্বয়ে ৮ আসনের ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনী এলাকা তৈরি করা হলো। রাজনৈতিক দলগুলো এই নির্বাচনী এলাকার জন্য তাদের আটজন প্রার্থীর তালিকা দেবে। সেই তালিকার ক্রম দল থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।

নির্বাচনী অঞ্চলব্যাপী সর্বোচ্চ ভোট পেতে একটি দলের অগ্রাধিকার থাকবে ওই অঞ্চলের সব ভৌগোলিক আসন থেকে প্রার্থী দেওয়ার এবং জনপ্রিয় প্রার্থীদের তালিকার ওপরের দিকে রাখার। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পুরো নির্বাচনী এলাকার জন্য নির্বাচন করবেন। ভোটাররা একটি ভোট দেবেন (রাজনৈতিক দল বা স্বতন্ত্র প্রার্থীকে) পুরো নির্বাচনী এলাকার জন্য। এরপর ওই নির্বাচনী এলাকার ভোটের অনুপাতে আটজন প্রার্থী নির্বাচিত হবেন।

ধরা যাক, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনী এলাকায় দল A, দল B, দল C ও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী D যথাক্রমে ৩০, ২৫, ২০, ১০ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। তাহলে দল A–এর তিনজন, দল B ও C–এর দুজন করে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী D সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন। এই আটজনই পুরো ঢাকা উত্তরের প্রতিনিধিত্ব করবেন, কিংবা চাইলে পরবর্তী সময় তাঁদের মধ্যে ভৌগোলিক আসন ভাগ করে দেওয়া যেতে পারে। এই পদ্ধতিতে মোটের ওপর ভৌগোলিক আসনের সঙ্গে সংসদ সদস্যের সম্পর্ক যেমন নিশ্চিত করা যাবে, তেমনি দলগুলোর অঞ্চলভিত্তিক আনুপাতিক আসন পাওয়া নিশ্চিত করা যাবে।

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের যে ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হোক না কেন, প্রতিটি ব্যবস্থাতেই বর্তমানের আসনভিত্তিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা ব্যবস্থার চেয়ে জনগণের ইচ্ছার আরও ভালো প্রতিফলন সংসদের আসনবিন্যাসে দেখা যাবে।

প্রশ্ন হলো, আমাদের বর্তমান সংবিধান অনুসারে এমন ভোট গ্রহণের উপায় কি আছে? সংবিধানের ৬৫(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে আসনভিত্তিক সরাসরি নির্বাচনে সংসদ সদস্যরা নির্বাচিত হওয়ার কথা বলা আছে। তা ছাড়া সংসদ ভেঙে যাওয়ায় এই অনুচ্ছেদ সংশোধনেরও উপায় নেই। তাই সহজ উত্তর হলো: না।

কিন্তু আমরা এখন ছাত্রদের এনে দেওয়া জুলাই অভ্যুত্থানের পরবর্তী সময় অভূতপূর্ব সময়ে বাস করছি। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হলেও ঠিকই অনির্বাচিত ব্যক্তিদের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী পদমর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাই ছাত্র–জনতার সমর্থন ও রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা থাকলে এই বিশেষ পরিস্থিতিতে আনুপাতিক আসনবিন্যাস পদ্ধতিতে পরবর্তী নির্বাচনের আয়োজন অসম্ভব নয়।

  • ইশতিয়াক আকিব পিএইচডি গবেষক, প্যারিস সায়েন্স অ্যান্ড লেটারস ইউনিভার্সিটি