ইসলামে কন্যাসন্তানের গুরুত্ব ও মর্যাদা

কন্যাসন্তান মহান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বিশেষ নিয়ামত। কন্যাসন্তান সৌভাগ্যের নিদর্শন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যার ঘরে কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করল, অতঃপর সে তাকে কষ্টও দেয়নি, তার ওপর অসন্তুষ্টও হয়নি এবং পুত্রসন্তানকে অগ্রাধিকার বা প্রাধান্য দেয়নি, তাহলে ওই কন্যার কারণে আল্লাহ তাআলা তাকে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২২৩)

আল্লাহ তাআলা কাউকে কন্যাসন্তান দান করেন আবার কাউকে পুত্রসন্তান, কাউকে আবার কোনো সন্তানই দান করেন না।

এ বণ্টনও আল্লাহ তাআলার হিকমত ও কল্যাণ-জ্ঞানের ভিত্তিতেই। পবিত্র কোরআনের বর্ণনা, ‘আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর আধিপত্য আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা তা–ই সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন, অথবা তাদের দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা করে দেন বন্ধ্যা। তিনি সর্বজ্ঞ সর্বশক্তিমান।’ (সুরা-৪২ শুরা, আয়াত: ৪৯-৫০)

‘যে ব্যক্তি দুজন কন্যাসন্তানকে লালনপালন করল এবং বিয়ের সময় হলে সুপাত্রস্থ করল, সে এবং আমি জান্নাতে এমনভাবে একসঙ্গে থাকব, যেভাবে দুটো আঙুল থাকে।’ (তিরমিজি: ১৯১৪, মুসলিম: ২৬৩১, মুসনাদে আহমদ: ১২০৮৯)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ওই নারী বরকতময়ী ও সৌভাগ্যবতী, যার প্রথম সন্তান মেয়ে হয়। কেননা কোরআন কারিমে আল্লাহ তাআলা মেয়েকে আগে উল্লেখ করে বলেছেন, তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান দান করেন, আর যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন।’ (কানজুল উম্মাল, ১৬: ৬১১)

অনেকে কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণে অসন্তুষ্ট হন। নাউজুবিল্লাহ! এটি জাহিলি যুগের কাফিরদের মনোভাব। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের কাউকে যখন কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার মুখমণ্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট হয়। তাকে যে সুসংবাদ দেওয়া হয় তার গ্লানি হেতু সে নিজ সম্প্রদায় হতে আত্মগোপন করে; সে চিন্তা করে, হীনতা সত্ত্বেও সে তাকে রেখে দেবে নাকি মাটিতে পুঁতে দেবে? সাবধান! তারা যে সিদ্ধান্ত নেয়, তা কত নিকৃষ্ট!’ (সুরা-১৬ নাহাল, আয়াত: ৫৮-৫৯)

প্রিয় নবীজি (সা.) কন্যাসন্তানের সম্মান, স্নেহ ও মহব্বতের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তির তিনটি কন্যাসন্তান বা তিনজন বোন আছে। আর সে তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করেছে, তাদের নিজের জন্য অসম্মানের কারণ মনে করেনি, সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (তিরমিজি: ১৯১২) ‘কারও যদি তিনটি মেয়ে কিংবা বোন থাকে অথবা দুটি মেয়ে বা বোন থাকে, আর সে তাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে এবং তাদের সঙ্গে সদাচার করে, তবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (মুসনাদে আহমদ: ১১৪০৪, আদাবুল মুফরাদ-বুখারি: ৭৯)

‘যে ব্যক্তি দুজন কন্যাসন্তানকে লালনপালন করল এবং বিয়ের সময় হলে সুপাত্রস্থ করল, সে এবং আমি জান্নাতে এমনভাবে একসঙ্গে থাকব, যেভাবে দুটো আঙুল থাকে।’ (তিরমিজি: ১৯১৪, মুসলিম: ২৬৩১, মুসনাদে আহমদ: ১২০৮৯)

‘যার তিনটি কন্যাসন্তান থাকবে এবং সে তাদের কষ্ট-যাতনায় ধৈর্য ধরবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! যদি দুজন হয়?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘দুজন হলেও।’ লোকটি আবার প্রশ্ন করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! যদি একজন হয়?’ তিনি বললেন, ‘একজন হলেও।’ (বায়হাকি, শুআবুল ইমান: ৮৩১১)।

কন্যাসন্তান জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তিকে কন্যাসন্তান লালনপালনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং সে ধৈর্যের সঙ্গে তা সম্পাদন করেছে, সেই কন্যাসন্তান তার জন্য জাহান্নাম থেকে আড়াল হবে।’ (তিরমিজি: ১৯১৩)

  • মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

    যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

    smusmangonee@gmail.com