উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস: বাংলাদেশের জন্য ‘লাল সতর্কতা’

শহরে ও গ্রামে সব বয়সীদের মধ্যে অসংক্রামক রোগ বাড়ছে। রোগতাত্ত্বিক এই ক্রান্তিকাল নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বই লিখেছেন কয়েকজন গবেষক। রেড অ্যালার্ট! নন-কমিউনিকেবল ডিজিজেস, ডায়েটারি হ্যাবিটস অ্যান্ড লাইফস্টাইল ইন বাংলাদেশ নামে এ বইয়ে অসংক্রামক রোগ কেন বাড়ছে, এসব রোগের ঝুঁকি, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পরিস্থিতি, অসংক্রামক রোগ নিয়ে সরকারের ভূমিকা এবং কোথায় কমতি— এসব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বইটি পর্যালোচনা করে বিষয়গুলো নিয়ে লিখেছেন শিশির মোড়ল

রোগতাত্ত্বিক ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সামনে বিপদটা কত বড় তার স্পস্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন দেশি-বিদেশি ২২ জন স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী। তাঁদের সঙ্গে আছেন আরও কয়েকজন গবেষক। তাঁরা বলছেন, অসংক্রামক রোগ দেশে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করার মতো জরুরি পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

এই ২২ জন শিক্ষার্থী কানাডার ম্যানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাচারাল রিসোর্স ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশের নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের। তাঁরা ‘রিডিউসিং ডায়েটারি রিলেটেড রিস্ক অ্যাসোসিয়েটেড উইথ নন-কমিউনিকেবল ডিজিজেস ইন বাংলাদেশ’ নামের প্রকল্পের আওতায় ১৬টি পৃথক গবেষণা করেছেন। প্রবন্ধ লেখার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা যুক্ত ছিলেন।

এ প্রকল্পে অর্থায়ন করেছিল কানাডার ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছিল ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে। গবেষণা প্রবন্ধগুলো একত্র করে বই আকারে প্রকাশ করেছে ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড। ৪১৮ পৃষ্ঠার বইটির নাম রেড অ্যালার্ট! নন-কমিউনিকেবল ডিজিজেস, ডায়েটারি হ্যাবিটস অ্যান্ড লাইফস্টাইল ইন বাংলাদেশ

গবেষণা প্রকল্পে শহর, শহরতলি, উপজেলা সদর ও গ্রামের ২১ হাজার মানুষের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে মূলত জোর দেওয়া হয় অসংক্রামক রোগ, খাদ্যাভ্যাস, কায়িক শ্রম এবং জীবনযাপন–সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে। বিপুল পরিমাণ তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস মারাত্মকভাবে বেড়েছে। একই সঙ্গে মানুষের মধ্যে বেড়েছে অতি ওজন ও স্থূলতার প্রবণতা। শহরের ২১ শতাংশ মানুষের ডায়াবেটিস আছে, ২৪ শতাংশের আছে উচ্চ রক্তচাপ। আর ৫৫ শতাংশের ওজন প্রয়োজনের চেয়ে বেশি। প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রবণতা বা ঝোঁক বাড়তির দিকে। এ জন্যই ‘রেড অ্যালার্ট’।

খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন পদ্ধতি, খাদ্যাভ্যাসের নির্ধারক বা চালিকা শক্তি, খাদ্যবৈচিত্র্য, জেন্ডার ও পারিবারিক স্বাস্থ্য, শাকসবজি উৎপাদনে ও পরিবারের জন্য খাদ্য নির্বাচনে নারীর ভূমিকা, একটি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচার নিয়ে এসব গবেষণা হয়েছে। প্রতিটি বিষয়ের সঙ্গে অসংক্রামক রোগের সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেছেন গবেষকেরা। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং স্থূলতা ও অতি ওজনের সম্পর্ক তাঁরা নির্ণয় করেছেন। দেখতে চেয়েছেন অসংক্রামক রোগের ঝুঁকিগুলো কী কী এবং কীভাবে সেই ঝুঁকি বাড়ছে। স্বাস্থ্যের একটি নির্দিষ্ট সমস্যা নিয়ে এতগুলো প্রবন্ধ দুই মলাটের মধ্যে সাধারণত দেখা যায় না। প্রতিটি প্রবন্ধেই বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট বর্ণনা করার চেষ্টা করা হয়েছে।

ক্রান্তিকাল নাকি দ্বিগুণ বোঝা

দেশে ডায়রিয়াজনিত রোগ বা কলেরা, বসন্তের মতো সংক্রামক রোগে মানুষ এখন কম মারা যায়। বসন্তে মানুষ মারা যায়ই না। পাশাপাশি শিশুর মৃত্যু কমেছে, মাতৃমৃত্যু কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে জনমিতিক কাঠামোতে। মোট প্রজনন হার কমেছে। বেড়েছে গড় আয়ু। এখন প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে ক্যানসার, স্ট্রোক, হৃদ্‌রোগ, শ্বাসতন্ত্রের রোগ, কিডনি রোগ বা এ ধরনের অসংক্রামক রোগে।

জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, বাংলাদেশ সংক্রামক রোগের বিপদ পেছনে ফেলে আসতে পারেনি। মৃত্যু না হলেও প্রতিবছর বহু মানুষ ডায়রিয়াজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। প্রতিবছর বহু মানুষের মৃত্যু হয় যক্ষ্মায়। মৃত্যু সেই অর্থে কম হলেও দেশে নতুন করে ডেঙ্গুর মতো রোগের ঝুঁকি বেড়েছে। তাই জনস্বাস্থ্যবিদদের একটি অংশ এই দাবি করে যে বাংলাদেশ সংক্রামক ও অসংক্রামক দুই ধরনের রোগের চাপের মধ্যে আছে। রোগের জোড়া বোঝা বইতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। একধরনের রোগ শেষ হয়ে অন্য রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে বিষয়টি পুরোপুরি সে রকম নয়।

বাংলাদেশে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অসংক্রামক রোগে মৃত্যু বেশি হচ্ছে। ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানে অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর হার যথাক্রমে ৬৬ শতাংশ, ৬৬ ও ৬০ শতাংশ। বৈশ্বিকভাবে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে অসংক্রামক রোগে মৃত্যু ৬৪ শতাংশ। আর বাংলাদেশে ৭০ শতাংশ। বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ১৭ শতাংশ হৃদ্‌রোগ ও স্নায়ুরোগে, ১১ শতাংশ দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রের রোগে, ১০ শতাংশ ক্যানসারে ও ৩ শতাংশ ডায়াবেটিসে। গবেষকেরা ধারণা করছেন, ২০৪০ সাল নাগাদ মোট মৃত্যুর ৮০ শতাংশ হবে অসংক্রামক রোগে।

ঝুঁকি কোথায়

বাংলাদেশে আর্থসামাজিক অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আচরণগত পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বেড়ে গেছে। মানুষের কায়িক শ্রম আগের চেয়ে কমেছে, বেড়েছে ধূমপায়ীর সংখ্যা। আগের চেয়ে বেশি মানুষ এখন মদ বা মদ–জাতীয় পানীয় বেশি খায়। এসবই অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়েছে।

আরও কিছু বিষয় অসংক্রামক রোগের প্রকোপ বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। এর মধ্যে শীর্ষে আছে অপরিকল্পিত নগরায়ণ। পাশাপাশি বন উজাড় হয়েছে, এটিও অসংক্রামক রোগ বৃদ্ধির কারণ। পানির মান কমে যাওয়ার পাশাপাশি শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণ অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়েছে।

গ্রামাঞ্চলের পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যেসব নারীর স্বামী শহরে বা বিদেশে কাজের জন্য গেছেন, তাঁদের ওজন বেশি ও স্থূল হওয়ার ঝুঁকি বেশি। কারণ, এসব নারীর ক্রয়ক্ষমতা বেশি, এসব নারী বেশি পরিমাণে চাল ও তেলযুক্ত খাবার কেনেন, তাঁরা কাজের জন্য গৃহকর্মী নিয়োগ দেন।

একটি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পরিস্থিতি

বাংলাদেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর একটি হচ্ছে গারো। গারোরা নিজেদের মান্দি বলে পরিচয় দেন। একটি গবেষণায় ঢাকা শহরে বাস করা গারোদের খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন পদ্ধতি এবং তাঁদের মধ্যে অসংক্রামক রোগের প্রকোপ দেখার চেষ্টা করা হয়েছে।

বাংলাদেশে প্রায় দেড় লাখ গারো বাস করেন। ৯০ শতাংশের বেশি গারো ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর, সিলেট ও গাজীপুরে বসবাস করেন। ঢাকা মহানগরের গুলশানের কালাচাঁদপুর এলাকায় গারোদের একটি বড় বসতি আছে। তথ্য সংগ্রহের জন্য ওই এলাকার ৩২ জন গারোর নিবিড় সাক্ষাৎকার নেওয়ার পাশাপাশি দলগত আলোচনার আয়োজন করেন গবেষকেরা। গবেষণার জন্য বাছাই করা গারোদের বয়স ছিল ১৮ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। তাঁদের ৫৩ শতাংশ ছিলেন সাক্ষর, ২৭ শতাংশের ছিল কমপক্ষে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি। ৩৩ শতাংশ সেবা খাতে কাজ করতেন। ৮০ শতাংশই ছিলেন বিবাহিত।

গবেষকেরা বলেছেন, ফাস্ট ফুডের বিশ্বায়ন অসংক্রামক রোগ বাড়াচ্ছে। ফাস্ট ফুডের বৈশ্বিক প্রতীক ম্যাকডোনালস। বাংলাদেশে ম্যাকডোনালসের ব্যবসা না থাকলেও ম্যাকডোনালস সংস্কৃতি ঢাকায় পৌঁছেছে বিশ্বায়নের ফলে। গারোরা তা থেকে বাদ পড়েননি।

৬০ শতাংশ উত্তরদাতা গবেষকদের বলেছেন, তাঁরা নিয়মিত হাঁটেন এবং দৈনিক গড়ে ২০ মিনিট হেঁটে কর্মস্থলে যান। প্রায় দুই–তৃতীংশ গারো বলেছেন, তাঁরা ধূমপান করেন এবং দৈনিক গড়ে ৯টি সিগারেট খান। তাঁদের এই অভ্যাস ১৫ বছরের পুরোনো। গারোরা মদ তৈরি করেন। এর নাম চু। ৮৭ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তাঁরা নিয়মিত চু পান করেন। এটা মনে রাখতে হবে, চু পান গারো সংস্কৃতির অংশ।

চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় গারোদের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে ২১ শতাংশের উচ্চ রক্তচাপ ছিল। আর ২৯ শতাংশ ছিলেন স্থূল, তাঁদের ওজন প্রয়োজনের চেয়ে বেশি। অধিক ওজন ও স্থূলতা গারো নারীদের মধ্যে বেশি। কারণ হয়তো এই যে শহরের গারো নারীরা পুরুষের তুলনায় কাজ কম করেন। এটি মাতৃতান্ত্রিক সমাজ।

 এক-তৃতীয়াংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তাঁরা তাঁদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে জানেন, যদিও তাঁদের কেউই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য চিকিৎসকের কাছে যান না। সাধারণভাবে গারোদের মধ্যে অসংক্রামক রোগ বিষয়ে ধারণা বা জ্ঞান কম দেখা গেছে। গারোদের অনেকেই ফাস্ট ফুডে বা প্রস্তুত রাখা খাদ্যে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। গবেষকেরা বলছেন, বৈশ্বিকভাবে দেখা যায়, প্রান্তিক মানুষ অসংক্রামক রোগের শিকার হন সামঞ্জস্যহীনভাবে। গারোরাও এর ব্যতিক্রম নন।

শিশুরা সমস্যার বলয়ে

বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর শিশুরা পুষ্টির দুই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়। কিছু শিশু থাকে অপুষ্টিতে ভোগা। কিছু শিশু অতিপুষ্টির শিকার। গবেষকেরা ঢাকা শহর, গাজীপুর ও মৌলভীবাজারের ৩৫টি স্কুলের ১ হাজার ৭১৭টি শিশুর পুষ্টি পরিস্থিতি জানার চেষ্টা করেন। এসব শিশুর বয়স ছিল ৫ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। এর মধ্যে ১০টি স্কুল ছিল ঢাকা শহরের, ১২টি ছিল গাজীপুরের এবং ১৩টি স্কুল ছিল মৌলভীবাজারের গ্রামের। গাজীপুরের স্কুলগুলোকে উপশহর এলাকার স্কুল হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ছিল ছেলে, অর্ধেক মেয়ে। তাদের ৫০ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ৬৭ শতাংশ নিয়মিত হেঁটে স্কুলে যাওয়া–আসা করে ও ৭২ শতাংশ বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরের শিক্ষার্থীদের ২৩ শতাংশের ওজন বেশি, তাদের ১৮ শতাংশ স্থূল। অন্যদিকে মৌলভীবাজারের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অতি ওজন ও স্থূল শিশুর হার যথাক্রমে ৮ ও ৩ শতাংশ। দেখা গেছে, ইংরেজি মাধ্যম বা ইংরেজি ভার্সনে পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্থূলতা ও অতি ওজন বেশি। পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়িতে ও রিকশায় চড়ে যাতায়াতকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্থূলতা ও অতি ওজন বেশি। ঢাকার শিক্ষার্থীদের ৫০ শতাংশ বলেছে, স্কুলে তাদের খেলাধুলার সুযোগ নেই। গাজীপুর ও মৌলভীবাজারের অধিকাংশ শিক্ষার্থী বলেছে, স্কুলে তাদের খেলাধুলার সুযোগ আছে। ঢাকার শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে অভ্যস্ত।

এ গবেষণার মাধ্যমে আচরণ ও শৈশবকালীন স্থূলতার সম্পর্ক খোঁজার চেষ্টা করেছেন গবেষকেরা। তাঁদের মতে, স্থূলতা ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে। প্রাথমিকভাবে এর শুরু হয় নিম্নমানের খাদ্যাভ্যাস ও ত্রুটিপূর্ণ জীবনযাপন পদ্ধতির কারণে। দেখা গেছে, স্থূলতার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

সরকার কী করছে, কোথায় কমতি

১৬টি গবেষণাকে মোটাদাগে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়। শেষ ভাগে আছে অসংক্রামক রোগ নিয়ে সরকারি নীতি বিশ্লেষণবিষয়ক দুটি প্রবন্ধ। একটি প্রবন্ধে আছে সরকার কী করছে তার বর্ণনা। অন্যটিতে আছে প্রয়োজনীয় কী কাজ পড়ে আছে বা করা উচিত ছিল তার ব্যাখ্যা।

অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, প্রতিকার ও এর ঝুঁকি কমাতে বেশ কিছু কর্মসূচি, পরিকল্পনা ও কৌশলপত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আছে। এর অধিকাংশ বাস্তবায়িত হয় চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত কর্মসূচির মাধ্যমে। এ কর্মসূচির আওতায় একটি কর্মপরিকল্পনা (অপারেশন প্ল্যান) বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে অনেক কাজের মধ্যে একটিতে দেশের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে বিনা মূল্যে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের ওষুধ দেওয়া শুরু হয়েছে।

গবেষকেরা দেখেছেন, অসংক্রামক রোগের অপারেশন প্ল্যানে প্রথম সারির স্বাস্থ্যকর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করার বিষয়টি অস্পস্ট। কমিউনিটিতে রোগ শনাক্ত করার বা সচেতনতা বৃদ্ধি করার কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। এ ছাড়া অনেক কাজের কথা বলা হলেও সমন্বয় করার কোনো পরিকল্পনা নেই। জাতীয় ক্রীড়া নীতিতে (২০১৩) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলার জন্য উন্মুক্ত স্থান রাখার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়নি। অন্যদিকে জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নীতি বা জাতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনায় অসংক্রামক রোগকে কেন্দ্রীয় বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি। সমস্যা যত বড় হচ্ছে, সমাধানের আয়োজন তত নয়।