সুবর্ণজয়ন্তীতে পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা কেন?

সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে সরকারি দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বর্তমান পাকিস্তান আর বর্তমান বাংলাদেশের তুলনা করেছেন। যথারীতি একধরনের ‘মেঠো বক্তৃতা’ হিসেবেই এসেছে এসব কথা; তথ্য-উপাত্তভিত্তিক আলোচনা আমার অন্তত চোখে পড়েনি খুব একটা। ঢালাও বক্তব্যকে পোক্ত করার জন্য পাকিস্তানের দু–একজন রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকের বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক মূল্যায়নের কথা যুক্ত করেছেন অনেকে। এতে কোনো সন্দেহ নেই, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কিছু সূচকে বর্তমানে বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে। কিন্তু একই সঙ্গে আমরা অনেকেই জানি না, যে অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মনে অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল, সেই অর্থনৈতিক বৈষম্য পরিমাপকারী জিনি সহগ সূচকের মান পাকিস্তানে আমাদের চেয়ে বেশ খানিকটা কম, অর্থাৎ সেখানে অর্থনৈতিক বৈষম্য কম।

এ ছাড়া দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় সেবা পেতে ঘুষ লেনদেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, শিক্ষার মান, সহজে ব্যবসা করার সূচক, ইন্টারনেট ডেটার স্পিড, সড়ক অবকাঠামোর মান, রাষ্ট্রীয় ডেটার বিশ্বাসযোগ্যতা এমনকি করোনার টিকা দেওয়ার হিসাবে বাংলাদেশ খারাপ অবস্থানে আছে পাকিস্তানের চেয়ে। সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে, বিভিন্ন দেশের নির্বাচনের মান পর্যালোচনা করে পয়েন্ট দেওয়া হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকটোরাল ইন্টিগ্রিটি প্রজেক্টে বাংলাদেশে পাকিস্তানের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে। সারা পৃথিবীতে মাত্র ২২টি দেশে বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ নির্বাচন হয়।

এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, এই স্টাডিটি যখন শুরু হয় তখন বাংলাদেশের সবচেয়ে সমালোচিত ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ তথ্য গবেষণাকারীদের কাছে ছিল না বলে সেই নির্বাচনটি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। যৌক্তিক প্রশ্ন আসতেই পারে, একাদশ সংসদ নির্বাচনটি যেটি সম্পর্কে ওয়াশিংটন পোস্ট বলেছিল, ‘এর ফলাফল উত্তর কোরিয়ার নির্বাচনের মতো।’ সেটি বিবেচনায় নিলে বাংলাদেশের নিচে থাকত আর কয়টি দেশ?

পাকিস্তানকে নয় বরং দেখুন নেপালকে
স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়। সেগুলো হলো মাথাপিছু আয়, জনসম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ও জলবায়ু ভঙ্গুরতা সূচক। এর মধ্যে জনসম্পদ সূচকটি একটি দেশের সাধারণ জনগণ কেমন আছে তার ভালো ধারণা দেয়।

শিশুমৃত্যুর হার, মাতৃমৃত্যুর হার, অপুষ্টির কারণে খর্বকায় শিশুর সংখ্যা, সেকেন্ডারি স্কুলে ভর্তির অনুপাত, প্রাপ্তবয়স্কদের শিক্ষার হার, সেকেন্ডারি স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে লৈঙ্গিক সমতা—এই ছয়টি বিষয় বিবেচনা করে জনসম্পদ সূচকটি তৈরি করা হয়। এই সূচকে নেপালের মানবসম্পদ সূচকে স্কোর (৭৪ দশমিক ৯) বাংলাদেশের (৭৫ দশমিক ৩) প্রায় সমান। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশ আর নেপাল উভয় দেশ সমান ২১ দশমিক ১ পয়েন্ট নিয়ে একই অবস্থানে (৭৬তম) আছে। বিশ্বব্যাংক ডেটায় ২০১৯ সালে নেপালের গড় আয়ু আমাদের প্রায় সমান, মাত্র দেড় বছর কম।

নেপালের এই অর্জনকে আমাদের কাছে অবিশ্বাস্য বলে মনে হবে যখন আমরা দেখব জাতিসংঘের হিসাবে নেপালের মাথাপিছু আয় (১ হাজার ২৭ ডলার) বাংলাদেশের (১ হাজার ৮২৭ ডলার) অর্ধেকের সামান্য বেশি। শুধু সাধারণ জনগণকে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে রাখলে অতিসীমিত আর্থিক সামর্থ্য নিয়েও কী ম্যাজিক হতে পারে, নেপাল আমাদের সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।

আমাদের স্বাধীনতার ‘প্রকৃত’ মূল্য
পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করে আমি পরিতৃপ্ত হতে চাই না, এমনকি যদি সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়েও থাকত। কেন পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা নিয়ে আমার তীব্র আপত্তি সেটা বুঝতে আগে জরুরি, আমাদের স্বাধীনতার জন্য দেওয়া প্রকৃত মূল্য কতটা।

শৈশব থেকেই আমরা জেনে বেড়ে উঠি—৩০ লাখ মানুষের প্রাণ আর ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা। ধর্ষণকে ইউফেমিস্টিক ভাষায় বলতে গিয়ে সম্ভ্রম বা ইজ্জতহানি বলার মতো বীভৎস চর্চাটা এখনো আছে এই সমাজে। গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, স্বাধীনতার জন্য কি আমাদের এটুকুই মূল্য দিতে হয়েছে? কিংবা চট করে যে দুটি মূল্যের কথা আমরা বলে ফেলি, আসলেই কি অনুধাবন করি সেটা কেমন? ৩০ লাখ মানুষ মানে কত মানুষ?

কোনো সন্দেহ নেই, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কিছু সূচকে বর্তমানে বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে। কিন্তু একই সঙ্গে আমরা অনেকেই জানি না, যে অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মনে অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল, সেই অর্থনৈতিক বৈষম্য পরিমাপকারী জিনি সহগ সূচকের মান পাকিস্তানে আমাদের চেয়ে বেশ খানিকটা কম, অর্থাৎ সেখানে অর্থনৈতিক বৈষম্য কম।

একটি অফ টপিক
আ পিপলস হিস্ট্রি অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস নামের যুগান্তকারী বইটির লেখক ইতিহাসবিজ্ঞানের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হাওয়ার্ড জিনের ‘থ্রি হলি ওয়ারস’ শিরোনামের একটি লেকচার ইউটিউবে পাওয়া যায়। আমেরিকার ইতিহাসে অতি গুরুত্বপূর্ণ তিনটি যুদ্ধ—স্বাধীনতাযুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে তিনি খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলেন। আমার এই কলামের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়টি নিয়ে বলার আগে লেকচারটির অন্য একটি দিক নিয়ে কিছু কথা।

জিন যুদ্ধগুলোকে ‘হলি ওয়ার’ বলছেন আসলে প্রতীকী অর্থে। তিনি বলেন, ধর্মযুদ্ধের ইতিহাসকে নানা দিক থেকে দেখে যেমন নানা রকম ন্যারেটিভ তৈরি করা যায় না, তেমনি ওই তিনটি যুদ্ধের ওপরও একধরনের ‘পবিত্রতা’ আরোপ করা হয়েছে। তাই এসব যুদ্ধ নিয়ে প্রচলিত ন্যারেটিভের বাইরে ভিন্ন কিছু বলাকে মার্কিন সমাজে স্বাগত জানানো হয় না।

এই কথাটি এ জন্য মনে হলো—আমাদের মুক্তিযুদ্ধকেও একটা ‘হলি ওয়ার’–এর রূপ দেওয়া হয়ে গেছে। আমাদের তুলনায় অনেক বেশি মুক্ত মার্কিন সমাজে এসব ক্ষেত্রে ভিন্ন ন্যারেটিভ বন্ধ করার জন্য অন্তত আইন তৈরি করা হয়নি, যেটা আমাদের দেশে হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে উন্মুক্ত চর্চার বাধা সৃষ্টিকারী বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ অনুচ্ছেদের মতো কোনো অনুচ্ছেদ ইউরোপ–আমেরিকায় তো বটেই ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি আইনেও নেই।

জিনের মতো আমি বিশ্বাস করি কোনো ইতিহাসই ‘পবিত্র’ নয়। তাই আইন করে ইতিহাসের ভিন্নমত দমন করা দূরে থাকুক, প্রচলিত ন্যারেটিভের তুলনায় যতটাই অদ্ভুত ও উদ্ভট হোক না কেন ইতিহাসকে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার শতভাগ স্বাধীনতা সমাজে থাকা উচিত।

‘স্বাধীনতার মূল্য’ আসলে কত?
আলোচিত লেকচারটিতে হাওয়ার্ড জিন আরেকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোকপাত করেছেন। জিন বলেন, ‘একটি যুদ্ধে ঘটা বীভৎসতার সংখ্যা ও ব্যাপ্তি এতটাই বেশি হয় যে আমরা আসলে ঠিকঠাক অনুধাবন করি না সেটা; সবকিছু স্রেফ একেকটা সংখ্যায় পরিণত হয়।’ বাংলাদেশে আমরা খুব সহজে বলে ফেলি ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়। সংখ্যাটা কি আসলে অনুধাবন করি আমরা? মৃত মানুষদের গড় উচ্চতা একেবারে কমিয়ে ৫ ফুট ধরা হলেও ৩০ লাখ মানুষকে যদি পরপর দৈর্ঘ্য অনুযায়ী রাখা হয়, তাহলে মোট দৈর্ঘ্য হবে ৪ হাজার ৭৫২ কিলোমিটার। অর্থাৎ টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া যাওয়ার ৯০০ কিলোমিটার রাস্তায় মৃতদেহগুলো পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত রেখে সাজিয়ে রাখলে ৫ বারের বেশি আসা-যাওয়া করা যাবে।

চট করে ধর্ষণের কথা বলে ফেলি। কিন্তু ভেবে কি দেখি যে দুই লাখ নারী ধর্ষিত হয়েছে, তাদের ধর্ষণকালীন বীভৎসতার কথা। কিংবা সেসব নারী এই সমাজে কি আর আগের মতো করে গৃহীত হয়েছিল? কেমন ছিল তাদের সেই পরবর্তী জীবন? কিংবা ধর্ষিত নারীদের মধ্যে যারা গর্ভবতী হয়ে পড়েছিল, তাদের জন্ম দেওয়া সন্তানেরা, যাদের আমরা ‘যুদ্ধশিশু’ বলি, তাদের জীবন সমাজে কেমন ছিল?

সত্যি বলতে এই হিসাবটা অনুধাবন করার চেষ্টার জন্য এই লেখাটা নয়। যুদ্ধের মতো ঘটনায় যখন বীভৎস সব ব্যাপার ঘটে, তখন আমরা সেই চরম ব্যাপারগুলো নিয়েই কিছুটা হলেও আলোচনা করি, এড়িয়ে যাই গুরুত্বপূর্ণ আরো অনেক কিছুই।

আরও কিছু অতি গুরুত্বপূর্ণ ‘মূল্য’
মানুষ তো শুধু নিহত হয়নি, বহু মানুষ হয়েছে চিরকালের জন্য পঙ্গু। সেই পঙ্গুত্ব নিয়ে সেসব মানুষকে কাটাতে হয়েছে বাকি জীবন। কেমন কেটেছে তাদের জীবন? কেমন কাটছে তাদের জীবন যারা এখনো বেঁচে আছে?

আমরা কি ভাবি মৃত মানুষদের পরিবারের কথা? মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধ করতে গিয়ে মারা গিয়েছিল যুবকেরা। আর যারা গণহত্যার শিকার হয়েছিল, তাদের মধ্যে এ রকম বয়সের পুরুষেরাই বেশি ছিল। প্রায় সব ক্ষেত্রে তারা পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি (অনেক ক্ষেত্রেই একমাত্র)। তাহলে একটু কল্পনা করা যাক, এসব মানুষের অবর্তমানে কেমন পরিস্থিতিতে পড়েছিল তাদের পরিবারগুলো?

এক কোটি মানুষ ভারতে শরণার্থী হয়েছিল। ৫০–৬০ মাইল থেকে শুরু করে ১০০–১৫০ মাইল পথ হেঁটে মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়েছিল। যে সময়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ সীমান্ত পাড়ি দেয়, সে সময়টা ছিল বর্ষাকাল। কল্পনা করে দেখি তো প্রবল বৃষ্টির মধ্যে মানুষ হেঁটে চলছে। কর্দমাক্ত পথে বৃষ্টিতে ভিজে মাইলের পর মাইল মানুষের কাফেলা চলছে। ঠিকমতো খেতে পায়নি তারা তখন। অনেকেই নিশ্চয়ই নানাভাবে অসুস্থ ছিল। কিন্তু সবকিছুর পরও ছিল এক ভীষণ আতঙ্ক—কখন তারা আক্রান্ত হয় পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে। অনুমান কি করা যায় কেমন ছিল সেই ভয়ংকর ‘এক্সোডাস’?

এটুকু লিখেই মুক্তিযুদ্ধের সময় তৈরি জহির রায়হানের ডকুমেন্টারি স্টপ জেনোসাইডের একটি দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠল—প্রায় শতবর্ষী নারী চার হাত-পায়ে রীতিমতো হামাগুড়ি দিয়ে একেবারে কর্দমাক্ত একটি পথ দিয়ে ভারতের দিকে যাচ্ছেন। শরণার্থী শিবিরে পাকিস্তানি বাহিনীর বুলেট কখন তাড়া করে, সেই ভীতি হয়তো ছিল না; কিন্তু ছিল আরও অনেক কিছু—আশ্রয়ের, খাবারের ও ওষুধের অভাব। ছিল বিরূপ আবহাওয়ার চরম উৎপাত। বহু মানুষ মারা গিয়েছিল সেই আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে। মাসের পর মাস এভাবে মানুষ সেখানে বাস করছে, একটু অনুভব করে দেখি তো।

পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া স্বজনের মৃত্যুশোক, চারপাশ থেকে আসা গুলি করে মানুষ মেরে ফেলার খবর, চারপাশে নারীদের তুলে নিয়ে ধর্ষণ করার খবর, সব মিলে সেসব মানুষ কেমন ছিল? সঙ্গে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে খাবার ও চিকিৎসার অভাবকে যদি যুক্ত করি, তাহলে কি স্পষ্ট হয় পরিস্থিতির ভয়াবহতা?

যুদ্ধ একেবারেই অতি জরুরি পরিস্থিতি। গণভোট নিয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করা যায় না। তাই কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধিও যখন কোনো দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন, তখনো এটা বোঝা খুব কঠিন, সেই দেশের কত শতাংশ মানুষ আসলে সেই যুদ্ধে অংশ নিতে চায়। বেশির ভাগ, এমনকি প্রায় সব মানুষ যদি সামরিক পদক্ষেপের বিরোধীও থাকে, তারপরও যুদ্ধ চেপে বসে, ভীষণভাবে প্রভাবিত করে সমাজের সব মানুষকে। চরম মূল্য দিতে হয়েছিল এই মাটির মানুষদের। আসলেই কি আমরা আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য দেওয়া মূল্য প্রকৃতভাবে অনুভব করি?

এই অকল্পনীয় পরিমাণ মূল্যের বিনিময়ে কী চেয়েছিলাম আমরা?
এই অকল্পনীয় পরিমাণ মূল্যের বিনিময়ে আমাদের পূর্বসূরিরা আমাদের যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, আমাদের কাছে যে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র এবং আমাদের প্রথম সংবিধানের প্রস্তাবনা অনুযায়ী কেমন ছিল সেটি।

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সাম্য, মানবিক মর্যাদা আর সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য যে বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়েছিল, কথা ছিল তাতে ‘সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে।’

আমাদের দেখানো স্বপ্ন, আমাদের দেওয়া এসব প্রতিশ্রুতির সঙ্গে তুলনা করলে এখনকার বাংলাদেশকে কী বলব আমরা? স্বাধীনতার সময়ের প্রতিশ্রুতির পথে তো দূরেই থাকুক, বাংলাদেশ কি একেবারে উল্টো পথে হাঁটছে না?

আমাদের তুলনায় কানাকড়ি মূল্য পাকিস্তান তার স্বাধীনতাপ্রাপ্তির জন্য দেয়নি; টেবিলের আলোচনায় স্বাধীনতা পেয়েছিল তারা। তাই কয়েকটি সূচকে পাকিস্তানের চেয়ে আমরা ভালো আছি কি না, কিংবা পাকিস্তানের কোন লোক কী বলেছে, সেটা নিয়ে স্বাধীনতার প্রাপ্তির হিসাব আমি করতে প্রস্তুত নই মোটেও। স্বাধীনতার ৫০ বছরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে আমি মিলিয়ে নিতে চাই আমার কাছে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য যে অকল্পনীয় পরিমাণ মূল্য আমরা পরিশোধ করেছি, তার সঙ্গে তুলনা করে। সেটা করলে যে কাউকে তীব্র হতাশা, ক্ষুব্ধতা গ্রাস করবেই।

ডা. জাহেদ উর রহমান ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষক