‘এই বিজয় আমাদের বাকি জীবন মনে থাকবে। কারণ, অসংখ্য মানুষ আমাদের বিরুদ্ধে দল পাকিয়েছিল। এদের মধ্যে আছে দেশের বামপন্থী, আন্তর্জাতিক বামপন্থী, ব্রাসেলসের (পড়ুন ইউরোপীয় ইউনিয়ন) আমলারা, জর্জ সরোসের সাম্রাজ্যের সব প্রতিষ্ঠান ও অনুদান, বিদেশি সংবাদমাধ্যম এবং এমনকি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট’—ভূমিধস বিজয়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দেওয়া ভিক্তর ওরবানের বক্তব্যের মধ্যে ছিল এই কথাগুলোও।
রুশ আগ্রাসনের শিকার হওয়ার পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটো উভয় সংস্থারই সদস্য হাঙ্গেরি ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিতে অস্বীকার করে। ইউক্রেনের সঙ্গে সীমান্ত থাকার কারণে হাঙ্গেরি হয়ে অনেক সামরিক সাহায্য খুব সহজে ইউক্রেনে আসতে পারত। আগ্রাসনের শিকার জেলেনস্কি হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ওরবানের এই অসহযোগিতা নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে সমালোচনা করেছিলেন তাঁকে। হাঙ্গেরির সাধারণ নির্বাচনে বিরাট বিজয়ের পর ভিক্তর ওরবান তাঁর ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ‘প্রতিপক্ষ’ জেলেনস্কির ওপরও।
কেউ যদি জেলেনস্কিকে শত্রুজ্ঞান করেন, তাহলে সম্ভবত যে কেউ ধারণা করতে পারবেন তিনি পুতিনের কতটা প্রিয়পাত্র হতে পারেন। বিজয়ী বন্ধু ওরবানকে উচ্ছ্বসিত অভিনন্দন জানিয়ে পুতিন আশা প্রকাশ করেন ‘কঠিন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতেও’ সামনের দিনগুলোতে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক আগের চেয়ে আরও জোরদার হবে। হাঙ্গেরির নির্বাচনে কী হলো, এর প্রভাব কী, সেটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয়, যা ভবিষ্যৎ পৃথিবীর ধরন নিয়ে পূর্বাভাস দেয়। আর বলা বাহুল্য, এর প্রভাব থেকে দূরে থাকবে না বাংলাদেশও।
জনমত জরিপ পূর্বাভাসকে ভুল প্রমাণ করে অবিশ্বাস্যভাবে অরবানের দল ফিদেজ পার্টি আগের চেয়েও তিনটি বেশি আসন নিয়ে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে বিজয়ী হয়েছে এবং তাদের ভোটের হিস্যা বেড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ। অরবানকে ঠেকানোর জন্য বাম এবং উদারপন্থী ছয়টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে আরও পাঁচটি রাজনৈতিক দল এবং সংগঠন ‘ইউনাইটেড ফর হাঙ্গেরি’ নামের জোট তৈরি করে। তারা মাত্র ৫৫টি আসনে বিজয়ী হয় এবং ফিদেজ পার্টি থেকে ভোটপ্রাপ্তির হিসাবে পিছিয়ে থাকে ২০ শতাংশ।
হাঙ্গেরির নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিনটা এখনো মোটাদাগে ঠিক আছে। কিন্তু আর সব দিক থেকে এই নির্বাচন মোটেও অবাধ, স্বচ্ছ ছিল না, যা ইউরোপীয় মানের তুলনায় অনেক নিচুতে। নির্বাচনে ডাকের মাধ্যমে পাঠানো ভোটের গণনা প্রক্রিয়া নিয়ে তীব্র সন্দেহ আছে। এই নির্বাচনে কোনো সমতল ভূমি ছিল না বিরোধী দলগুলোর জন্য। রাষ্ট্রীয়গুলো তো বটেই, নানা কায়দায় কুক্ষিগত করা বেসরকারি মিডিয়াগুলোয় বিরোধীদের প্রচারণা এবং সংবাদকে তেমন কোনো স্থান দেওয়া হয়নি। একই সঙ্গে বিজয়ী দলের নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহের প্রক্রিয়াও ছিল অস্বচ্ছ। ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী ব্যয় ছিল বৈধ সীমার চেয়ে অনেক বেশি, যেটার জন্য তাদের কোনো জবাবদিহি করতে হয়নি।
ভিক্টর ভিক্তর ওরবান কমিউনিস্ট শাসনবিরোধী রাজনীতির মাধ্যমে একেবারে তরুণ বয়স থেকে একজন উদার গণতন্ত্রপন্থী রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। এরপর ক্রমান্বয়ে সংসদ সদস্য হন এবং প্রধানমন্ত্রী হয়ে যান ১৯৯৮ সালে—মাত্র ৩৫ বছর বয়সে। প্রথম মেয়াদ শেষে ২০০২ সালের নির্বাচনে তিনি পরাস্ত হন বামপন্থীদের কাছে। তারপরের বার—২০০৬ সালেও ওরবান জিততে পারেননি।
প্রথমবার পরাস্ত হওয়ার পর থেকেই ওরবান রাজনৈতিক মতাদর্শে পরিবর্তন আনেন, কিন্তু দ্বিতীয়বার পরাস্ত হয়ে ২০১০ সালের পরবর্তী নির্বাচন সামনে রেখে ওরবান কট্টর ডানপন্থা গ্রহণ করেন এবং উদার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের তীব্র সমালোচক হয়ে ওঠেন। সেই নির্বাচনে তিনি বড় ব্যবধানে জেতেন।
এই দফায় ওরবান জেতার পর মধ্যপ্রাচ্য থেকে শরণার্থীদের ঢল শুরু হয় ইউরোপজুড়ে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন নীতিগতভাবে তাদের গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ইউনিয়নের সদস্যদের জন্য একটি কোটা বেঁধে দেওয়ার প্রস্তাব ওঠে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেননি অরবান এবং এটাকেই নিজের রাজনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তিতে পরিণত করেন।
শরণার্থীরা হাঙ্গেরির খ্রিষ্টান ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য বিরাট হুমকি—ওরবানের এই বয়ান বয়স্ক, কম শিক্ষিত, বড় শহরের বাইরে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে দ্রুত সাড়া ফেলে। এটা তাঁর পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে ভোটপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছিল। এরপর তিনি একের পর এক উদার মূল্যবোধ (লিবারেল ভ্যালু)–বিরোধী পদক্ষেপ নিতে থাকেন, যেটা তাঁর সমর্থকদের চাঙা রাখতে সাহায্য করে।
২০১৩–১৪ সালের দিকে সিএনএনের বিখ্যাত সাংবাদিক ফরিদ জাকারিয়া পৃথিবীর বিভিন্ন উদার গণতান্ত্রিক দেশে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত শাসকদের হাতে গণতন্ত্রের ক্ষয় দেখে ‘ইলিবারাল ডেমোক্রেসি’ শব্দগুলো ব্যবহার করেছিলেন। ওরবান নিজেই এখন তাঁর শাসনব্যবস্থাকে এই শব্দগুলো দিয়ে প্রকাশ করেন। প্রশ্ন হচ্ছে, হাঙ্গেরি কি আদৌ আর গণতন্ত্র?
২০১০ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ওরবান সংবিধান একের পর এক সংশোধন আর নানা আইন প্রণয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ভিত্তি নষ্ট করেছেন। নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করার জন্য নিজ দলের পক্ষে নির্বাচনী আইন সংশোধন করেছেন। সাম্প্রতিককালে তিনি এলজিবিটিবিরোধী আইন করেছেন, যা নিয়ে ইউরোপে তীব্র সমালোচনা হয়েছে।
চীন-রাশিয়ার একনায়কতান্ত্রিক শাসনের প্রভাব পড়বে এশিয়া, আফ্রিকা কিংবা লাতিন আমেরিকার মতো এলাকার দেশগুলোতে এমন একটা ধারণা আমাদের অনেকের আছে। কিন্তু খোদ ইউরোপের মাটিতেই ক্রমাগত এই ধারার রাজনীতি এতটা মাথাচাড়া দেবে, বেশ কয়েক বছর আগেও এটা আমাদের অনেকেরই হয়তো মনে হয়নি। কিন্তু সেটা হচ্ছে।
নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি থেকে কার্যত ‘সম্রাট’ হয়ে ওঠার জন্য বিচার বিভাগকে কবজায় নেন তিনি। এক চরম বিতর্কিত আইন প্রণয়নের মাধ্যমে তিনি বিচারকের অবসর নেওয়ার বয়স ৭০ থেকে ৬২ –তে নামিয়ে আনেন। তাতে দেশের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ, অভিজ্ঞ প্রায় ৩০০ বিচারককে চলে যেতে হয়। এরপর তিনি উচ্চতর বিচারিক পদে নিজের দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত মানুষদের নিয়োগ দিতে থাকেন। ২০১৯ সালের অক্টোবরে আন্দ্রেস ভার্গাকে সুপ্রিম কোর্টের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পরে দেশের সিনিয়র প্রায় সব বিচারক একজোট হয়ে তার প্রতিবাদ করেন। কারণ, এই ভদ্রলোক ভীষণ রকম অযোগ্য, প্রকাশ্যভাবে ওরবানের ফিদেস পার্টির সমর্থক এবং তিনি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার লড়াইয়ের প্রশ্নে কোনো দিন অন্যান্য বিচারকের সঙ্গে অংশ নেননি।
ক্ষমতায় এসে ওরবান দেশের প্রায় সব মিডিয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। দেশের এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে নানা রকম নিপীড়ন শুরু করেন, বিশেষ করে সেগুলোর বিরুদ্ধে যেগুলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সর্বজনীন মানবাধিকার, উদারনৈতিক মূল্যবোধ এসবের পক্ষে উচ্চকিত।
এর মধ্যে খুব উল্লেখযোগ্য একটি পদক্ষেপ হচ্ছে হাঙ্গেরি বংশোদ্ভূত বিখ্যাত ধনকুবের জর্জ সরোসের প্রতিষ্ঠিত সেন্ট্রাল ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি বন্ধ করে দেওয়া। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি হাঙ্গেরির সর্বোচ্চ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি হওয়া সত্ত্বেও এর ‘অপরাধ’ হচ্ছে এটি উদার গণতন্ত্র এবং মূল্যবোধকে প্রচার এবং প্রসার করার কাজ করে। সরোসকে আমরা যাঁরা চিনি, তাঁরা জানি তিনি ‘ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংস্থার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শিক্ষা, গণস্বাস্থ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে কাজ করেন। সরোসের ওপরে ওরবানের ক্ষুব্ধতার কারণ স্পষ্ট আশা করি।
ওরবানের হাঙ্গেরি এখন ‘ইলিবারেল ডেমোক্রেসি’ নয়, কার্যত একটি স্বৈরতান্ত্রিক দেশে পরিণত হয়েছে। পরিস্থিতি এখন এমন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এখন হাঙ্গেরিকে তার সদস্য হিসেবে আদৌ রাখবে কি না, সেটা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেছে।
একটা দেশ যতই স্বৈরতান্ত্রিকতা নামক রোগে আক্রান্ত হতে থাকে ততই তার মধ্যে কতগুলো অনিবার্য উপসর্গ দেখা দেয়। এর সব কটিই আছে হাঙ্গেরিতে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির ধারণা সূচকে ২০১২ সালে ৫৪ স্কোর করা হাঙ্গেরির স্কোর ক্রমাগত কমতে কমতে গত বছর ৪৩–এ এসে দাঁড়িয়েছে (সূচকে অবস্থান ৭৩)। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে হাঙ্গেরি সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ। হাঙ্গেরি তার জিডিপির ৪ শতাংশের মতো অনুদান পায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে। সেই অনুদানের টাকায় গৃহীত নানা প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তও হয়েছে।
২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের গণতন্ত্রের সূচকে ১১ ধাপ নিচে নেমেছে। আর এ সময়ে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের মুক্ত সংবাদমাধ্যম সূচকে ৬৯ ধাপ পিছিয়েছে হাঙ্গেরি।
গত এক দশকে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী নিজের প্রো-চাইনিজ পরিচয় নিয়ে মোটেও কুণ্ঠিত না হয়ে গর্বিত হয়েছেন। হংকংয়ে চীনের একটি আইন প্রয়োগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের ওপরে চালানো নিপীড়নের পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন মানবাধিকার নিশ্চিতের আহ্বান জানানোর প্রস্তাব পাস করতে পারেনি। ভেটো দেয় হাঙ্গেরি।
করোনার সময় হাঙ্গেরি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের একমাত্র দেশ, যে তার নাগরিকদের চীনের তৈরি করোনার টিকা দিয়েছিল। এমনকি তাঁর দেশেই চীনের সিনোফার্ম টিকা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
কিছুদিন আগেই বুদাপেস্টে চীনের সাংহাই ফুদান ইউনিভার্সিটির শাখা খোলা নিয়ে হাঙ্গেরি উত্তাল হয়ে উঠেছিল। চীন থেকে পাওয়া দেড় বিলিয়ন ইউরো দিয়ে সেটি তৈরি হচ্ছিল কিন্তু এটি তৈরির সব উপাদান, এমনকি শ্রমিকও আসবে চীন থেকে, যা মানুষকে ভীষণ ক্ষুব্ধ করে। হাঙ্গেরিকে চীনের বেল্ট রোড ইনিশিয়েটিভের এক ‘পিলার’ দাবি করে অরবান চীনা ঋণে বেশ কিছু প্রকল্প নিয়েছেন, যার মধ্যে বুদাপেস্ট-বেলগ্রেড রেলপথ উল্লেখযোগ্য। অপ্রয়োজনীয় ব্যয়, তথ্যের গোপনীয়তা এবং সর্বোপরি দুর্নীতির মতো চীনা প্রকল্পের সব জানা বৈশিষ্ট্য এখানেও আছে তাই এটা নিয়ে জনগণের অসন্তোষও প্রবল। এসবের থোড়াই কেয়ার করেছেন অরবান।
২০১৯ সালে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস পত্রিকাকে এক সাক্ষাৎকারে ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘উদারনৈতিক মতবাদ (লিবারেল আইডিয়া) বাতিল হয়ে গেছে। এটা এখন সংখ্যাগরিষ্ঠদের চাওয়া এবং চাহিদার সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত...আমার মতে কোটি কোটি মানুষের জন্য সনাতন মূল্যবোধ অনেক বেশি সুসংহত এবং গুরুত্বপূর্ণ। আমি সত্যিই বিশ্বাস করি উদারনৈতিক চিন্তা বাতিল হয়ে যাবে।’
কিছুদিন আগে আমেরিকা যখন গণতন্ত্র সম্মেলন আয়োজন করেছিল তখন চীন উদার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেছিল এবং শক্তভাবে দাবি করেছিল সত্যিকারের গণতন্ত্র সেটাই যেটা চীনে চালু আছে। তখনই সেটা নিয়ে চীন একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে, ‘চায়না: ডেমোক্রেসি দ্যাট ওয়ার্কস’ শিরোনামের।
আমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছি, ওরবানেরও মুগ্ধতা আছে এই দেশগুলোর রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি। ২০১০ সালে নির্বাচিত হওয়ার কিছুদিন পরেই তিনি বলেছিলেন, ‘চীনা সরকার পশ্চিমা দেশ, উদার গণতন্ত্র-মূল্যবোধ দ্বারা প্রভাবিত নয় বলেই তারা সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক উন্নতি করতে পেরেছে। উন্নয়নই সবকিছুর মূল।’
চীন-রাশিয়ার একনায়কতান্ত্রিক শাসনের প্রভাব পড়বে এশিয়া, আফ্রিকা কিংবা লাতিন আমেরিকার মতো এলাকার দেশগুলোতে এমন একটা ধারণা আমাদের অনেকের আছে। কিন্তু খোদ ইউরোপের মাটিতেই ক্রমাগত এই ধারার রাজনীতি এতটা মাথাচাড়া দেবে, বেশ কয়েক বছর আগেও এটা আমাদের অনেকেরই হয়তো মনে হয়নি। কিন্তু সেটা হচ্ছে।
একটা রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে চীন-রাশিয়া মডেলের শাসনব্যবস্থায় ঢুকে যাওয়ার ঝুঁকি আমরা জানি, হাঙ্গেরির ক্ষেত্রেও সেটা দেখছি। তবে আমাদের অনেকেই আশা করি, উদার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো ‘অনুদার’ ব্যক্তি নির্বাচিত যদি হয়েও যায় তবে তাঁকে সেখান থেকে সরিয়ে ফেলা সম্ভব নির্বাচনের মাধ্যমেই। ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারা এই ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে আসে।
হাঙ্গেরির ক্ষেত্রে দেখছি নির্বাচনী ব্যবস্থাটিকেই ধাপে ধাপে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে এবং এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে সেখানে ক্ষমতাসীনদের বাইরে আর কারও পক্ষে নির্বাচিত হওয়া সম্ভব হবে না। এটাই সবচেয়ে বড় ঝুঁকির জায়গা।
দেখা যাচ্ছে, পুতিন ও সি চিন পিংয়ের বন্ধু হওয়ার কারণে খোদ ইউরোপের মাটিতেই অরবান কত সহজেই নির্বাচনে জিতে যাচ্ছেন। উন্নত গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে যদি এভাবে ক্রমাগত ভেঙে ফেলা হতে থাকে তাহলে আমাদের মতো দেশে, যেখানে নির্বাচন ব্যবস্থা বলে কোনো কিছুর অস্তিত্ব এখন আর নেই তাকে পুনরুদ্ধার করে দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আশা কতটুকু বাস্তবসম্মত?
ডা. জাহেদ উর রহমান ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের শিক্ষক