(আজ শনিবার সকাল এগারোটায় আমাদের বৈঠক ছিল সার্চ কমিটির সঙ্গে। সেখানে বলার জন্য একটি বক্তব্য লিখে নিয়ে যাই। আমার সেই লিখিত বক্তব্যটি ছিল নিম্নরূপ।)
আমাকে আমন্ত্রণ করার জন্য ধন্যবাদ। অনুসন্ধান কমিটির উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। কিছু অপ্রিয় সত্য উচ্চারণ করে শুরু করছি। আমাদের মনে আছে, অতীতে দুবার এমন অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছিল। ২০১২ ও ২০১৭ সালের সেই কমিশনগুলো তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে এবং এর ফলে এ দেশের জনগণের ভোটাধিকার ভূলুণ্ঠিত হয়েছে।
বর্তমানে আইনের মোড়কে অনেকটা একই ধরনের অনুসন্ধান কমিটি গঠিত হয়েছে। এই কমিটি আরও গ্রহণযোগ্য হতে পারত এমন অভিমত সমাজে রয়েছে। আশা করি এই কমিটি তার কাজের মাধ্যমে তার গ্রহণযোগ্যতাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।
নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত ২০২২ সালের আইনের ৪ ধারায় কমিটিকে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে বলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনারদের নাম প্রস্তাবের ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও অযোগ্যতার পাশাপাশি সততা ও সুনামকে বিবেচনায় নিতে বলা হয়েছে। এসব নীতি প্রয়োগ করে কমিটি নিম্নোক্ত ধরনের ব্যক্তিদের নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগের জন্য প্রস্তাব করা থেকে বিরত থাকবেন বলে আশা করি।
মূল প্রসঙ্গে আসি। অনুসন্ধান কমিটির প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করা। এই ১০ জনের মধ্য থেকে ৫ জনকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেবেন বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুসারে। তিনি নিজে আগামী নির্বাচনের সবচেয়ে বড় একজন স্টেক-হোল্ডার। ফলে অনুসন্ধান কমিটিকে ১০টি নামই পাঠাতে হবে সুচিন্তিতভাবে।
নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত ২০২২ সালের আইনের ৪ ধারায় কমিটিকে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে বলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনারদের নাম প্রস্তাবের ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও অযোগ্যতার পাশাপাশি সততা ও সুনামকে বিবেচনায় নিতে বলা হয়েছে। এসব নীতি প্রয়োগ করে কমিটি নিম্নোক্ত ধরনের ব্যক্তিদের নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগের জন্য প্রস্তাব করা থেকে বিরত থাকবেন বলে আশা করি।
· ১. বিভিন্ন সরকারের আমলে বিশেষভাবে পছন্দনীয় হিসেবে যাদের চাকরি, পদোন্নতি বা পদায়ন হয়েছিল (নিরপেক্ষতা নীতি অনুসারে এদের বাদ দিতে হবে)
· ২. যারা প্রকাশ্যে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল (ওই)
· ৩. যাদের সঙ্গে সরকারের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সম্পর্ক ছিল/আছে (নিরপেক্ষতা ও সততা নীতি অনুসারে এদের বাদ দিতে হবে)
· ৪. যাদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনকালে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ ছিল (সুনাম ও সততা নীতি অনুসারে এদের বাদ দিতে হবে)
· ৫. যাদের কাজকর্মে প্রাসঙ্গিক আচরণবিধি লঙ্ঘনের নজির রয়েছে (ওই)।
এ ছাড়া স্বচ্ছতার নীতি অনুসারে বিভিন্নভাবে পাওয়া প্রস্তাবিত নাম থেকে যাদের বাদ দেওয়া হলো ও যাদের নেওয়া হলো এ সম্পর্কে প্রতিবেদন তৈরি করে তা জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। এগুলো দুরূহ বিষয় না।
সবশেষে এ দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার চরম সংকটকালে অনুসন্ধান কমিটি সর্বোত্তম সিদ্ধান্তটি নিতে পারবে এবং এর ফলে একটি যোগ্য ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠিত হবে-এই প্রত্যাশা থাকল।
প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি একটি ভালো নির্বাচন কমিশন গঠিত হলেই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে আমি মনে করি না। কমিশন যেন ঠিকভাবে কাজ করতে পারে এ জন্য অবশ্যই নির্বাচনকালীন সরকার ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।
আসিফ নজরুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক