বাংলাদেশে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় আনুষ্ঠানিক শিক্ষার দীর্ঘ পরিক্রমায় এই প্রথমবারের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের উদ্যোগে জাতীয় পর্যায়ের একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সাংবাদিকতা, গণমাধ্যম ও গণযোগাযোগ ছাড়াও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে পাঠদান করে এমন প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রবন্ধ আহ্বানের মাধ্যমে এর প্রস্তুতি শুরু হয়। এই আয়োজনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হিসেবে বলা যায়, শুধু সাংবাদিকতা-সংশ্লিষ্ট একাডেমিক গবেষক বা শিক্ষকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমে কর্মরত সংবাদকর্মী অথবা অন্য একাডেমিক ক্ষেত্র থেকেও গণমাধ্যম বিষয়ে গবেষণায় আগ্রহী লেখকদের জন্যও প্রবন্ধ জমা দেওয়ার সুযোগ উন্মুক্ত ছিল। যার ফলে তাত্ত্বিক আলোচনা, গবেষণার গভীরতা ও বাস্তব কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতাসহ বিস্তৃত পরিধি ও বিষয়-বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ ৫০টিরও বেশি প্রবন্ধ আয়োজকদের কাছে জমা পড়ে।
>অনেকেই বলে থাকেন সময়ের সঙ্গে বাংলাদেশের শিক্ষা কার্যক্রমে গবেষণাপ্রবণতা অনেকটা কমছে। আশা করা হচ্ছে এই কনফারেন্সের মাধ্যমে সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণায় একধরনের ইতিবাচক ধারা সূচিত হবে
২৯ ও ৩০ নভেম্বর দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠেয় এই সম্মেলনের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো বর্তমান বাংলাদেশের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার চর্চায় সৃষ্ট বিভিন্নমুখী গবেষণার প্রবণতা ও ধারাসমূহের একটি সমন্বিত রূপ তুলে ধরা। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমে কর্মরত শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষকেরা প্রতিনিয়তই তাঁদের নিজস্ব আগ্রহ ও দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট গবেষণার ভান্ডার ঋদ্ধ করে চলেছেন। তবে অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের কাজ সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করার জায়গায় কিছু সীমাবদ্ধতা থেকে যায়। এ কথা সত্য যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের একাডেমিক জার্নালে প্রবন্ধ প্রকাশের মাধ্যমে তাঁদের কাজের স্বীকৃতি ও প্রচারের প্রয়াস নেওয়া হয়, তবে এর সঙ্গে সঙ্গে কনফারেন্সের মতো পরিবেশের গবেষণার কাঠামোবদ্ধ উপস্থাপন তাঁদের কাজের ব্যাপারে আগ্রহী বিদ্যায়তনের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, অন্যান্য গবেষক এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কর্মরত ব্যক্তিবর্গের সামনে মূল্যায়ন ও তুলনামূলক বিশ্লেষণের অবকাশ তৈরি করে দেয়।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে প্রথম জাতীয় কনফারেন্সে দেশের গণমাধ্যম গবেষকদের নিজস্ব চিন্তা–চেতনা, কাজ ও নতুন গবেষণালব্ধ তথ্যাবলি আদান-প্রদানের মাধ্যমে এ–বিষয়ক গবেষণা ও তাত্ত্বিক আলোচনার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে এবং অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে নবতর কাজের সম্পর্কের সূচনা হবে বলে আশা করা যায়। এই অনুষ্ঠানের সাফল্যের ভিত্তিতে পরবর্তী আয়োজনসমূহের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাত্রাও যুক্ত হতে পারে। সর্বোপরি, গবেষণার মূল উদ্দেশ্য, অর্থাৎ জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করার মাধ্যমে সামগ্রিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে এই আয়োজন তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং এর আয়োজক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ তার স্বকীয়তা ও পথপ্রদর্শনকারী ভূমিকায় আরও নিজেকে উপস্থাপন করার অবকাশ পাবে বলে আমরা আশাবাদী।
প্রথমবারের মতো এই আয়োজনে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি মৌলিক বিভাগে ৫৬টি গবেষণাপত্র জমা পড়েছে। এগুলোর মধ্যে ৪৫টি কনফারেন্সে উপস্থাপিত হবে। অভিজ্ঞ গবেষক ও শিক্ষকেরা গবেষণাপত্রের ও প্রবন্ধের উপস্থাপনা পর্ব পরিচালনা করবেন। গবেষণাপত্রগুলো যথাযথভাবে উপস্থাপনে গবেষকেরা এরই মধ্যে প্রস্তুতি নিয়েছেন। এগুলোর মধ্যে যেমন আছে সাইবার জগতে জেন্ডার সংবেদনশীলতা নিয়ে গবেষণাপত্র, তেমনি আছে গুলশান হামলার ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে সাংবাদিকতার বিভিন্ন দিকের সূক্ষ্ম পরিবীক্ষণ। আরও রয়েছে আধেয় বিশ্লেষণভিত্তিক গবেষণাপত্রগুলো থেকে গণমাধ্যম, বিজ্ঞাপন ও গ্রাহক বা শ্রোতাদের কার্যকরণ সম্পর্কে নানা সিদ্ধান্ত ও পর্যবেক্ষণ। সাংবাদিকতায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারসহ নানা বিষয় নিয়ে দুই দিন ধরে আলোচনা চলবে এই কনফারেন্সে। অনেকেই বলে থাকেন সময়ের সঙ্গে বাংলাদেশের শিক্ষা কার্যক্রমে গবেষণাপ্রবণতা অনেকটা কমছে। আশা করা হচ্ছে এই কনফারেন্সের মাধ্যমে সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণায় একধরনের ইতিবাচক ধারা সূচিত হবে, সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণায় গতি আসবে। সমৃদ্ধ হবে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা জগৎ।
গণমাধ্যম ও গণযোগাযোগ নিয়ে প্রতিনিয়ত বিশ্বের নানা প্রান্তে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে, যাতে আমাদের দেশের খ্যাতিমান গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও গণযোগাযোগ তাত্ত্বিকেরা যোগ দিয়ে আসছেন। সেসব সম্মেলনের তুলনায় এই সম্মেলন আয়োজন খুবই ছোট পরিসরের। তবে এটা শুরু মাত্র। এই শুরুই একদিন বড় কিছু হতে পারে। কারণ, আমাদের সবারই জানা ‘ছোট্ট এক বীজ থেকেই বটগাছের মতো বিশাল বৃক্ষের জন্ম’। প্রত্যাশা সে রকমই বড় কিছুর।
লেখকেরা: শিক্ষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।