সঞ্চয়পত্র ও বন্ডে দেওয়া আর্থিক সুবিধা মুনাফা না সুদ?


সম্প্রতি মুনাফা আর সুদ এক না ভিন্ন—এ রকম কিছু আলোচনা পত্রপত্রিকায় আলোচিত হচ্ছে। পত্রপত্রিকায় যেহেতু গণমানুষের আশা–আকাঙ্ক্ষা এবং জিজ্ঞাসার প্রতিফলন ঘটে, তাই ধরে নেওয়া যায় বিষয়টি সাধারণ মানুষেরও জিজ্ঞাস্য। যেমন, ‘সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে সাধারণ ভবিষ্য তহবিল, প্রদেয় ভবিষ্য তহবিলে সরকার যে আর্থিক সুবিধা দেয়, তা মুনাফা না সুদ? সরকারের দিক থেকে অবশ্যই সুদ। কিন্তু সুবিধাভোগীরা একে সুদ বলতে নারাজ। তাঁরা স্বাছন্দ্যবোধ করেন মুনাফা বলতে। সরকারের হিসাবের খাতায় যা সুদ, বিনিয়োগকারীদের কাছে সেটাই হচ্ছে মুনাফা’—এ রকম লেখা উঠে আসে গত ২৮ ডিসেম্বর, ২০২০ তারিখে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায়। কিন্তু মুনাফা আর সুদের পার্থক্য এতে সরলীকরণ করা যায় না। অর্থনীতির প্রতিষ্ঠিত সূত্রাবলি এমনকি প্রচলিত ফাইন্যান্সের তত্ত্ব অনুযায়ী, সুদ ও মুনাফা সার্বিকভাবেই ভিন্ন অর্থ বহন করে।

এক.
প্রথমেই মুনাফার কথায় আসা যাক। মুনাফা কোনো ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কর্মক্ষমতা বা পারফরম্যান্সকে নির্দেশ করে। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যেই ধাবিত এবং পরিচালিত হয়। এটাও সত্যি যে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যাদের মূল লক্ষ্য মুনাফা অর্জন নয়। তারা ব্যবসা করলেও তাদের মূল লক্ষ্য থাকে সমাজের বিভিন্ন পক্ষের কল্যাণ সাধন। সে রকম অলাভজনক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান অবশ্য হাতে গোনা।
প্রচলিত অর্থে মুনাফা বলতে ব্যবসায়ের মোট আয় এবং মোট ব্যয়ের পার্থক্য বোঝায়। বলে রাখা ভালো, সুদ ব্যবসায়ের মোট আয় এবং মোট ব্যয় খাতের একটি উপকরণ মাত্র। যেকোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সাধারণত দুভাবে মুনাফা হিসাব করে থাকে। যথা ব্যবসায়িক মুনাফা এবং অর্থনৈতিক মুনাফা। ব্যবসায়িক মুনাফার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান তার মোট আয় থেকে দৃশ্যমান খরচ বাদ দিয়ে থাকে। এখানে দৃশ্যমান খরচ বলতে উৎপাদন খরচ থেকে শুরু করে পণ্য পরিবহন, গুদাম ভাড়া, ব্যবসা পরিচালনা খরচ, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ বিল এমনকি ধার থাকলে সংশ্লিষ্ট সুদ ব্যয়ও থাকতে পারে। অপর পক্ষে অর্থনৈতিক মুনাফা হিসাবের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িক মুনাফা হিসাবের অন্তর্ভুক্ত দৃশ্যমান খরচগুলোর পাশাপাশি অদৃশ্যমান বিভিন্ন ছায়া খরচও বাদ দিয়ে থাকে। ব্যবসা শুরুর পূর্বেই অনেক অদৃশ্যমান খরচ হতে পারে, যা কিনা পরে হিসাব বইতে আর না–ও উঠতে পারে। ব্যবসা শুরুর আগেই মালিকপক্ষ এ রকম অনেক ব্যয় করে থাকে। আবার কোনো প্রতিষ্ঠানে দক্ষ ও অদক্ষ উভয় প্রকারের শ্রমিক থাকতে পারে। অদক্ষ শ্রমিকসংশ্লিষ্ট ব্যয়ও অদৃশ্যমান খরচ। ক্ষেত্রবিশেষে সঠিক পদ্ধতি ও মাত্রা বিবেচনায় অবচয় হিসাব না করলে অদৃশ্যমান খরচের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। সে যা–ই হোক, ব্যবসায়িক মুনাফার তুলনায় অর্থনৈতিক মুনাফা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সঠিক ও প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে।

বর্তমানে ইন্টারনেটভিত্তিক ফেসবুক খুবই জনপ্রিয় একটি কোম্পানি। সারা বিশ্বে লাখো কোটি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে থাকে। তথ্য ও বিজ্ঞাপনসংশ্লিষ্ট অনেক খাত থেকে ফেসবুক অনেক আয় তথা মুনাফা করে থাকে। অতীতেও এ রকম বহু নতুনত্ব বা ইনোভেসনের মাধ্যমে অনেক কোম্পানি লাভবান হয়েছে। যেমন ডিনামাইট, নতুন অস্ত্র, কম্পিউটার, অনলাইন বা ভার্চ্যুয়াল গেমস ইত্যাদি

আবার একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কেনই বা মুনাফা করবে, তার সপক্ষেও নানা তত্ত্ব বিরাজমান। প্রতমত, সংঘাতমূলক (ফ্রিকশনাল) মুনাফা তত্ত্ব অনুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠান মুনাফা করে থাকে তাদের পণ্য বা সেবার চাহিদা ও জোগান ভারসাম্যে সফল পরিবর্তনের মাধ্যমে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো ব্যাংক যদি প্রথম এটিএম মেশিন স্থাপন করে সেবা প্রদান করে, তাহলে তাদের ব্যাংকিং সেবার চাহিদা যারা এটিএম সেবা দেয় না তাদের তুলনায় বেড়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে তাদের ব্যাংকিং কার্যক্রমের পরিসর বৃদ্ধির পাশাপাশি আয় ও মুনাফা দুই–ই বাড়বে।
দ্বিতীয়ত, একচেটিয়া মুনাফা তত্ত্ব অনুযায়ী বাজারে সবার প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কোনো এক বিশেষ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে বিশেষ সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে তার অতিরিক্ত মুনাফা নিশ্চিত করা হয়। যেমন, প্রাকৃতিক গ্যাস, পানি বা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো। আমদানি বা রপ্তানির ক্ষেত্রেও একচেটিয়া মুনাফা তত্ত্ব প্রযোজ্য। উদাহরণস্বরূপ, কোনো মহামারিসংশ্লিষ্ট ভ্যাকসিন বা টিকা, মূল্যবান ওষুধ এ রকম যেকোনো পণ্যের আমদানি বা রপ্তানির অনুমোদন (লাইসেন্স) নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কোনো পক্ষ বিশেষ মুনাফা অর্জন করতে পারে।
তৃতীয়ত, মুনাফার নতুনত্ব তত্ত্ব। নতুনত্ব তত্ত্ব অনুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের আবিষ্কৃত নতুন কোনো পণ্য, সেবা বা পদ্ধতি প্রচলনের মাধ্যমে বাজার থেকে মুনাফা করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ফেসবুক, আমাজন, গুগল ইত্যাদি কোম্পানিগুলো। বর্তমানে ইন্টারনেটভিত্তিক ফেসবুক খুবই জনপ্রিয় একটি কোম্পানি। সারা বিশ্বে লাখো কোটি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে থাকে। তথ্য ও বিজ্ঞাপনসংশ্লিষ্ট অনেক খাত থেকে ফেসবুক অনেক আয় তথা মুনাফা করে থাকে। অতীতেও এ রকম বহু নতুনত্ব বা ইনোভেসনের মাধ্যমে অনেক কোম্পানি লাভবান হয়েছে। যেমন ডিনামাইট, নতুন অস্ত্র, কম্পিউটার, অনলাইন বা ভার্চ্যুয়াল গেমস ইত্যাদি।
চতুর্থত, কোন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তাদের অতিরিক্ত দক্ষতার জন্য অতিরিক্ত মুনাফা করতে পারে, যা কিনা দক্ষতার (কম্পিটেন্সি) জন্য মুনাফা তত্ত্ব হিসেবে পরিচিত। এ ক্ষেত্রে ধরা যাক, কোনো কোম্পানি একটি নির্দিষ্ট পণ্য উৎপাদনে খরচ করে ইউনিটপ্রতি ১০ টাকা, অথচ অন্য কোম্পানি সেই একই পণ্য উৎপাদনে খরচ ২০ টাকা হলে প্রথমোক্ত কোম্পানি শেষোক্ত কোম্পানির চেয়ে অধিকতর দক্ষ। অধিক দক্ষ কোম্পানি যৌক্তিক বিবেচনাতেই অধিক মুনাফা করে থাকে।

সুদ হিসাব করার পদ্ধতি হলো, মূলধনকে সুদহার এবং নিয়োজিত মেয়াদ দিয়ে গুণন করা। যেমন ১০০ টাকা ১০ শতাংশ সুদে এক বছর খাটলে সুদ হবে ১০ টাকা, দুই বছরে ২০ টাকা। সরল পদ্ধতির স্থলে যৌগিক পদ্ধতি (যে পদ্ধতিতে সুদের ওপর সুদ ধার্য হয়) অনুসরণ করলে ১০০ টাকা মূলধন আর ১০ শতাংশ সুদে এক বছরে সুদ ১০ টাকা আবার দুই বছরে হবে ২১ টাকা।

দুই.
এবার আসা যাক ইন্টারেস্ট বা সুদের কথায়। সুদ একটি স্থায়ী (ফিক্সড) আয়-ব্যয় খাত। প্রদানকারীর জন্য সুদ স্থায়ী খরচ আর গ্রহণকারীর জন্য এটি স্থায়ী আয়। শুধু মূলধনের ওপরই সুদ প্রযোজ্য। উৎপাদনের অন্যান্য উপকরণগুলোর আলাদা আলাদা ব্যয় খাত নির্ধারিত। যেমন, ভূমি ব্যবহারের জন্য ভূমির মালিক খাজনা, শ্রমিকের মজুরি এবং উদ্যোক্তা তার উদ্যোগের জন্য মুনাফা পেয়ে থাকেন। সুতরাং সুদ কোনোক্রমেই খাজনা, মজুরি বা মুনাফা নয়। অর্থনীতির তত্ত্বে মূলধনের মালিককে তার বর্তমান ভোগ বিরতির পুরস্কার হিসেবে প্রারম্ভিক মূলধনের অতিরিক্ত যা দেওয়া হয়, তাই–ই সুদ। ব্যবসায়িক পরিভাষায় মূলধন দুই ধরনের। যথা ঋণ (ডেট) মূলধন এবং মালিক কর্তৃক সরবরাহকৃত (ইক্যুইটি) মূলধন। প্রচলিত অর্থে ঋণ মূলধনের ওপর প্রদেয় উপরিকেই সুদ বলা হয়। ইক্যুইটি মূলধনের ওপর প্রযোজ্য উপরিকে লভ্যাংশ বা ডিভিডেন্ড বলা হয়। প্রকান্তরে লভ্যাংশকে মুনাফা বলা যেতে পারে, কারণ তা স্থায়ী নয় এবং প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কমবেশি হতে পারে, তথা ঝুঁকি আছে। কিন্তু ঋণ মূলধনের ওপর প্রদানকৃত সুদ স্থায়ী এবং এ ক্ষেত্রে পাওনাদার কোনো ব্যবসায়িক ঝুঁকি বহন করেন না।
সুদ নানা প্রকার হতে পারে। যেমন ব্যাংকের ক্ষেত্রে তথাকথিত লেন্ডিং সুদহার, বরোইং সুদহার, মূলধন বাজারে স্বল্প মেয়াদি সুদহার, দীর্ঘমেয়াদি বন্ডের ক্ষেত্রে মেয়াদি সুদ বা ইল্ড হার, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষেত্রে ব্যাংক রেট ইত্যাদি সবই সুদের বিভিন্ন প্রকারভেদ। সুদ হিসাব করার পদ্ধতি হলো, মূলধনকে সুদহার এবং নিয়োজিত মেয়াদ দিয়ে গুণন করা। যেমন ১০০ টাকা ১০ শতাংশ সুদে এক বছর খাটলে সুদ হবে ১০ টাকা, দুই বছরে ২০ টাকা। সরল পদ্ধতির স্থলে যৌগিক পদ্ধতি (যে পদ্ধতিতে সুদের ওপর সুদ ধার্য হয়) অনুসরণ করলে ১০০ টাকা মূলধন আর ১০ শতাংশ সুদে এক বছরে সুদ ১০ টাকা আবার দুই বছরে হবে ২১ টাকা।

তিন.
এখন আসা যাক সঞ্চয়পত্রসহ অন্যান্য বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত আয় মুনাফা না সুদ, সে আলোচনায়। সঞ্চয়পত্র সার্বিক অর্থেই একধরনের বন্ড। ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষ ধার গ্রহণ করে। বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সঞ্চয়পত্র ক্রয় করে ইস্যুকারীকে ধার প্রদান করেন। ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষ এখানে নিশ্চয়তা (কমিটমেন্ট) প্রদান করেন ঋণ মূলধনের উপরি কত হবে তার ওপর। এ ক্ষেত্রে মেয়াদও সুনির্দিষ্ট থাকে। এমনকি মেয়াদ পূর্তির আগেই লগ্নিকারী মূলধন ফেরত চাইলে পেতে পারেন। অর্থাৎ লগ্নিকারী এ ধরনের বন্ড বিনিয়োগে কোনো ঝুঁকি বহন করেন না। পক্ষান্তরে, ইস্যুকারী, ধারকৃত অর্থ কোন খাতে ব্যয় করবেন, তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেন না। বাংলাদেশে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সঞ্চয়পত্র, সঞ্চয় বন্ড এবং ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক এ তিন খাতে বিভিন্ন নামে ১১টি মোট সঞ্চয়পত্র বা বন্ড ইস্যু করে থাকে এবং বাজারে প্রচলিত আছে। ইস্যুকৃত বন্ডগুলো মূলত মূল্যমান, টার্গেট বিনিয়োগকারী, মেয়াদ এবং সুদের (‘মুনাফা’ লিখিত) হারের তারতম্যে ভিন্নতর।
উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে প্রচলিত ৫ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রে মূল্যমান যথাক্রমে ১০ টাকা; ৫০ টাকা; ১০০ টাকা; ৫০০ টাকা; ১,০০০ টাকা; ৫,০০০ টাকা; ১০,০০০ টাকা; ২৫,০০০ টাকা; ৫০,০০০ টাকা; ১,০০, ০০০ টাকা; ৫,০০, ০০০ টাকা এবং ১০,০০, ০০০ টাকা। মেয়াদ ৫ (পাঁচ) বছর এবং মুনাফার হার মেয়াদান্তে মুনাফা ১১.২৮ %। তবে মেয়াদপূর্তির পূর্বে নগদায়ন করলে ১ম বছরান্তে ৯.৩৫ %, ২য় বছরান্তে ৯.৮০ %, ৩য় বছরান্তে ১০.২৫% এবং ৪র্থ বছরান্তে ১০.৭৫% হারে মুনাফা প্রাপ্য হবে (সুত্র: জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর ওয়েবসাইট)। দেখা যাচ্ছে এ ক্ষেত্রে বন্ডের মূল তিনটি বৈশিষ্ট্য যেমন, অভিহিত মূল্য, মেয়াদ ও সুদহার সুনির্দিষ্ট। প্রচলিত সঞ্চয়পত্র বা বন্ড যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন, এগুলোতে বন্ডের বৈশিষ্ট্যগুলোই পরিলক্ষিত। ইক্যুইটি মূলধনের ক্ষেত্রে অবশ্যই উপরি আয় স্থায়ী বা সুনির্দিষ্ট করা থাকে না, মেয়াদও উল্লেখ থাকে না। সে ক্ষেত্রে মূলধন সরবরাহকারী তাঁর প্রাপ্ত আয় কত হবে, তা নিয়ে ঝুঁকিতে থাকেন। সে জন্য ওই ধরনের আয়কে লভ্যাংশ বা প্রকারন্তরে মুনাফা বলা যায়। কিন্তু লগ্নিকৃত মূলধন (ডেট ক্যাপিটাল) সে যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন, তার ওপর প্রদেয় উপরি সুদ বৈ অন্য কিছু নয়।

ড. শহীদুল জাহীদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষক।