লালদীঘি: মুখর অতীতের স্মৃতি ও ছয় দফা

লালদীঘির মাঠে ১৯৬৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে জনসভায় ছয় দফা বিষয়ে ভাষণ দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
ছবি সংগৃহীত

লালদীঘির পাড় থেকে হেঁটে সাত মিনিটের পথ বক্সিরহাট মোড়। ওখানে গেলেই যে কেউ চিনিয়ে দেয় বাড়িটি। মোড় থেকে আসাদগঞ্জের দিকে কয়েকটি দোকান বাদে একটা ছোট সংকীর্ণ সিঁড়ি দিয়ে উঠে যেতে হয় দোতলায়। বেল টিপতেই দরজা খুললেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর মোহাম্মদ চৌধুরী। আমার আসার কারণ তিনি আগে থেকে জানতেন। ফোনে অনুমতি নিয়েছিলাম। সেই জন্যই হয়তো পরিচয় আর কুশল বিনিময়ের পর কোনো রকম ভূমিকা ছাড়াই স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসলেন।

হাত ধরে নিয়ে গেলেন নিজের শয়নকক্ষে। আলমারি থেকে একটা ফাইল বের করে সেটির ফিতা খুললেন। আর সঙ্গে সঙ্গেই যেন অর্ধশতাব্দী কালের বেশি সময়ের পর্দা সরে গেল। চোখের সামনে দেখলাম চট্টগ্রামের লালদীঘির ময়দানে বক্তব্য দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু, সঙ্গে জোড়া লাগানো উপস্থিত জনতার ছবি।

দেখলাম আমাদের বাঁচার দাবি ৬-দফা কর্মসূচি শিরোনামের একটি পুস্তিকা। পুস্তিকাটির লেখক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ২৫ পয়সা দামের এই পুস্তিকার পেছনে লেখা আছে, ‘তাজউদ্দীন আহমদ কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের পক্ষে ১৫ পুরানা পল্টন, ঢাকা হইতে প্রকাশিত।’

শুধু এই দুটো নয়, আরও বেশ কয়েকটি ছবি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দল বেঁধে, কিংবা দু-একজন মিলে তোলা। বর্ণিল যৌবনের সাদা–কালো এসব ছবি সম্পত্তির মতো তিনি আগলে রেখেছেন এত বছর ধরে। তাঁর কাছে জানতে চাইলাম, এত পুরোনো ছবি, এগুলো কেন রেখে দিয়েছেন? এ কথার উত্তর তাৎক্ষণিকভাবে দিতে পারলেন না তিনি, প্রায় নষ্ট একটা চোখ, অন্য চোখটাও ঘোলাটে। দুচোখের কোনায় জল জমেছে। একটা দীর্ঘশ্বাস টেনে আমার কাঁধে হাত দিয়ে বলেন, ‘অ বাজি, শেখ মুজিবুর মতো নেতা আর হডে ফাইয়ুম। আঁই যে হদিন বাইচ্চুম এগিন আগলাই রাইখ্কুম। (শেখ মুজিবের মতো নেতা আর কোথায় পাব? আমি যে কদিন বাঁচব, এগুলো আগলে রাখব)।

জানতে চাইলাম, লালদীঘির মাঠে ১৯৬৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ছয় দফা আন্দোলনের প্রথম জনসভা হয়েছিল, সেই দিনের কোনো স্মৃতি মনে আছে কি না। নূর মোহাম্মদ তখন ২৬ বছরের টগবগে যুবক। ৫৫ বছর আগের স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে নিজেও যেন ফিরে গেলেন যৌবনে।

একাত্তরে চট্টগ্রামে গঠিত স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান, বীর মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগ নেতা নূর মোহাম্মদ চৌধুরী জানালেন, সেদিন ছিল শুক্রবার। বঙ্গবন্ধু ঢাকা থেকে এসেছিলেন সেদিন সকালে। তাঁর থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল একটি রেস্টহাউসে। কিন্তু তিনি সেখানে থাকেননি। গিয়ে উঠেছেন হোটেল শাহজাহানের ৭ নম্বর কক্ষে।
নূর মোহাম্মদ চৌধুরী বলেন, ‘ছয় দফার জনসভার কথা মনে পড়লে দুটো বিষয় বেশি মনে পড়ে। একটা হলো বঙ্গবন্ধুর ভাষণ। ভাষণে তিনি অক্ষরে অক্ষরে বুঝিয়ে দিয়েছেন ছয় দফায় কী কী আছে। আর একটি হলো গায়ক শফি ভান্ডারির গান। সন্দ্বীপের গায়ক শফি সেদিন গানের সুরে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছিলেন ৬ দফার মর্মকথা। সেই সুর এখনো যেন প্রাণের ভেতর বেজে ওঠে।’

বঙ্গবন্ধুর লেখা ছয় দফার যে পুস্তিকাটি সেদিন বিলি করা হয়েছিল, সেটি কী তিনি কিনে নিয়েছেন? নাকি কেউ তাঁকে দিয়েছেন? সে কথা মনে করতে পারলেন না তিনি। তবে আমার চোখের সামনে পাতা মেলে ধরে বলেন, পড়ো। আমি পড়তে শুরু করলাম, অসাধারণ সুন্দর গদ্যে বাঙালি জাতিকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বপ্নের কথা লিখেছেন, ‘আমার প্রস্তাবিত ৬ দফা দাবিতে যে পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে পাঁচ কোটি শোষিত বঞ্চিত আদম সন্তানের অন্তরের কথাই প্রতিধ্বনিত হইয়াছে, তাতে আমার কোনও সন্দেহ নাই। খবরের কাগজের লেখায়, সংবাদে ও সভা-সমিতির বিবরণে সকল শ্রেণির সুধীজনের বিবৃতিতে আমি গোটা দেশবাসীর উৎসাহ-উদ্দীপনার সাড়া দেখিতেছি। তাতে আমার প্রাণে সাহস ও বুকে বল আসিয়াছে।’

আমি তাঁকে বললাম, আপনাদের যৌবনকালের এই গর্বের ঘটনাকে ধরে রাখার জন্য, ৬ দফার স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে সেই লালদীঘির মাঠ তো এখন নতুনভাবে সাজানো হচ্ছে। আপনি দেখেছেন?
নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘অ বাজি বেয়াগগুনোর মনত থাহন অইলদি বড় হথা। লালদীঘির হামর হথা উইন্নি। খুব খুশি অই।’ (বাবাগো, সবার মনে থাকাটাই আসল। লালদীঘির কথা শুনেছি। খুব খুশি হয়েছি)।

তাঁর কথাটাই ঠিক। ইতিহাস জীবন্ত থাকে মনে। তবে সেটা প্রজন্মের পর প্রজন্মে গড়ানোর জন্য অবশ্যই পূর্বপ্রজন্মের কিছু দায় থাকে। সেই দায় থেকেই, ছয় দফার স্মৃতিকে স্মরণীয় করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা অধিদপ্তর।

চট্টগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর মোহাম্মদ চৌধুরী

আমরা ইতিহাস থেকে জানি, ছয় দফা দাবির কথা বঙ্গবন্ধু প্রথম উত্থাপন করছিলেন ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তখনকার পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোরে সম্মিলিত বিরোধী দলের বৈঠকে। ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকা ফিরে আসেন। সেদিনই তিনি সংবাদ সম্মেলন করে ৬ দফা কর্মসূচির কথা জাতিকে জানিয়ে দেন। কিন্তু আপামর জনতার সামনে, প্রথম সমাবেশে করে ছয় দফা দাবির ঘোষণা আসে কয়েক দিন পর। সেই ঐতিহাসিক ঘোষণাটি দিতে বঙ্গবন্ধু বেছে নেন চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানকে। এখানেই প্রথম জনতার সামনে বঙ্গবন্ধু ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে এ বছর সেই ঘটনার ৫৫ বছর পূর্ণ হলো।

চট্টগ্রামের প্রবীণ সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ও চট্টগ্রাম গ্রন্থের লেখক নাসিরুদ্দিন চৌধুরী ছয় দফার ২৬ ফেব্রুয়ারি জনসভা সম্পর্কে বিস্তারিত জানালেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রামকে খুব গুরুত্ব দিতেন, সে জন্যই ছয় দফার প্রথম সভাটি এখানে করেছেন। বঙ্গবন্ধু ছাড়াও সেদিনের সভায় বক্তব্য দেন খন্দকার মোশতাক আহমদ, মিজানুর রহমান চৌধুরী, এম এ আজিজ, আবদুল্লাহ আল হারুন। সভা শেষে সভাপতি জহুর আহমদ চৌধুরী সভার লিখিত প্রস্তাব পাঠ করেন। এই প্রস্তাবটি আগেই লিখে রেখেছিলেন শহর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ইদরিস আলম।

এই প্রস্তাবে লেখা ছিল ‘এই পূর্ব পাকিস্তানের সিংহ হৃদয় বঙ্গশার্দুল সংগ্রামী জননেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৬ দফার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাইতেছে এবং ৬ দফার ভিত্তিতে দুর্বার গণ-আন্দোলন গড়িয়া তোলার জন্য জনসাধারণের কাছে আকুল আবেদন জানাইতেছে।...এই সভা মনে করে, ছয় দফার মধ্যেই অন্তর্নিহিত রহিয়াছে শক্তিশালী পাকিস্তান গড়িয়া তোলার স্বপ্ন।’

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘ছয় দফার জনসভার মাধ্যমে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে লালদীঘির নামটা যুক্ত হয়েছে এভাবেই। এই লালদীঘি শুধু চট্টগ্রামের নয়, পুরো জাতির ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত।’

নাসিরুদ্দিনের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে আরও অতীতে চলে গেলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরের সাবেক কিউরেটর প্রত্নতত্ত্ববিদ ড. শামসুল হক। তিনি বলেন, শুধু ছয় দফা নয়, লালদীঘি শব্দটির আগে ঐতিহাসিক বিশেষণটি আসন নিয়েছে সময়ের অনিবার্যতায়।

কারণ, চট্টগ্রামের ইতিহাস ও লালদীঘি পাশাপাশি থেকেছে যুগ যুগ ধরে। শুধু লালদীঘি নয়, লালদীঘির আশপাশ আন্দরকিল্লা এলাকা ছিল ঐতিহাসিক নগর কেন্দ্র। লালদীঘির পাড়ে যেমন ব্রিটিশ আমলের নিদর্শন আছে, তেমনি এর চারপাশে আন্দরকিল্লা, বদরপাতি ও অন্যান্য জায়গায় সুলতানি আমল ও মোগল আমলের স্থাপনা আছে। প্রাচীন স্থাপনাগুলো যতটুকু অক্ষুণ্ন রাখা যায়, ততটাই ভালো।

চট্টগ্রামের ইতিহাস থেকে জানা যায়, আড়াই শ বছর আগে ১৭৬১ সালে যখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চট্টগ্রামের শাসনভার গ্রহণ করে, তখন থেকেই লালদীঘিকেই কেন্দ্র করে বিস্তার লাভ করেছে এই শহরের যত কর্মচাঞ্চল্য। লালদীঘির পাড়ে বর্তমান মেট্রোপলিটন পুলিশের দপ্তরটি ব্রিটিশ আমলের। তখন ছিল তহসিল দপ্তর। লাল রঙের সেই ভবনকে চট্টগ্রামের মানুষ বলত লালকুঠি। লালকুঠির পাশে ছিল লালঘর নামে একটি কারাগার ভবন। এ দুটি ভবনের পাশে একটি পুকুর ছিল। ব্রিটিশ শাসকেরা সেই পুকুরের পরিধি বড় করে সেটাকে দিঘিতে পরিণত করেন। পাহাড়ি টিলার ওপর লালকুঠি আর লালঘর। পাশের দিঘিটির নাম তাই অনায়াসেই হয়ে গেল লালদীঘি। আর তার পাশের মাঠটিকেও লালদীঘি ময়দান নামে চিনল সবাই। কালে কালে সেই লালদীঘিটাই সব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা আর উৎসবের কেন্দ্র হয়ে দাঁড়াল।

লালদীঘির পাড়ে নানা ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলোও পুরাতত্ত্বের দিক থেকে এটি গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। দিঘির উত্তর পাড়ে একটি প্রাচীন মঠ এখনো বিদ্যমান। ঘোষ মঠ নামে পরিচিত এই স্থাপনাটি ১৯৩৯ সালে স্থানীয় জমিদার রায় বাহাদুর রাজকুমার ঘোষ এটি নির্মাণ করেন। ১৮৪১ থেকে ১৮৪৮ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন স্যার হেনরি রিকেটস। তাঁর স্মৃতিতে চট্টগ্রামে তখনকার জমিদারেরা লালদীঘির পশ্চিম পাড়ে একটি পাকা ঘাট নির্মাণ করেন। এটি রিকেট ঘাট নামে পরিচিত ছিল। তবে এর অস্তিত্ব এখন নেই।

দক্ষিণ পাড়ে ব্রিটিশ আমলের ম্যাজিস্ট্রেট বকল্যান্ড মিলনায়তন ও ঘাট নির্মিত হয়। ঘাটটি অবশিষ্ট নেই। মিলনায়তনটি ১৯০৩ সালে গ্রন্থাগারে রূপান্তর হয়। সিটি করপোরেশন জীর্ণ সেই ভবনটি ভেঙে সেখানে নতুন করে গ্রন্থাগার ভবন করেছে। ১৯৭৪ সালে লালদীঘির পশ্চিম পাড়ে নির্মাণ করা হয়েছে একটি মসজিদ।

করোনা–আক্রান্ত ২০২০ সাল বাদে ১৯০৯ সাল থেকে প্রতিবছর বৈশাখ মাসের ১২ তারিখ লালদীঘির ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী বলীখেলা। ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে তরুণদের প্রেরণা জোগাতে তখনকার ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী আবদুল জব্বার সওদাগর এই বলীখেলা চালু করেন। বলীখেলাকে কেন্দ্র করে এখানে চার-পাঁচ দিনব্যাপী বসে মেলা। সারা দেশ থেকে আসা হাজারো পণ্যের মেলা বসে লালদীঘির পাড়ে।

এসব নানা কারণে আমাদের রাজনীতি, সংস্কৃতিতে লালদীঘি সব সময় প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। ১৯৮৮ সালে ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার জনসভা ছিল এই লালদীঘির মাঠে। সেদিন স্বৈরাচারী সরকারের পুলিশ বাহিনীর গুলিতে নিহত হন ২৪ জন মানুষ। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাণহানিরও চেষ্টা হয়েছে। চট্টগ্রাম গণহত্যা নামে পরিচিত এই রক্তাক্ত ঘটনারও সাক্ষী হয়ে আছে লালদীঘি।
অতীতের এই মুখর দিনগুলো এত দিন যেন ঘুমিয়ে ছিল লালদীঘির বালুময় মাঠের গভীরে। চারপাশের ধুলা, ময়লা–আবর্জনা আর ট্যাক্সিস্ট্যান্ডের তলায় চাপা পড়ে ছিল লালদীঘির গৌরব। বিস্মৃতির অতল থেকে অতীত ইতিহাসকে সঙ্গে নিয়ে নবজন্ম লাভ করেছে লালদীঘির ময়দান।

ধূলি মলিনতা ছাড়িয়ে এর চারপাশে এখন শোভা পাচ্ছে নান্দনিক সব শিল্পকর্ম, যেগুলোর মাধ্যমে জেগে উঠেছে বাঙালির শত বছরের সংগ্রামের ইতিহাস, বিজয়ের কাহিনি। বালুময় ধূসর মাঠটি এখন ঢেকে আছে সবুজ ঘাসে। উত্তর দিকে তৈরি হয়েছে বিশাল মঞ্চ। আর সেই মঞ্চের পটভূমিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ৫৫ বছর আগে এই দিনে অনুষ্ঠিত এক ঐতিহাসিক জনসভার ছবি।

গৌরবের অতীতে আবার সজীব করার এই দায়িত্ব নিয়েছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। ছয় দফার স্মৃতিবিজড়িত মাঠটিকে নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা করলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ও সাংসদ মহিবুল হাসান চৌধুরী। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জালাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার জনসভার স্মৃতি ধরে রাখতে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের কাজ এখন ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে।

প্রকল্পে কী কী আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এতে ৫০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ২৫ ফুট প্রস্থের একটি মুক্ত মঞ্চ আছে, এই মুক্তমঞ্চের নাম ‘ছয় দফা’। মাঠের পূর্ব দিকে সুদীর্ঘ দেয়ালজুড়ে রয়েছে টেরাকোটার ম্যুরাল। এসব ম্যুরালে সেই ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের নানা ঘটনার চিত্র তুলে ধরা হবে।

লালদীঘি ময়দানে গিয়ে দেখা গেল মাঠের সবুজ ঘাসের পরিচর্যা করছেন কয়েকজন নারী শ্রমিক। মাঠের উত্তর–পশ্চিম কোণে একটি, মাঠের পশ্চিমে মাঝখানে একটি এবং উত্তর দিকে মাঝখানে একটি, মোট তিন ফটক তৈরি করা হয়েছে। দুটো ফটকের নকশা হয়েছে কুঁড়েঘরের মতো। মাটি থেকে ৫ ফুট উঁচু ছয় দফা মঞ্চটির সঙ্গে তিন পাশে সংযুক্ত আছে বিশাল মার্বেল পাথরের সংযোগ সিঁড়ি। মঞ্চের পটভূমিতে রয়েছে ছয় দফার বিবরণ আর ভাষণরত বঙ্গবন্ধুর ছবি।

চট্টগ্রামের সুধীজনেরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। ড. শামসুল হোসাইন বলেন, অতীতের ইতিহাসকে বর্তমানের নতুন কাঠামোর মধ্যেও স্মৃতিময় করে রাখা যায়। লালদীঘির ময়দানকে স্মৃতিময় করে রাখার উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘দেরিতে হলেও ৬ দফা দাবির স্মৃতি ধরে রাখার উদ্যোগ নেওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।’

নতুনভাবে গড়ে ওঠা লালদীঘির সবুজ মাঠে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কোনো বালক খেলতে খেলতে, দেখতে দেখতেই জেনে যাবে তার দেশের অতীত গৌরবের কথা। একটা সভ্য জাতির স্বপ্ন এ রকম হওয়াই তো স্বাভাবিক।

ওমর কায়সার প্রথম আলোর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের বার্তা সম্পাদক।