বিশ্লেষণ

রেকর্ড গড়লেন শেখ হাসিনা

>আজ ৫ জানুয়ারি। চার বছর আগে এই দিনে হয়েছিল দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল তাতে অংশ নেয়নি। সে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে। দিনটিকে ঘিরে সরকার, সরকারি দল ও রাজনীতির মূল্যায়ন।
আরেকটি শপথ, আরেকবার প্রধানমন্ত্রী। টানা দ্বিতীয়বার আর জীবনে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নেন শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত
আরেকটি শপথ, আরেকবার প্রধানমন্ত্রী। টানা দ্বিতীয়বার আর জীবনে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নেন শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

অনেক রক্তের দামে একাত্তরে স্বাধীনতা এসেছিল। মুক্তির আনন্দে ভেসে গিয়েছিল সারা দেশ। কিন্তু বিজয়ের সে উচ্ছ্বাস উবে যেতে বেশি দিন সময় নেয়নি। সমাজে দেখা দিতে শুরু করে সংহতির অভাব। সব জায়গায় একটা ভাগ ভাগ ভাব। মতভিন্নতা এখানে ঝগড়া-ফ্যাসাদ ও দাঙ্গা তৈরি করে, বিতর্কে তার নিষ্পত্তি হয় না। নতুন এই রাষ্ট্রের প্রথম দুই দশক তো গেল নানান ওলট-পালটের মধ্য দিয়ে। ১৯৯১ সালে আমরা সংসদীয় গণতন্ত্রের একটি ধারাবাহিক যাত্রায় শামিল হলাম। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি। দলীয় সরকার থিতু হতে পারেনি, এক মেয়াদের বেশি টেকেনি। হয় তার পতন হয়েছে অথবা তাকে টেনে নামানো হয়েছে। নতুন একটি সরকার যখনই রাষ্ট্রের হাল ধরেছে, তাকে অনেক কিছুই নতুন করে শুরু করতে হয়েছে। ফলে ছন্দপতন হয়েছে বারবার। দেশটা যত দূর এগোতে পারত, তা হয়নি।

রাজনীতিতে সেই আস্থার জায়গাটি এখনো তৈরি হয়নি। কেউ কাউকে বিশ্বাস করেন না। সংসদীয় গণতন্ত্রের একটি আবশ্যিক শর্ত হলো নির্বাচন। জনপ্রতিনিধি ঠিক করার জন্য এর চেয়ে কার্যকর পদ্ধতি এখনো আবিষ্কার হয়নি। ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে সেই নির্বাচন পদ্ধতি আমরা নষ্ট করে দিলাম। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে এল নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণা। এ ধরনের একটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার অধীনে পরপর চারটি নির্বাচন হলেও পরাজিত পক্ষ কখনোই খুশিমনে এটাকে মেনে নেয়নি। একপর্যায়ে এসে এই ব্যবস্থাটিও বাতিল হলো।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অর্ধশতাব্দীর জীবনচক্রে একটি দলীয় সরকার প্রথমবারের মতো পরপর দুই মেয়াদে রাষ্ট্র চালাল। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তার মিত্রদের নিয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেয়েছিল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তারা আবারও একচেটিয়া জয় পেয়ে সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পেরেছে। তার মানে, একটানা নয় বছর সরকারে থেকে আওয়ামী লীগ রেকর্ড গড়ল এবং সরকারপ্রধান হিসেবে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজেকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেলেন। তিনি অন্তত আরও এক বছর প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। এই রেকর্ড আর কেউ ছুঁতে পারবেন বলে মনে হয় না। যে দেশটি জন্মের প্রথম চার দশকে রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা পায়নি, সেখানে কেমন করে শেখ হাসিনা টানা এক দশক দল ও দেশের হাল ধরে রাখলেন এবং উজান-ভাটির টালমাটাল স্রোতের মধ্য দিয়ে তাঁর তরণি বেয়ে চললেন, তা বিশ্লেষণের অপেক্ষা রাখে।

কমিউনিস্ট পার্টি বা জামায়াতে ইসলামীর মতো ক্যাডারভিত্তিক দল নয় আওয়ামী লীগ। এর ব্যাপক জনভিত্তি আছে। একই সঙ্গে আছে দলের ভেতরে নানান স্রোতোধারা। দলের মধ্যে আদর্শিক না হলেও ব্যক্তিপর্যায়ের কোন্দল অনেক সময় ঝগড়াঝাঁটি, এমনকি খুনোখুনিতে গড়ায়। বিরোধী দলে থাকলে দলের মধ্যে একধরনের সংহতি লক্ষ করা গেলেও সরকারে থাকলে দলের মধ্যকার ঝগড়াগুলো প্রায়ই দুর্গন্ধ ছড়ায়। ইউনিয়ন, উপজেলা থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত দলের অনেক নেতা-কর্মীর বাড়াবাড়ি আচরণ শোভনীয়তার সীমা ছাড়িয়ে যায়। দলকে আপন ভাবেন কয়জন? অনেকের কাছেই এটা প্রাপ্তিযোগের এবং মোক্ষলাভের অস্ত্র। কিন্তু সভানেত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে বলা যায়, তিনিই দলের ভরসা, একমাত্র কান্ডারি। দল তাঁর মুখের দিকেই তাকিয়ে থাকে। এটি দলের দুর্বলতা, আবার একই সঙ্গে শক্তি। উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি কয়েকটি বৈশিষ্ট্য পেয়েছেন। যেমন: প্রবল ইচ্ছাশক্তি এবং লক্ষ্যে অবিচল থাকার ধৈর্য। তাঁর ওপর দিয়ে ঝড় তো কম বয়ে যায়নি।

এ দেশের দুর্ভাগ্য হলো, সরকার বদল হলে নীতিও বদলে যায়। জাপান কিংবা ইতালিতে একসময় ঘন ঘন সরকারের পতন হতো। তাতে দেশগুলোর সামাজিক বুননে ফাটল ধরেনি, অর্থনৈতিক শক্তিও কমেনি; বরং বেড়েছে। এ দেশে নতুন সরকার এসেই আগের সরকারের চালু করা প্রায় সব নিয়মনীতি আমূল পাল্টে ফেলে। ফলে প্রতিবারই নতুন করে শুরু করতে হয়। রিলে রেসের মতো জিয়নকাঠিটি এক সরকারের হাত থেকে অন্য সরকারের হাতে যায় না। এই প্রথমবারের মতো আমরা দেখলাম, সরকার একটি রূপকল্প ধরে এগোচ্ছে—ভিশন ২০২১, যা তাঁরা উপস্থাপন করেছিলেন ২০০৮-এর নির্বাচনের আগে। এই সরকারের নেওয়া অনেক প্রকল্প নিয়ে জনমনে প্রশ্ন আছে, উপযোগিতা নিয়ে সন্দেহ আছে, খরচ নিয়ে আশঙ্কা আছে। কিন্তু প্রকল্পগুলো চালু আছে। অনেক প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। মানুষ এগুলোর সুবিধা পাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতারা অহংকার করে বলতে পারছেন—আমরা সরকারে থাকলে উন্নয়ন হবে, দেশ এগিয়ে যাবে।

পৃথিবীর প্রায় সব জায়গায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নাগরিক সমাজের একটা আড়াআড়ি সম্পর্ক আছে। এ দেশে নাগরিক সংগঠনগুলো দুর্বল এবং দলীয় রাজনীতির শিকার কিংবা গুটি। কেউ কেউ ‘এস্টাবলিশমেন্ট’-এর কাছে সহজেই বিক্রি হয়ে যান। এ দেশে সামরিক শাসকেরা একদা উর্দি পরে দল তৈরি করতেন। তাঁদের বিশ্বাস ছিল, ভাত ছিটালে কাকের অভাব হয় না। এখনো সেই পরম্পরা বজায় আছে। এটা দেখেই রাজনীতিকেরা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে কৌতুক করেন, ‘সুশীল’ বলে গাল দেন। ‘সুশীলরাই’ এই অস্ত্রটি রাজনীতিকদের হাতে তুলে দিয়েছেন। যার যার অবস্থানে থেকে দেশের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করার অনেক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নাগরিক সমাজ তার আরাধ্য কাজটি অনেক সময় করতে পারেনি। পৃথিবীর সব দেশেই নাগরিক সমাজ প্রতিষ্ঠানবিরোধী হয়। এ জন্যই সরকারের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্ব গত এক দশকে তীব্রতর হয়েছে। সমাজের জন্য এটা ভালো হয়নি। নাগরিক সমাজ তো বিরোধী দল নয়? তারা হলো ‘ওয়াচডগ’ ও ‘প্রেসার গ্রুপ’। এটা উভয় পক্ষকেই বুঝতে হবে।

আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে অস্বস্তির জায়গা হলো ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন। ১৫৩টি আসনে কোনো ভোট হয়নি। বাকিগুলোতে নির্বাচন হয়েছে একতরফা। আওয়ামী লীগ বরাবর বলে এসেছে—বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলে আমরা কী করব? বিএনপিকে ঘায়েল করার জন্য আওয়ামী লীগের ঝুলিতে একটা বড় অস্ত্র আছে। আর তা হলো সর্বদলীয় অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব, যা শেখ হাসিনা প্রকাশ্যে দিয়েছিলেন। বিএনপি এই প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। এখন তাদের নিজেদের আঙুল কামড়ানো ছাড়া কীই-বা করার আছে?

এখান থেকেই শুরু হয়েছিল বিএনপির অগস্ত্যযাত্রা। বিএনপির জন্ম ও বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়া নিয়ে যত প্রশ্নই থাকুক, দলটি কিন্তু জনভিত্তি পেয়েছিল ১৯৮০-এর দশকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। একদা সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের বিধবা স্ত্রী হিসেবে নন, বেগম খালেদা জিয়া দলের নেতা হয়ে উঠেছিলেন এরশাদবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। দলের অনেক নেতা-কর্মী ওই দুঃসময়ে দল ছেড়ে এরশাদের ছিটানো ভাত খুঁটে খুঁটে খেয়েছেন। ভাঙাচোরা দলকে ধৈর্যের সঙ্গে পরম মমতায় ধরে রেখেছিলেন খালেদা জিয়া। তার ডিভিডেন্ড তিনি পেয়েছিলেন ১৯৯১ সালের নির্বাচনে। হতে পেরেছিলেন দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু নির্বাচনমুখী মধ্যবিত্তের একটি দল হয়েও ২০১৪ সালে বিএনপি যে কৌশলটি নিয়েছিল, তা তাদের কোনো সুবিধা দেওয়া দূরে থাকুক, তাদের দলকে একেবারে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে।

এ দেশে রাজনীতিবিদেরা ভুল স্বীকার করতে শেখেননি। বিএনপি হয়তো কোনো দিন বলবে না, ২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল। তাদের ভুলের কারণেই আওয়ামী লীগ ওয়াকওভার পেয়েছিল। আওয়ামী লীগ চেয়েছিল বিএনপি যেন নির্বাচনে না আসে। বিএনপি সেই ফাঁদে পা দিয়েছিল। এটা ছিল রাজনৈতিক আত্মহত্যার এক করুণ দৃষ্টান্ত।

বিএনপি এর আগে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। তাদের খারাপ কাজের অনেক নজির থাকলেও ভালো কাজও তারা করেছে অনেক। জিয়াউর রহমানের চালু করা একুশে পদক আর স্বাধীনতা পদক গলায় ঝুলিয়ে তাঁকে অষ্টপ্রহর গালমন্দ করলেও তাঁর বা বিএনপি সরকারের অনেক কাজের ধারাবাহিকতা এখনো আছে। একাধিক মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা এমন ভুল কেন করলেন? বিষয়টি বোঝার জন্য রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করা যেতে পারে। বাংলা ১৩১৫ সালে ‘রাজা প্রজা’ প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন: ‘রাজকীয় ব্যাপারে সর্বত্রই ডিপ্লম্যাসি আছে...। আমি ইচ্ছা করিতেছি এবং আমার ইচ্ছা অন্যায় নহে বলিয়াই পৃথিবীতে কাজ সহজ হয় না। যখন চুরি করিতে যাইতেছি না, শ্বশুরবাড়ি যাইতেছি, তখন পথের মধ্যে যদি একটা পুষ্করিণী পড়ে, তবে তাহার উপর দিয়াই হাঁটিয়া চলিয়া যাইব এমন পণ করিয়া বসিলে চাই কি শ্বশুরবাড়ি না পৌঁছিতেও পারি। সে স্থলে পুকুরটা ঘুরিয়া যাওয়াই ভালো। আমাদের রাজনৈতিক শ্বশুরবাড়ি, যেখানে ক্ষীরটা, সরটা, মাছের মুড়াটা আমাদের জন্য অপেক্ষা করিয়া আছে, সেখানে যাইতে হইলেও নানা বাধা নানা উপায়ে অতিক্রম করিয়া যাইতে হইবে। যেখানে লঙ্ঘন করিলে চলে সেখানে লঙ্ঘন করিতে হইবে, যেখানে সে সুবিধা নাই সেখানে রাগারাগি করিতে না বসিয়া ঘুরিয়া যাওয়া ভালো।...

‘কিন্তু আমরা সেদিক দিয়া যাই না। আমরা কাজ পাই বা না পাই, কথা একটাও বাদ দিতে পারি না। তাহাতে কেবল যে আমাদের অনভিজ্ঞতা ও অবিবেচনা প্রকাশ পায় তাহা নহে, তাহাতে প্রকাশ পায় যে, কাজ আদায়ের ইচ্ছার অপেক্ষা দুয়ো দিবার, বাহবা লইবার এবং মনের ঝাল ঝাড়িবার ইচ্ছা আমাদের বেশি। তাহার একটা সুযোগ পাইলে আমরা এত খুশি হই যে, তাহাতে আসল কাজের কত ক্ষতি হইল তাহা আমরা ভুলিয়া যাই।’

২০০৮-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের এই দশকটি নিয়ে ভবিষ্যতে আরও অনেক আলোচনা ও কাটাছেঁড়া হবে। কিন্তু একটি বিষয় খুবই স্পষ্ট—শেখ হাসিনা অনেক শত্রুকে মিত্র বানিয়ে জোটে নিয়েছেন। পিঠে অবলীলায় ছুরি চালাতে পারে, দলের ভেতরে ও বাইরের এমন অনেককেই তিনি আঁচলে বেঁধেছেন। আর প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপিকে হাজারো হামলা-মামলায় চাপে রেখেছেন, ক্রমাগত বিচ্ছিন্ন ও কোণঠাসা করে চলেছেন। প্রমাণ করতে পেরেছেন যে তিনি একজন ‘মাস্টার পলিটিশিয়ান’। ফুটবল মাঠে একটি দল যত দাপটের সঙ্গেই খেলুক না কেন, দর্শক গ্যালারিতে যত সমর্থকই থাকুক না কেন, অপেক্ষাকৃত অজনপ্রিয় ও দুর্বল দলও কখনো কখনো প্রতিপক্ষের জালে বল ঠেলে দিয়ে ম্যাচ জিতে যায়। সে জন্য দরকার হয় একজন কুশলী স্ট্রাইকারের। শেখ হাসিনা তেমন একজন স্ট্রাইকার।

সংসদে না থাকলেও বিএনপি এখনো আওয়ামী লীগের প্রধান ও প্রবল প্রতিপক্ষ এবং ভোটারদের কাছে একক বিকল্প। আওয়ামী লীগ সরকারের এই দশকে অনেক অর্জনের পাশাপাশি স্খলনও আছে প্রচুর। সংসদে কার্যকর বিরোধী দল না থাকায় আওয়ামী লীগ পেয়েছে একচেটিয়া ক্ষমতা। ক্রমেই হয়ে উঠেছে বেপরোয়া। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে গণমাধ্যমে। সর্বত্র তৈরি হয়েছে অস্বস্তি ও ভীতির পরিবেশ। আছে জনমনে অপ্রাপ্তি ও আশাভঙ্গের বেদনা। যাঁরা সরকারের পরিবর্তন চান, বিএনপি ছাড়া তাঁদের গতি নেই, পছন্দ না হলেও। এটাই বিএনপির জন্য বড় ভরসা। কিন্তু শুধু নেতিবাচক ভোটের ওপর নির্ভর করে বিএনপি কত দিন রাজনীতি করবে? ২০০৮-পরবর্তী দশকের অভিজ্ঞতা থেকে তাঁরাও ঋদ্ধ হতে পারেন। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিখে এবং নতুন উপলব্ধি নিয়ে পরবর্তী ইনিংস খেলার জন্য নিজেদের তৈরি করতে পারেন।

২০১৮ সাল নির্বাচনের বছর। আওয়ামী লীগ সরকার অঙ্গীকার করেছে, একটা ভালো নির্বাচন করার মতো সব ধরনের সহযোগিতা তারা নির্বাচন কমিশনকে দেবে। বিএনপি নেত্রী স্পষ্টভাবেই বলেছেন, তাঁদের বাইরে রেখে নির্বাচন হবে না; তাঁরা নির্বাচনে অংশ নেবেন। এখন সবার আগ্রহ, আশা ও আশঙ্কা আগামী সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে। অতীতের পুনরাবৃত্তি একই রকমভাবে হয় না। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি আবার ফিরে আসবে না। প্রতিহিংসা নয়, প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্রের চর্চা সঞ্জীবিত হোক, সমুন্নত থাকুক—এটাই সাধারণ মানুষের চাওয়া।

মহিউদ্দিন আহমদ: লেখক, গবেষক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক।