রুশ প্রোপাগান্ডা আমাদের ঘরেও ‘যুদ্ধ’ ঢুকিয়ে দিয়েছে

ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান দেড় মাসেও শেষ হয়নি। প্রতিরোধের মুখে সেটি যুদ্ধে রূপ নিয়েছে।
ছবি: রয়টার্স

সেদিন ছিল বুধবার, তখনো ২৩ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়ে যায়নি। আমার ফোনে নিউইয়র্ক টাইমস–এর খবরের অ্যালার্ট এল যে রাশিয়া ইউক্রেনে নানা দিক থেকে আক্রমণ শুরু করেছে। ফেব্রুয়ারির শুরুতে ৩০ হাজার রুশ সেনা সামরিক মহড়া চালাতে গিয়েছিল আমার দেশ বেলারুশে। বেলারুশের সংবাদমাধ্যমে সেই সামরিক মহড়ার স্যাটেলাইট ছবিও প্রকাশিত হয়েছে। যুদ্ধবিমান, ব্যালিস্টিক মিসাইল লঞ্চার এবং নানা যুদ্ধাস্ত্রের বিষয়েও লেখা ছিল সেখানে। যদিও বেলারুশের জঙ্গলের ভেতরের সেই সামরিক মহড়াটির বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানা যায় না। মূলত আমাদের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রতিবেশী তার যুদ্ধের জন্য বেলারুশকে যুদ্ধঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে। পরে ইউক্রেনে যখন আগ্রাসন শুরু হলো, পুরো বিশ্বের মতো আমরাও দেখলাম বেলারুশও আগ্রাসনের পক্ষে নাম লিখিয়েছে এবং রাশিয়ার যুদ্ধাপরাধের সহযোগী হয়েছে।
   
এখন এক মাসের বেশি হয়ে গেছে, প্রতিদিন সকালে আমার ঘুম ভাঙে কিয়েভে বিমান হামলার খবরে। ভারী গোলা নিক্ষেপের পর খারকিভ, খেরসন এবং চেরনিহিভের ধ্বংসস্তূপের চিত্র দেখি। মারিউপোল থেকে আসা অমানবিক যন্ত্রণার গল্পও। প্রতিদিন আমি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নতুন ভিডিও খুঁজি, তিনি কি এখনো বেঁচে আছেন, কিয়েভ কি এখনো টিকে আছে?

ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম কালো অধ্যায়। এটি শুধু রাশিয়া নয়, বেলারুশের জন্যও। রাশিয়া আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ধ্বংস করেছে এবং যে অতীত একসময় আমরা ভাগাভাগি করতাম, সেটিও সম্পূর্ণরূপে মুছে দিয়েছে। যদিও এখনো মিনস্কে কোনো বোমা এসে পড়েনি। কিন্তু ভ্লাদিমির পুতিন এবং আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কো ইতিমধ্যে এ রক্তাক্ত যুদ্ধকে আমাদের ঘর অবধি নিয়ে এসেছেন।

৬ মার্চ, নিউইয়র্ক টাইমস–এর একজন সাংবাদিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রুশ সেনাদের হামলায় নিহত একটি ইউক্রেনীয় পরিবারের কিছু ছবি প্রকাশ করেন। কিয়েভের শহরতলি ইরপিনে ভারী গোলাবর্ষণ হলে অন্য বেসামরিক নাগরিকদের সঙ্গে সেখান থেকে পালাচ্ছিল পরিবারটি। মা ও তাঁর দুই ছেলের রক্তাক্ত ছবি ছিল খুবই মর্মান্তিক। আমি এসব ছবি হোয়াটসঅ্যাপে আমার মায়ের কাছে পাঠালাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কেন তুমি এসব আমাকে পাঠিয়েছ?’ আমি তাঁকে জানালাম, তাঁর দেখা উচিত ইউক্রেনে কী চলছে।

বেলারুশের অধিকাংশের মানুষের মতো আমার মা–ও শঙ্কিত ছিলেন ঘরের কাছেই এ যুদ্ধের কারণে। তিনিও নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত ছিলেন। কিন্তু ইউক্রেনে যা হচ্ছিল, সে ব্যাপারে তাঁর বোঝাপড়া ছিল আমার থেকে ভিন্ন।

জাতিগতভাবে রুশ আমার মা তির্যকভাবে বললেন, ‘ইউক্রেনে কী চলছে আমি জানি। তুমি তোমার মাথা খাটাও। রুশরা কোনো বেসামরিক লোককে হত্যা করছে না।’ আমি বললাম, ‘তাহলে এসব কে করছে?’ তাঁর উত্তর, ‘ফ্যাসিস্ট ও নাৎসি ইউক্রেনীয়রা।’ তিনি নাৎসির বদলে ‘নাজি-কি’ শব্দ উচ্চারণ করলেন। যেটি রুশ টক শোগুলোর মাধ্যমে জনপ্রিয় হয়েছে। তখন আমার পেট গুলিয়ে উঠল। আমার মা বললেন, ‘ইউক্রেনীয় গুন্ডারা ইরপিন অবরুদ্ধ করে রেখেছে। যারা সেখান থেকে বের হতে চাইছে, তাদেরই গুলি করছে ওরা।’ আমার মায়ের মুখে এ গল্প পরাবাস্তবই মনে হলো। কিন্তু তাঁর জন্য সেটিই সত্যি। কারণ, আমার মা রুশ টিভি চ্যানেল ও ফেসবুক থেকে এসব খবর পান।

পরিবারে মেজাজ খারাপ না করতে আমরা চেষ্টা করি কিন্তু সেদিন মাথা ঠিক রাখতে না পেরে বলে ফেললাম, ‘মা, তুমি আস্ত একটা নির্বোধ।’ এরপর ফোন কেটে দিলাম। তখন রাগ ও হতাশা একসঙ্গে কাজ করছিল। এরপর আমি তাঁকে মেসেজ করলাম, ‘আমার মনে হয় না আমাদের আর কিছু বলার আছে।’ আমি কান্নায় ফেটে পড়লাম এবং গোসল করতে গেলাম। পরে তাঁর প্রতি এমন রাগ আমার ভেতরে লজ্জা ও অপরাধবোধ তৈরি করল। আমি তখন মেসেজটি তিনি দেখার আগেই মুছে ফেললাম এবং পরে ফোন করে তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলাম।

যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার অবিশ্বাস্য প্রোপাগান্ডাগুলো পশ্চিমা বিশ্বের কাছে অযৌক্তিকই ঠেকে। কিন্তু রুশ কর্তৃপক্ষ তাদের শত্রুদের সঙ্গে লড়াই করতে এবং জনমতকে নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে রাখতে দীর্ঘদিন ধরে প্রোপাগান্ডা ও মিথ্যা তথ্য প্রচার চালিয়ে আসছে। এর ফলে পুতিনের ইকো চেম্বার কাজও করছে বলে মনে হচ্ছে।

এরপর ১১ মার্চ ইউক্রেনের ফটোগ্রাফার ইভজেনি মালোলেতকা, যাঁর সঙ্গে কিছুদিন আগে একসঙ্গে কাজ করেছিলাম, তাঁর তোলা কিছু ছবিতে দেখলাম, মারিউপোলে একটি প্রসূতি হাসপাতাল রুশ বাহিনীর লক্ষ্যবস্তুর শিকার হয়েছে। অথচ মস্কো দাবি করল, রোগী ও চিকিৎসকদের সরিয়ে হাসপাতালটি দখলে নিয়েছিল ইউক্রেনের জাতীয়তাবাদী যোদ্ধারা। ছবিগুলোর একটিতে দেখা যাচ্ছে, ধোঁয়া ওঠা ধ্বংসাবশেষের মধ্য থেকে একজন গর্ভবতী নারীকে একদল পুরুষ স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাচ্ছে। আরেক ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ঘুমানোর পায়জামা পরা এক নারী ধ্বংসপ্রাপ্ত হাসপাতালের সিঁড়ি দিয়ে নামছেন, তাঁর মুখ রক্তাক্ত।

ছবিগুলো ভাইরাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লন্ডনে রুশ দূতাবাস এক টুইটে দাবি করে যে সেগুলো ভুয়া ছবি। পরে হাসপাতালটির গর্ভবতী নারীদের মধ্যে বিউটি ব্লগার মারিয়ানা পদগুরস্কায়াকেও শনাক্ত করা গেল। যদিও নীতি লঙ্ঘনের কারণে টুইটার পোস্টটি মুছে ফেলে। হামলার সময় হাসপাতালটিতেই ছিলেন মারিয়ানা। পরদিন তিনি সত্যি সত্যি একটি মেয়েশিশুর জন্ম দেন। টুইটারের মাধ্যমেই সেটা জানা গেল। টুইটারে তো রীতিমতো তথ্যযুদ্ধ চলছে বলা চলে। সেখানে এমন বিভ্রান্তিমূলক বার্তা আদানপ্রদান চলছে যে বোঝার উপায় নেই।

আমি আমার মাকে ছবিগুলো পাঠালাম। কীভাবে প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে, সেটি তিনি বুঝতে পারবেন আশা করেছিলাম। কিন্তু তিনি আমার আশাভঙ্গ করে দিয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই বললেন, ‘এসব সত্য নয়। এসব ছবি আমাকে পাঠাবে না, আমাকে বিরক্ত কোরো না। তুমি তোমার বাস্তবতায় বাস করো, আমি আমার বাস্তবতায়।’ আমিও মানতে বাধ্য হলাম, আসলেই আমাদের বাস্তবতা ভিন্ন।

আমার এক বন্ধু আমাকে বোঝাল, ‘কেন তুমি তাঁর সঙ্গে এসব নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছ?’ বন্ধুটিও ছিল বেলারুশের। আমরা একই স্কুলে পড়েছিলাম। আমরা একসঙ্গে লুকাশেঙ্কোর স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশ নিয়েছি। তখন আমাদের বয়স ছিল ১৫ বছর। যুদ্ধের দিনগুলোতে আমরা প্রায় ফোনে কথা বলি, যুদ্ধ নিয়ে আলাপ করি, কান্না করি, আমাদের মায়েদের কথা বলতে থাকি। যাঁরা বারবার একই কথা বলে যান, ‘সবকিছু মিথ্যা, তোমরা কিছু বুঝছ না।’

আমার বন্ধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ‘আমার পিএইচডি ডিগ্রি আছে বা তুমি একজন সাংবাদিক, এটি কোনো ব্যাপার নয়। এখন এ পরিস্থিতিতে কেউ ভুলের মধ্যে থাকবে, কাউকে বোকা বনে যেতে হবে।’ সত্যিই আমাদের মায়েদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আমরা বোকাই বনে গিয়েছি। আমাদের আরেক বন্ধু আছে, যে এখন কানাডায় থাকে, বেলারুশে থাকা তার কাজিনরা রীতিমতো তাকে গালাগাল করছে। তাদের কাছে আমার ওই বন্ধু দুষ্ট পশ্চিমার প্রতিরূপ এবং লুকাশেঙ্কো ও পুতিন হচ্ছেন মুক্তিদাতা।

আমাদের মা-বাবারা খারাপ মানুষ নন। তাঁরা সবাই সুশিক্ষিত ও পেশাজীবী লোক। যথাসম্ভব রাজনীতি থেকে দূরে থাকেন আর সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তৈরি করার পেছনে ব্যস্ত থেকেছেন। এখন তাঁরা টিভি থেকে এমন সব তথ্য পাচ্ছেন, যাঁরা তাঁরা বিশ্বাস করছেন। বেলারুশের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত টিভি চ্যানেল এখন রুশ প্রোপাগান্ডায় ভেসে যাচ্ছে। সেখানে তথ্য যাচাই করতে বিকল্প কোনো মাধ্যমও নেই। মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমাদের মা-বাবাদের মগজধোলাই করা হচ্ছে।

রাশিয়া ও বেলারুশে মুক্ত ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সেগুলো মূলত জর্জ অরওয়েলের কল্পিত রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। যেখানে নতুন করে ইতিহাস লেখা হচ্ছে এখন এবং খবর মানে সেখানে কোনো কল্পকাহিনি। যদিও অবাধ তথ্যপ্রবাহের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা আমাদের কাছে পুরোনোই বটে। এভাবেই আমরা সোভিয়েত ইউনিয়নে বাস করতাম।

লুকাশেঙ্কোর শাসনের শুরুর বছরগুলো থেকেই বেলারুশের সাংবাদিকতা আক্রোশের মুখে পড়ে। এখন দেশের অভ্যন্তরে স্বাধীন সাংবাদিকতা অস্তিত্বহীন বললেই চলে। বেলারুশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব জার্নালিস্টের মতে, ২০২০ সালের আগস্টে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় থেকে ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত এক বছরে ৪৯৭ জন সাংবাদিক গ্রেপ্তার, ৬৮ জন আহত, ১০টি নিউজ আউটলেট বন্ধ এবং ১০০টি অনলাইন রিসোর্স আটকে দেওয়া হয়েছে। অনেক সাংবাদিককে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দীর্ঘ সাজা ভোগ করতে হয়েছে। অনলাইনের ওপর নানা অবরোধ দিয়ে রাখা হয়েছে। খুব অল্পসংখ্যক স্বাধীন সংবাদমাধ্যমই সেসব অবরোধ ভাঙতে পারে, যেগুলো মূলত বাইরে থেকে চালানো হয়। এখন সেগুলো দেখতে ভিপিএন ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু আমাদের মা-বাবারা ভিপিএন ব্যবহার করতে জানেন না।

২০২১ সালে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ১৮০টি দেশের মধ্যে বেলারুশের অবস্থান ছিল ১৫৮–তে। আমরা উত্তর কোরিয়ার (১৭৯) চেয়ে কিছুটা ভালো অবস্থানে আছি, তবে রাশিয়ার (১৫০) থেকে খারাপ। যদিও রাশিয়ার র‌্যাঙ্কিং কঠিনভাবে নামতে চলেছে। তখনো স্বাধীন সংবাদমাধ্যম অনলাইন চ্যানেল টিভি রেইন সম্প্রচারিত হচ্ছিল, যুদ্ধ নিয়ে তাদের খবরের লিংকগুলো আমি মায়ের কাছে পাঠিয়েছিলাম। ১ মার্চ টিভি রেইনসহ আরও কয়েকটি অনলাইন মিডিয়ার ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হলো, যেহেতু তারা ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে খবর প্রচার করছিল। রাশিয়ায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর অফিসও সাফ করা হলো। ডয়চে ভেলে ও বিবিসির ওয়েবসাইটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হলো। ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামও।

৩ মার্চ থেকে রাশিয়ায় নির্দেশনা জারি করা হলো, ইউক্রেনে বিশেষ অভিযানকে ‘যুদ্ধ’ বলা হলে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং এর জন্য সর্বোচ্চ ১৫ বছর পর্যন্ত সাজা হতে পারে। ৪ মার্চ নোভায়া গ্যাজেটার বার্তাকক্ষ গুটিয়ে নেওয়া হলো। ১৫০ জনের মতো সাংবাদিক দেশত্যাগ করলেন, যাঁদের মধ্যে অনেকে ছিলেন বিবিসি ও রেডিও লিবার্টির কর্মী। অন্যদিকে পশ্চিমারাও রুশ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার সংবাদমাধ্যমগুলোর অ্যাকাউন্টগুলো পেলেই আটকে দিতে থাকল। তাদের পরিসর ছোট করে দিতে থাকল।

যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার অবিশ্বাস্য প্রোপাগান্ডাগুলো পশ্চিমা বিশ্বের কাছে অযৌক্তিকই ঠেকে। কিন্তু রুশ কর্তৃপক্ষ তাদের শত্রুদের সঙ্গে লড়াই করতে এবং জনমতকে নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে রাখতে দীর্ঘদিন ধরে প্রোপাগান্ডা ও মিথ্যা তথ্য প্রচার চালিয়ে আসছে। এর ফলে পুতিনের ইকো চেম্বার কাজও করছে বলে মনে হচ্ছে। সাম্প্রতিক জরিপ অনুসারে, প্রায় ৬০ শতাংশ রুশ নাগরিক ইউক্রেনে যুদ্ধকে সমর্থন করে। বেলারুশে এ সংখ্যা যথেষ্ট কম, যেখানে মাত্র ৩ শতাংশ মানুষ নিজের দেশের সম্পৃক্ততার পক্ষে সমর্থন করে। তবে এর অর্থ এই নয় যে তারা তাদের দক্ষিণে প্রতিবেশীদের মধ্যে আসলে কী ঘটছে, সে সম্পর্কে সচেতন।

রাশিয়া ও বেলারুশে মুক্ত ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সেগুলো মূলত জর্জ অরওয়েলের কল্পিত রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। যেখানে নতুন করে ইতিহাস লেখা হচ্ছে এখন এবং খবর মানে সেখানে কোনো কল্পকাহিনি। যদিও অবাধ তথ্যপ্রবাহের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা আমাদের কাছে পুরোনোই বটে। এভাবেই আমরা সোভিয়েত ইউনিয়নে বাস করতাম। সে সময় সংক্ষিপ্ত রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে কারও রান্নাঘর থেকে শোনা টুকরা টুকরা তথ্যগুলো মিলিয়ে বাইরের বিশ্বকে বোঝার চেষ্টা করতাম। সোভিয়েত শাসন ৭০ বছর স্থায়ী ছিল। এখন ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হয়েছে এক মাস হলো। মনে হচ্ছে, সহজে এটি থামবে না।

রাশিয়া ও বেলারুশের অভ্যন্তরে ও বাইরের আমার বন্ধু সাংবাদিকদের কাছে আমি বলতে চাই: এ যুদ্ধ সম্পর্কে তাদের নীরবতা ভাঙানোর চেষ্টা ছেড়ে দেওয়া উচিত হবে না। আমরা যতই ব্যর্থ হই না কেন। সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকদের উদ্দেশে বলব: আমাদের মতো ইউক্রেনীয়, বেলারুশীয় ও রুশ সাংবাদিকদের কাজে লাগান, যাঁরা বিদেশি সাংবাদিকদের থেকেও বেশি সময় সেসব মাটিতে কাজ করেছেন। আমাদের গল্প আমরাই বলাতে অধিক যোগ্যতা রাখি এবং আমরাই সেটি ভালো পারব। আমরা ইউক্রেনের সেই সব সাহসী মানুষের কাছে দায়বদ্ধ, সঙ্গে সেসব বেলারুশীয় ও রুশদের প্রতিও, যারা কখনো এ যুদ্ধ চায়নি। বিশেষ করে যারা এ যুদ্ধ সম্পর্ক জানতে অনাগ্রহী, যেমন আমার মা তাঁর প্রতিও আমি দায়বদ্ধ, তাঁদের সত্যটা জানাতে।

আলজাজিরা থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনুবাদ: রাফসান গালিব

ওলগা লোগিনোভা বেলারুশীয়-মার্কিন তথ্যচিত্র নির্মাতা এবং নিউইয়র্কভিত্তিক সাংবাদিক। ভয়েস অব আমেরিকাসহ বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমে কাজ করেছেন। সাংবাদিকতা নিয়ে পড়েছেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও সেন্ট্রাল মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে।