ইফতার ও সাহ্রির সুন্নাত পালন এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রতি যত্নবান থাকতে হয়; যাতে ইবাদতের বিঘ্ন না ঘটে।
রাতে তারাবিহর নামাজের পর হালকা ঘুম উপকারী। ‘নিদ্রাকে তোমাদের জন্য বিশ্রামস্বরূপ দিয়েছি, রাত্রিকে দিয়েছি আবরণরূপে।’ (সুরা-৭৮ নাবা, আয়াত: ৯-১০)। এতে তাহাজ্জুত যথার্থ হয় এবং সাহ্রি গ্রহণে সুবিধা হয়। ঘুমের জন্য সাহ্রি যেন ছুটে না যায়; প্রয়োজনে দিনে কিছুক্ষণ ঘুমানো যেতে পারে। এ জন্য জোহরের নামাজের পর কায়লুলা বা হালকা বিশ্রাম সুন্নাত ও সহায়ক।
যাঁদের নিয়মিত বিভিন্ন ওষুধ সেবন করতে হয়, তাঁদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ গ্রহণের সময়সূচি নির্ধারণ করে নিতে হয়।
যাঁদের শরীর বেশি ভারী, তাঁরা অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য রমজানের এ সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন। নিয়মিত ও পরিমিত আহার সুস্বাস্থ্যের নিয়ামক।
অসাবধানতা ও উদাসীনতার কারণে অনেকে সাহ্রি না খেয়েই রোজা পালন করেন; এটা উচিত নয়। এতে একদিকে যেমন সাহ্রির সুন্নাতের সওয়াব ও বরকত থেকে বঞ্চিত হতে হয়, অপর দিকে এটি স্বাস্থ্যহানিকর এবং কর্তব্যকর্ম ইবাদত ও আমল সম্পাদনে অন্তরায় হতে পারে। অনুরূপ কেউ কেউ সময়মতো ইফতার গ্রহণেও অলসতা করেন। এতেও ইফতারের সুন্নাতের সওয়াব না পাওয়া এবং ইবাদতে বিঘ্ন ঘটা ও অসুস্থতার কারণ ঘটতে পারে।
ইফতারের পর থেকে সাহ্রি পর্যন্ত পানি ও তরল খাবার বেশি পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত।
রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় জরুরি প্রয়োজনে টিকা, ভ্যাকসিন, ইনসুলিন ও ইনজেকশন নেওয়া যাবে। এতে রোজার ক্ষতি হবে না। কারণ, এতে খাদ্য গ্রহণের যে উদ্দেশ্য, অর্থাৎ ক্ষুধা নিবারণ ও শক্তি অর্জন, তা হয় না। রোজা অবস্থায় প্রয়োজনে রক্ত পরীক্ষা করানো যাবে, রক্ত দেওয়া ও নেওয়া যাবে এবং ডায়ালাইসিসও করানো যাবে; এসবে রোজা ভাঙবে না, যদি তিনি রোজা পালনে সক্ষম হন। তবে বিশেষ অবস্থায় অপারগ হলে পরে কাজা আদায় করতে পারবেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তবে তোমাদের যারা পীড়িত থাকবে বা ভ্রমণে থাকবে, তারা অন্য সময়ে এর সমপরিমাণ সংখ্যায় রোজা পূর্ণ করবে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৪)। এমন কোনো ইনজেকশন নেওয়া যাবে না, যা দ্বারা খাদ্য গ্রহণের প্রধান দুটি উদ্দেশ্য ক্ষুধা নিবারণ ও শক্তি অর্জন হয়; বরং এমন অসুস্থ অবস্থায় রোজা ছেড়ে দেওয়ারও অনুমতি রয়েছে, যা পরে কাজা আদায় করতে পারবে। (আল ফিকহুল ইসলামি ওয়া আদিল্লাতুহু)।
প্রয়োজনে রোজা অবস্থায় ছোটখাটো অপারেশনও করানো যাবে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোজা অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন।’ (বুখারি, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ২৬০, হাদিস: ১,৮১৫)।
বমি হলে রোজা ভাঙবে না। তা খাদ্যবমি হোক বা রক্তবমি। বমির পরিমাণ বেশি হোক বা কম। কারণ, রোজা হলো পানাহার না করার নাম। বমি হলে পানাহার করা হয় না; বরং তার বিপরীত হয়। বমি হওয়ার পর রোজা পালনে সক্ষম হলে তা পূর্ণ করবে; অক্ষম হলে রোজা ছেড়েও দিতে পারবে; এ রোজা পরে কাজা আদায় করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কাফফারা প্রযোজ্য হবে না। বমি মুখে আসার পর তা গিলে ফেললে রোজা ভঙ্গ হবে। ইচ্ছাকৃত বমি করলে রোজা ভঙ্গ হবে। এমতাবস্থায় কাজা ও কাফফারা উভয় আদায় করতে হবে। অনুরূপভাবে কোনো কারণে অজ্ঞান হলে (যাতে সাধারণত রোজার বিপরীত কিছু ঘটে না) রোজা ভঙ্গ হবে না। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া)।
অসাবধানতা ও উদাসীনতার কারণে অনেকে সাহ্রি না খেয়েই রোজা পালন করেন, এটা উচিত নয়। এতে একদিকে যেমন সাহ্রির সুন্নাতের সওয়াব ও বরকত থেকে বঞ্চিত হতে হয়, অপর দিকে এটি স্বাস্থ্যহানিকর এবং কর্তব্যকর্ম ইবাদত ও আমল সম্পাদনে অন্তরায় হতে পারে
নখ কাটলে, চুল কাটলে বা কাটালে এবং ক্ষৌরকর্ম করলে বা করালে রোজার ক্ষতি হবে না। এর সঙ্গে রোজা ভঙ্গের কোনো সম্পর্ক নেই। রোজা নষ্ট হয় মূলত পানাহার ও রতিক্রিয়া দ্বারা। তাই রমজানে রোজা অবস্থায় চুল কামানো বা কাটা বা অবাঞ্ছিত পশম ছাঁটা বা ওপড়ানো অথবা অন্য কোনো উপায়ে অপসারণ বা পরিষ্কার করা জায়েজ। এতে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। তবে ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাতের খেলাফ কোনো কাজ সব সময়ই নিষেধ; বরং তা রমজানের ইবাদতের মাসে আরও বেশি ক্ষতির কারণ। (ফাতাওয়ায়ে শামি)।
রোজার কথা ভুলে গিয়ে পানাহার করলে রোজা ভাঙবে না। স্বপ্নে পানাহার করতে দেখলে রোজা ভাঙে না। ঘুমের ঘোরে অজান্তে পানাহার করলেও রোজা নষ্ট হবে না। স্বপ্নদোষ হলেও রোজা ভাঙে না, তবে গোসল করে পবিত্র হয়ে নামাজ পড়তে হবে।
● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
smusmangonee@gmail.com