‘ভাই পুলিশ, আগেই মাইর দিয়েন না। আগে কথাটা শুনেন। তারপর না হয় দুইটা বাড়ি দিয়েন।’ আমার পকেটে সরকারের নোটিশটা আছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ২৪ মার্চ ২০২০ তারিখে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানাচ্ছেন, চার নম্বর দফা, ওষুধ/খাদ্য প্রস্তুত, ক্রয়-বিক্রয়সহ অন্যান্য শিল্প-কলকারখানা/বাজার/দোকানপাট নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চলবে। আমি ওই দোকানের কর্মচারী। আমি বাজারে গেলে খাদ্যের দোকান খুলবে। না গেলে খুলবে না।’ আপনে না জিগায়া না হুইনা আগেই লাঠি তুলেন ক্যান? আমি যদি দোকান না খুলি, তাইলে বাজারে খাওন পাওন যাইব না। আর খাবার যদি না পাওন যায়, আপনেই বউ-বাচ্চাসহ না খায়া থাকবেন। দুই নম্বর কথা হইল, আমগো বাজারের দোকান খুলতে কইয়া কাস্টোমারগো রাস্তায় যদি পাছায় বাড়ি দেন, তাইলে দোকানে বইসা আমরা কী করুম। বুড়া আঙুল চুষুম? আর যদি বুড়া আঙুল চুষি, তাইলে মনে করেন হাতে কত কিছু নাড়ছি, করোনাভাইরাস আঙুলে তো আছেই, সেইটা মুখে যাইব, মুখে গেলে মনে করেন প্যাটেও যাইব, প্যাটে গেলে মনে করেন আমার শার্টে আছে, লুঙ্গিতে আছে। অহন ধরেন আপনে লাঠি দিয়া বাড়ি দিলেন, তারপর সেই লাঠি আপনেই ধরলেন। তো লাঠি ঠিকঠাক ব্যবহার করলে রাস্তা খালি হইয়া যাইব। তখন আর আপনার কোনো কাম থাকব না। তখন কী করবেন? বুড়া আঙুল চুষবেন। তাইলেই বুঝেন, আপনেরেও কিন্তু...কাজেই মাইর দিয়েন না। জিগান। ক্যান বারাইছি। ফুর্তি করনের লাইগা? রাস্তার সিন সিনারি দেখনের লাইগা? নাহি কুনো কামে? নাইলে দিয়া দেন কারফিউ। হালায় বাড়ি যায়া হুইয়া থাকি। আপনেও প্যাট শুকায়ে হুইয়া থাকেন, আমিও প্যাট শুকায়ে হুইয়া থাকি।’
ফিরে চল মাটির টানে
ঢাকা শহরের মানুষ কেন ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চের মতো লাখে লাখে কাতারে কাতারে ঢাকা ছাড়ল? ট্রেনে বাসে হেঁটে লঞ্চে ফেরিতে? দুটো চমৎকার লেখা লিখেছেন ফারুক ওয়াসিফ আর নবনীতা চৌধুরী। নবনীতা লিখেছেন: ‘জলাবদ্ধতা, যানজটের পর এবার সংক্রমণ, অসুখ, মৃত্যু আর কবরও বোধ হয় ছড়িয়ে দিলাম ছোট ছোট শহর থেকে গ্রামে গ্রামে। তবু ভালো, গ্রামে তবু ঘর আছে, জমিতে ধান আছে, ভাগ করে নিয়ে খাওয়ার প্রিয়জন আছে, আছে মাটি দেওয়ার জমিও।’
মানুষ ঢাকা ছেড়েছে, কারণ কর্মহীন ঢাকায় তারা খাবার পাবে না, অসুস্থ হলে পাশে কেউ দাঁড়াবে না, মারা গেলে লাশ কেউ ছুঁতে আসবে না, গ্রামে গেলে অন্তত মাটিটুকু জুটবে!
ফিরে চল মাটির টানে! ফিরে চল মা-টির টানে। ফিরে চল মাটি পাওয়ার আশায়!
এই কথাগুলো মনটাকে আর্দ্র করে দেয়।
হাসুন
প্রথম আলো অনলাইনে ডা. আহমেদ হেলাল বলছেন, মন ভালো রাখতে হবে। তাহলে রোগ-প্রতিরোধক শক্তি বাড়বে। আমরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখব, বাড়িতে থাকব, বারবার হাত ধোব, ছয় ফুট দূরত্ব বজায় রাখব। এরপর আসল কাজ হবে নিজের দেহের রোগ-প্রতিরোধক শক্তি বাড়ানো। সে জন্য পাঁচটি করণীয় আছে। ১. ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করতে হবে। আমিষ, শর্করা, ভিটামিন, মিনারেল খেতে হবে। রঙিন ফলমূল ধুয়ে খেতে হবে। ২. ব্যায়াম করে যেতে হবে। ঘরে থেকে ব্যায়াম করুন। ৩. প্রচুর ঘুমাতে হবে। বিশ্রাম নিতে হবে। ৪. গরম পানি গরম চা খাওয়া যেতে পারে। ৫. হাসতে হবে। সারাক্ষণ ফেসবুকে থাকবেন না। সারাক্ষণ করোনার খবর দেখবেন না। হাসুন। হাসুন। হাসুন। এ জন্য গদ্যকার্টুন পড়তে পারেন। এখন করোনা–কৌতুক বলব। যাতে আপনি হাসতে পারেন। হাসলে আপনার হরমোন নিঃসৃত হবে। আপনি ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে জিতে যাবেন।
১. মশিউল খুদে বার্তা পাঠালেন, ‘বস, আমার গলায় ব্যথা। আমি আর অফিসে আসি না।’
বস জবাবে বার্তা পাঠালেন, ‘অফিস খালি করে দেওয়া হয়েছে। তুমি একা এসে অফিস করবে।’
২. করোনা ভাইরাস বেশি দিন লাস্টিং করবে না। কারণ, এটা মেড ইন চায়না।
৩. আমেরিকায় প্যানিক বায়িং বা আতঙ্কের কেনাকাটার সময় সবার আগে শেষ হয়ে গেছে টয়লেট পেপার। ইন্ডিয়ান বাংলাদেশিরা হাসছে। আমেরিকানরা বলছে, হাসো কেন?
দক্ষিণ এশীয়রা তখন তাদের ঘরে থাকা নলওয়ালা কেতলি দেখিয়ে দিচ্ছে।
আমেরিকানরা বলছে, কিন্তু এটা ভাঁজ করব কী প্রকারে?
৪. ডাক্তার সাহেব, আমরা সাত দিন কোয়ারেন্টিনে ছিলাম। এখন কি আমরা মুক্তি পেতে পারি?
না না। ১৪ দিন।
ডাক্তার সাহেব, আমরা স্বামী-স্ত্রী একসাথে ছিলাম। এখনো কি আমরা ইমিউন হই নাই বলে মনে করেন?
এবারের খবরটা কৌতুক নয়। সত্যিকারের খবর। করোনার কারণে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে থাকায় চীনে বিবাহবিচ্ছেদ বেড়ে গেছে। বিবাহবিচ্ছেদের রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে চীনে এখন দীর্ঘ লাইন।
হ্যাপি কোয়ারেন্টিন।
আনিসুল হক: প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও সাহিত্যিক