ভোটাভুটির প্রায় চার বছরের বেশি সময় পর ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পয়লা জানুয়ারি ২০২১-এ বের হয়ে যাবে ইউনাইটেড কিংডম অব গ্রেট ব্রিটেন অ্যান্ড নর্দান আয়ারল্যান্ড (জি, এটাই যুক্তরাজ্যের সাংবিধানিক নাম)। বিচ্ছেদ হবে এটা জানাই ছিল। কিন্তু বিচ্ছেদের পর সম্পর্ক কেমন হবে? এ নিয়ে চার বছর ধরে দুই পক্ষই বেশ জল ঘোলা করেছে।
একটা চুক্তি দরকার ছিল। ৪০ বছরের বেশি সংসার। কিন্তু কোনো পক্ষই চুক্তির বিষয়ে একমত হতে পারছিল না। এমনকি বরিস জনসন তো বলেই বসেছিলেন ‘কোনো চুক্তি ছাড়াই ছাড়াছাড়ির পথে হাটবে তার দেশ’। এই ব্যবস্থাকে বলা হচ্ছিল ‘নো ডিল’। কিন্তু নাটকীয়ভাবে ক্রিসমাসের সন্ধ্যায় দুই পক্ষই একমত হয় চুক্তির বিষয়ে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম তাই এই ক্রিসমাসকে নাম দিয়েছে ‘ব্রিক্সমাস’। হাঁপ ছেড়েছেন অনেকই। যাঁরা ইউ থেকে বের হয়ে যাওয়ার পক্ষে ছিলেন, তাঁরা স্বভাবতই খুশি। যাঁরা বিপক্ষে ছিলেন, তাঁদের জন্য এই চুক্তি তিক্ত-মধুর। অনেকটা নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো।
স্বভাবতই এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে। ব্রেক্সিটের এই চুক্তিতে কার লাভ হলো আর কার ক্ষতি হলো? একটা চুক্তি স্বাক্ষরের ওপর নির্ভর করে এ রকম একটা প্রশ্নের সহজ উত্তর দেওয়াটা অসম্ভব। কিন্তু চুক্তির কিছু মূল বিষয় নিয়ে আলাপ করা যেতে পারে। পাশাপাশি চুক্তির কারণে সম্ভাব্য রাজনৈতিক পটপরিবর্তন কোন দিকে যেতে পারে, তা–ও অনুমান করা যেতে পারে।
মোটাদাগে চুক্তির স্বরূপ:
১. ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা। (যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার ইউ)। তবে প্রতিটি পণ্যের কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে।
২. ইউ যুক্তরাজ্যের জলসীমায় মাছ ধরার কোটা প্রায় ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনবে। এ–সংক্রান্ত ট্রানজিশেন টাইম বা রূপান্তরকাল হবে সাড়ে পাঁচ বছর। যদিও ইউ চেয়েছিল ১৪ বছর সময়।
৩. নিরাপত্তা এবং পুলিশিংয়ের ক্ষেত্রে দুই পক্ষই আগের মতো দুই পক্ষকে সমানভাবে সহযোগিতা করবে। যদিও যুক্তরাজ্য এই ক্ষেত্রে আগের মতো সুবিধা পাবে না।
৪. বাজার ব্যবস্থার প্রতিযোগিতার নিয়ম বিচারে শ্রম এবং পরিবেশগত বিষয়ে দুই পক্ষই একই নিয়ম মেনে চলবে। চার বছর পর এই বিষয়টি নিয়ে আবার পুনর্বিবেচনা করা হবে।
৫. রাষ্ট্রীয় সাহায্য বা স্টেইট এইড প্রদানের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য তার নিজস্ব তহবিল গঠন করবে। যদিও এই ক্ষেত্রে তারা ইউর নিয়মকানুন মেনে চলবে।
৬. আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যর পার্লামেন্ট এখন থেকে নিজেরাই নিজেদের মতো কাজ করবে। ইউর কোনো প্রভাবই তাদের ওপর কাজ করবে না।
৭. শিক্ষাক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য ইউরোপিয়ান কমিউনিটি অ্যাকশন স্কিম বা এরাসমুসর আওতার বাইরে থাকবে।
৮. ভিসা ছাড়াই দুই ব্লকে ১৮০ দিনের ভেতর ৯০ দিন ভ্রমণ করা যাবে।
৯. যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত কোনো দেশে পড়াশোনা, কাজ বা স্থায়ীভাবে থাকতে হলে আলাদা করে আবেদন করতে হবে।
১০. ইউর অভ্যন্তরীণ জ্বালানি বাজারে যুক্তরাজ্যের প্রবেশাধিকার থাকবে না।
১১. ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের ক্ষেত্রে কোনো আলাদা পাসপোর্ট প্রদান করা হবে না এবং যুক্তরাজ্যের পেশাগত যোগ্যতার স্বীকৃতি মেলা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশে কঠিন হবে।
১২. এই চুক্তিতে নর্দান আয়ারল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যের ভেতর পণ্য চলাচলকে সহজ করেছে। নর্দান আয়ারল্যান্ডও ইউর একক বাজারে প্রবেশাধিকার পাবে। তার মানে দাঁড়াল দুই আয়ারল্যান্ডের ভেতর পণ্য চলাচলে কোনো বাধা থাকবে না, কিন্তু আনুষ্ঠানিকতা থাকবে।
এই চুক্তিকে যুক্তরাজ্যর সরকার তার দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরছে ‘আমরা কি পেলাম’ বা সহজ ভাষায় সাফল্যের স্মারক হিসেবে। কিন্তু ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন তুলে ধরছে যুক্তরাজ্য কী হারাল তার খতিয়ান হিসেবে
হাজার পৃষ্ঠার চুক্তির এই হলো চুম্বক অংশ। এই চুক্তির বিষয়ে একটা কথা বলে রাখা ভালো। এই চুক্তিকে যুক্তরাজ্যর সরকার তার দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরছে ‘আমরা কি পেলাম’ বা সহজ ভাষায় সাফল্যের স্মারক হিসেবে। কিন্তু ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন তুলে ধরছে যুক্তরাজ্য কী হারাল তার খতিয়ান হিসেবে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এই আচরণের পেছনের কারণ অনুমান করা খুব একটা কঠিনও নয়। তারা চায় না আর কোনো সদস্যরাষ্ট্র যুক্তরাজ্যর মতো বেরিয়ে যাক।
এতক্ষণ কথা বলেছি দুই ইউনিয়নের ভেতরকার চুক্তি স্বাক্ষর, লেনদেন নিয়ে। এবার কথা বলব ব্রেক্সিট নিয়ে খোদ যুক্তরাজ্যে কী কী ঘটতে পারে বা ঘটতে যাচ্ছে, সেই সম্ভাবনা নিয়ে।
অ্যাংগোয়েলা দ্বীপের নাম শুনেছেন নিশ্চয়ই। ক্যারিবিয়ান এই দ্বীপ ইউনাইটেড কিংডম অব গ্রেট ব্রিটেন অ্যান্ড নর্দান আয়ারল্যান্ডের অংশ। যদিও তাদের নিজস্ব সরকার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু তারা ব্রিটিশ ওভারসিজ টেরিটরির অংশ। ভিন্ন সরকার ব্যবস্থার কারণে ব্রেক্সিট বিষয়ে তারা কোনো ভোট দিতে পারেনি। এই দ্বীপ লন্ডন থেকে হাজার মাইল দূরে অবস্থিত। কিন্তু তাদের জন্য ব্রেক্সিটের তিক্ত বাস্তবতা আর দশটা সাধারণ যুক্তরাজ্যের নাগরিকের চেয়ে আলাদা তো নয়ই, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি।
ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী এই দ্বীপের ১৫ হাজারেরও বেশি বাসিন্দা ব্যবসা-বাণিজ্য, যাতায়ত এবং স্বাস্থ্যসেবার জন্য নির্ভর করে প্রতিবেশী দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের ওপর। সেন্ট মার্টিন আবার ফ্রান্সের অংশ।
২০১৭ সালে এই দ্বীপে আঘাত হেনেছিল ভয়ংকর হারিকেন ‘ইরমা’। গোটা দ্বীপ তছনছ করা সেই হারিকেনের ক্ষত এখনো দগদগে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সেই সময় এই দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য বরাদ্দ দিয়েছিল মোটা অঙ্কের অর্থ। এমনকি দ্বীপের বাজেট ঘাটতির একটা বড় অংশের জোগানদাতাও ছিল ইউ। কিন্তু ব্রেক্সিটের ফলে এই দ্বীপের মানুষেরা এ রকম কোনো অর্থসাহায্য আর পাবে না। তার মানে ব্রেক্সিট অ্যাংগোয়েলান দ্বীপের মানুষের জন্য মোটেও সুখের কিছু নয়। তাই দ্বীপের বেশির ভাগ মানুষ চাইছে যুক্তরাজ্যের ছায়া থেকে বের হয়ে যেতে।
এ তো গেল ছোট দ্বীপ ছোট সমস্যা। এই সমস্যার আছে বিকট চেহারাও। ব্রেক্সিট ভোট মূলত গোটা যুক্তরাজ্যকে দুই ভাগে ভাগ করে ফেলেছে সেই ২০১৬ সালেই। ৬২ ভাগ স্কটিশ এবং ৫৫.৮ ভাগ আইরিশ ভোট দিয়েছিল ‘রিমেইন’এর পক্ষে। বিবিসি সেই সময় শিরোনাম করেছিল ‘স্কটল্যান্ড ইউ’তে থাকতে চাইছে যেখানে যুক্তরাজ্য চাচ্ছে বেরিয়ে যেতে। গণমাধ্যমের এই রকম কড়কড়ে শিরোনাম থেকেই বোঝা যায় জাতিগত দ্বন্দ্বের গভীরতা কত ব্যাপক ইংলিশ আর স্কটিশদের মধ্যে। ব্রেক্সিটের পক্ষে ছিল ওয়েলশ আর ইংল্যান্ড। বিপক্ষে স্কটল্যান্ড আর নর্দান আয়ারল্যান্ড। ধারণা করা হয়, নর্দান আয়ারল্যান্ডের যে বা যাঁরা ‘রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড’-এর অংশ হতে চান না, তাঁরাই শুধু ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
যুক্তরাজ্য ইউর সঙ্গে যে চুক্তি করেছে তাতে ব্রেক্সিটের পরে স্কটিশ আলুচাষিরা তাদের ১১২ মিলিয়ন পাউন্ডের বাজার হারাবে। শুধু তা–ই নয়, গোটা যুক্তরাজ্যেই কৃষিতে ভর্তুকির পরিমাণ কমে আসবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষকেরা।
প্রথমেই বলতে হয় স্কটিশদের কথা। ব্রেক্সিট বিষয়ে তাদের ৬২ শতাংশ মানুষের কথা কেউ কানেই তোলেনি। তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই স্কটল্যান্ডকে ইউর বাইরে বেরিয়ে যেতে হয়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে দেশটির স্বাধীনতার প্রশ্নে। ইউগভ নামে একটি ওয়েবসাইটের জরিপ যুক্তরাজ্যের মোটামুটি গ্রহণযোগ্য। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে সবচেয়ে বেশি স্কটিশ চাইছে তাদের আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হোক। স্কটিশ স্বাধীনতার পালে জোর হাওয়া দিচ্ছে নতুন হওয়া ‘ব্রেক্সিট চুক্তি’।
স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি বা এসএনপি এক এক করে চুক্তির ক্ষতিকারক দিকগুলো স্কটল্যান্ডের মানুষের সামনে তুলে ধরছে। ক্ষতির প্রথম সারির কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে আলুকে। যুক্তরাজ্য ইউর সঙ্গে যে চুক্তি করেছে তাতে ব্রেক্সিটের পরে স্কটিশ আলুচাষিরা তাদের ১১২ মিলিয়ন পাউন্ডের বাজার হারাবে। শুধু তা–ই নয়, গোটা যুক্তরাজ্যেই কৃষিতে ভর্তুকির পরিমাণ কমে আসবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষকেরা।
লাভ–ক্ষতি যা–ই হোক, মোদ্দা কথা হলো, ৬২ শতাংশ স্কটিশরা চেয়েছিল ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে থাকতে। এখন এই হেরে যাওয়াই তাদের উৎসাহিত করছে ইউকে নামের আরেক ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যেতে। ২০২১ সালের মে মাসে স্কটিশ পার্লামেন্টের র্নিবাচন হবে। ক্ষমতায় থাকা স্কটিশ জাতীয়তাবাদী দল গেল মাসের বার্ষিক সভায় ঘোষণা দিয়েছে সেকেন্ড রেফারেন্ডাম আয়োজনের। স্কটিশ স্বাধীনতা প্রশ্নে এই রেফারেন্ডাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই যদি স্কটিশরা এসএনপির এই ম্যানিফেস্টোর ওপর ভর করে তাদের আবার ক্ষমতায় আনে, তবে সেকেন্ড রেফারেন্ডামের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ওয়েস্টমিনিস্টারের ওপর চাপ বাড়বে। যদিও বরিস জনসন সেকেন্ড রেফারেন্ডামের বিষয়ে সোজাসুজি ‘না’ বলে দিয়েছেন। তাঁর কথা হলো সেদিনই না একটা রেফারেন্ডাম হলো! বারবার হবে নাকি! এ রকম রেফারেন্ডাম এক প্রজন্মে একটা হতে পারে। দুটি নয়। কিন্তু এসএনপি যদি নির্বাচনে জিতে যায় আর যদি কনজারভেটিভ ব্রিটিশ সরকার স্কটিশ স্বাধীনতার প্রশ্নে সেকেন্ড রেফারেন্ডাম না দেয়, তবে দিন যত গড়াবে স্বাধীন স্কটল্যান্ডের ধারণা ততই জনপ্রিয়তা পাবে। লেবার পার্টি যদিও ব্রেক্সিট চুক্তিতে বরিস জনসনকে সমর্থন করেছে কিন্তু স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার প্রশ্নে বরিস জনসনকে সমর্থন না করা কিংবা নীরব থাকাতে তাদেরই লাভ। কারণ যদি স্কটল্যান্ড যুক্তরাজ্য হতে বেরিয়ে যায় তবে কনজারভেটিভ পার্টির আগামী নির্বাচনে জেতার সম্ভাবনাও কমে আসবে। আর এই সুযোগ লেবার হাতছাড়া করতে চাইবে বলে মনে হয় না।
এ তো গেল স্কটিশ কাহন। এবার বলব রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড এবং নর্দান আয়ারল্যান্ড বিষয়ে। রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড স্বাধীন রাষ্ট্র আর নর্দান আয়ারল্যান্ড যুক্তরাজ্যের অংশ। কিন্তু এই দুই দেশের মধ্যে আক্ষরিক অর্থেই কোনো আনুষ্ঠানিক সীমানা নির্ধারণ করা নেই। যদিও দুই দেশকে এক করে অভিন্ন আয়ারল্যান্ড করার বিষয়ে এখনো অনেকে যেমন তৎপর। তেমনি একদল তৎপর দুই দেশকে আলাদা রাখার বিষয়ে। গোটা ব্রেক্সিট চুক্তিতেই এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে। কারণ, রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড আর নর্দান আয়ারল্যান্ড দাঁড়িয়ে আছে হাজার হাজার মানুষের লাশের ওপর।
বেলফাস্টে গেলে তাই এখনো চোখে পড়বে ‘শান্তির দেয়াল’, যা সাক্ষী দিচ্ছে কয়েক প্রজন্মের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের।
কিন্তু ব্রেক্সিট চুক্তি দুই আয়ারল্যান্ডের ভেতরকার আনুষ্ঠানিক সীমনার ধারণাকে আবার ফিরিয়ে আনছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ স্থানীয় আইরিশ ব্যবসায়ীরা। তবে অনেক নর্দান আইরিশ ব্রেক্সিটকে দেখছেন যুক্তরাজ্যের ছায়া থেকে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ হিসেবে।
স্টিভেন ডি লেভিট এবং স্টিফেন জে ডুবনার তাদের থিংক লাইক আ ফ্রিক বইয়ে বলেছেন, রাজনীতিকেরা যখনই কোনো সঠিক এবং ভুলের মানদণ্ড বিচার করে কোনো সিদ্বান্ত নেন, তখন প্রথমেই যাকে হত্যা করা হয়, তার নাম সত্য। ব্রেক্সিট চুক্তিতেও তা–ই হয়েছে। কথা নেই, বার্তা নেই ব্রিটিশ রাজনীতিবিদেরা হঠাৎ করেই তাঁদের সামুদ্রিক সীমার সার্বভৌমত্বের বিষয়ে আপসহীন আচরণ করা শুরু করলেন। মনে হলো যেন ইউভুক্ত দেশের জেলেরা যুক্তরাজ্যের সব মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ব্রিটিশ নেভি তো বলেই বসল তারা পয়লা জানুয়ারি থেকে সমুদ্রসীমা পাহারে দেবে। কিন্তু এখানে সত্য যতটা সত্য তার চেয়ে বেশি হাস্যরসাত্মক। যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে মাছের অবদান ০.১ শতাংশেরও কম। তার ওপর যুক্তরাজ্যের জলসীমায় পাওয়া যাওয়া মাছের ৭০ শতাংশের ক্রেতা ইউ। বিশেষভাবে ফ্রান্স ও ইতালি। তারও ওপর সত্য হলো যুক্তরাজ্যের জলসীমায় যে মাছ পাওয়া যায়, তা খোদ ব্রিটেনবাসীদেরই পছন্দ নয়। কারণ, তাদের পছন্দের ‘ফিশ অ্যান্ড চিপস’-এর জন্য দরকার কড মাছের। আর সেই কড আসে ইউ থেকে।
এ তো গেল ফ্যাক্ট বা সত্য হত্যার একটা উদাহরণ, এ রকম আরও অনেক উদাহরণ একটু ঘাঁটলেই পাওয়া যাবে। তবে তবুও ভালো যে একটা চুক্তি হয়েছে। কোনো চুক্তি না হলে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি ৬ শতাংশ কমে যেত। চুক্তি হওয়াতেও কমবে, কিন্তু কমবে ৪ শতাংশ।
কিন্তু এত বিশ্লেষণ, তথ্যউপাত্তের পরও আপনি হয়তো গো ধরে বসে আছেন শুরুর প্রশ্নে, নিশ্চয়ই সোজাসুজি জানতে চাইছেন ‘তো কে জিতল কে হারল’? আপনার প্রশ্নের জবাবে ব্রেক্সিট বিষয়ে ইউর প্রধান নেগোশিয়েটর মিশায়েল বার্নিয়ার বলেছেন ‘লুজ লুজ সিচুয়েশন’।
তবে হার–জিতের বাইরেও আপনার জন্য আমার গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আছে। ধরেন, যদি স্কটল্যান্ড ইউনাইটেড কিংডম অব গ্রেট ব্রিটেন অ্যান্ড নর্দান আয়ারল্যান্ড থেকে বের হয়ে যায়, তবে যুক্তরাজ্যের নাম বদলে কী রাখা হবে? কিংবা কী হবে তাদের ইউনিয়ন জ্যাক পতাকার ভবিষ্যৎ? কেমন হবে তাদের পরবর্তী পতাকার নকশা?
রিনভী তুষার লেখক, রাজনীতি গবেষক এবং অভিবাসন উন্নয়নকর্মী।
kurchiphool@gmail. com