মতামত: মধ্যপ্রাচ্য

বাইডেনের জয় ফিলিস্তিনিদের মনে আশা জাগাচ্ছে

জো বাইডেন
ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলের প্রতি নির্লজ্জ পক্ষপাতের কারণে বছর তিনেক আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সব ধরনের সমঝোতা আলোচনা বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। এখন জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ফিলিস্তিনের নেতারা আবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় ফেরার বিষয়ে আগ্রহী হয়েছেন। সম্ভাব্য সেই আলোচনার প্রধান বিষয় হবে ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ডে ইসরায়েলের অবৈধ বসতি নির্মাণ বন্ধ করা।

ইসরায়েলের প্রতি নগ্ন পক্ষপাত দেখানো ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে আসলেই এ ধরনের আলোচনা হওয়া সংগত নয়। ট্রাম্প প্রশাসনের যাঁরা ‘মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া’ বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, তার প্রথম সারিতে আছেন ট্রাম্পের ইহুদি বংশোদ্ভূত জামাতা জ্যারেড কুশনার এবং ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ডেভিড ফ্রিডম্যান। এই দুজনই ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অবৈধ বসতি নির্মাণকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে আসছেন।

তাঁদের কথিত শান্তিপ্রক্রিয়ায় দৃশ্যত ইসরায়েলকে যা ইচ্ছা তাই করার ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং ফিলিস্তিনকে একচুলও ছাড় দেওয়া হয়নি। এরপরও ট্রাম্প প্রশাসন ফিলিস্তিনকে আরও আনুগত্য দেখাতে আদেশ করেছে এবং ফিলিস্তিন যুক্তরাষ্ট্রের কথা না শুনলে তাদের সব ধরনের সাহায্য–সহযোগিতা বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছে। তবে সেই হুমকির কাছে নতিস্বীকার না করে আব্বাস যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা স্থগিত করে দেন। এটি না করে আব্বাসের কোনো উপায়ও ছিল না।

বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে পাওয়ার পর ফিলিস্তিনে বসতি নির্মাণের বিষয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিন সরকারকে এ বিষয়ে কিছু বলারই প্রয়োজন মনে করেননি। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইসরায়েল ফিলিস্তিনের মধ্যে ঢুকে নজিরবিহীনভাবে ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর ভেঙে সাফ করে ফেলছে। সেসব জায়গায় ইহুদি বসতি স্থাপন করা হবে। এটি যে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন, সে বিষয়ে কারও মনে কোনো প্রশ্ন নেই। চার বছর আগে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ২৩৩৪ নম্বরের যে প্রস্তাব পাস হয়, সে প্রস্তাব অনুযায়ী ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরায়েলের দখল করা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের কোনো ধরনের ভবন ভাঙা কিংবা নির্মাণ সম্পূর্ণ অবৈধ। অথচ ইসরায়েল সেই অবৈধ কাজ করেই যাচ্ছে। আর ট্রাম্প প্রশাসন তাতে সায় দিয়েই যাচ্ছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও (যিনি হয়তো ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা ভাবছেন) অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের অবৈধ বসতি শিগগিরই পরিদর্শন করতে যাবেন। তিনিই প্রথম কোনো মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, যিনি এ ধরনের একটি অবৈধ দখলকে প্রকাশ্যে উদ্‌যাপন করতে সেখানে যাচ্ছেন। এটি জাতিসংঘের ২৩৩৪ নম্বর প্রস্তাবের সরাসরি লঙ্ঘন।

ট্রাম্প প্রশাসনের এ বিশ্বাসঘাতকতা এবং ইসরায়েলের বসতি স্থাপনের প্রতিবাদে ফিলিস্তিন ইসরায়েলের কাছ থেকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড থেকে তোলা করের অর্থ নিতে অস্বীকার করেছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রও ফিলিস্তিনিদের জন্য প্রদেয় সহায়তার পরিমাণ অনেক কমিয়ে দিয়েছে। এতে ফিলিস্তিনের দেউলিয়া হওয়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে।

বাইডেন নির্বাচিত হওয়ায় ফিলিস্তিনিরা একটু আশার আলো দেখছে। ইসরায়েলের অবৈধ বসতি গড়ার বিরুদ্ধে পাস হওয়া ২৩৩৪ নম্বর প্রস্তাব বারাক ওবামার সময় পাস হয়েছিল, কারণ তাঁর প্রশাসন সে সময় এই প্রস্তাবে ভেটো দেয়নি। এ প্রস্তাব যখন পাস হয়, তখন ওবামার জাতীয় প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ছিলেন সুসান রাইস। বাইডেনের নতুন সরকারের সম্ভাব্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় রাইসের নাম আছে।

বাইডেন নিজে ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং ২০১৪ সালে তিনি নেতানিয়াহুকে বলেছিলেন, ‘আপনি যেসব বাজে কথা বলেন, তার সঙ্গে আমি একমত নই।’ এ ছাড়া বাইডেনের চিফ অব স্টাফ হিসেবে যিনি আসছেন, সেই রন কেলিনও ইসরায়েলের বসতি নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছেন।

বাইডেন বিজয়ী হওয়ার পর আব্বাস তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, তাঁর জয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিস্তিনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার হওয়ার সম্ভাবনা জোরালো হয়েছে।

তবে শেষ পর্যন্ত শান্তিপ্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ কী হবে, তা ভবিষ্যৎই বলতে পারবে।

ইংরেজি থেকে অনূদিত, স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
দাউদ কাত্তাব: ফিলিস্তিনি সাংবাদিক