চিঠিপত্র

প্রবাসীদের পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে হয়রানি কি বন্ধ হবে না?

বাংলাদেশি কোনো নাগরিক প্রবাস বা বিদেশে বসে নিজ দেশের সম্পত্তি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। মা-বাবা, ভাইবোন ইত্যাদির নামে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়োগে যে জটিলতা দেখা দিয়েছে, তা সত্যিই দুঃখজনক ও অমানবিক। পদ্ধতিটি প্রবাসীদের জন্য আরও সহজীকরণে আইন মন্ত্রণালয়কে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। যেন প্রবাসীরা প্রয়োজনের তাগিদে তাঁর দেশে নিজ বা পৈতৃক সম্পত্তি বেচাবিক্রি, ভাড়া দেওয়া-নেওয়া, খাজনা ও আয়কর প্রদান, মামলা-মোকদ্দমা পরিচালনা, বণ্টননামা বা এ-জাতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য প্রয়োজনে তাঁর পছন্দের লোককে ক্ষমতা অর্পণ করতে পারেন।

বিষয়টি আগে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস বা হাইকমিশন থেকে পাওয়ার অ্যাটর্নিসমূহ সত্যায়িত করে পরবর্তী সময়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যাচাইকরণ ও পুনঃ সত্যায়িতের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করার নিয়ম ছিল বৈধ। কিন্তু বর্তমানে বিষয়টি এত জটিল, বিড়ম্বনা ও দুর্ভোগের বিষয় তৈরি করা হয়েছে, যা প্রবাসীদের জন্য হয়রানি ছাড়া আর কিছু নয়। দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে পদে পদে টাকাপয়সা খরচ করতে হচ্ছে।

প্রবাসীরা সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সত্যায়িত করার পর আবার দেশে এসে যেতে হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। তারপর জেলা প্রশাসক, এরপর এসি ল্যান্ড ও পরবর্তী সময়ে স্থানীয় ভূমি অফিস। এভাবে দিনের পর দিন ঘোরাঘুরি করে বৈধ সম্পত্তির ক্লিয়ারেন্স নিতে ছয় মাস থেকে বছর পেরিয়ে যায়, যা দেখার কেউ নেই। এই দীর্ঘসূত্রতার পেছনে আছে ঘুষের কারবার। রেজিস্ট্রি করার আগে সর্বশেষ পাওয়ার নিয়ে যেতে হবে এসি ল্যান্ড ও সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে। বলা বাহুল্য, সহজে এখান থেকে পুনঃ ক্লিয়ারেন্স পাওয়া দুরূহ এবং কষ্টকর। সম্পত্তি সবকিছু ঠিকঠাক থাকা সত্ত্বেও শুরু হবে নতুন করে জটিলতা, বিড়ম্বনা ও দুর্ভোগ।

অথচ নিয়ম আছে, বিদেশ থেকে পাওয়ার আনার নব্বই দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রি করতে না পারলে সেটি বাতিল বলে গণ্য হবে। এখন এই পাওয়ার নিয়ে এসি ল্যান্ড ও ভূমি অফিসগুলোর দৌরাত্ম্যে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়লে তখন ঘুষের আশ্রয় নিয়ে বাধ্য হয়ে কাজটি সারতে হয়। যাতে সময়মতো আপনি ক্লিয়ারেন্স সংগ্রহ করে, তা আবার রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে সেটি সুষ্ঠুভাবে রেজিস্ট্রি করতে সক্ষম হন। সেখানেও বিভিন্ন ভুল ধরার নামে জিম্মি করে টাকা আদায় করার আরেক ফন্দি শুরু হয়।

প্রবাসীদের হয়রানির বিষয়টি জনপ্রশাসন, পররাষ্ট্র, ভূমি ও আইন মন্ত্রণালয় সবাই জ্ঞাত থাকলেও তাদের যেন করার কিছু নেই। জনসেবায় এমন দুর্ভোগ নিয়েই চলছে প্রশাসন, যেখানে অনিয়ম আর দুর্নীতির ছড়াছড়ি। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বাধ্য হচ্ছি।

মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী
গণমাধ্যমকর্মী, ১৭, ফরিদাবাদ-গেন্ডারিয়া ঢাকা