প্রধানমন্ত্রী যেসব নির্দেশ দিলেন, সেটি বাস্তবায়নের কোনো পরিকল্পনা তেমন সুসংগঠিতভাবে তৈরি হয়েছে বলে নজরে পড়ছে না। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি জেলা সম্পূর্ণভাবে লকডাউন হয়েছে, কিছু উপজেলা লকডাউন হয়েছে এবং আগামী দিনগুলোতে হয়তো লকডাউনের পরিমাণ আরও বাড়বে। তাই সাধারণ মানুষ, যাঁরা ‘দিন আনে দিন খায়’, যাঁদের হাতে সঞ্চয় তেমন থাকে না, তাঁদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খাবার সরবরাহ করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমার মতো লোকের চিন্তা হচ্ছে যে আমাদের সমাজটা তো এখনো সুসংগঠিত নয়। আমাদের লজ্জা হয়, এ রিলিফের চাল ক্ষমতাসীনরা চুরি করছেন। সামান্য কয়েক বস্তা চালের লোভ তাঁরা সংবরণ করতে পারেন না। তাঁরা কারা, তা নিয়ে আমি সময় নষ্ট করতে চাই না। সরকার তাঁদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছে। তাঁদের অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। হাতেনাতে যাঁরা ধরা পড়ছেন, তাঁদের তদন্ত আর বিচারিক প্রক্রিয়াটি যেন যথাসম্ভব ছোট আকারের হয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের শাস্তি দেওয়া হয়। একসঙ্গে তাঁদের নাম ও ছবি খবরের কাগজ ও বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে (যদি ধরে নিই তাঁর পরিবারের সমর্থন আছে) লজ্জায় ফেলতে হবে। এমনও হতে পারে, যিনি চুরি করছেন, তাঁর পরিবারের সমর্থন নেই। বাধাটা আগে পরিবার থেকে আসতে হবে।
প্রকৃতপক্ষে যাঁদের চাহিদা আছে, তাঁদের চিহ্নিত করে কাজ করতে হবে। আইলা বা সিডরের সময় আমি দেখেছি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে, ইউনিয়ন পরিষদের সামনে প্রকৃতপক্ষে যাঁদের প্রয়োজন আছে এবং কাদের দেওয়া হয়েছে, এর তালিকা টানিয়ে রাখা হয়েছিল। এখন খবরের কাগজে ২০০ জনকে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে বলে প্রচার করা হচ্ছে। আমি মনে করি, খবরের কাগজে এ ধরনের প্রচারণা থেকে বিরত থাকতে হবে। রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বা খাবার সরবরাহের ক্ষেত্রে দেখেছি, সামরিক বাহিনীর লোকজন ত্রাণ যাঁরা দেবেন, তাঁদের থামিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা নিজেরা খাবার নিয়ে দেননি, বরং যেসব জায়গায় তখনো খাবার দেওয়া এখনো হয়নি, তার তালিকা দিয়েছেন। এতে সবার মধ্যে খাবারের সুষ্ঠু বণ্টন হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে যে প্রক্রিয়ায় খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে, সেটি অনুসরণ করে বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলায় খাবার দেওয়া যেতে পারে। কৃষকেরা যাতে তাঁদের উৎপাদিত পণ্য প্রক্রিয়া করে বাজারজাত করতে পারেন, সে জন্য সরকারিভাবে পদ্ধতি ঠিক করে ব্যবস্থা নিতে হবে। কৃষক যেন তাঁর পণ্যের ন্যায্যমূল্য পান। সামনের সপ্তাহে কালবৈশাখীর আশঙ্কা আছে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। বাঁধগুলো ঠিকভাবে মেরামত হচ্ছে কি না, তা কোভিড-১৯-এর মতো দেখতে হবে। তা না হলে ২০১৭ সালের মতো বন্যা পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক