মতামত

পুতিন কি ধর্মযুদ্ধে নেমেছেন?

আলেকসান্দর দুগিনকে বলা হচ্ছে ‘পুতিনের মগজ’
আলেকসান্দর দুগিনকে বলা হচ্ছে ‘পুতিনের মগজ’

ইউক্রেন সংকটের ব্যাপারে খোঁজ রাখতে টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যাঁরা চোখ রাখছেন, পত্রপত্রিকায় দেশের বা দেশের বাইরের পর্যবেক্ষকদের বিশ্লেষণ পড়ছেন, তাঁরা ইতিমধ্যেই এই যুদ্ধের বিষয়ে মোটামুটি একটা ধারণা পেয়ে গেছেন। এই যুদ্ধ নিয়ে যেসব কথা বারবার বিশ্লেষকদের আলোচনায় ঘুরে ফিরে আসছে, সেগুলো মোটামুটি এ রকম:

ইউক্রেনের ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যুক্ত হওয়া ঠেকাতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ধনুকভাঙা পণ করেছেন, সে কারণে তিনি এই হামলা করেছেন; পুতিনের লক্ষ্য, ইউক্রেনের বর্তমান সরকারকে উৎখাত করে সেখানে তার তাঁবেদার কাউকে বসিয়ে দেওয়া; অভিযানের উদ্দেশ্য নিয়ে রাশিয়ার নাগরিকদের কাছে খোদ পুতিনের দেওয়া ব্যাখ্যা অনুযায়ী, তিনি ইউক্রেনকে সামরিকীকরণের প্রক্রিয়া বন্ধ ও নাৎসি প্রভাবমুক্ত করতে চান; ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র পুতিনের এই অভিযানকে আগ্রাসন হিসেবে নিয়ে রাশিয়াকে একঘরে করে ফেলার চেষ্টা করে যাচ্ছে—ইত্যাদি।

তবে পুতিনের এই অভিযান কি শুধুই ভূরাজনৈতিক, অর্থনৈতিক? নাকি তার বাইরেও আদর্শিক কোনো ঘটনা আছে?

এসব প্রশ্ন এখন উঠতে শুরু করেছে। এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে অবধারিতভাবে এমন একজনের নাম উঠে আসছে, এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে রাজনীতিভিত্তিক তত্ত্বের প্রসিদ্ধ গবেষকেরা ছাড়া যাঁর নাম রাশিয়ার বাইরের সাধারণ মানুষ বলা যায় শোনেইনি। তবে এখন তাঁর নাম প্রায়শই উচ্চারিত হচ্ছে। তিনি হলেন আলেকসান্দর দুগিন। তাঁকে নিয়ে ইতিমধ্যে প্রথম আলোতে কলাম প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি ইসলামি বক্তা আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাজ্জাকের বিশদ বর্ণনাতেও ওঠে এসেছে দুগিনের নাম ও তাঁর চিন্তাধারা।

ইতিমধ্যেই সচেতন পাঠকদের একটা বড় অংশ জেনে গেছেন, ৬০ বছর বয়সী আলেকসান্দর দুগিনকে বলা হচ্ছে ‘পুতিনের মগজ’। অর্থাৎ পুতিন যা যা করে থাকেন, তার মূল মন্ত্রনাদাতা হলেন এই দুগিন।

দুগিনের লেখা বইপত্র রাশিয়ায় বিশেষ মর্যাদার আসনে রাখা হয়েছে। তাঁর লেখা দ্য ফাউন্ডেশন অব জিওপলিটিকস: দ্য জিওপলিটিক্যাল ফিউচার অব রাশিয়া বইটিকে পুতিনের রাশিয়ার ‘মেনিফেস্টো’ এবং অন্তর্নিহিত নির্দেশনা গ্রন্থ হিসেবে দেখা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট ’ডেইলি বিস্ট’ এর ‘দ্য ফার রাইট বুক এভরি রাশিয়ান জেনারেল রিডস’ শীর্ষক একটি লেখায় এই বইটি নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, দুগিনের এই বইটি রাশিয়ার সেনাবাহিনীর কর্নেল পদমর্যাদার ওপরের সব কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলকভাবে পড়তে হয়।

এ ছাড়া এই বইসহ দ্য ফোর্থ পলিটিক্যাল থিউরি, দ্য গ্রেট অ্যাওকেনিং ভার্সেস দ্য গ্রেট রিসেট, পলিটিক্যাল প্ল্যাটোনিজম: দ্য ফিলোসফি অব পলিটিকস ইত্যাদি বই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ানো হয়। এর মধ্য দিয়ে আলেকসান্দর দুগিননের রাজনৈতিক দর্শনকে রাশিয়ার বর্তমান প্রজন্মের মগজে রুয়ে দেওয়া হচ্ছে।

সেই দর্শনের মূল যেখানে প্রোথিত, সেটি হলো অর্থোডক্স ক্রিশ্চিয়ানিটি। এই ধর্মীয় অনুশাসন রাশিয়ার মানুষের জীবনাচরণে প্রতিষ্ঠা করা গেলেই সমগ্র রাশিয়া ঐক্যবদ্ধ হবে। তখন সেই রাশিয়া হয়ে উঠবে ভ্যাটিকানের ক্যাথলিক চার্চের অনুসারী পশ্চিমাদের থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র একটি মহাশক্তি। দুগিনের চিন্তা, বিশ্বাস ও পরিকল্পনা ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করছেন ভ্লাদিমির পুতিন। সেই অর্থে পুতিনের এই যুদ্ধের পেছনে অর্থোডক্স ক্রিশ্চিয়ানিটি প্রতিষ্ঠার অদম্য বাসনা কাজ করছে বলে মনে করা হচ্ছে।

দুগিনের তত্ত্ব কী

যেহেতু দুগিন হলেন পুতিনের ‘মগজ’, সেহেতু দুগিনকে বোঝা দরকার। পুতিনের আদর্শ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভেতর থেকে বুঝতে গেলে সেই মগজের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বোঝা জরুরি।

দুগিন রাশিয়া জারের শাসন, সোভিয়েতের উত্থান-পতন ও পশ্চিমা উদারনৈতিক পুঁজিবাদী চরিত্র দেখে ও সেসব বিশ্লেষণ করে মনে করছেন, কমিউনিজম তথা সেক্যুলারিজম গোটা রাশিয়াকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে এক করতে পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবে না। অন্যদিকে পশ্চিমা উদারনৈতিক পুঁজিবাদ যদি রাশিয়ায় গেঁড়ে বসে তাহলে রুশ নাগরিকদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকভাবে পশ্চিমাদের দাসত্ব করতে হবে। এ কারণে তিনি কমিউনিজম, সেক্যুলারিজম ও পুঁজিবাদের মতো ঐতিহ্যিক দর্শন থেকে বেরিয়ে সম্পূর্ণ নতুন একটি তত্ত্ব নিয়ে রাশিয়ার মানুষের সামনে হাজির হয়েছেন।

দ্য ফোর্থ পলিটিক্যাল থিউরি বইটিতে দুগিন বিশদভাবে সেই তত্ত্ব প্রকাশ করেছেন। এই থিওরির মূল ভাষ্য হলো, আমেরিকান উদারনীতিবাদকে ধ্বংস করতেই হবে। জায়ানিজমপন্থী যে পুঁজিবাদী অর্থনীতি আছে, সেটিকেও ধ্বংস করতে হবে। দুগিনের এই ভাষ্য সন্দেহাতীতভাবেই ফ্যাসিবাদী। তবে দুগিন আত্মপক্ষ সমর্থনে বলেছেন, পশ্চিমা লিবারেলিজম, ধর্মনিরপেক্ষতা ও মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে তাদের জীবনাচরণ রক্ষণশীল সমাজের ওপর চাপিয়ে দেয়।

মানবাধিকারের নামে তারা সংখ্যাগুরুর সংস্কৃতির ওপর সংখ্যালঘুর বোঝা চাপিয়ে দিতে চায়। দুগিন মনে করেন, মানুষের মানবাধিকার নির্ধারিত হবে তার নিজস্ব সমাজ থেকে। তার স্থানীয় সংস্কৃতি থেকে। সমকামিতা, বহুগামিতার মতো বিষয় যে সমাজ গ্রহণ করতে পারে না, সেখানে মানবাধিকারের কথা বলে তা বৈধতা দেওয়া যাবে না।

মস্কোয় রুশদের প্রাণপুরুষ ভ্লাদিমির দ্য গ্রেটের ভাষ্কর্য

দুগিনের তত্ত্বের মূল উৎস যেখানে

রাশিয়ার নাগরিকদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের নামের সঙ্গে ‘ভ্লাদিমির’ নামটি যুক্ত থাকতে দেখা যায়। যেমন: ভ্লাদিমির পুতিন, ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন—ইত্যাদি। প্রায় হাজার বছর ধরে এভাবে রুশ পিতামাতা (সবাই নয়) তাদের প্রিয় পুত্র সন্তানের নামের সঙ্গে ‘ভ্লাদিমির’ যুক্ত করেন যে মহান নেতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, তিনি হলেন ইতিহাসখ্যাত রুশ সম্রাট ‘ভ্লাদিমির দ্য গ্রেট’। তিনি ‘সেইন্ট ভ্লাদিমির’ বা ‘সাধু ভ্লাদিমির’ নামেও পরিচিত। ৯৮০ থেকে ১০১৫ সাল পর্যন্ত তিনি রাশিয়া শাসন করেছিলেন।

দুগিনের তত্ত্ব বুঝতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে সেই ভ্লাদিমির দ্য গ্রেটের, অর্থাৎ হাজার বছর আগের বাইজান্টিয়াম শাসনামলে। সুবিশাল রোমান সাম্রাজ্যকে শাসনের সুবিধার জন্য দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। এক ভাগে ছিল ইতালির রোমকেন্দ্রীক রোমান সাম্রাজ্য। অন্যটি ছিল আজকের তুরস্ক বা কনস্টান্টনোপল কেন্দ্রিক রোমান সাম্রাজ্য। দুটিই রোমান সাম্রাজ্য নামে পরিচিত ছিল। কনস্টান্টিনোপলকে কেন্দ্র করে যে রোমান সাম্রাজ্য তৈরি হয়, সেটিকে বলা হয় বাইজান্টিয়াম সাম্রাজ্য। ইয়েটসের ‘সেইলিং টু বাইজান্টিয়াম’ কবিতায় এই সাম্রাজ্যের বিপুল সমৃদ্ধির কথা পাওয়া যায়।

এই বাইজান্টিয়াম সাম্রাজ্যকে কেন্দ্র করে যে রোমান সভ্যতা গড়ে ওঠে সেই সভ্যতার মানুষ ছিল অর্থোডক্স খ্রিষ্টান। আর রোম নগরকে কেন্দ্র করে যে রোমান সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে, সেখানকার বাসিন্দারা হলেন ক্যাথলিক খ্রিষ্টান। এই দুই সাম্রাজ্যের মধ্যে বেশি শক্তিধর ছিল বাইজান্টিয়াম সাম্রাজ্য।

রাশিয়ার ভ্লাদিমির দ্য গ্রেট বাইজান্টিয়ামের অর্থোডক্স খ্রিষ্টানদের সংস্পর্শে এসে অর্থোডক্স খ্রিষ্টান ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন এবং অর্থোডক্স খ্রিষ্টান হিসেবে বাইজান্টিয়াম শাসন ব্যবস্থার সঙ্গে নিজের সাম্রাজ্যকে যুক্ত করেন।

‘পুতিনের মগজ’ আলেকসান্দর দুগিন

ভ্লাদিমিরের অর্থোডক্স খ্রিষ্টান রাশিয়ায় ফিরতে চান দুগিন

আজকের আলেকসান্দর দুগিন সেই হাজার বছর আগের বাইজান্টিয়াম শাসনামলের অর্থোডক্স খ্রিষ্টানদের মূল্যবোধে ফিরে যেতে চান। তিনি সেই অর্থোডক্স রোমান সাম্রাজ্যে ফিরে যেতে চান যে সাম্রাজ্যটি অর্থোডক্স ক্রিশ্চিয়ানিটি ও ধর্মীয় জাতীয়তাবাদকে ধারণ করে এবং লালন করে। দেশীয় কৃষ্টি কালচার ও দেশীয় সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে যা পরিচালিত হবে।

আর দুগিনের এই ইচ্ছার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হলো ইতালির রোম কেন্দ্রিক ক্যাথলিক খ্রিষ্টান দর্শন। ক্যাথলিকদের সঙ্গে অর্থোডক্সদের চিরন্তন শত্রুতা রয়ে গেছে। এই দুই পক্ষের বিশ্বাস, জীবনাচার ও ধর্মীয় আচার ব্যবহারে বিশাল পার্থক্য রয়েছে। অর্থোডক্সদের বাইজান্টিয়াম সাম্রাজ্যের ভাষা ইব্রামি (এটি আসলে হিব্রু, আধুনিক কালে এই ভাষাকে তিব্রিয়ান ভাষা বলা হয়)। আর ইতালি বা রোম কেন্দ্রিক রোমান সাম্রাজ্যের ক্যাথলিকদের প্রধান ভাষা ল্যাটিন।

ইতালির রোমকেন্দ্রিক ক্যাথলিকদের ধর্মগুরুকে বলা হয় পোপ। আর বাইজান্টিয়াম কেন্দ্রিক অর্থোডক্স খ্রিষ্টানদের ধর্মগুরুকে বলা হয় প্যাট্রিয়ার্ক। সেই ধারাবাহিকতায় আজকের রাশিয়ার অর্থোডক্স খ্রিষ্টানদের ধর্মগুরুকেও প্যাট্রিয়ার্ক বলা হয়। ইতালির রোমকেন্দ্রীক ক্যাথলিক খ্রিষ্টানেরা বড়দিন পালন করেন ২৫ ডিসেম্বর। আর অর্থোডক্সরা তা পালন করেন ৭ জানুয়ারি। ক্যাথলিকেরা গির্জায় মূর্তি পছন্দ করে। অর্থোডক্স অনুসারীরা মূর্তি পরিবর্তে পেইন্টিং পছন্দ করে।

অর্থোডক্স অনুসারীরা মনে করে, ইতালির রোমকেন্দ্রিক ক্যাথলিকেরা মূল খ্রিষ্টান মূল্যবোধ থেকে সরে গেছে। এ কারণে তারা ইউরোপীয় উদারপন্থাকে বৈধতা দিয়েছে। অর্থোডক্সরা নিজেদের খ্রিষ্টের আদি ও অবিকৃত মূল্যবোধের খ্রিষ্টান মনে করেন।

অর্থাৎ ইতালির রোম কেন্দ্রিক ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ও রাশিয়ার অর্থোডক্স খ্রিষ্টানদের মধ্যে মূল্যবোধগত পার্থক্য রয়েছে। অর্থোডক্স খ্রিষ্টানদের মধ্যে পারিবারিক বন্ধন, প্রাত্যহিক জীবনে ধর্মকর্মের প্রতি আগ্রহ বেশি বলে তারা মনে করে থাকেন। আর ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি আগ্রহ কম বলে অর্থোডক্সরা মনে করেন। অর্থাৎ ভ্যাটিকান চার্চের অনুসারী ক্যাথলিক মতাদর্শের ইউরোপীয় নাগরিকদের সঙ্গে রাশিয়ার অর্থোডক্স চার্চের অনুসারী অর্থোডক্স খ্রিষ্টানদের বিশ্বাসগত, প্রাত্যহিক জীবনাচরণগত ও রাজনৈতিক ভাবাদর্শগত অমিল রয়েছে।

আলেকসান্দর দুগিনের ভাষ্য হলো, ক্যাথলিক ধারার প্রভাবে ইউরোপীয় উদারপন্থা ও পুঁজিবাদ বিস্তৃত হচ্ছে যা মূল খ্রিষ্টধর্মের মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। দুগিন মনে করেন, এই উদারনীতির কারণেই সমকামিতা, বিবাহবহির্ভূত দৈহিক সম্পর্ক ও গর্ভপাতের মতো খ্রিষ্টীয় মূল্যবোধবিরোধী সংস্কৃতি সম্প্রসারিত হচ্ছে। এ কারণে দুগিন সেই হাজার বছর আগের ভ্লাদিমির দ্য গ্রেটের অর্থোডক্স রাশিয়াকে ফিরিয়ে আনতে চান। তাঁর মূল লক্ষ্য হলো, রাশিয়াকে ধর্মবিযুক্ত কমিউনিজম থেকে সম্পূর্ণরূপে বের করে নিয়ে আসা।

রাশিয়ার আগের নেতারা রাজনীতি থেকে ধর্মকে আলাদা করার যে ভাষ্য দিয়েছিলেন, দুগিনের ভাষ্য ঠিক তার উল্টো। তিনি তাঁর বইয়ে সরাসরি না বললেও স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন, অর্থোডক্স খ্রিষ্টানিটিই হবে রাশিয়ার রাজনীতির মূল ভিত্তি। তার ভিত্তিই থাকবে বাইজান্টিয়াম সাম্রাজ্যের অতীত ইতিহাস। তার ভিত্তি হবে ভ্লাদিমির দ্য গ্রেটের অর্থোডক্স শাসন।

ভ্লাদিমির পুতিন সেই আদর্শকেই বাস্তবায়ন করতে চান। সোভিয়েত আমলে যে রাশিয়া ছিল এবং আজকের পুতিনের যে রাশিয়া, তাতে তফাত আছে। সেই তফাত বিশ্বাসগত এবং আদর্শগত। সোভিয়েতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে শীতল যুদ্ধে হয়েছিল, তার সঙ্গে আজকের পুতিনের রাশিয়া বনাম আজকের যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের যুদ্ধের তফাত আছে।

সোভিয়েত আমলের কমিউনিস্ট রাশিয়া ছিল ধর্মমুক্ত। আর আজকের রাশিয়ার প্রাণই অর্থোডক্স ধর্মকেন্দ্রিক। ধর্মের বিশ্বাসকে সামনে রেখে দুগিনের প্রেসক্রিপশনে হাজার বছর আগের বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে আজকের রাশিয়া।

দ্য ফাউন্ডেশন অব জিওপলিটিকস: রাশিয়া’স জিওপলিটিক্যাল ফিউচার বইয়ে দুগিন যেসব সুপারিশ করেছিলেন। পুতিন একটা একটা করে তা বাস্তবায়ন করে চলেছেন। ক্রিমিয়া দখল থেকে শুরু করে আজকের ইউক্রেন অভিযান সবই দুগিনের বইয়ে দেওয়া পরামর্শ অনুযায়ী চলছে।

আলেকসান্দর দুগিন বলেছিলেন, রাশিয়ার জাগরণের পথে সবচেয়ে বড় বাধা ইউক্রেন। এই ইউক্রেনের মধ্য দিয়েই পশ্চিমা পুঁজিবাদ ও পশ্চিমা সংস্কৃতি রাশিয়ায় অনুপ্রবেশ করছে। ফলে তাকে দখল করা ছাড়া রাশিয়া তার সাংস্কৃতিক ও জাতীয়তার পরিচয় অক্ষুণ্ন রাখতে পারবে না।

দ্য ফোর্থ পলিটিক্যাল থিউরি বইয়ে সরাসরি বলেছেন, ‘আমেরিকান লিবারেলিজম মাস্ট বি ডেসট্রয়েড’। তার তত্ত্ব মতে, এই লিবারেলিজমকে সমূলে উৎপাটন করতে হবে। নিজ নিজ ধর্মের অনুশাসনকে ভিত্তি হিসেবে ধরে নিয়ে দেশীয় মূল্যবোধের মাপকাঠিকে ধরতে হবে। সেই দিক থেকে দেখলে এটা মনে হওয়া স্বাভাবিক যে পুতিন সম্ভবত ‘ধর্মযুদ্ধে’ নেমেছেন।

সারফুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক
ই-মেইল: sarfuddin2003@gmail.com