দেশের কোনো ভয়ংকর অনিয়মে অন্য কোনো দেশের কথা বলার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে এই ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ তত্ত্ব’ একেবারেই নতুন নয়। এটা পশ্চিমা কোনো দেশ তো বটেই, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা, মুক্ত গণমাধ্যম নিশ্চিতে কাজ করা সংস্থার রিপোর্টের পর আমরা নিয়মিত শুনি। প্রতিক্রিয়া হিসেবে সরকারের দিক থেকে পাল্টা নানা কটাক্ষ দেশ বা সংস্থাগুলোর প্রতি করা হয়েছে। কিন্তু এবার সেটা পেল প্রাতিষ্ঠানিক রূপ—পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিটি মিডিয়ায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে পাল্টা কোন কোন প্রশ্ন বাংলাদেশের সাংবাদিকদের করা উচিত, সেটার ব্যাপারে রীতিমতো নির্দেশনা দিয়েছেন।
নিজেদের নানা অন্যায় ও অনিয়ম নিয়ে আলোচনাকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য একধরনের দেশপ্রেমের ভান দেখা যায় সরকারের দিক থেকে এবং সেটাকে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয় জনগণের মধ্যে। এটা আসলে কার স্বার্থে হয়, সেটা বোঝার জন্য বাংলাদেশের কিছু ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে’ পশ্চিমাদের হস্তক্ষেপের প্রভাব আলোচনা করা যাক।
সম্প্রতি প্রথম আলোয় প্রকাশিত নিমতলী অগ্নিকাণ্ড নিয়ে ফলোআপ রিপোর্টে দেখা যায়, ২০১০ সালে ঘটা বীভৎস ঘটনাটিতে কোনো মামলা হয়নি। হয়েছিল স্রেফ একটা জিডি এবং দীর্ঘ এক যুগেও সেটা নিয়ে কোনো তদন্ত হয়নি। খোদ রাজধানীর বুকে ১২৪ জন মানুষ পুড়ে মারা যাওয়াও সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর টনক নড়াতে পারেনি। ওই এলাকার রাসায়নিক গুদাম থেকে আগুন লাগা এবং ছড়িয়ে পড়ার কারণে সবাই বলেছিলেন, আবাসিক এলাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম দ্রুত সরাতেই হবে। কিন্তু হয়নি সেটা।
রাসায়নিক গুদাম না সরানোর ফল ফলল ৯ বছর পরে—পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে ৭৭ জন মারা যান। চুড়িহাট্টায় আগুনের পর আরেক দফা রাসায়নিক গুদামগুলো সরিয়ে নেওয়া নিয়ে কিছু কথাবার্তা হলেও এখনো সেখানেই আছে সেগুলো। প্রশ্ন হচ্ছে, ওই এলাকার লাখ লাখ মানুষের জীবন অনিরাপদ রেখে সরকারের এমন নির্বিকার থাকার কারণ কী?
ঢাকা মহানগর উত্তর মৎস্যজীবী লীগের নবনিযুক্ত সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের মালিকানাধীন তাজরীন ফ্যাশনসে ২০১২ সালে অগ্নিকাণ্ডে আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে গিয়েছিল কমপক্ষে ১১৭ জন মানুষ। গার্মেন্টসে এমন ভয়াবহ না হলেও নানা আকারের, নানা তীব্রতার দুর্ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু বাংলাদেশের সরকার কখনো এসব কারখানার কর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি তাজরীনের বীভৎসতার পরও না।
তাজরীন ফ্যাশনসের মাত্র পাঁচ মাস পর ঘটল বাংলাদেশের সবচেয়ে ভয়ংকর এবং পৃথিবীর ইতিহাসেরই তৃতীয় ভয়ংকরতম শিল্প দুর্ঘটনা রানা প্লাজা ধস। প্রায় ১২০০ মানুষের মৃত্যু আর প্রায় অসংখ্য নিখোঁজ মানুষের (যাঁরা বেঁচে নেই নিশ্চয়ই) প্রাণের মূল্যে কি এই দেশের অন্তত তৈরি পোশাকশিল্পের কর্মীদের জন্য একটা ভালো নিরাপদ কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারত? আমি বিশ্বাস করি না। বড়জোর একটি ‘উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি’ গঠিত হতো এবং তারপর আর সব তদন্ত কমিটির মতো সেটিও হারিয়ে যেত বিস্মৃতির অতলে। খাতটি চলত একইভাবে। কিন্তু দেশের এই সেক্টরের শ্রমিকদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল গার্মেন্টসের পশ্চিমা ক্রেতাদের চাপ।
পশ্চিমা দুটি সংস্থা অ্যাকর্ড অ্যালায়েন্সের তত্ত্বাবধানে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ নানা কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে বাধ্য হন গার্মেন্টসমালিকেরা। ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য এ ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না তাঁদের সামনে। শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করায় যে বিনিয়োগ করতে হয়, সেটা করলে বাংলাদেশের গার্মেন্টস ব্যবসা লাভজনক থাকবে না, এমন একটি কথা মালিকদের পক্ষ থেকে আকারে-ইঙ্গিতে বলা হতো। কিন্তু সেটাকে মিথ্যা প্রমাণিত করে গার্মেন্টস ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠছে।
দেশের অনেক খাত যেহেতু রপ্তানিতে তেমন বেশি জড়িত নেই, তাই সেসব খাতে হয়নি উল্লেখযোগ্য কোনো কাজ। এই যে বছরখানেক আগেই ভবনে নানা রকম ত্রুটি থাকা সেজান জুস কারখানায় আগুন লেগে ৫৩ জন মানুষ পুড়ে কয়লা হলো, সেটার কোনো প্রভাব কি পড়েছে দেশীয় বাজারকে লক্ষ্য করে তৈরি হওয়া শিল্পগুলোর ওপর? পরিস্থিতি বলছে, এসব খাতের শ্রমিকদেরও রক্ষা করার জন্য পদক্ষেপ নেবে না সরকার, কারণ বিদেশিদের চাপ নেই। ঠিক এ কারণেই বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের সময়েই দুই–দুইবার বীভৎস অগ্নিকাণ্ড ঘটার পরও পুরান ঢাকার রাসায়নিক গুদাম স্থানান্তর নিয়ে নানা গড়িমসিই দেখেছি আমরা, কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নয়।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি করার সময় দেশের সব মহল থেকে আইনটির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ হয়েছে। স্বাধীন সাংবাদিকতাকে জটিল এবং অনেক ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে বলে রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত সাংবাদিক সংগঠনগুলো এবং সম্পাদকেরা এ ক্ষেত্রে অন্তত একমত হয়েছিলেন। দেশের নাগরিক সমাজ, মানবাধিকার সংগঠন, সুশাসন নিয়ে কাজ করা এনজিও—সবাই একই সুরে প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু হয়নি কিছুই।
বছরের পর বছর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে অতি অনমনীয় সরকার হঠাৎ সুর পাল্টে ফেলল কিছুদিন আগে। এই আইনে সাংবাদিকদের তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার না করার কথা ঘোষণা করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলে তাঁকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করা যাবে না। তাঁকে সমন দিতে হবে। মামলা হওয়ার পর সাংবাদিক আদালতে জামিন চাওয়ার সুযোগ পাবেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করা শুরুর পর ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করে গেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বৈশ্বিক মানবাধিকার সংস্থা, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের মতো সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান এবং পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ। সঙ্গে যুক্ত ছিল জাতিসংঘ। এতেই টনক নড়েছে সরকারের। সরকারের আইনমন্ত্রী এখন স্বীকার করছেন, এই আইনের ‘অপপ্রয়োগ’ হয়েছে এবং এই আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা পুনর্বিবেচনা এবং সংশোধনের জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে তাঁরা কাজ করছেন।
একটা উদার গণতান্ত্রিক দেশে নাগরিকদের চাপ সরকারকে অনেক পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করে। কিন্তু অগণতান্ত্রিক বা কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলোর কাছে দেশের নাগরিকদের চাপকে আমলে নেওয়ার প্রয়োজন ফুরিয়ে যায় কিংবা অনেক কমে যায় বলেই তাদের কাছে বহির্বিশ্বই একমাত্র চাপ হয়ে দাঁড়ায়। তাই তারা সেটাকে নাকচ করতে চায় ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ’ বলে।
আইনটি সংশোধনের আগেই সাংবাদিকদের ওপর এ মামলার ব্যাপারে নেওয়া পদক্ষেপ নিয়ে খুব গুরুতর প্রশ্ন আছে। কারণ, পুলিশ ও সরকারের ইচ্ছায় একটা আইন চলবে, এটা দেশের আইনের শাসনের গুরুতর লঙ্ঘন। তবু এটুকু বলতে চাই, আইনের এই ব্যত্যয়টুকুও তারা করছে বৈদেশিক চাপে পড়ে। এই আইন নিয়ে সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, সেটা রাষ্ট্রের জনগণকে জানানোর প্রয়োজন বোধ না করলেও অনেক পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকদের সামনে আইনমন্ত্রী ব্রিফিং করে তাঁদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন।
র্যাব এবং এর কিছু কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। নিষেধাজ্ঞার পর দুইটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ব্যতিক্রম বাদ দিলে এই ঘটনা আর ঘটেনি। এর আগে কক্সবাজারে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদের হত্যাকাণ্ডের আগের দুই বছর বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে একজনের বেশি মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হতেন। তাহলে আমরা সহজেই হিসাব করতে পারি, এক মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এখন পর্যন্ত কত মানুষকে এই বীভৎস হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। যেসব মানুষকে এই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটানো বন্দুকের মুখে দাঁড়াতে হয়, তাঁদের দিক থেকে নিষেধাজ্ঞাটা কি ঐশী পদক্ষেপ বলে মনে হওয়ার কথা নয়?
একটা উদার গণতান্ত্রিক দেশে নাগরিকদের চাপ সরকারকে অনেক পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করে। কিন্তু অগণতান্ত্রিক বা কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলোর কাছে দেশের নাগরিকদের চাপকে আমলে নেওয়ার প্রয়োজন ফুরিয়ে যায় কিংবা অনেক কমে যায় বলেই তাদের কাছে বহির্বিশ্বই একমাত্র চাপ হয়ে দাঁড়ায়। তাই তারা সেটাকে নাকচ করতে চায় ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ’ বলে।
চীনের শিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের ওপরে বছরের পর বছর ধরে চলছে ভয়ংকর নিপীড়ন, যাকে অনেকে গণহত্যা বলছেন। যখনই পশ্চিমা দেশগুলো এমনকি জাতিসংঘ এটা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে গেছে, তখনই চীন এটাকে জঙ্গিবাদবিরোধী শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের প্রক্রিয়া বলে ব্যাখ্যা দেয়। এ ব্যাপারে পশ্চিমাদের চাপকে এড়ানোর জন্য ইস্যুটি তাদের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলেও এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তারা। ওদিকে সম্প্রতি ভারতও একই কারণ দেখিয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নানা রকম ধর্মীয় বঞ্চনা-নিপীড়ন এবং তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা কমে আসা নিয়ে প্রকাশিত মার্কিন রিপোর্টটিকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ’ তত্ত্ব ব্যবহৃত হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও। ভারতের বাংলাদেশের শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করাসহ অনেক বিষয়কেই তৎকালীন পাকিস্তান সরকার পাকিস্তানের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ’ বলে তীব্র বিরোধিতা করেছিল। বলা বাহুল্য, সে সময়ের বিশ্বেও পাকিস্তানের এই দাবি বেশির ভাগ জায়গাতেই ধোপে টেকেনি।
আমরা পছন্দ করি বা না করি, বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় কিছু বিষয়কে কোনো দেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে উড়িয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পৃথিবী কতগুলো আন্তর্জাতিক আইন এবং রীতিনীতি দিয়ে পরিচালিত হওয়ার কথা। এই ব্যবস্থায় নানা দিকে গুরুত্বপূর্ণ স্খলন আছে নিশ্চয়ই, কিন্তু সেই স্খলন দেখিয়ে ব্যবস্থাটিকেই বাতিল করার চিন্তা কি যৌক্তিক?
গত কয়েক বছরে এক নতুন ধরনের বিশ্বব্যবস্থা কায়েমের চেষ্টা করা হচ্ছে চীনের নেতৃত্বে (সঙ্গে ‘মাইনর পার্টনার’ হিসেবে রাশিয়া)। কোনো দেশের মানবাধিকার, গণতন্ত্র, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, দুর্নীতিসহ সব ‘অভ্যন্তরীণ’ বিষয়ে তারা কোনো প্রশ্ন করে না। তারা যেকোনো দেশের যেকোনো ক্ষমতাসীন সরকারকে সমর্থন দিয়ে থাকে বাণিজ্যিক ও ভূরাজনৈতিক সুবিধা দেওয়ার বিনিময়ে। শুধু এই দুই সুবিধাপ্রাপ্তিতে সমস্যা হলেই তারা সরকারগুলোকে চাপ দেয়। বলা বাহুল্য, এর কারণ হচ্ছে চীন এবং রাশিয়ার ‘অভ্যন্তরীণ’ বিষয় নিয়েই আছে গুরুতর সব প্রশ্ন।
কোনো দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন, নির্বাচন, দুর্নীতি কিংবা মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কোনো শক্তিশালী দেশ যখন চাপ প্রয়োগ করে, তখন নিশ্চিতভাবেই এর পেছনে তার নিজস্ব স্বার্থ থাকে। তাই নানা ক্ষেত্রে তাদের অনেক চাপ দুর্বল দেশটির জনগণের স্বার্থের বিপরীতেও যায়। কিন্তু আমাদের খুঁজে দেখতে হবে, কোন কোন ক্ষেত্রে শক্তিশালী দেশের স্বার্থের সঙ্গে আমাদের জনগণের চাওয়া ও স্বার্থ মিলে গিয়ে উভয়ের জন্য উপকারী একটা ‘মিথোজীবিতা’ তৈরি হয়। ১৯৭১ সালে ভারতের ভূমিকাকে পাকিস্তানের দৃষ্টিকোন থেকে ছিল ‘অভ্যন্তরীণ’ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং সেখানে ভারতের নিজের ভূরাজনৈতিক স্বার্থের বিবেচনা কাজ করেছে। কিন্তু তা আমাদের জনগণের স্বার্থ ও চাওয়ার পক্ষে যাওয়ায় আমরা ভারতের ভূমিকাকে সানন্দে গ্রহণ করেছি।
শেষ কথা, কোনো দেশের (বিশেষ করে গণতন্ত্রহীন) শাসক এবং তাঁর আনুকূল্য পাওয়া গোষ্ঠীর (অলিগার্ক) স্বার্থ আর সেই দেশের নাগরিকদের স্বার্থ প্রায় সব সময়ই ভিন্ন হয়। তাই দেশপ্রেমের ভান করে বলা কোনো কথা খুব সহজে বিশ্বাস করার বিষয়ে জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, প্রায় সব ক্ষেত্রেই সেসব কথা বলা হয়, শাসক গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায়, জনগণের স্বার্থ রক্ষায় নয়।
ডা. জাহেদ উর রহমান ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনির্ভাসিটি বাংলাদেশের শিক্ষক