দুই শক্তির টানাপোড়েনে অন্যদের ক্ষতি

চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যে দ্বন্দ্বের সূচনা করেছিল, তা এখন বেড়েই চলেছে। কোভিড-১৯–এর আবির্ভাবের আগেই এই দুটি দেশের বৈরিতা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ছিল। দুই দেশের এই চাপা উত্তেজনাকর পরিস্থিতিকে কেউ বলছেন ‘নিউ কোল্ড ওয়ার’ বা নতুন শীতল যুদ্ধ, কেউ এটিকে একটু হালকা মেজাজে নিয়ে বলছেন ‘স্কোল্ড ওয়ার’ বা ‘দোষ চালাচালির লড়াই’। কেউ আবার বলছেন ‘ভূরাজনৈতিক টার্নিং পয়েন্ট’।   

এই দুই ক্ষমতাধর দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। ফলে বিশ্বরাজনীতির অঙ্গনে এই প্রশ্ন ওঠা খুবই স্বাভাবিক যে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বিবাদের কারণে বাকি দেশগুলোর অবস্থান কেমন হবে? তাদের টানাটানির কারণে কি তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত দেশগুলোর রাজনীতি ও অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে? চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের এই বৈরী সম্পর্ক কাটিয়ে উঠতে এই দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে কি আবার ঢেলে সাজাতে হবে, নাকি বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে ধরা চিড় মেরামত করলেই পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাবে?  

আসলে সময় যত পার হতে থাকবে, এসব প্রশ্নের জবাব তত স্পষ্ট হতে থাকবে। আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প আসছেন কি না, তার ওপর চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের অনেক কিছু নির্ভর করছে। তবে এটিও ঠিক ট্রাম্প প্রথম থেকেই মার্কিন জনগণের ধারণায় অত্যন্ত সফলভাবে চীনবিরোধিতা ঢুকিয়ে দিতে পেরেছেন। ট্রাম্প তাঁর কাজ ও কথাবার্তা দিয়ে আমেরিকার জনগণকে বুঝিয়েছেন, চীন আর্থিক ও কৌশলগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। ডেমোক্র্যাট শিবিরও তাই মনে করে। ফলে জো বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হলেও আমেরিকার চীন নীতিতে খুব একটা হেরফের হবে না। 

চীন চায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার সম্পর্ক স্থিতিশীল থাকুক। উত্তেজনা যত কমবে, তার তত বেশি লাভ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চীনের লেনদেন থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক উন্নয়নে তারা ভূমিকা রাখতে পারত। কিন্তু হংকং ইস্যুতে চীনের সাম্প্রতিক অবস্থান ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সে বিষয়ে ভূমিকা রাখতে দিতে পারছে না।  

ট্রাম্প একের পর এক চীনের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য দিলেও চীনের নেতারা বিচক্ষণতার সঙ্গে চুপচাপ থাকছেন। শুধু যখন চীন মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করছে এবং তা বিশ্বকে ভুল বার্তা দিচ্ছে, তখনই তারা যুক্তরাষ্ট্রের জবাব দিচ্ছে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনকে নতুন একটি শীতল যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তবে একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়কেই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সংঘাতে উভয়ের ক্ষতি আর তাদের মৈত্রীতে উভয়ের লাভ। তবে যতটুকু বোঝা যাচ্ছে ট্রাম্পের চীনবিরোধী বাগাড়ম্বর থামবে না, বরং বাড়বে। সামনে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন।

সংরক্ষণবাদে বিশ্বাসী আমেরিকান ভোটারদের টানতে হলে ট্রাম্পকে চীনবিরোধী বক্তব্য এবং চীনবিরোধী কাজ বাড়াতে হবে। এতে দুই দেশের দূরত্ব বাড়বে। দুই দেশের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা দেশগুলোর মধ্যেও তখন দুই শিবিরে ভাগ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। দিন শেষে তা বড় ধরনের বৈশ্বিক বিভক্তির সৃষ্টি করতে পারে। আর সেটি হলে নতুন শীতল যুদ্ধের সূচনা হবে। বিশেষ করে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রপন্থী ও চীনপন্থী দুটি শিবির তৈরি হবে। এটি চূড়ান্ত বিচারে এই অঞ্চলের জন্য মোটেও ভালো হবে না। 

ডন থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনূদিত

মালিহা লোদি পাকিস্তানের সাংবাদিক