একই কথা বারবার বলা বিরক্তিকর, শোনাও। কিন্তু ‘শোনা উল্লাহ’রা যখন বধির থাকেন, ‘বকা উল্লাহ’দের বকে যেতেই হয়।
একই কথা বলছি শুরু থেকে। একেবারে আইনের খসড়া থেকে সংসদে পাস হওয়া পর্যন্ত। এমনকি সংসদে আইনটি পাস হওয়ার পরেও। বলেছি: আজকের পৃথিবীতে প্রযুক্তি যেমন আমাদের জন্য তথ্যের সব ভান্ডার উন্মুক্ত করেছে, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু সমস্যাও তৈরি করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি যেমন তথ্য জগতে সবার জন্য অবারিত করেছে, তেমনি এর অপব্যবহারের সুযোগ নিচ্ছে দুর্বৃত্ত দল। কিন্তু কিছু দুর্বৃত্তের জন্য এমন অবারিত সুযোগ যেমন সীমিত করা যায় না, তেমনি দুর্বৃত্তদের অবাধ বিচরণভূমি করা যায় না এই পৃথিবীকে।
এ বছরের গোড়ার দিকে সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য: দেশে সাইবার অপরাধ বেড়ে চলছে। ই-মেইল আইডি হ্যাক, ফেক আইডি তৈরি করে ব্ল্যাকমেল করা, যৌন হয়রানি, মোবাইল ব্যাংকিং জালিয়াতি ও অন্যান্য হয়রানির শিকার হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। প্রথম আলোর মতো পত্রিকার মাস্টহেড বসিয়ে নকল প্রথম আলোও তৈরি করা হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে: ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের কাছে ২০১৮ সালে এ ধরনের সরাসরি ১ হাজার ৭৬৫টি অভিযোগ আসে। এ ছাড়া হ্যালো সিটি অ্যাপস, ফেসবুক, মেইল ও হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে অভিযোগ আসে ৬ হাজার ৩০০টি। ২০১৯ সালে সরাসরি অভিযোগ আসে ২ হাজার ৯৩২টি, আর ডিজিটাল মাধ্যমে ৯ হাজার ২২৭টি। সাইবার ক্রাইম বিভাগের মন্তব্য: আগে বেশি অভিযোগ আসত নারীদের কাছ থেকে। কিন্তু এখন পুরুষেরাও সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছেন। ২০১৯ সালে মোট অভিযোগের ৫৩ শতাংশ এসেছে পুরুষদের কাছ থেকে, ৪৭ শতাংশ এসেছে নারীদের কাছ থেকে।
এই বাস্তবতা মাথায় রেখেই বলি, সাইবার অপরাধ দমনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো আইনের প্রয়োজনীয়তা আছে। তাহলে আপত্তিটি কোথায়?
তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার বেধড়ক অপব্যবহারের অভিজ্ঞতা থেকেই আপত্তি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন প্রথম করা হয় ২০০৬ সালে। পরবর্তীকালে ২০১৩ সালে শাস্তির মাত্রা বাড়িয়ে আইনটিকে আরও কঠোর করা হয়। ৫৭ ধারার যে অপব্যবহার হচ্ছিল, তা কিন্তু মন্ত্রীরাও স্বীকার করছিলেন। আশ্বাস দিয়েছিলেন, নতুন আইনে এ রকম উদ্বেগজনক কিছু থাকবে না। কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়াতেই আমরা দেখলাম: ওই ৫৭ ধারাই নানাভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে নতুন আইনে। সম্পাদক পরিষদ ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) লিখিতভাবে এবং টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন মৌখিকভাবে তাদের দফাওয়ারি আপত্তি মন্ত্রণালয়ে জানায়। শেষে সংসদীয় কমিটির সামনেও এসব যুক্তি ও আপত্তি তুলে ধরা হয়। কিন্তু সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা অসমাপ্ত রেখেই ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭, ৬৬সহ মোট ৫টি ধারা বিলুপ্ত করে সংসদে কণ্ঠভোটে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ পাস হয়।
বিলটি পাসের আগে জনমত যাচাই-বাছাই প্রসঙ্গে সে সময়কার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্র্রী এই বিল পাসের জন্য ‘নিজেকে সৌভাগ্যবান’ মনে করছেন বলে সংসদে বলেন। তাঁর মতে, পৃথিবীর বহু দেশ এই আইন অনুসরণ করবে। আইনটি পাসের কয়েক মাসের মধ্যেই বিশ্বের গণমাধ্যম স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশ কয়েক ধাপ নিচে নেমে যায়। ২০০৯ সালের তথ্য অধিকার আইন এবং ২০১১ সালের জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশকারীকে আইনগত সুরক্ষা প্রদান–সংক্রান্ত আইনের মাধ্যমে তথ্যকে অবারিত করার ইতিবাচক অর্জনটি হঠাৎ থমকে দাঁড়ায়। কারও ‘ব্যক্তিগত সৌভাগ্য’ সুরক্ষার জন্য দেশের বারোটা বাজানোর এমন নজির খুব বেশি নেই!
মনে করিয়ে দিই: ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর যেদিন সড়ক পরিবহন আইনটি জাতীয় সংসদে পাস হয়, সেদিনই সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটিও পাস হয়। আজ পর্যন্ত দফায় দফায় চেষ্টা করেও সরকার সড়ক পরিবহন আইনটি কার্যকর করতে পারেনি। অন্যদিকে এ বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের কাছে জানতে চেয়েছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫ ও ৩১ ধারা কেন সংবিধানবিরোধী হবে না। চার সপ্তাহের মধ্যে জবাব চাওয়া হলেও আজ পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি জানা যায়নি। কিন্তু কোনো বিধিমালা ছাড়াই প্রস্তাবিত কর্তৃপক্ষ গঠন ছাড়াই আইনটির প্রয়োগ শুরু হয়ে গেছে, অপপ্রয়োগও হচ্ছে। হাতে ছড়ি থাকলে তো ঘোরাতেই হবে। হাতে ডান্ডা থাকলে সেটি ব্যবহার না করলে ডান্ডার মালিকের ইজ্জত থাকে কোথায়!
সর্বশেষ তথ্য হচ্ছে: চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এই আইনে ৬০টি মামলা হয়েছে শতাধিক ব্যক্তির নামে। তাঁদের মধ্যে সাংবাদিক রয়েছেন ২২ জন।
এই আইনের সঙ্গে সরাসরি বাক্ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সম্পর্কের জায়গা হলো মূলত তিনটি:
১. চিন্তা ও বিবেকপ্রসূত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা।
২. পেশাদার সাংবাদিকদের কাজ করার জন্য ভীতিহীন পরিবেশ।
৩. অপতথ্য দিয়ে উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা নিয়ন্ত্রণ।
মোটা দাগে তিনটিই মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে সম্পর্কিত। যোগাযোগবিজ্ঞানের একটা স্বাভাবিক পরামর্শ: তথ্যের যুদ্ধে একমাত্র অস্ত্র হচ্ছে তথ্য। অপতথ্যের বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য নিয়ে যুদ্ধে নামাই একমাত্র কৌশল। তথ্যের যুদ্ধে আর কোনো অস্ত্র নেই।
চিন্তা ও বিবেকপ্রসূত লড়াইয়ে যুক্তি ও মেধা নিয়েই প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করতে হবে। আজকের পৃথিবী জ্ঞানভিত্তিক পৃথিবী। জ্ঞানের লড়াইয়ে মাঠে নামতে হবে পর্যাপ্ত, যুক্তিগ্রাহ্য জ্ঞান নিয়েই। কি সরকারে, কি দলে, কি প্রশাসনে—বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষের অনুপস্থিতি দল ও সরকারকে দুর্বল করবে। এই দুর্বলতা নিয়ে যুদ্ধ জয় করা অসম্ভব, কণ্ঠ যত উঁচুই হোক না কেন।
দ্বিতীয়ত, পেশাদার সাংবাদিকতা। সাংবাদিকেরা কাজ করেন নির্দিষ্ট ব্যাকরণ, নৈতিকতা ও দায়িত্বশীলতা মেনেই। তবে তাৎক্ষণিক তথ্য নিয়ে কাজ করতে হয় বলে ভুল স্বীকার, দুঃখ প্রকাশ, ক্ষমা প্রার্থনা এমনকি খবর প্রত্যাহার করার বিষয়টি সাংবাদিকতার সঙ্গে হাত ধরাধরি করে চলে। সাংবাদিকদের কাজে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তাঁকে ভুল স্বীকার করার সুযোগ দিতে হবে, সংশোধনী দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। যতই ক্ষুব্ধ হোন না কেন, এই প্রচলিত রীতি মানতেই হবে। সেই সুযোগ না দিয়ে সাংবাদিকের কোমরে দড়ি বাঁধা কোনো যুক্তির কথা নয়।
সবচেয়ে আশঙ্কার অংশ যেটি, তা হচ্ছে উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা। এর কোনো ব্যাকরণ নেই। কোনো বিষয়ে বা কারও বিষয়ে লাগতে হবে সেটাই একমাত্র লক্ষ্য। তথ্যের যাচাই–বাছাই নেই, কোনো নীতি–নৈতিকতার বালাই নেই, ভাষা বা প্রকাশে কোনো রুচির বালাই নেই। একমাত্র কাজ হচ্ছে উদ্দেশ্য হাসিল। এরা হচ্ছে অপতথ্যের বাহক। আবর্জনা পরিষ্কার করা যেমন জরুরি, অপতথ্যের এই আবর্জনা অপসারণ জরুরি। এই আবর্জনা দেশেই থাকুক কিংবা বিদেশে। বাংলাদেশে বসে যে বিদেশি রাষ্ট্রদূতেরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলেন, সঠিক ও পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ দিয়ে তাদের বলা উচিত: আপনাদের দেশে বসে কেউ কেউ আবর্জনা ছড়াচ্ছে। সেই দুর্গন্ধ এ দেশে আসছে নানা প্রযুক্তি বাহিত হয়ে। হয় তাদের আপনারা বিচার করুন বা না হয় এদের আমাদের হাতে তুলে দিন। আপনারা আমাদের বন্ধুপ্রতিম হলে আপনার ভূখণ্ড তো আমাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যবহৃত হতে পারে না। কিন্তু আবারও বলি, অপতথ্যের বিপরীতে হাতে থাকতে হকে সঠিক ও পর্যাপ্ত তথ্য।
এই জায়গাটিতে আরেকটি কাজ জরুরি। অনলাইন গণমাধ্যম আইনটি পাস হয়ে আছে। কিন্তু এই আইনে অনলাইন গণমাধ্যমের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াটি স্থবির হয়ে আছে। ফলে অনলাইনের নামে যা খুশি তা–ই হচ্ছে। রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে এখানে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব হবে।
দেশের গণমাধ্যমকর্মীরা কী চান
সংবাদমাধ্যমকর্মীরা ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে যারা অপরাধ করে, আবর্জনার দুর্গন্ধ যারা ছড়ায়, তাদের নিয়ন্ত্রণ বা দমনের জন্য কঠোর আইন চান। তবে সেই আইনের অপপ্রয়োগ যাতে স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি চোখ রাঙিয়ে ভীতি না ছড়ায়, তারও নিশ্চয়তা চান। পেশাদার সংবাদকর্মীরা পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সুরক্ষা চান।
কীভাবে এই চাওয়া সুনিশ্চিত করা যায়
এমন একটি পদ্ধতি বের করা, যাতে একজন সংবাদকর্মীর কোনো কাজ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তাঁর হাতে হাতকড়া পরানোর আগে বিষয়টি নিবিড়ভাবে দেখা হয়। বিষয়টি কি ভুল, নাকি উদ্দেশ্যমূলকভাবে উসকানি বা বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য করা হয়েছে, তা দেখা জরুরি। বিষয়টি যদি স্রেফ পেশাগত ভুল হয়, তাহলে সব সুযোগ দেওয়ার পরও যদি সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি চান, তাহলে মামলাও হতে পারে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে গ্রেপ্তার নয়, সমন জারিই হোক গ্রহণযোগ্য পন্থা। আর যদি দেখা যায়, অপতথ্য দিয়ে, সাংবাদিকতার কোনো নীতিমালা না মেনে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সাংবাদিকতাকে ব্যবহার করা হয়েছে, তাহলে সেটি হবে তাঁর ব্যক্তিগত দায়। এই দায় তাঁকে বহন করতে হবে। কারও ব্যক্তিগত অপরাধের দায় পেশাদার সাংবাদিকেরা নেবেন না। এ ক্ষেত্রে প্রেস কাউন্সিল একটা ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ, সেখানে সংসদ সদস্য, সম্পাদক, সাংবাদিক ও মালিক প্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা এবং বুদ্ধিজীবীরাও আছেন।
প্রশ্ন উঠতে পারে: এ ধরনের একটি আইনের ভিন্ন ভিন্ন প্রয়োগের নজির কি আছে? সাংবাদিকেরা কেন বিশেষ সুবিধা পাবেন?
জবাব হচ্ছে, পারে, নজির আছে। তিনটি উদাহরণ দিই।
প্রথম উদাহরণ: ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫০১ ও ৫০২ ধারায় কোনো মামলা হলে অন্য সবার মতো সাংবাদিকদেরও তাঁদের অফিস বা বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার বিধান ছিল। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে তাঁর জনশক্তিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী আতাউদ্দিন খানের এক মামলায় দৈনিক সংবাদ–এর প্রবীণ সাংবাদিক জহুর হোসেন চৌধুরীকে মধ্যরাতে কোমরে দড়ি বেঁধে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে জনকণ্ঠের সম্পাদক আতিকউল্লাহ খান মাসুদ, উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খানসহ আরও কয়েকজনকে এ পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। এই অভিজ্ঞতায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন কোনো সাংবাদিকের নামে ৫০১/৫০২ ধারায় মামলা হলে তাঁকে সরাসরি গ্রেপ্তার করা যায় না। সমন জারি হয়, তিনি কোর্টে হাজিরা দিয়ে আইনি লড়াই করেন।
দ্বিতীয় উদাহরণ: ২০০৬ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার অপপ্রয়োগ নিয়ে সাংবাদিকেরা যখন অতিষ্ঠ; তখন তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর শরণাপন্ন হন। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে। মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমাধান আসে। নির্দেশনা জারি হয়, সংবাদকর্মী বা গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে ৫৭ ধারা প্রয়োগের বেলায় পুলিশ সদর দপ্তরের অনুমোদন নিতে হবে। এতে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারার অপপ্রয়োগ প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে।
তৃতীয় উদাহরণ: দুর্নীতি দমন আইন সংশোধন করে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। নিশ্চিত করা হয়েছে, দুর্নীতির জন্য কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করতে হলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি নিতে হবে।
তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অন্য অনেক বিষয় নিয়ে উদ্বেগ রয়েই গেছে। আইনটি পাসের পর আমরা যে বক্তব্য দিয়েছিলাম, তা এখানে তুলে ধরছি। জাতীয় সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করা, এই আইন প্রণয়নকালে সংসদে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর বক্তব্য এবং সংসদীয় কমিটির পেশকৃত রিপোর্ট সম্পর্কে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে আলোচনায় অংশগ্রহণকারী গণমাধ্যমের প্রতিনিধি সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম, অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের (অ্যাটকো) সহসভাপতি মোজাম্মেল বাবু এবং বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুলের যৌথ বক্তব্য: ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে জানাচ্ছি যে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি আমাদের সঙ্গে প্রতিশ্রুত চূড়ান্ত বৈঠক না করেই, জাতীয় সংসদে তাঁদের সুপারিশ একতরফাভাবে উপস্থাপন করেছেন। ফলে এই সুপারিশে সাংবাদিক সমাজের মতামত যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি। আমাদের সুপারিশের কিছু কিছু বিষয় এই আইনে সংযোজন করা হলেও:
১. গণমাধ্যমকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়নি।
২. তথ্য অধিকার আইন ও অফিশিয়াল সিক্রেট আইনের পাশাপাশি অবস্থান নিশ্চিত করে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে।
৩. পুলিশকে অবাধে ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ দিয়ে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করার পথ সুগম করা হয়েছে।
অতীত অভিজ্ঞতা থেকে আমরা এই আইনের অপপ্রয়োগের বিষয়টি নিয়েও উৎকণ্ঠিত। উল্লিখিত সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা:
১. দ্রুত এই আইনের অসামঞ্জস্যসমূহ দূর করার অনুরোধ জানাই।
২. এই আইনের অপপ্রয়োগ করে যাতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রকে সংকুচিত করা ন হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করার দাবি জানাই।
৩. গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবি জানাই।
আমরা মনে করি, এই আইন কার্যকর করার ক্ষেত্রে বিধিমালা প্রণয়নের বেলায় আলোচনা করে উল্লিখিত সকল অসামঞ্জস্য দূর করে আইনটি সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য করার সুযোগ রয়েছে।’
এসব প্রস্তাব ও পরামর্শ সবই উপেক্ষিত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে আইনের বেধড়ক ব্যবহার আমাদের আশঙ্কাকে সত্য প্রমাণিত করেছে। মনে করি, সাংবাদিক সমাজের প্রতিনিধিদের বক্তব্য এখনো বিবেচনায় নেওয়া যায়।
মনজুরুল আহসান বুলবুল: সাংবাদিক