চেচনিয়ার গণহত্যাকারী পুতিনের পক্ষে কেন চেচেন আর্মি?

রাশিয়ার ইউক্রেন অভিযানে রুশ বাহিনীর সহযোগী হিসেবে লড়ছে রমজান কাদিরভের চেচেন আর্মি।
ছবি: রয়টার্স

ভ্লাদিমির পুতিনের প্রকাশ্য সমালোচনা করলে সমালোচনাকারী রাশিয়ার ভেতরেই থাকুন বা পালিয়ে রাশিয়ার বাইরে যেখানেই যান, সেখানেই তাঁর ‘দুর্ঘটনায়’ কিংবা ‘খাদ্যের বিষক্রিয়ায়’ কিংবা ‘দুর্বৃত্তের’ গুলিতে মারা যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

সেভাবেই ২০১৫ সালে মস্কোয় গুলি খেয়ে মরতে হয়েছিল পুতিনের কট্টর সমালোচক বরিস নেমেৎসেভকে। নব্বইয়ের দশকে বরিস ইয়েলেৎসিন সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। তিনি ২৭ ফেব্রুয়ারি একটি জনসভায় পুতিনবিরোধী আন্দোলনে জনগণকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়ে বাসায় ফিরছিলেন। পথে তাঁর স্ত্রীর সামনেই তাঁকে গুলি করে হত্যা করেন দুর্বৃত্তরা।

নেমেৎসেভ প্রভাবশালী রাজনীতিক ছিলেন। তাই তদন্ত করার বিষয়ে সরকারের ওপর জনগণের চাপ ছিল। এই হত্যায় জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হলো। পাঁচজনের সবাই উত্তর ককেশাস অঞ্চলের বংশোদ্ভূত। এদের একজনের নাম জাউর দাদায়েভ।

রাশিয়ায় যখন উদারপন্থী ও পুতিনবিরোধীরা নেমেৎসেভের মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন, ঠিক তখন এক চেচেন নেতা জাউর দাদায়েভকে প্রশংসায় ভাসিয়ে দিলেন। হত্যা করে দাদায়েভ কাজের কাজ করেছেন বলে তিনি বাহ্বা দিলেন। বললেন, দাদায়েভ রাশিয়ার প্রতি নিবেদিতপ্রাণ, তিনি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একটি মহান কাজ করেছেন।

এই বক্তব্য দেওয়ার পরদিনই পুতিন ওই চেচেন নেতাকে রাশিয়ার সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক ‘অর্ডার অব অনার’ দেন। তিনি ‘হিরো অব রাশিয়া’ এবং ‘হিরো অব অনার’ শীর্ষক আরও দুটি রুশ পদক আগেই পুতিনের কাছ থেকে পেয়েছিলেন।

রমজান কাদিরভ: পুতিনের একজন ‘অ্যাটাক ডগ’

পুতিন ও রমজান, দুজনের মধ্যে কয়েক দশকের বোঝাপড়া রয়েছে।

পুতিনের আশীর্বাদধন্য এই নেতার নাম রমজান কাদিরভ। তিনি রাশিয়ার নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণে থাকা চেচেন প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট। চেচনিয়ায় তাঁর কথাই শেষ কথা। ২০০৭ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার অনেক আগেই রমজান কাদিরভ নিজের একটি মিলিশিয়া বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। বাহিনীটির নাম ‘কাদিরভৎসি’।

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে রমজান কাদিরভকে বাংলাদেশের মানুষ খুব একটা চিনত না। তবে রাশিয়া, ইউক্রেন, চেচনিয়া, দাগেস্তানসহ গোটা ককেশাস অঞ্চলে তাঁর নাম জানে না, এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না।

পুতিন যেমন মার্শাল আর্ট চর্চা করেন, জুডো-কারাতেসহ নানা রকম শারীরিক কসরত করেন, দানবাকৃতির ভালুকের পিঠে চড়ে ছবি তোলেন, নানা ধরনের অ্যাডভেঞ্চার করতে ভালোবাসেন, রমজান কাদিরভও এসব পছন্দ করেন। তিনিও চিতা বাঘ কোলে নিয়ে ছবি তোলেন, কারাতের চর্চা করেন। পুতিনের এই যথার্থ ভাবশিষ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও একজন সেলিব্রিটি। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে কয়েক মিলিয়ন ফলোয়ার তাঁর। অবশ্য সম্প্রতি ফেসবুক তাঁর অ্যাকাউন্ট স্থগিত করেছে।

রুশ বাহিনী ইউক্রেনে হামলা শুরু করার দুই দিন পরই রমজান সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে ঘোষণা করেছিলেন, তাঁর বাহিনী প্রেসিডেন্ট পুতিনের সমর্থনে ইউক্রেনে অভিযানে যাচ্ছে। গত ১৪ মার্চ তিনি একটি ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়েছিলেন। তাতে একটা বিশাল ঘরে অনেক চেচেন যোদ্ধার মধ্যে তাঁকে দেখা যায়। তিনি সেখানে বলেন, তাঁরা কিয়েভের খুব কাছে চলে এসেছেন। তাঁরা বহু ইউক্রেনীয় সেনাকে হত্যা করেছেন। পুতিন রমজান কাদিরভের বীরত্বে বিরাট খুশি। তিনি এই দফায় একধাক্কায় রমজানকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে দিয়েছেন।

কাদিরভের নেতৃত্বে চেচেন বাহিনী যে এই প্রথম রুশ সেনাদের সহযোগী বাহিনী হিসেবে যুদ্ধ করছে, তা নয়। এর আগে ২০০৮ সালে জর্জিয়ায়, ২০১৪-১৫ সালে ইউক্রেন সংঘাতের প্রথম দফায় এবং সিরিয়ার যুদ্ধে পুতিনের হয়ে কাদিরভৎসিরা জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছেন।

ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চেচেন যোদ্ধাদের ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দিয়ে ইউক্রেনের যুদ্ধে লড়াই করতে দেখা যাচ্ছে। অনেক ভিডিওচিত্রে দেখা যাচ্ছে, চেচেন যোদ্ধারা লড়াই চলাকালে নামাজ পড়ছেন এবং রুশ সেনারা তাঁদের পাহারায় রয়েছেন।

চেচেনরা যোদ্ধারা কোন পক্ষে? গোলকধাঁধার প্রশ্ন

এসব দৃশ্য দেখে স্বাভাবিকভাবেই অনেকে ধন্দে পড়ে যাচ্ছেন। তাঁদের মনে প্রশ্ন জাগছে, যে পুতিনের বাহিনী ১৯৯৯-২০০০ সালে দ্বিতীয় চেচনিয়ার যুদ্ধে চেচনিয়ার রাজধানী গ্রোজনিকে প্রায় মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছিল; যে রুশ বাহিনী কয়েক লাখ চেচেন মুসলমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল এবং সেখানে ধর্ষণ, নির্যাতনসহ ইতিহাসের জঘন্যতম মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছিল, আজ সেই পুতিনের জন্য, সেই রুশ বাহিনীর সঙ্গে একজোট হয়ে সেই চেচেনরা ইউক্রেনে যুদ্ধ করে যাচ্ছে কেন?

অন্যদিকে খবর পাওয়া যাচ্ছে, রমজান কাদিরভের চেচেন বাহিনী এবং রুশ হানাদার বাহিনীকে প্রতিহত করতে ইউক্রেনে চেচেন ও তাতার মুসলমানদের আরেকটি দল লড়াই চালাচ্ছে। তার মানে রমজান কাদিরভের হয়ে যে চেচেনরা লড়াই করছেন, তাঁরাই একমাত্র চেচেন না। রমজান কাদিরভের চেচেন বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে আরও অন্তত দুটি চেচেন গ্রুপ। তারা ইউক্রেনের পক্ষে লড়ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, ইউক্রেনের হয়ে কেন লড়ছে তারা?

এই সব প্রশ্ন অনেকের মাথায় আসছে। এর জবাব দু-এক কথায় সম্ভব নয়। এর সম্পূর্ণ জবাব খুঁজতে আমাদের ফিরে যেতে হবে অষ্টাদশ শতকের ককেশাস অঞ্চলে। সেই সময়কার রাশিয়ার জার শাসনামলে।

স্বাধীন চেচনিয়ার স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মানসুর ও জার সম্রাজ্ঞী ক্যাথরিন দ্য গ্রেটের গল্প

জার সম্রাজ্ঞী ক্যাথরিন দ্য গ্রেট ও চেচেন নেতা শেখ মানসুর উসুরমা

ইউরোপ আর এশিয়ার মাঝখান দিয়ে গেছে ককেশাস পর্বতমালা। এর এশীয় ভাগের পাদদেশে আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, জর্জিয়া, চেচনিয়া, দাগিস্তান, ইংগুশেটিয়াসহ কয়েকটি দেশে হাজার বছর ধরে মুসলমানেরা বাস করে আসছে। সেই মুসলমানদের, বিশেষ করে চেচনিয়ার মুসলমানদের স্বাধীন হতে চাওয়া এবং রাশিয়ার পক্ষ থেকে তাদের বশ মানিয়ে রাখার এক সুদীর্ঘ রক্তক্ষয়ী ইতিহাসের মধ্যে আজকের যাবতীয় জটিল প্রশ্নের জবাব নিহিত আছে।

রাশিয়ার অর্থোডক্স খ্রিষ্টান জার তৃতীয় পিটারকে বিয়ে করেছিলেন পোল্যান্ড থেকে আসা প্রিন্সেস সোফি। রোমান ক্যাথলিক সোফি অর্থোডক্স খ্রিষ্টান হওয়ার পর অর্থোডক্স চার্চের পক্ষ থেকে তাঁর নাম দেওয়া হয় ক্যাথরিন। তিনিই রাশিয়ার দ্বিতীয় ক্যাথরিন (ইতিহাসে যিনি ক্যাথরিন দ্য গ্রেট নামে পরিচিত। ১৭৬২ সালে বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই ক্যাথরিন স্বামী তৃতীয় পিটারকে কৌশলে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে নিজেই জার সম্রাজ্ঞী হিসেবে নিজেকে ঘোষণা দেন। মাত্র ছয় মাস সম্রাট তৃতীয় পিটার ক্ষমতায় ছিলেন। সামরিক কর্মকর্তাদের হাত করে ক্যাথরিন তাঁকে সরিয়ে দেন। অভ্যুত্থানের সাত দিনের মাথায় ১৭৬২ সালের ১৬ জুলাই তাঁর রহস্যজনক মৃত্যু হয়। ক্যাথরিনই তাঁকে মেরে ফেলেন বলে ধারণা করা হয়।

ইতিহাসে এই প্রথম নারী জার (তাঁকে অবশ্য রাশিয়ায় অনেকে ‘ফেক জার’ বা ‘ভুয়া জার’ বলে থাকেন) ক্যাথরিন দ্য গ্রেট ক্ষমতায় এসেই সাম্রাজ্য বিস্তারে মন দেন। তাঁর রুশ বাহিনী গোটা উত্তর ককেশাস অঞ্চলের বিশাল এলাকা দখল করে সেখানে কঠোর শাসন জারি করে। তাঁর দুঃশাসনে চেচনিয়া, দাগেস্তান, ইংগুশেটিয়াসহ গোটা ককেশাস অঞ্চলের মুসলমানেরা অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। তারা মুক্তির পথ খুঁজছিল। ঠিক এই সময় চেচনিয়ায় শেখ মানসুর উসুরমা নামের একজন আধ্যাত্মিক নেতার আবির্ভাব ঘটে। তিনি শেখ মানসুর নামে বেশি পরিচিত।

শেখ মানসুরের সঙ্গে আমাদের দেশের হাজী শরীয়তুল্লাহর মিল পাওয়া যায়। ঊনবিংশ শতকে হাজী শরিয়তুল্লাহ মক্কায় পড়াশোনা শেষ করে এসে যখন দেখলেন, বৃহত্তর ফরিদপুরসহ দক্ষিণবঙ্গের মুসলমানেরা ধর্মীয় কুসংস্কারে ডুবে গেছে, ইসলামের মৌলিক জ্ঞান থেকে তারা অনেক দূরে সরে গেছে, তখন তিনি তাদের ইসলামের মূল অনুশাসনে ফিরিয়ে আনতে ইসলামের ‘ফরজ’ বা অবশ্যপালনীয় অনুশাসন চর্চার ডাক দেন। তিনি বলেন, মুসলমানেরা যেন অন্তত অবশ্যপালনীয় ‘ফরজ’ ইবাদত থেকে বিচ্যুত না হয়। এটিকেই বলা হয় ‘ফরায়েজি আন্দোলন’। এই আন্দোলন জোরদার হলে তা প্রথমে জমিদারবিরোধী এবং ক্রমান্বয়ে তা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন তথা স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপ নেয়।

প্রায় একই ধরনের ঘটনা দেখা যায় শেখ মানসুরের বেলায়। তিনি চেচনিয়ায় জন্ম নিলেও শৈশবেই পড়াশোনার জন্য দাগেস্তান চলে গিয়েছিলেন। সেখানে নকশবন্দী তরিকার একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে ফিরে আসেন। চেচনিয়ায় ফিরে এসে তিনি লক্ষ করেন, চেচেন সমাজ অতিমাত্রায় অ্যালকোহল ও তামাক সেবনে আসক্ত হয়ে পড়েছে। মুসলমানদের মধ্যে প্রাচীন প্যাগান সংস্কৃতির চর্চা এমনভাবে ঢুকে গেছে যে ইসলামের মৌলিক অনুশাসন থেকে তারা হারিয়ে যেতে বসেছে। তিনি তাঁর অনুসারীদের নিয়ে অ্যালকোহল ও তামাকবিরোধী আন্দোলন শুরু করলেন।

প্রবলভাবে জনমত গঠনের কাজ শুরু হলো। সেটি আস্তে আস্তে একটি রাজনৈতিক আদলে রূপ নিতে শুরু করল। তিনি একপর্যায়ে গোটা উত্তর ককেশাস এলাকার মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ করতে চেষ্টা করলেন।

ক্যাথরিন দ্য গ্রেটের কানে এ খবর পৌঁছাল। তিনি বুঝতে পারলেন, এখনই শেখ মানসুরকে দমন করতে হবে। তিনি রাশিয়ার সেনা পাঠালেন। তত দিনে শেখ মানসুর চেচেনদের নেতা হয়ে উঠেছেন। ১৭৮৪ সালে তিনি চেচনিয়ার আমিরুল মুজাহিদিন হিসেবে স্বীকৃত হন। তিনি রুশদের শাসন থেকে উত্তর ককেশাস অঞ্চলকে মুক্ত করতে জিহাদ ঘোষণা করেন।

১৭৮৫ সালে ৫ হাজার রুশ সেনা শেখ মানসুরকে ধরে আনতে চেচনিয়ায় অভিযান চালায়। শেখ মানসুরের গ্রাম আলদির সব বাসিন্দার সব বাড়িঘর তারা পুড়িয়ে দেয়। এরপরই মানসুরের অনুসারীদের সঙ্গে কয়েক দফা লড়াই হয়। ১৭৯১ সাল পর্যন্ত শেখ মানসুরের বাহিনী রুশ বাহিনীর সঙ্গে বিপুল বিক্রমে লড়াই চালিয়েছিল। কিন্তু ১৭৯১ সালে অটোমান দুর্গ আনাপায় শেখ মানসুর রুশ সেনাদের হাতে বন্দী হন। সেখান থেকে তাঁকে সেন্ট পিটার্সবুর্গে চালান করে দেওয়া হয়। শেখ মানসুরের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। ১৭৯৪ সালে সিলসেবুর্গ দুর্গে বন্দী অবস্থায় শেখ মানসুর মারা যান।

চেচনিয়ার রাজধানী গ্রোজনিতে বর্তমানে আখমাদ কাদিরভ স্কয়ার নামে যে ঐতিহাসিক চত্বর আছে, ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সেটির নাম ছিল শেখ মানসুর স্কয়ার। উনিশ শতকে রুশ ঔপন্যাসিক ভি আই সাবিনোভ এবং ইংরেজ ঔপন্যাসিক ই স্পেন্সার শেখ মানসুরের জীবন নিয়ে দুটি উপন্যাস লিখেছিলেন।

বর্তমানে ইউক্রেনে যে দুটি চেচেন স্বাধীনতাকামী গ্রুপ রাশিয়ার বিরুদ্ধে এবং ইউক্রেনের পক্ষে লড়ছে, তার একটির নাম শেখ মানসুর ব্যাটালিয়ন। এর নেতৃত্বে আছেন মুসলিম সেভেরোলভস্কি। আরেকটি চেচেন গ্রুপের নাম জোখার দুদায়েভ ব্যাটালিয়ন। এই গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন আদম ওসমায়েভ। ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনে রাশিয়াপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে এই দুই চেচেন গ্রুপ লড়াই করে যাচ্ছে। এই দুই গ্রুপে যেসব চেচেন যোদ্ধা রয়েছেন, তাঁরা সবাই চেচনিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট রমজান কাদিরভের বিরোধী পক্ষ। তাঁরা চেচনিয়া থেকে পালিয়ে ইউক্রেনে আশ্রয় নিয়েছেন। ইউক্রেন সরকার এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যাওয়া ওসমান কাদিরভের বিরোধীরা তাঁদের আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা দিয়ে থাকে।

চেচেন সিংহ ইমাম শামিল ও দাগেস্তানি হাজি মুরাদের বীরত্ব

লেভ তলস্তয়ের উপন্যাস ‘হাজী মুরাদ’ এর ইংরেজি সংস্করণের প্রচ্ছদ

১৮১২ সাল। ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ান বোনাপার্ট এক লাখ সেনা নিয়ে রাশিয়া আক্রমণ করলেন। সেই আক্রমণ সামাল দিতে গিয়ে উত্তর ককেশাস এলাকার দিকে জার শাসকেরা নজর দিতে পারলেন না। এ সময় চেচেনরা শক্তি সঞ্চয় করে ফেলল। তাদের মধ্যে আবার স্বাধীনতার স্পৃহা জেগে উঠল। নকশবন্দী সুফি তরিকার ইমাম আশ শামিল অষ্টাদশ শতকের দিকে এই অঞ্চলের মুসলমানদের নিয়ে পুনরায় স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য আন্দোলন শুরু করলেন।

ইমাম শামিলের বীরত্ব ও সাহসের কথা নিয়ে ককেশাস অঞ্চলে বহু গল্প প্রচলিত আছে। তাঁকে চেচনিয়া অঞ্চলের সিংহপুরুষ বলা হয়। রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাঁর এই যুদ্ধে অন্যতম সহযোগী ছিলেন তাঁর নায়েব হাজি মুরাদ। দাগেস্তান থেকে আসা হাজি মুরাদের বীরত্বগাথা নিয়ে রুশ ঔপন্যাসিক তলস্তয়ের একটি বিখ্যাত উপন্যাস আছে। উপন্যাসটির নাম ‘হাজি মুরাদ’। পরবর্তীকালে অবশ্য ইমাম শামিলের সঙ্গে হাজি মুরাদের দ্বন্দ্ব বাঁধে।

যা হোক, ইমাম শামিলও শেষ পর্যন্ত লড়েও পারেননি। তিনি ভেবেছিলেন, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও অটোমান সাম্রাজ্য তাঁকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সহায়তা দেবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা সহায়তা দেয়নি এবং ১৮৫৯ সালে শামিল আত্মসমর্পণ করেন। তখন জার দ্বিতীয় আলেকসান্দর ক্ষমতায়। শামিলকে সেন্ট পিটার্সবুর্গে আনা হয়। জারের সঙ্গে শামিলের দেখা হয়। জার তাঁকে কিয়েভের (আজকের ইউক্রেনের রাজধানী) একটি প্রাসাদে গৃহবন্দী করে রাখেন। সেখানে তাঁকে একজন বাদশাহের মর্যাদায় রাখা হয়। ১৮৬৯ সালে তাঁকে হজ করতে অনুমতি দেওয়া হয়। তিনি হজে যান এবং মক্কায়ই তাঁর মৃত্যু হয়। জান্নাতুল বাকিতে ইমাম আশ শামিলকে দাফন করা হয়।

সোভিয়েত আমল ও স্তালিনের নিষ্ঠুরতা

১৯৪৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যে চেচনিয়া ও ইয়াঙ্গুশ অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষকে সাইবেরিয়ায় তাড়িয়ে দেয় জোসেফ স্তালিনের সরকার।

তবে চেচনিয়াসহ ককেশীয় অঞ্চলের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেমে থাকেনি। পাশাপাশি তাদের ওপর রুশদের অত্যাচারও চালু ছিল।জার শাসনের অবসানের পর এল সোভিয়েত আমল। ১৯১৭ সালে বলশেভিক বিপ্লবের পর চেচনিয়াসহ আশপাশের এলাকা সোভিয়েতের অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কমিউনিস্ট নেতা জোসেফ স্তালিন মনে করতে শুরু করেন, চেচেন মুসলমানেরা হিটলারের পক্ষে কাজ করছে। এই সন্দেহের কারণে তিনি ১৯৪৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি চেচনিয়া ও ইয়াঙ্গুশ অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষকে (তাদের প্রায় সবাই ছিলেন মুসলমান) সাইবেরিয়ায় তাড়িয়ে দেন। ফেব্রুয়ারি মাসে সাইবেরিয়া অঞ্চলে তাড়িয়ে দেওয়া আর মৃত্যুর হাতে তুলে দেওয়া একই কথা। বরফের নিচে চাপা পড়ে সেখানে প্রায় দুই লাখ মুসলমানের মৃত্যু হয়। ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত এসব মানুষকে নিজ ভূমিতে ফিরতে দেওয়া হয়নি।

অথচ জার্মান সেনাদের হটিয়ে দিয়ে ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল রাত ১০টা ৪০ মিনিটে হিটলারের জার্মানির জাতীয়তার প্রতীক হিসেবে পরিচিত ‘জার্মানিয়া’ নামের নারী মূর্তির ওপর উঠে সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পতাকা টাঙিয়েছিলেন যে দুজন, তাঁরা ছিলেন ককেশীয় মুসলমান। তাঁদের একজনের নাম রাখিমজান কোশকারবায়েভ। তাঁর বাড়ি কাজাখস্তান। আরেকজন হলেন দাগেস্তানের আবদুল হাকিম ইসমাইলোভ। যা হোক, স্তালিনের মৃত্যুর পর ১৯৫৭ সালে নিকিতা ক্রুশ্চেভ চেচেনদের নিজ দেশে ফিরে আসার সুযোগ দেন।

প্রথম ও দ্বিতীয় চেচেন যুদ্ধ এবং পুতিন যুগের শুরু

সামনে চেচেন প্রেসিডেন্ট আখমাদ কাদিরভ, পেছনে পুত্র রমজান কাদিরভ। ২০০৪ সালের ৩০ জানুয়ারির ছবি।

নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর চেচেনরা আবার স্বাধীনতার ডাক দেন। তাঁরা গণভোটের আয়োজন করে স্বাধীন দেশের ঘোষণা দেন। ১৯৯১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সোভিয়েত বিমানবাহিনীর সাবেক জেনারেল জোখার দুদায়েভের নেতৃত্বাধীন অল-ন্যাশনাল কংগ্রেস অব দ্য চেচেন পিপল পার্টির সদস্যরা চেচেন-ইঙ্গুশ সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের সুপ্রিম সোভিয়েতের একটি অধিবেশনে আক্রমণ চালান। এ সময় সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির গ্রোজনি শাখার প্রধান ভিতালি কুৎসেঙ্কো নিহত হন, ফলে চেচেন-ইঙ্গুশ সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের সরকারের পতন ঘটে। পরের মাসে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দুদায়েভ বিপুল জনসমর্থন লাভ করে জয়লাভ করেন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সরকারসমর্থিত প্রজাতন্ত্রটির অন্তর্বর্তী সরকারকে বহিষ্কার করেন। দুদায়েভ চেচনিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

রাশিয়া এই স্বাধীনতার ঘোষণা মানতে পারেনি। তারা স্বাধীন চেচনিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ইতিহাসে এটিই প্রথম চেচেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধে রাশিয়া ভয়ংকর গণহত্যা চালায়।আরব নাগরিক সামির সালেহ আবদুল্লাহ আল সুয়াইল্লিম (যিনি ইবনুল খাত্তাব নামে বেশি পরিচিত) ও শামিল বাশায়েভ ওরফে আবু ইদরিশ নামক স্থানীয় মুজাহিদের নেতৃত্বে চেচেনরা ঘুরে দাঁড়ায়। এতে হাজার হাজার রাশিয়ান সেনার মৃত্যু ঘটে। রাশিয়ান বাহিনী ভয়াবহভাবে পর্যুদস্ত হয় এবং চেচেনদের সব শর্ত মেনে নিয়ে রাশিয়া সেনা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়।

১৯৯৬ সালে দুদায়েভ গুপ্তহত্যার শিকার হন। এরপরই স্বাধীন চেচনিয়ার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন সালিম খান এন্দারবায়েভ। সালিম খান চেয়েছিলেন, আশপাশের মুসলিম দেশগুলোও চেচনিয়ার অন্তর্ভুক্ত হোক। এই ভাবনা থেকে তিনি দাগেস্তানকে চেচনিয়ার অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দিলে রাশিয়া আবার চেচনিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঘোষণা করেন। রাশিয়ার পক্ষে সেই যুদ্ধের দায়িত্ব যিনি নেন, তিনি হলেন আজকের রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

১৯৯৯ সাল। দ্বিতীয় চেচেন যুদ্ধে পুতিন ভয়ংকরভাবে চেচেনদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। পুতিন এবার ব্রিটিশদের পুরোনো পদ্ধতি অনুসরণ করে চেচেনদের মধ্য থেকে এমন একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে খুঁজতে থাকেন যাকে অর্থ ও ক্ষমতা দিয়ে নিজের সহযোদ্ধাদের কাছে থেকে ভাগিয়ে আনা যাবে। সে রকম একজন তিনি পেয়েও গেলেন। তাঁর নাম আখমাদ আবদুল হামিদোভিচ কাদিরভ। তিনি আখমাদ কাদিরভ নামে পরিচিত।

প্রথম চেচেন যুদ্ধে আখমাদ কাদিরভ রুশবিরোধী নেতা ও চেচেন রিপাবলিক অব এসকেরিয়ার প্রধান মুফতি ছিলেন। পুতিন তাঁর সঙ্গে সমঝোতা করলেন। আখমাদ স্বাধীনতাকামীদের পক্ষ ত্যাগ করে তাঁর দলবল নিয়ে রুশ বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিলেন। আখমাদের সহায়তা নিয়ে পুতিনের রুশ বাহিনী গ্রোজনির ওপর যেভাবে হামলা চালায়, তা চেচনিয়ার ইতিহাসের সমস্ত বর্বরতাকে ছাপিয়ে গেল। গোটা গ্রোজনিকে আক্ষরিক অর্থে ধ্বংস করা হলো। চেচেন স্বাধীনতাকামীরা আত্মসমর্পণে বাধ্য হলেন। পুরস্কার হিসেবে ২০০০ সালে আখমাদ কাদিরভকে চেচেন প্রশাসনের প্রধান এবং ২০০৩ সালে রাশিয়ান ফেডারেশনভুক্ত চেচনিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁকে বসানো হলো। ২০০৪ সালের ৯ মে আখমাদ কাদিরভ চেচেন স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহীদের হামলায় নিহত হন। এরপর ২০০৭ সালে তাঁর ছেলে রমজান কাদিরভ চেচনিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় বসলেন।

আমাদের এই অঞ্চলের মীরজাফরের সঙ্গে আখমাদ কাদিরভ আর মীরজাফরের পুত্র মীরনের সঙ্গে রমজান কাদিরভের মিল পাওয়া যায়। পুতিনের একান্ত বাধ্যগত হয়ে পিতা যে গদিতে বসেছিলেন, সেখানে এখন পুত্র রমজান বসেছেন। স্বদেশের স্বাধীনতাকামীদের দমন করে রাখার বিনিময়ে তিনি সহি-সালামতে গদিতে থাকতে পারছেন।

রমজানের উৎপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন

চেচেন গেরিলা আমিনা অকুয়েভা। ২০১৭ সালে তাঁকে কিয়েভে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই হত্যার পেছনে রমজান কাদিরভের হাত আছে বলে ধারণা করা হয়।

রমজান চেচনিয়ার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর রুশবিরোধী চেচেন স্বাধীনতাকামীদের ওপর নির্মম নির্যাতন নেমে আসে। তিনি তাঁর এবং পুতিনের সমালোচনাকারীদের গ্রেপ্তার করতে শুরু করেন। আতঙ্কে স্বাধীনতাকামী চেচেনরা দেশ ছেড়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যান। এদের একটি বড় অংশ এখন ইউক্রেনের আশ্রয়ে আছে। কিন্তু বিরোধিতাকারীরা দেশ ছেড়ে পালালেও রমজানের হাত থেকে তাঁরা নিরাপদ নন। বিদেশে আশ্রয় নেওয়ার পরও গুপ্তঘাতকদের হাতে সমালোচকদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে থাকে। চেচনিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট সালিম খান এন্দারবায়েভ পালিয়ে কাতারে আশ্রয় নিলেও পুতিন এবং রমজানের হাত থেকে তিনি রেহাই পাননি। ২০০৪ সালে দোহার একটি মসজিদ থেকে বাসায় ফেরার সময় তাঁর গাড়িতে বোমা হামলা চালানো হয়। তিনি সেখানে মারা যান।

উমর ইসরাইলোভ নামের এক ব্যক্তি রমজানের দেহরক্ষী ছিলেন, যিনি পরে রমজানের সমালোচক হয়ে ওঠেন এবং প্রাণভয়ে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় পালিয়ে যান। কিন্তু ২০০৯ সালে সেখানে উমর গুলিতে নিহত হন। ২০১৭ সালে কিয়েভে চেচেন বংশোদ্ভূত ইউক্রেনের নাগরিক ও রুশবিরোধী আন্দোলনকর্মী আমিনা অকুয়েভার নিহত হওয়ার ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় হয়েছিল। ১৮ বছর বয়সে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হওয়া এই নারী ছিলেন একজন শল্যচিকিৎসক। তিনি স্নাইপার হিসেবেও দক্ষ হয়ে উঠেছিলেন। ইউক্রেনে রাশিয়াপন্থী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইরত জোখার দুদায়েভ ব্যাটালিয়নের সদস্য ছিলেন তিনি। তাঁর স্বামী আদম ওসমায়েভ এই ব্যাটালিয়নের প্রধান। তাঁরা রমজান কাদিরভকে হঠাতে স্বাধীনতাকামী চেচেনদের নিয়ে সশস্ত্র আন্দোলন করছিলেন। ইউক্রেন সরকারের পুলিশ বাহিনীর একজন লেফটেন্যান্ট ছিলেন আমিনা।

২০১৭ সালে কিয়েভে স্বামী আদম ওসমায়েভের সঙ্গে গাড়িতে করে বাসায় ফেরার সময় আমিনা আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। পরে তদন্তে দেখা যায়, রমজান কাদিরভের ভাড়াটে লোকই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।

চেচেনরা কয়েক ভাগে বিভক্ত

রাশিয়া ও রমজান কাদিরভের বিরুদ্ধে লড়াইরত জোখার দুদায়েভ ব্যাটালিয়নের প্রধান ও কিয়েভে গুলিতে নিহত স্নাইপার আমিনা ওকুয়েভার স্বামী আদম ওসমায়েভ।

সব মিলিয়ে চেচেনরা কয়েক ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে রমজানের কাদিরভের অনুসারী। আরেক ভাগ ইউক্রেনে সক্রিয় শেখ মানসুর ব্যাটালিয়নে এবং আরেক ভাগ জোখার দুদায়েভ ব্যাটালিয়নে সক্রিয়।
রমজান কাদিরভ ইউক্রেনে সক্রিয় আল মানসুর ও জোখার দুদায়েভ ব্যাটালিয়নকে শেষ করে দিতে চান। এতে তাঁর দুই দিক থেকে লাভ। প্রথমত, নিজের শত্রু শেষ হবে। দ্বিতীয়ত, এতে পুতিন খুশি হবেন। কারণ ওই দুটি ব্যাটালিয়নের চেচেন যোদ্ধারা চেচনিয়ার স্বাধীনতা চান এবং তাঁরা পুতিনের বিরুদ্ধে কাজ করছেন।

ইউক্রেনের চেচেনদের অবস্থা

জুলিয়াস স্ট্রস ডেইলি ‘টেলিগ্রাফ’–এর সাবেক মস্কো ব্যুরো প্রধান। এই সাংবাদিক চেচনিয়া, বসনিয়া, কসোভো, আফগানিস্তান এবং ইরাকের যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে সেখান থেকে অসংখ্য রিপোর্ট করেছেন। গত ২০ মার্চ লন্ডনভিত্তিক সাপ্তাহিক ‘দ্য স্পেকটেটর’-এ তাঁর একটা বড় লেখা ছাপা হয়েছে। লেখাটির শিরোনাম ‘পুতিন অ্যান্ড দ্য মুসলিম ওয়ার্ল্ড’।

জুলিয়াস স্ট্রস এই প্রতিবেদনে বলছেন, ইউক্রেনের বেশির ভাগ মানুষের ভাষা রুশ এবং তারা রাশিয়ানদের মতোই অর্থোডক্স খ্রিষ্টান। তারা অনেকেই অনেকের আত্মীয়। এই জ্ঞাতি ভাইদের ওপর গুলি চালাতে রুশ সেনাদের হাত কাঁপতে পারে। কিন্তু রমজানের চেচেন যোদ্ধাদের সে ধরনের মানসিক বাধা নেই। তাই তাঁরা কোনো ধরনের অপরাধবোধ ছাড়াই ইউক্রেনবাসীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারবেন।

মস্কো বলেছে, রমজানের সেনাদের মাসে আড়াই হাজার ডলার পর্যন্ত বেতন দেওয়া হচ্ছে। এখানে রমজানের বাহিনীর লড়াইয়ে অংশ নেওয়ার পেছনে আদর্শিক ব্যাপার নেই বললেই চলে। এখানে তাঁরা ভাড়ায় খাটা মজুরের মতো লড়াই করছেন।

তবে শেখ মানসুর ব্যাটালিয়ন ও জোখার দুদায়েভ ব্যাটালিয়ন লড়ছে আদর্শিক কারণে। তারা চায় রমজানের পতন। তারা চায় পুতিনের পতন। তারা চায় চেচনিয়ার স্বাধীনতা। এ কারণে চেচেনদের একদল পুতিনের পক্ষে, আরেক দল ইউক্রেনের পক্ষে।

সারফুদ্দিন আহমেদ, প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক
ই-মেইল: sarfuddin2003@gmail.com