আমাদের মায়েরা ছোটবেলায় ঘুমপাড়ানির গান শোনাতেন। চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা বা বর্গি আসার ভয়ের গান। আমরা সেই গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যেতাম। বর্গি আসার ভয়ও পেতাম। কিন্তু সেই ঘুমপাড়ানির গান আমরা ঘুমিয়ে পড়লেও ঠিকই জেগে থাকত গোটা সমাজ। যার কারণে দুপুরে মাকে ঘুমিয়ে রেখেই আমরা বেরিয়েও পড়তাম অনেক সময়। জেগে থাকা সমাজে কি ঘুমিয়ে থাকা যায়! আমাদের চঞ্চলমতি শৈশব অতটুকু না বুঝলেও ঘুমিয়ে থাকা মানে নিশ্চলতা, সেটি ঠিকই নিশ্চয় বুঝতাম। সেই নিশ্চলতাই কি আজ আমাদের মধ্যে ভর করল না? বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় উৎসব এ বছর ধুলোয় মিশে গেল। আমরা চেয়ে চেয়ে দেখলাম। কিছুই করতে না পারার ব্যর্থতা থেকে লজ্জার ভানও করলাম। রাষ্ট্র ও সরকারের ব্যর্থতা, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রতত্ত্ব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব থাকলাম। অন্যদিকে একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটে গেল হিন্দুদের মন্দির, আশ্রয়, বাড়িঘর, দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে।
অসাম্প্রদায়িক যে চেতনা নিয়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছিল, সেই স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হলো। এত বছরেও একটি রাষ্ট্রে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলো না। এর দায় নিয়ে আমরা ইতিমধ্যে অনেকে অনেক কথা বলে ফেলেছি, অনেক তর্ক-বিতর্ক এখনো চলছে। কিন্তু আবারও এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না, সেটি কি নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারবে আদৌ? যে রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি, সেখানে অনেক কথাই বলা নিরাপদ নয়। ফলে এমন রুদ্ধ সময়ে সমাজের কী করার থাকতে পারে, এমন প্রশ্ন ওঠাও স্বাভাবিক। এরপরও কি সামাজিকভাবে এ সাম্প্রদায়িক হামলা রুখে দেওয়া অসম্ভব ছিল?
২.
দাঙ্গা ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রাজনৈতিক ইতিহাসেরই অংশ। পেছন থেকে দেশভাগ পর্যন্ত তাকালে সেটি স্পষ্ট হয়। সমাজবিজ্ঞানীরা বলে থাকেন, রাষ্ট্র ও সরকার না চাইলে কোনো দাঙ্গা বা সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হতে পারে না। এর মানে এই নয়, রাষ্ট্র ও সরকার সব সময় দাঙ্গা লাগায়। মূলত সরকার চাইলে এসব প্রতিহত করতে পারে, এর জন্য দরকার শুধু সামর্থ্য ও সদিচ্ছা। সেটি নিশ্চয়ই আমাদের আছে। যার কারণে হিন্দু সম্প্রদায় ছাড়া অন্যান্য ধর্মালম্বীরা আক্রান্ত হওয়ার খুব একটা নজির আমাদের নেই। কারণ, পশ্চিমা বা দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ আমরা নিতে পারব না। কিন্তু ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে উপমহাদেশের হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে যে সংঘাত, সেটিকে আমরা এখনো লালন করে যাচ্ছি, বাংলাদেশে যার ভুক্তভোগী মূলত হিন্দুরা। সেটির কারণে পাহাড় ও সমতলের অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী ও উর্দুভাষীদের ওপর অনাচারও আমরা বন্ধ করতে পারছি না। সাংবিধানিকভাবে সবাই নাগরিক হলেও, সব নাগরিকের সমান অধিকার থাকলেও, সেখানে আমরা পরস্পরকে ‘অপর’ করে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি। ধর্মীয় বা জাতীয়তাবোধের শ্রেষ্ঠত্ববাদী মনোভাব আমাদের মধ্যে গেড়ে বসছে।
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও সহিংসতার মূল জ্বালানি যে গুজব, সেটি টের পাওয়া যায় ১৯৬৪ সালেও। কাশ্মীরের হজরত বাল মসজিদে রক্ষিত নবী মুহাম্মদ (সা.) এর চুল মোবারক চুরি হওয়ার গুজবে সেখানে সৃষ্ট উত্তেজনা ও সংঘর্ষ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় রূপ নেয়। পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমরা আক্রান্ত হতে থাকে, পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দুরা। সে সময় পূর্ব পাকিস্তানের ইসলামিক বোর্ডের এক উপদেষ্টা হিন্দু ও অমুসলিমদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানও ঢাকা বিমানবন্দরে ঘোষণা দেন, কাশ্মীরের ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় কিছু হলে তার দায়ভার নেবেন না। এরপর তো খুলনা অঞ্চল থেকে শুরু করে নারায়ণগঞ্জের শ্রমিক এলাকা থেকে পুরো ঢাকায় দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। তখন পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনকে দমাতে দাঙ্গায় হাওয়া দেয় সরকার। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে বাঙালি-অবাঙালির মধ্যেও। ফলে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল দাঙ্গাবাজদের ছুরি।
সমাজে এখন আর কোথাও ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, পাঠাগার দেখা যায় না। পাড়ার ক্লাবগুলোও হারিয়ে গেছে, যারা একই সঙ্গে বিজয় দিবসের মেলা, বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, পিকনিক ও বার্ষিক মিলাদের আয়োজন করত। ফলে পাড়ায় পাড়ায় যারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি টিকিয়ে রাখবে, সহিংসতা রোধে এগিয়ে আসবে, কোথাও তাদের অস্তিত্ব নেই এখন। দুর্বৃত্তায়ন রাজনীতি সব স্পেস বা জায়গাগুলোকে গিলে খেয়েছে।
মাওলানা ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদসহ রাজনৈতিক নেতারা শুধু বিবৃতি দিয়ে থেমে থাকেননি, দাঙ্গা প্রতিরোধ করতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র, শ্রমিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, লেখক সব মহল্লা ও ওয়ার্ডে অতন্দ্র প্রহরী হয়ে দাঁড়ালেন। জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের নেতৃত্বে শান্তি অভিযান বের হলো। ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেনের সভাপতিত্বে ঢাকায় সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিদের নিয়ে এক সভায় বেসরকারি দাঙ্গা প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হলো, যার আহ্বায়ক করা হয় শেখ মুজিবুর রহমানকে। ওয়ারী এলাকায় দাঙ্গাবাজদের আক্রমণের শিকারও হলেন তিনি, এরপরও সেখানকার ৫০০ হিন্দুকে নিরাপদে স্থানান্তর করেন। সেই কমিটির উদ্যোগে ইত্তেফাকের নেতৃত্বে ঢাকার চারটি পত্রিকায় ‘পূর্ব পাকিস্তান রুখিয়া দাঁড়াও’ শিরোনামে অভিন্ন সম্পাদকীয় ছাপানো হলো। হিন্দু সম্প্রদায়কে বাঁচাতে গিয়ে নিহত হন কবি ও নজরুল গবেষক আমির হোসেন চৌধুরী। অবাঙালিদের হাতে নিহত হন নটর ডেম কলেজের অধ্যক্ষ ফাদার নোভাক। অর্ধলক্ষাধিক লোক গৃহহারা হলে ঢাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছিল। তখনকার ইত্তেফাক থেকেই আমরা এসব খবর জানতে পারছি। এ জন্য ইত্তেফাক ভবনও হামলার শিকার হয়েছিল। সে সময় পূর্ব পাকিস্তান প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তাই সমাজের সচেতন ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতারা দাঙ্গার প্রতিরোধে নেমে পড়েছিলেন।
একই ভাবে ১৯৯২ সালে ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছিল। সে সময়ও ২১ জেলায় হামলার শিকার হয় হিন্দু সম্প্রদায়। সেবারও ঢাকায় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও সচেতন নাগরিক সমাজ। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, বাম দল, ছাত্রসংগঠনগুলো এলাকায় এলাকায় প্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল। পুরান ঢাকায় দাঙ্গাবাজদের সঙ্গে একাধিকবার সংঘর্ষও বাধে তাদের। সে সময় বিএনপির সাদেক হোসেন খোকার সাহসিকতার কথা আমরা আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের এক লেখায় পাই।
৩.
কুমিল্লা, হাজীগঞ্জ, নোয়াখালী, ফেনী, পীরগঞ্জ—যেখানে বড় হামলাগুলো হয়েছে, বড়জোর কয়েক শ বা হাজার মানুষ সেখানে অংশ নিয়েছে। সে সময় সেসব এলাকায় লাখো মানুষ ছিল, তবু হামলা ঠেকানো যায়নি। কুমিল্লায় কয়েক দিন পর ক্ষমতাসীন এমপি বিশাল সমাবেশ করলেন। কিন্তু কয়েক দিন আগে সারা দিন ধরে যখন হামলা হলো, তখন কোথায় ছিলেন তিনি? কেন তাঁর বিশাল কর্মী বাহিনী নিয়ে রুখে দিতে পারলেন না? তিনি নিজেকে বঙ্গবন্ধুর কর্মী বলে দাবি করে থাকেন, কিন্তু ভুলে গেলেন দেশভাগের আগে ১৯৪৬ সালের দাঙ্গায় বঙ্গবন্ধুর যে সাহসী ভূমিকার কথা তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখে গেলেন কিংবা ’৬৪ সালের দাঙ্গার তাঁর প্রতিরোধের কথা। ’৬৪ সালে কিন্তু কুমিল্লাতেও পাড়ায় পাড়ায় কমিটি করা হয়েছিল। পাহারা বসানো হয়েছিল। তৎকালীন কুমিল্লার প্রশাসন, মুসলিম লীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকে মিলে কুমিল্লাকে রক্ষা করেন।
বঙ্গবন্ধুর দল এখন ক্ষমতায়, গোটা রাজনীতি এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে, প্রশাসনও। কুমিল্লায় সারা দিন ধরে হামলা হয়, এতবার পুলিশকে ডেকেও পাওয়া যায় না। নোয়াখালীতে হামলার আগের দিন থেকে পোস্টার লাগানো ও মাইকিং করা হয় কোরআন অবমাননার প্রতিবাদে। আগের দিন কুমিল্লা ও চাঁদপুরে এত বড় ঘটনা ঘটে গেল। এরপরও নোয়াখালীর প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা হামলা ঠেকাতে পারেনি। হত্যার শিকার হলেন সংখ্যালঘুরা। অনেক জায়গায় পুলিশের ভূমিকা ছিল বাংলা সিনেমার শেষ দৃশ্যের মতো, সবকিছু শেষ হওয়ার পর বীরদর্পে হাজির হওয়া। হামলার পরে চাঁদপুরে ১১৪টি স্থানে সম্প্রীতি সমাবেশও করল পুলিশ, কিন্তু ঘটনার সময় কিছু করতে পারলেন না তাঁরা। কোথাও কোথাও ক্ষমতাসীন দল ও ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা হামলার উসকানি দেন, এমনকি হামলায় অংশও নেন। যার পরিণতি হলো হাজীগঞ্জে কয়েকজন খেটে খাওয়া মানুষের পুলিশের গুলিতে মৃত্যু। এই অভিযোগগুলো হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারাই তুলেছেন। সংবাদমাধ্যমের সরেজমিনে প্রতিবেদনেও।
হামলার পর নোয়াখালী ঘুরে আসা অভিজ্ঞতা থেকে মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির এক ওয়েবিনারে বক্তারা বলছেন, নোয়াখালীতে না গেলে সেখানে কী হয়েছে, তার একশ ভাগের এক ভাগও বোঝা যাবে না। এবার কেবল রাষ্ট্র বা আইন নয়, সমাজই ব্যর্থ হয়েছে। প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল, প্রতিবেশী কেউ সংখ্যালঘুদের রক্ষায় এগিয়ে আসেনি। বেগমগঞ্জের সাংসদ ঘটনাস্থলে যাননি।
দুর্বৃত্তায়ন রাজনীতি সমাজের সব স্পেস বা জায়গাগুলোকে গিলে খেয়েছে। নতুন প্রজন্মগুলোও গড়ে উঠছে একধরনের চিন্তাশূন্যতার মধ্য দিয়ে, পরীক্ষানির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার দায়ও এখানে কম নয়। সাম্প্রদায়িক হামলাগুলোতে অল্পবয়সী ছেলে ও কিশোরদের অংশগ্রহণ এমনটিই আমাদের ভাবায় আসলে।
দেশে বিরাজনীতিকরণ, বিচারহীন সংস্কৃতি এবং রাজনীতির ওপর মানুষের আস্থা হারিয়ে যাওয়ায় সমাজও যখন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে, এমন সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঠেকানোর আসলে কেউ থাকে না। সামাজিক চেতনাবোধের দেখা কোথাও মেলে না। সমাজে এখন আর কোথাও ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, পাঠাগার দেখা যায় না। পাড়ার ক্লাবগুলোও হারিয়ে গেছে, যারা একই সঙ্গে বিজয় দিবসের মেলা, বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, পিকনিক ও বার্ষিক মিলাদের আয়োজন করত। ফলে পাড়ায় পাড়ায় যারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি টিকিয়ে রাখবে, সহিংসতা রোধে এগিয়ে আসবে, কোথাও তাদের অস্তিত্ব নেই এখন। দুর্বৃত্তায়ন রাজনীতি সব স্পেস বা জায়গাগুলোকে গিলে খেয়েছে। নতুন প্রজন্মগুলোও গড়ে উঠছে একধরনের চিন্তাশূন্যতার মধ্য দিয়ে, পরীক্ষানির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার দায়ও এখানে কম নয়। সাম্প্রদায়িক হামলাগুলোতে অল্পবয়সী ছেলে ও কিশোরদের অংশগ্রহণ এমনটিই আমাদের ভাবায় আসলে। গ্রাম-মফস্বল থেকে শহরে ওঠে আসা তরুণেরাও কি ফেলে আসা সমাজের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন নয়? দেখা গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের যে তরুণ সহিংসতার প্রতিবাদে কনসার্টে অংশ নিয়েছে, তারই গ্রামে সহিংসতায় অংশ নিয়েছে পাড়ার ছেলেরা। সংখ্যালঘুদের অধিকারের পক্ষে ভারতজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একযোগে দাঁড়িয়ে যায়, সেখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভূমিকা কী?
ধর্মীয় সম্প্রীতি তো চর্চার বিষয়, সেটি হয় না বলেই আন্তধর্মীয় প্রতিনিধিদের মধ্যেও পারস্পরিক সৌহার্দ্যতা আগের মতো দেখা যায় না। আমাদের নিশ্চয়ই আসানসোলের মসজিদের সেই ইমামের কথা মনে আছে, হিন্দুত্ববাদীদের হাতে ছেলে নিহত হওয়ার পরও প্রতিশোধের বদলে সম্প্রীতির ডাক দিয়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রুখে দিয়েছিলেন তিনি। আমরাও এখন সম্প্রীতির ডাক দিয়ে রাস্তা গরম করছি, কিন্তু ঘটনা ঘটার পর।
নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলছেন, দাঙ্গায় বা সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় সবচেয়ে বড় শিকার হয় দরিদ্ররা। দাঙ্গাবাজদের ছুরিকাঘাতে নিহত মুসলিম দিনমজুর কাদের মিয়ার কথা ৫০ বছরেও ভুলতে পারেন না তিনি। সেই একই নমুনা আমরা দেখলাম পীরগঞ্জের জেলেপল্লিতে। যার কারণে প্রাণে বেঁচে গিয়েও গরু হারিয়ে আহাজারি করেন সুমতি রানীরা। ঘুমিয়ে থাকা সমাজ যদি না জাগে, সুমিতা রানীদের আরও বড় আহাজারিই হয়তো আমাদের শুনতে হবে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে একটি রাষ্ট্রের জন্য বড় আফসোস আর কীই–বা হতে পারে!
রাফসান গালিব প্রথম আলোর সহসম্পাদক