কাসেম সোলাইমানি: দুনিয়ার এক নম্বর জেনারেল!

জেনারেল সোলাইমানি ২০১৫ সালে। ছবি: রয়টার্স
জেনারেল সোলাইমানি ২০১৫ সালে। ছবি: রয়টার্স

এ মুহূর্তে বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত সমরবিদ কে? এ প্রশ্নের উত্তরে বহুমত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এর সম্ভাব্য একটা উত্তর হতে পারে সিআইএ ও মোশাদের হিটলিস্ট। এই দুই সংস্থার প্রতিপক্ষ হিসেবে বর্তমানে সর্বাগ্রে গুরুত্ব পাচ্ছেন জেনারেল কাসেম সোলাইমানি। নিজ দেশে ভক্তদের কাছে যাঁর পরিচিতি হাজি কাসেম নামে। শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, পুরো সমরজগতের বিশেষ মনোযোগে রয়েছেন তিনি এখন।

আইআরজিসি নামে পরিচিত ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের একজন কমান্ডার সোলাইমানি। তবে অলিখিতভাবে তাঁর পদমর্যাদা দেশটির যেকোনো সামরিক কর্মকর্তার ওপরে। রেভল্যুশনারি গার্ডের ‘কুদস্ ফোর্স’ তাঁর নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয় । ২১-২২ বছর হলো বাহিনীটি গড়ে তুলছেন তিনি। অপ্রচলিত যুদ্ধের জন্য তৈরি একটা বৃহৎ ‘স্পেশাল অপারেশান ইউনিট’ বলা যায় একে; যার প্রধান কর্মক্ষেত্র এখন ইরানের বাইরে। দেশটির বৈশ্বিক উত্থানে বর্শার ফলকে পরিণত হয়েছেন কুদস ফোর্সের সদস্যরা, যাঁদের ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্যে ইতিমধ্যে সামরিক ভারসাম্যে পরিবর্তন ঘটিয়ে ফেলেছেন হাজি কাসেম। যে তৎপরতার তাপ লাগছে পৃথিবীর অন্যত্রও; বিশেষ করে অর্থনীতিতে।

বিশাল এক আন্তর্দেশীয় ছদ্মযুদ্ধ
‘কুদস’ শব্দের অর্থ ‘পবিত্র’। বোঝা যায়, সোলাইমানির এই বাহিনীর অগ্রযাত্রায় ধর্মীয় প্রণোদনা আছে। সেটা কতটা ইসলামের শত্রুর বিরুদ্ধে, আর কতটা শিয়া মতাদর্শের পরিসর বাড়াতে, তা নিয়ে বিতর্কও আছে। কিন্তু প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ফ্রন্টে তৎপর দেখা যাচ্ছে ‘পবিত্র’ এই যোদ্ধাদের।

সোলাইমানি তাঁর বাহিনীর পুরো কাজকর্মের জন্য জবাবদিহি করেন শুধু আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে। তাই ইরানিরাও ‘কুদস্ ফোর্স’-এর সংখ্যা ও সামর্থ্য নিয়ে সামান্যই ওয়াকিবহাল । এই ‘ফোর্স’-এর সঙ্গে কাজ করছে লেবাননের হিজবুল্লাহ, ফিলিস্তিনের হামাস ও ইসলামিক জিহাদ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের ‘ফাতেমিয়ুন’ আর ‘জাইনাবিয়ুন’ নামের মিলিশিয়া গ্রুপ এবং ইয়েমেনের হুতিরা । এর বাইরে সিরিয়া-ইরাকে শিয়াদের অনেক প্রশিক্ষিত বাহিনী রয়েছে ‘কুদস ফোর্স’-এর অধীনে। রীতিমতো আন্তমহাদেশীয় চরিত্রের যোদ্ধাদল এটি। সঠিক আকার ও সদস্যসংখ্যা আঁচ করা প্রকৃতই কঠিন। ইরান এদের বলছে ‘প্রতিরোধের অক্ষশক্তি’। অন্তত ১৫-২০টি দেশে সরাসরি কিংবা সীমিত পরিসরের ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশের স্বার্থের বিপরীতে ছদ্মযুদ্ধে লিপ্ত এরা। সমরবিদ্যায় এ রকম যুদ্ধকে বলে ‘বড়যুদ্ধের মধ্যবর্তী ছোট ছোট অভিযান’। সৌদি আরব তার তেলক্ষেত্রে অজ্ঞাত উৎস থেকে পরিচালিত এ রকম এক অভিযান দেখেছে গত ১৪ সেপ্টেম্বর, যা বিশ্ব অর্থনীতিকেও খানিকটা ঝাঁকুনি দিয়েছে। বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহের অন্তত ৫ ভাগ তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

যুক্তরাষ্ট্র কেন সোলাইমানিকে আক্রমণ করে না?
আমেরিকার বনেদি জার্নাল ‘ফরেন পলেসি’ এ বছর বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন পেশার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের যে তালিকা করেছে, তাতে সমর খাতে জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে প্রথম স্থানে রাখা হয় । পাশাপাশি এও সত্য, আমেরিকার প্রশাসন এই জেনারেলকে একজন ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবেই দেখে । তাঁকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জারি করা একাধিক নিষেধাজ্ঞা আছে। এও মনে করা হয়, ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞা মূলত সোলাইমানির তৎপরতা নিয়ে ক্ষোভ থেকে। তাঁকে নিয়ে সৌদদের বিরাগও সকলের জানা। যুক্তরাষ্ট্র এই বিরাগকে যৌক্তিক মনে করে। তবে ইসরায়েলের গোয়েন্দাদের অনুযোগ, অন্তত দুবার আমেরিকা সোলাইমানিকে সুযোগ পেয়েও মারেনি । কারণ, ‘দায়েশ’কে নিয়ন্ত্রণে সোলাইমানির অপরিহার্যতা। তাঁকে হত্যা করা মানেই ইরানের সঙ্গে সব ধরনের সামরিক সহযোগিতার পথ বহুদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়া, যা ইরাক ও আফগানিস্তানে ওয়াশিংটনের জন্য দীর্ঘমেয়াদে অসুবিধাজনক হতে পারে। সোলাইমানির প্রতি আঘাতকে আলী খামেনি সরাসরি তাঁর ওপর আঘাত হিসেবেই যে নেবেন, সেটা সিআইএর জানা। তাই ওসামা বিন লাদেনের হদিস জেনে যত সহজে অভিযানে যাওয়া যায়, সোলাইমানিকে নিয়ে সেটা সম্ভব নয়। যে যুদ্ধ শেষ করা যাবে না, তেমন যুদ্ধে ওয়াশিংটনের রাজনীতিবিদদের আগ্রহ আগের চেয়ে অনেক কম। সিআইএর সূত্রে এ তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের জানা, ইরানিরা বছরের পর বছর প্রতি রাতে ঘুমাতে যায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হামলার শঙ্কা নিয়ে। সোলাইমানিকে খুন করা হবে অসন্তোষের সেই আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়ার মতো।

হাজি কাসেম সরাসরি খামেনির কাছে দায়বদ্ধ, আর কারও কাছে নয়। ছবি: রয়টার্স

হাজি কাসেম ইরান সীমান্ত টেনে এনেছেন ইসরায়েলের পাশে
সোলাইমানিকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ইসরায়েলের মাথাব্যথাই বেশি। ইরানের এই জেনারেলকে তারা প্রকাশ্যেই ‘এক নম্বর শত্রু’ বলে। ইসরায়েল মনে করছে লেবানন, সিরিয়া, গাজা থেকে সোলাইমানির অদৃশ্য সৈনিকেরা ক্রমে তাদের ঘিরে ফেলছে। এভাবে ইরান সীমান্তকে সোলাইমানি টেনে নিয়ে এসেছেন ইসরায়েলের বাড়ির পাশে। অথচ তেহরান-জেরুজালেমের মাঝে দূরত্ব ১৫০০ কিলোমিটারের বেশি।

প্রতিবেশী সিরিয়ায় ইরানের কুদস ফোর্সের সামরিক দপ্তর থাকা ইসরায়েলের কাছে তেহরানের পারমাণবিক অস্ত্রের মতোই অসহনীয় কিছু। ইসরায়েলের জেনারেলরা এটা কখনোই গোপন করেন না যে মোশাদের হিটলিস্টে সোলাইমানি সর্বাগ্রেই আছেন। ইরানেরও তা অজানা নেই। হয়তো এ কারণেই আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি সোলাইমানিকে অভিহিত করেন ইরানের ‘জীবন্ত শহীদ’ হিসেবে।

কোনো কোনো ইসরায়েলি জেনারেল অবশ্য সোলাইমানির পরিবর্তে কেবল কুদস ফোর্সকে আক্রমণের পক্ষে। তাদের ভাষায়, ‘ঝোপ-জঙ্গল পরিষ্কার করলে মশা এমনিতেই মরে যায়। মশা মারা থেকে জঙ্গল পরিষ্কার করা ভালো।’ তবে অনুমান করা হয়, ব্যক্তিগতভাবে সোলাইমানির ব্যাপারে কঠোর হতে ইসরায়েলের ওপর সৌদদের চাপ আছে। ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ ২০১৮ সালের নভেম্বরে এমন রিপোর্টও করেছে যে, সাংবাদিক খাসোগিকে হত্যার অন্তত এক বছর আগে একই খুনে দল ইসরায়েলের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে মিলে সোলাইমানিকে নিয়ে অনুরূপ কিছু পরিকল্পনা করছিল। এ কাজের বাজেট ছিল দুই বিলিয়ন ডলার। লক্ষ্য হাসিলে ভাড়াটে কোনো শক্তিকে ব্যবহারের কথা ছিল। অজ্ঞাত কারণে তা সফল হয়নি।

ইসরায়েলের জন্য বিপুল বিরক্তি
এ বছরের মার্চে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনি জেনারেল সোলাইমানিকে ‘অর্ডার অব জুলফিকার’ পদক দিয়েছেন। বিপ্লব-উত্তর ইরানে এ খেতাব তিনিই প্রথম পেলেন। সরকারিভাবে এ অনুষ্ঠানের যে সংবাদ প্রচারিত হয়, তার ছবিতে দেখা যাচ্ছিল সোলাইমানির ঘাড়ে চুম্বন করছেন খামেনি। শিয়া সংস্কৃতিতে এ রকম ছবির প্রতীকী তাৎপর্য বিপুল।

ইরান, ইরানের বন্ধু এবং দেশটির শত্রু সবাই এটা এখন বিশ্বাস করে, মূলত সোলাইমানির কারণেই দেশটির সামরিক প্রভাবের পরিসর বাড়ছে। ইরাকে তাদের সামরিক উপস্থিতি বিপুল। ফলে তারা এখন সৌদি সীমান্তের কাছাকাছি আছে। সৌদদের সঙ্গে বিশ্বজুড়ে ইরানের যে ছদ্মযুদ্ধ চলছে, তার প্রধান স্থপতি এই জেনারেল। আবার ইরাকে আইএস যে সাময়িকভাবে হলেও পরাস্ত, এককভাবে তার বড় কৃতিত্ব সোলাইমানিকেই দিতে হবে।

আসাদকে রক্ষার কৃতিত্বও তাঁর। বিরোধী দলের সঙ্গে আসাদের সংঘাতকে সোলাইমানি ইরান বনাম ইসরায়েল সংঘাতে পরিণত করে নিয়েছেন। কুদস ফোর্স মাঝেমধ্যেই উত্তর ইসরায়েলে মিসাইল ছুড়ে দেশটির বোমাবর্ষণের জবাব দিচ্ছে। তেল আবিব জানে, তাদের জন্য এ রকম বিরক্তি আরও বাড়বে।

সিরিয়া নিয়ে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেওয়ার পাশাপাশি লেবাননে হিজবুল্লাহরও প্রধান অভিভাবক কাসেম সোলাইমানি। ইসরায়েলের পুনঃ পুনঃ বোমাবর্ষণ সত্ত্বেও হিজবুল্লাহ অতীতের চেয়ে অনেক শক্তিশালী এখন। পুরোপুরি ইরানের হয়ে কাজ করছে তারা। এ ধরনের মৈত্রীকে শুধু শিয়াবাদ দিয়ে বোঝা যাবে না। আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে আমরা দেখব, সুন্নি তালেবানদের সঙ্গেও অতীতের শত্রুতার সম্পর্ক সম্পূর্ণ পাল্টে নিতে পেরেছেন সোলাইমানি। কুদস ফোর্সকে তালেবানদের অন্যতম মিত্র মনে করা হয় এখন, যা কূটনীতিবিদের কাছে গভীর এক বিস্ময় তৈরি করেছে ।

হাজি কাসেমের মাঝে মালিক আল-আশতারের ছায়া
সোলাইমানির ‘অক্ষশক্তি’ যে ক্রমে সামরিক পরিসর ছেড়ে রাজনীতিতে প্রভাবশালী হয়ে উঠছে, তারও বহু নজির আছে । হিজবুল্লাহ এক সময় আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকলেও এখন তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি ছাড়া লেবাননে সরকার গঠন আটকে যায়। ইরাকে ‘পপুলার মবিলাইজেশন ফোর্স’ নামে পরিচিত সোলাইমানি প্রভাবিত মিলিশিয়াদের অনেক সংগঠক পার্লামেন্টে নির্বাচিত হয়ে এসেছেন এবং তাঁরা সেখানে গুরুত্বপূর্ণ এক ‘ব্লক’। ইয়েমেনে হুতিদের সশস্ত্র সংগঠন ‘আনসারুল্লাহ’ সরাসরি একটা রাজনৈতিক শক্তিও বটে।

সোলাইমানির ধারাবাহিক সফলতার সবচেয়ে বিপজ্জনক ও ক্ষতিকর দিক হলো, এতে ছদ্মযুদ্ধের ন্যায্যতা তৈরি হচ্ছে এশিয়া-আফ্রিকার অন্যত্রও।

সংগত কারণেই সোলাইমানির কৌশল মোকাবিলায় ইরানের বিরুদ্ধশক্তিও হাতগুটিয়ে বসে নেই। ইসরায়েল, সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র মিলে ইরানের বিরুদ্ধে পাল্টা অক্ষশক্তি দাঁড় করাতে কাজ করে যাচ্ছে। ইরানকে অর্থনৈতিকভাবে কাবু করতে ইসরায়েলের উৎসাহেই অবরোধ চলছে দশকের পর দশক। ২০১৬ থেকে পরবর্তী দুই বছর বাদ দিলে ১৯৭৯ সাল থেকে গত প্রায় ৪০ বছর ইরানের অর্থনীতিকে অবরোধে ফেলে কাবু করার চেষ্টা চলেছে। সামরিক সক্ষমতা কমাতে ইরানের বহু বিজ্ঞানীকে চোরাগোপ্তা কায়দায় হত্যা করা হচ্ছে নিয়মিতভাবে। এর পাশাপাশি ‘মুজাহেদিন-ই খালক’, ‘জয়েস উল-আদিল’ নামের বিভিন্ন সংগঠন ইরানের অভ্যন্তরে অন্তর্ঘাত চালাতে সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে দেশটির শত্রুদের কাছ থেকে। জেনারেল সোলাইমানি মনে করেন, এ রকম জটিল পরিস্থিতিতে ইরানকে তার অস্তিত্বের জন্যই সীমান্তের বাইরে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক উপস্থিতি বাড়াতে হবে। তিনি শত্রুর সঙ্গে চোখে চোখ রেখে আচরণের পক্ষে।

সামনাসামনি দেখলে এ ধরনের বিপজ্জনক চিন্তার মানুষটির যে বড় বৈশিষ্ট্যটি চমকে দেয় তা হলো, অতি সাদাসিধা জীবনযাপন। তারকা জেনারেলদের শরীরী ভাষায় যে ঔদ্ধত্য থাকে, কাসেম সোলাইমানি একদম তার বিপরীত। কেবল এ কারণেই, শিয়া মিথে ভরপুর ইরানের সমাজে অনেকে তাঁর মাঝে দেখেন হজরত আলীর (রা.) বিশ্বাসী সহযোদ্ধা মালিক আল-আশতারের ছায়া। সরাসরি রণাঙ্গনে ঘুরতে পছন্দ করেন এই জেনারেল। সামরিক পোশাকে নয়, সাধারণ একটা জ্যাকেট পরা অবস্থায় দেখা যায় তাঁকে অধিকাংশ সময় ।

খামেনি ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদদের সঙ্গেও তাঁর মেলামেশা কম। ২০১৭ সালে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তিনি প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করতে অস্বীকার করেন। ইরানের অন্যান্য প্রধান নীতিনির্ধারকের মতো ধর্মীয় শিক্ষায়ও তিনি উচ্চশিক্ষিত নন। কথিত আছে, জেনারেল সোলাইমানির সামরিক প্রশিক্ষণের মেয়াদও ছিল মাত্র ছয় সপ্তাহ। মূলত ‘জাতীয় স্বার্থে’ ভূকৌশলগত সামরিক চিন্তার দক্ষতাই তাঁকে এ মুহূর্তে জাতীয় এক বীরে পরিণত করেছে ।

তবে ইরানিরা জানে, ইতিহাসের মালিক আল-আশতার বিষ প্রয়োগে নিহত হয়েছিলেন। সোলাইমানির জীবন নিয়েও তাদের ভীতির কমতি নেই। তাঁর কাজে বহু বিশ্বশক্তির স্বার্থে আঘাত লেগেছে। গোপন অভিযানে সবচেয়ে দক্ষ বিশ্বের অন্তত দুটি সংস্থার পাশাপাশি সোলাইমানির প্রতিপক্ষ হিসেবে রয়েছে আইএসের খুদে সেলগুলোও। এরূপ যেকোনো তরফের আক্রমণ সফল হলে ইসরায়েলের সঙ্গে সিদ্ধান্তসূচক একটা সংঘর্ষে জড়ানোর আজন্ম গোপন অভিলাষ সোলাইমানির হয়তো অপূর্ণই থাকবে। তবে ৬২ বয়সী এই জেনারেল ইতিমধ্যে ইরানের জন্য তাঁর অবদান সম্পন্ন করে ফেলেছেন বলেই ধরা যায়। যেকোনো ‘দেশপ্রেমিক যোদ্ধা’র জন্য এটা তৃপ্তিকর। এইরূপ তৃপ্তি অবশ্য অনন্তযুদ্ধের এক চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। ইরানিদের প্রিয় ‘হাজি কাসেম’ তাঁদের দেশকে মধ্যপ্রাচ্যে সে রকম এক যুদ্ধের ভেতরও টেনে নিয়ে গেছেন, একটা জাতিকে যে রকম যুদ্ধের রেশ বয়ে চলতে হয় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ।

আলতাফ পারভেজ: গবেষক