গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হ্যানয় শীর্ষ বৈঠক কোনো চুক্তি ছাড়াই শেষ হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন তৃতীয় শীর্ষ বৈঠকের জন্য কোনো চেষ্টাই করেননি।
২০১৮ সালের জুন মাসে ট্রাম্প যখন সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন কিমের সঙ্গে প্রথম শীর্ষ বৈঠক করতে, তখন সেই বৈঠকের দুটি ভিন্ন মূল্যায়ন হয়েছিল। এক পক্ষ যুক্তি দিয়েছিল যে কিমের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক করাটা অর্থহীন, কারণ, কিম কখনোই তাঁর দেশের পারমাণবিক কর্মসূচি পরিত্যাগ করবেন না। অন্য পক্ষ যুক্তি দিয়েছিল যে উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করার জন্য ট্রাম্পের প্রচেষ্টায় জনগণের সমর্থন দরকার।
সেই সময় দক্ষিণ কোরিয়ার বেশির ভাগ নাগরিক কিমের সঙ্গে বৈঠকের জন্য ট্রাম্পের উদ্যোগের প্রশংসা করেছিল। কারণ, কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট এর আগে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সরাসরি আলোচনার চেষ্টা করেননি। এ ছাড়া কিছু মানুষ শীর্ষ বৈঠক সম্পর্কে আশাবাদী না হলেও বহু দক্ষিণ কোরীয় মনে করেছিল যে শীর্ষ বৈঠকের মাধ্যমে কোরীয় যুদ্ধের সমাপ্তির ঘোষণা আসতে পারে।
বাস্তবে সেটা না হলেও দেশ দুটি যে অনির্দিষ্টকালের অচলাবস্থার অবসান ঘটিয়েছে, তা ঠিক। তবে এখন এটা কেউ আন্দাজ করতে পারছে না যে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে ট্রাম্প ও কিমের তৃতীয় শীর্ষ সম্মেলন কখন হবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার রক্ষণশীল ও প্রগতিশীল উভয় সংবাদমাধ্যমই হ্যানয় শীর্ষ বৈঠকের পর অনুমান করেছে যে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক আগের চেয়ে আরও খারাপ হতে পারে। রক্ষণশীল গণমাধ্যম জুনগাং ইলবো এবং চোসুন ইলবো এমন সব প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যাতে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যকার সমস্যা সমাধানে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে ইনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আসতে পারে। দেশটির অন্যতম প্রগতিশীল সংবাদপত্র কিউংহিয়াং সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট জন হাম্রে সম্পর্কে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। হাম্রে বলেছেন, আগামী নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যকার সম্পর্ক আর উন্নত হবে না। এ সবগুলো হয়তো বৈধ পয়েন্ট, তবে সংবাদপত্রগুলোর সেই একই পুরোনো গল্পের চেয়ে নতুন কিছু রিপোর্ট করা উচিত। এখন সবাই জানেন যে উত্তরের পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগ করার ব্যাপারে কিমকে রাজি করানো কঠিন হবে।
সিঙ্গাপুরে শীর্ষ বৈঠকের পরে উত্তর কোরিয়ার কেন্দ্রীয় সংবাদ সংস্থা যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে সংবাদ সতর্কতার সঙ্গে পরিবেশনের চেষ্টা করেছিল। তবে হ্যানয় শীর্ষ বৈঠকের পর এটি আবার শক্তিশালী শব্দ ব্যবহার শুরু করে। সংবাদ সংস্থাটি উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার অবসান ঘটাতে কেবল যুক্তরাষ্ট্রকেই নয়, দক্ষিণ কোরিয়াকেও চাপ দিয়েছিল। এসব বিষয়ে আগ্রহী লোকেরা ভালো করেই জানেন উত্তর কোরিয়া কেন আবার যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর শব্দ ব্যবহার শুরু করেছে।
উত্তর কোরিয়া যে এখন বলছে, এটি তার ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচি পুনরায় চালু করবে, তাতে আর অবাক হওয়ার কিছু নেই। যাহোক, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এস্পার যখন আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদমাধ্যমের কাছে ঘোষণা করেন যে আমেরিকানরা যেকোনো সময় উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রস্তুত, তখন পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী এবং যুদ্ধের জন্য দেশটি ভালোভাবে প্রস্তুত। তবে মার্কিন সরকারের কর্মকর্তাদের চিন্তা করা উচিত যে কীভাবে তাঁরা উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তাদের এবং রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আরও কার্যকরভাবে যোগাযোগ করবেন, যাতে তাঁরা আলোচনার টেবিলে ফিরে আসেন।
ট্রাম্প এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে এ বিষয়ে আরও গুরুত্বসহকারে প্রস্তুতি নিতে হবে। উত্তর কোরিয়া আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার জন্য একটি নির্দিষ্ট কারণ অনুসন্ধান করছে। কিম স্বৈরশাসক হতে পারেন, তবে হ্যানয় শীর্ষ বৈঠকের ব্যর্থতার কারণে তাঁর দেশে মতবিরোধের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তাঁর এখন দৃঢ় অজুহাত প্রয়োজন।
ইরানের শীর্ষস্থানীয় সামরিক নেতা কাশেম সোলাইমানিকে হত্যা করার ট্রাম্পের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত ইরানের সঙ্গে সমস্যা সমাধানের জন্য সেরা বিকল্প ছিল না। সামরিক বিকল্প সর্বোত্তম সমাধান হতে পারে না, যদি তা সফলও হয়। কিছু গণমাধ্যম এই আশঙ্কা করে খবর প্রকাশ করা শুরু করেছে যে ট্রাম্প উত্তর কোরীয় নেতাদের বিরুদ্ধে একই সামরিক অভিযান চালাতে পারেন।
মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি বিবেচনা করে কিছু লোক মনে করতে পারে যে ট্রাম্পের পদক্ষেপ অনিবার্য ছিল। তবে ট্রাম্পের উচিত সব সময় নিজেকে এটা স্মরণ করিয়ে দেওয়া যে অন্য কোনো উপায়ে মোকাবিলা করা যায় না এমন সমস্যা সমাধানের জন্য সামরিক বিকল্পগুলো অবশ্যই চূড়ান্ত পদক্ষেপ। তবে কোরীয় উপদ্বীপে স্থায়ী শান্তি আনতে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেত্রে তাঁকে অন্য উপায় অবলম্বন করতে হবে।
এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
মিচ শিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ডেইলি ইউটাহ ক্রনিকল পত্রিকার সংবাদদাতা