দূরত্ব প্রায় সাত হাজার কিলোমিটার। তবু উগান্ডায় বাংলাদেশ সুপরিচিত। দেশটির প্রায় ৮০ জেলায় কাজ করছে বাংলাদেশের ‘ব্র্যাক’। সেখানে একটা ব্যাংকও গড়েছে বৃহৎ এই উন্নয়ন সংস্থা।
আবার বাংলাদেশেও উগান্ডার খুব পরিচিতি। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেখানে বাংলাদেশিদের দুঃখভারাক্রান্ত অনেক রসিকতায় মিশে থাকে উগান্ডার নাম। বাংলাভাষীদের হাসিঠাট্টার বড় এক প্রতীক দেশটি।
বাংলাদেশের প্রায় ৯ বছর আগে স্বাধীন হয় উগান্ডা। এত দীর্ঘ সময় পেরিয়েও উগান্ডার রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো মোটেই সবল হতে পারেনি। বরং উল্টোটি ঘটেছে। তবে এ–ও সত্য, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ২০১৮-এর দুর্নীতি সূচকে বাংলাদেশ ও উগান্ডা উভয় দেশ যৌথভাবে ১৮০ দেশের মধ্যে ১৪৯তম হয়েছে। আগের বছরের তুলনায় উগান্ডা দুই ধাপ এগোয়। বাংলাদেশ ছয় ধাপ পেছায়। মোটামুটি কাছাকাছিই থাকছে তারা। উগান্ডা-বাংলাদেশ হাসিঠাট্টার দাতা-গ্রহীতা তাই একাকার।
শাসক বুড়ো থামতে নারাজ
আন্তর্জাতিক পরিসরে উগান্ডার শাসকদের বলা হয় ‘হাইব্রিড রেজিম’। বাংলা ভাষায় হাইব্রিড রেজিমের মুখরোচক কোনো অনুবাদ চালু হয়নি এখনো। গণতন্ত্রের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়ে যেখানে কর্তৃত্ববাদ কায়েম হয়েছে, এ রকম দেশকেই আন্তর্জাতিক সমাজ ‘হাইব্রিড রেজিম’ বলে। এসব দেশে নিয়মিত নির্বাচন হয়, তবে বিরোধী দল জিততে পারে না। রাজনৈতিক জুলুমে বিরোধীদের বিপন্ন থাকতে হয়। ভাবানুবাদ করলে ‘হাইব্রিড রেজিম’কে বাংলায় বলতে হয় ‘অধঃপতিত গণতন্ত্র’। বিশ্বজুড়ে যেসব দেশে গণতন্ত্র বিশেষভাবে বিধ্বস্ত,Ñসেই তালিকায় উগান্ডা আছে সামনের দিকেই। প্রতিবেশী রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি, দক্ষিণ সুদানেও একই অবস্থা। ‘উন্নয়ন’-এর কথা বলে গণতন্ত্রকে গলাটিপে ধরে রাখা হয়েছে এসব অঞ্চলে।
প্রেসিডেন্ট ইয়োভেরি কাগুতা মুসেভেনি উগান্ডায় ক্ষমতায় আছেন ৩৩ বছর। বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো পাঁচ শাসকের মধ্যে মুসেভেনিও আছেন। কম্বোডিয়ার হুন সেন ছাড়া এই তালিকার বাকি চারজনই আফ্রিকার—উগান্ডার আশপাশের দেশের।
মুসেভেনির বয়স এখন ৭৫। তবে বার্ধক্য তাঁর ক্ষমতায় থাকার কোনো প্রতিবন্ধক হিসেবে নেই আর। বিরোধীরা এতটাই উৎখাত হয়েছে, স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে ক্ষমতাসীন এনআরএমের (ন্যাশনাল রেজিসট্যান্স মুভমেন্ট) বিরুদ্ধে তারা সব আসনে আর প্রার্থীও দিতে পারছে না।
তরুণেরা যখন মরিয়া হয়ে পরিবর্তন চান
উগান্ডায় প্রেসিডেন্ট পদই মুখ্য। তিনি দেশেরও প্রধান, সরকারেরও প্রধান। প্রেসিডেন্ট পদের মেয়াদ ও বয়সের শর্ত দুটোই তুলে নিয়েছেন মুসেভেনি। ২০১৭ সালের আগে উগান্ডায় ৭৫-এর বেশি বয়সীদের প্রেসিডেন্ট হতে বাধা ছিল। মুসেভেনি পার্লামেন্টকে দিয়ে সেটা বাতিল করিয়ে নিয়েছেন। একইভাবে এক ব্যক্তি কয় দফা প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন, সেই আইনও বদলে নেওয়া হয়েছে। এসব বিধান অনুমোদনের দিন মুসেভেনি পার্লামেন্ট ভবনের সামনে তাঁর বাহিনীকে মোতায়েন রেখেছিলেন বিরোধী দলকে ভয় দেখাতে।
বলা বাহুল্য, মুসেভেনি আজীবন প্রেসিডেন্ট থাকতে আগ্রহী। তবে ‘অধঃপতিত গণতন্ত্র’-এ যেহেতু নির্বাচনও হয়, সে কারণে ২০২১-এ তাঁকে ষষ্ঠবারের মতো নির্বাচনের মুখোমুখি হতে হবে। আসন্ন এই নির্বাচন নিয়ে মুসেভেনি কিছুটা দুশ্চিন্তায় আছেন। এ রকম অবস্থায় যাতে না পড়তে হয়, তার জন্য অতীতে প্রায় সব রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা রাখতে পারলেও বিস্ময়করভাবে তাঁর সামনে এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছেন তরুণ এক সংগীতশিল্পী, যাঁর কোনো রাজনৈতিক অতীত নেই। বিস্তারিত রাজনৈতিক কর্মসূচিও নেই। অথচ তরুণদের কাছে এই যুবকই এখন পরিবর্তনের প্রতীক।
উগান্ডার এই পরিস্থিতি সমচরিত্রের অন্যান্য দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ বোঝারও কিছু ইঙ্গিত দেয়। নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পথ বন্ধ হলে অপ্রচলিত পথে তরুণেরা কীভাবে সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিমণ্ডল থেকে তাঁদের নেতা খুঁজে নেন, উগান্ডর ববি ওয়াইন এ মুহূর্তে তার বৈশ্বিক এক নমুনা। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ উগান্ডার মুরব্বি দেশগুলো এখনো নিশ্চিত ইঙ্গিত দেয়নি পুরোনো বন্ধু মুসেভেনিকে ত্যাগ করবে কি না তারা। কারণ, গণচীন অপেক্ষা করছে একই ধরনের বন্ধুত্বের জন্য। ইতিমধ্যে তারা দেশটির প্রধান ‘ঋণদাতা’ হয়ে গেছে।
প্রচলিত রাজনীতি ও তারুণ্যের ব্যবধান যখন অনেক
‘উন্নয়ন’-এর জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে করতে উগান্ডা রাজনৈতিকভাবে প্রায় নিঃস্ব। এ অবস্থার জন্য দেশটির বিরোধী দলও কম দায়ী নয়। ক্ষমতায় ফিরে আসার আকাঙঙ্ক্ষা ছাড়া মুসেভেনির বিরোধীরা জনগণের কাছে দীর্ঘমেয়াদি কোনো বিকল্প নীতিকৌশল তুলে ধরতে পারেনি, যা উগান্ডার রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্জীবন ঘটাতে পারে। মুসেভেনির বিরুদ্ধে একক জোট গঠন সময়ের দাবি হলেও বিরোধীরা সব সময়ই বহুধাবিভক্ত। শহরে বসে বিবৃতি দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো কাজে সামান্যই দেখা যায়। তরুণদের আকর্ষণ করার মতো মুসেভেনির চেয়ে বাড়তি কিছু নেই এসব দলের হাতে। মুসেভেনি বিরোধীদের অন্তঃকলহ বরাবরই ভালোমতো ব্যবহার করছেন। কিন্তু অসুখী তরুণ-তরুণীরা তাঁর জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছেন। এটা বিশ্বের অন্য কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোতেও চেনা চিত্র।
আফ্রিকার জনসংখ্যায় তরুণ বয়সীদের প্রবল প্রাধান্য যাচ্ছে এ মুহূর্তে। বাংলাদেশে জনসংখ্যার যেখানে গড় বয়স ২৭-২৮, আফ্রিকায় সেটা ২০; উগান্ডায় ১৭। ৭৫ বছর বয়সী প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এই তরুণদের যে মানসিক ব্যবধান থাকবে, সেটা অবধারিত। প্রচলিত রাজনীতি এই ব্যবধান পূরণ করতে পারছে না। ঠিক এখান থেকেই ববি ওয়াইনের শুরু। বস্তিবাসীদের এই সংগীত–হিরো ২০১৭ সালে রাজনীতিতে নেমে এখন আফ্রিকাজুড়ে বুড়ো বুড়ো স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে মনস্তাত্ত্বিক ভীতি ছড়াচ্ছেন। আফ্রিকায় প্রচলিত রাজনীতির যেখানে শেষ, ববি ওয়াইনদের মতো অপ্রচলিত নেতৃত্বের সেখানেই শুরু। এ রকম প্রবণতা বিশ্বের অন্যত্রও দেখা যাচ্ছে।
‘আজীবনের প্রেসিডেন্ট’ বনাম ‘গরিবের প্রেসিডেন্ট’
সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আফ্রিকার কম দেশেই এখনো ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটে। বৃদ্ধ স্বৈরশাসকেরা গণ–অভ্যুত্থান বা সামরিক অভ্যুত্থান না হলে ক্ষমতা ছাড়তেই চান না। যিনি যেভাবেই ক্ষমতায় এসেছেন,Ñপ্রথমে চেষ্টা করেছেন একদলীয় শাসন কায়েমের; তারপর সেটাকে এক ব্যক্তির শাসনে পরিণত করে নিয়েছেন। রাষ্ট্রকাঠামোর ব্রিটিশ মডেল তাঁদের ক্ষমতালিপ্সার জন্য বেশ সহায়ক হয়েছে।
উগান্ডায়ও একই চিত্র। মুসেভেনির দমন-পীড়ন এড়িয়ে প্রধান বিরোধী নেতা কিজ্জা বিসাইসি মোটেই সুবিধা করতে পারছেন না। যদিও ২০২১-এও তিনি মুসেভেনির বিরুদ্ধে আবার প্রার্থী হচ্ছেন। কিন্তু শহুরে তরুণেরা চাইছেন বিসাইসির চেয়েও বেশি কিছু।
এ রকম সম্ভাব্য গণ–অভ্যুত্থান ঠেকাতে আফ্রিকায় অনেক শাসক গ্রামের উৎপাদকদের ঠকিয়ে হলেও শহরে খাদ্যদ্রব্যের দাম কমিয়ে রাখছেন। তারপরও দীর্ঘ কর্তৃত্ববাদের ছায়ায় তরুণদের দমবন্ধ অবস্থা। কেবল রাজনৈতিক পরিবর্তনহীনতা নিয়েই নয়,Ñতরুণেরা ক্ষুব্ধ বেকারির কারণেও। এখন ‘অধঃপতিত’ উগান্ডার মতোই চিত্র এশিয়া-আফ্রিকার অনেক দেশের। কাজের সন্ধানে তরুণ-তরুণীদের শহরে আগমন বাড়ছে। থাকতে হচ্ছে বস্তিসদৃশ এলাকায়। কাম্পালার কামওয়াকেয়া নামের এ রকম এক বস্তিতেই বড় হন গায়ক ববি ওয়াইন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। ববির গানে বরাবরই উঠে আসে শহুরে গরিবদের দুঃখগাথা। এভাবে ক্রমে সুবিধাবঞ্চিত তারুণ্যের পছন্দের প্রতীক হয়ে উঠতে থাকেন তিনি। তাঁকে বলা শুরু হয় ‘বস্তির প্রেসিডেন্ট’। কেউ কেউ ‘গরিবদের প্রেসিডেন্ট’ও বলে।
শিল্পী নাম ‘ববি ওয়াইন’ হলেও সংগীতশিল্পী থেকে রাজনীতিবিদ হিসেবে পাল্টে যাওয়া উগান্ডার এই তরুণের আসল নাম রবার্ট কিয়াগুলানই সেসেনটামু। ২০১৭ সালে পার্লামেন্ট নির্বাচনে নেমে সরকারি দল এনআরএম ও বিরোধী এফডিসি (ফোরাম ফর ডেমোক্রেটিক চেঞ্জ) উভয়ের প্রার্থীকে বিপুল ব্যবধানে হারান। তিনি শুধু ঘরে ঘরে ভোটারদের সঙ্গে দেখা করছিলেন। লাখ লাখ তরুণ তাঁর পিছু নেন। এরপর থেকে দুই বছরে যত উপনির্বাচন হয়েছে উগান্ডায়, সব কটিতে ববি–সমর্থিত প্রার্থীরা প্রধান দুই দলের প্রার্থীদের হারাচ্ছেন। এখন সবাই জানে, বিরোধী দলের বিখ্যাত নেতারা কেউ নন, মুসেভেনিকে ২০২১-এ চ্যালেঞ্জ জানাতে চলেছেন ববি ওয়াইন।
কর্তৃত্ববাদে পরিবারতন্ত্র: উগান্ডা যেন বিশ্বের ছবি
বয়সে ববি মুসেভেনির অর্ধেকের কম। দেশজুড়ে রাজনৈতিক শূন্যতার মধ্যে তিনি যখনই প্রেসিডেন্ট পদে লড়বেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন, তখনই শুরু হেনস্তার পালা। দেড় বছরে তিনবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁকে। প্রথম গ্রেপ্তারেই পিটিয়ে পা ভেঙে দেওয়া হয়। প্রেসিডেন্টের গাড়িবহরে পাথর নিক্ষেপের মামলা দিয়ে হয়রানি শুরু। অভিযোগের তালিকা বাড়ছে কেবল। সর্বশেষ ঝুলছে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগসহ আরও বহু খড়্গ। ‘অধঃপতিত গণতন্ত্র’-এর দেশগুলোতে এটা অতি চেনা চিত্র যে শাসকদের বিরোধিতা করলেই যে কারও বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগ দেওয়া হয়। শাসকেরা নিজেদেরই দেশ ও রাষ্ট্র ভাবতে শুরু করেন। ১৯৮৬ থেকে মুসেভেনিরও একই অভ্যাস।
গত জানুয়ারিতে ফার্স্ট লেডি জেনেট মুসেভেনি অবশ্য পরিস্থিতির অভিনব এক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর মতে, মুসেভেনি যে এত দিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং আছেন, সেটা ‘ঈশ্বরেরই ইচ্ছা’। সুতরাং সামনের নির্বাচনকে জনগণ যেন কেবল রাজনীতি হিসেবে না দেখেন। বলা বাহুল্য, বুড়ো মুসেভেনি ইতিমধ্যে স্ত্রীকে শিক্ষামন্ত্রী বানিয়ে নিয়েছেন। ছোট ভাই জেনারেল সেলিম সালেহও কিছুদিন মন্ত্রী ছিলেন। এই ভাইকে দিয়ে তিনি মূলত সামরিক বাহিনীকে প্রয়োজনমতো ব্যবহার করতেন। সালেহের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ পর্যন্ত এসেছে। জেনেট ও সালেহ উভয়ের রয়েছে দুটি বৃহৎ এনজিও, যেগুলোর তহবিলের উৎস ও ব্যবহার নিয়ে রয়েছে বহু প্রশ্ন। মুসেভেনি পুত্র মুহুজি কেইনারুগাবাকে সম্প্রতি সশস্ত্র বাহিনীর তিন তারকা জেনারেল বানানো হয়েছে।
এভাবেই উগান্ডার ক্ষমতার ওপরমহল দখল করে আছে মুসেভেনির নিকটজন এবং ছোট্ট একটা সুবিধাপ্রাপ্ত গোষ্ঠী। কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোতে এটা অবশ্য নতুন কোনো চিত্র নয়। একচ্ছত্র ক্ষমতা ও দুর্নীতির মিশেলে জবাবদিহিহীন গোষ্ঠীতন্ত্রই এ রকম জনপদের বাস্তবতা।
বিশ্বব্যাপী মুসেভেনি সিনড্রোম
উগান্ডা এই অর্থে বিশ্বের অন্যতম বিরল দেশ, যেখানে ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি ব্যবহারে কর বসিয়ে রাখা হয়েছে। মুসেভেনি তাঁর সমালোচনা কমিয়ে রাখতেই গত জুলাই থেকে অভিনব এই ব্যবস্থা নেন। দক্ষিণ এশিয়ার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুসেভেনির ওই নিরীক্ষা একদা বেশ আতঙ্ক তৈরি করেছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুসেভেনি ও তাঁর পরিবারের সমালোচনা সরাসরি শাস্তিযোগ্য। আটক করে প্রথমেই পেটানো হয় এসব ক্ষেত্রে। তবে মুসেভেনিকে সামনের দিনগুলোতে যে আরও ‘কঠোর’ হতে হবে, সেটা নিশ্চিত। কারণ, প্রথাগত বিরোধী দল যা পারেনি, ববি ওয়াইন তা–ই পারছেন। তরুণেরা তাঁর ডাকে রাস্তায় নামেন, এমন প্রমাণ মিলছে। মুসেভেনির জন্য নির্বাচনী ফল নয়,Ñতরুণদের রাস্তায় নেমে পড়ার সাহস বেশি ভীতিকর। এটা এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করে ফেলতে পারে, যখন তিনি কেবল ক্ষমতাই হারাবেন না, ৩৩ বছরের নানান অপকর্মের জন্য তাঁকে বিচারের মুখোমুখিও হওয়ারও শঙ্কা রয়েছে।
এশিয়া-আফ্রিকার অনেক শাসকই মুসেভেনির মতো ‘ভুল’ করছেন। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পথ রুদ্ধ করে তাঁরা ববি ওয়াইনদের মতো অনুমান–অযোগ্য ব্যক্তিদের রাজনীতিতে ঢুকে পড়ার পটভূমি তৈরি করছেন। এই ববি ওয়াইনরা গোষ্ঠীতন্ত্রের সাজানো-গোছানো উপরিকাঠামোটিকে পাল্টাতে চাইলেও তাঁদের কাছে নেই সুনির্দিষ্ট বিকল্প কর্মসূচি বা দর্শন। কিন্তু তারপরও বিশ্বের অনেক অঞ্চল ববি ওয়াইনদেরই খুঁজছে কেবল। কারণ, দীর্ঘ কর্তৃত্ববাদে তারা দিশেহারা। তারা এখন অক্সিজেন চাইছে।
আলতাফ পারভেজ: গবেষক