(অনাস্থা ভোটে পাকিস্তানে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন হয়েছে শনিবার দিবাগত রাতে। এ বিষয়ে পাকিস্তানের দ্য ডন পত্রিকার অনলাইনে সম্পাদকীয় প্রকাশ করা হয়েছে। প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য সেটি বাংলায় প্রকাশ করা হলো।)
গত রাতের ঘটনাবলির একপর্যায়ে মনে হচ্ছিল, রাষ্ট্রের সব কটি স্তম্ভ যেন এক অনিবার্য সংঘর্ষের মুখে দাঁড়িয়ে। সর্বোচ্চ পর্যায়ের বিপর্যয় রাষ্ট্রকে আঘাত হানতে যাচ্ছে। এমনকি ইমরান খান নিজের পতন অত্যাসন্ন জেনেও একটি অতিসাধারণ সংসদীয় প্রক্রিয়াকে প্রহসনে পরিণত করার দিকেই বেশি মনোযোগী ছিলেন। বিচার বিভাগের প্রধান, সেনাবাহিনীর প্রধান ও সাংসদদের নিজের ক্লান্তিকর কূটচালের ‘শেষ বল’ পর্যন্ত খেলতে বাধ্য করলেন। ঘড়ির কাঁটায় আরেকটা দিন শুরুর ঠিক শেষ মুহূর্তে তিনি বিদায় নিলেন, বিরোধীদের অবশেষে সেটি বলতে দিলেন।
২০১৮ সালের নির্বাচনে পিটিআই যখন বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল, সে সময় তারা সবাইকে মুক্ত বাতাসে শ্বাস নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। যদিও রাজনৈতিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও ত্রুটিপূর্ণ ফল প্রকাশ পদ্ধতি পিটিআইয়ের জয়ের বৈধতাকে কিছুটা খর্ব করেছিল। কিন্তু পুরো দেশ সাধারণভাবে দলটিকে সরকার পরিচালনার সুযোগ দিয়েছিল। যা হোক, ক্ষমতা আহরণের প্রায় সঙ্গে সঙ্গে উচ্চ আদর্শ থেকে তাদের পতন শুরু হয়।
সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় দলটি কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের জন্য অগণতান্ত্রিক শক্তির সঙ্গে হাত মেলায়। দলটির নেতৃত্ব ভেবে থাকতে পারে এই আপসের যে ক্ষতি, তা তারা সরকারের অর্জনের মধ্য দিয়ে পুষিয়ে নেবে। কিন্তু অনভিজ্ঞতার কারণে শিগগিরই তারা হতাশ হয়ে পড়ে। এক বছরের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের জন্য হুড়োহুড়ি শুরু করে দিলেন।
বিরোধী দলে যখন থাকেন, তখন ইমরান খান ভয়ংকর প্রতিপক্ষ, নিজের লক্ষ্যপূরণে অবিশ্বাস্য রকমের লড়াকু। নিরলস সাধনা ও ঐশী গুণাবলি তাঁকে পাকিস্তানের একজন দুর্দান্ত নেতায় পরিণত করেছে। অনেকে মনে করেন, ইমরানের যে জননায়কোচিত গুণাবলি রয়েছে, সেখান থেকেই ভবিষ্যতে নতুন পর্যায়ের ইমরানের আবির্ভাব হবে।
দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, আত্মমূল্যায়ন ও ভুলগুলো সংশোধনের বদলে পিটিআই বিরোধীদের ওপর চড়াও হয়েছিল। তাদের এ কৌশলের কারণে যাঁরা সত্যিকারের বদল চেয়েছিলেন, তাঁরা বাতিল হয়ে গেলেন। এ শূন্যতায় দলটি প্রধান প্রধান সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে স্টাবলিশমেন্টের (সেনাবাহিনী) ওপর বেশি করে নির্ভরশীল হয়ে পড়ল। এটা চূড়ান্ত বিচারে পিটিআইয়ের জন্য সর্বনাশা বলে প্রমাণিত হয়েছে। ফলে যখন স্টাবলিশমেন্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা আর পিটিআইকে ক্র্যাচের ভর জোগান দেবে না, তখন দলটি দাঁড়িয়ে থাকার সক্ষমতা হারিয়েছে।
যদিও অনভিজ্ঞতাই শেষ বিচারে পিটিআইয়ের পতনের কারণ হয়েছে। কিন্তু দলটি সরকার পরিচালনার সময় তাদের বেশ কিছু অর্জন প্রশংসনীয়। সফলতার সঙ্গে কোভিড মহামারি মোকাবিলা, বহুমুখী ইহসাস কর্মসূচি, নতুন জনস্বাস্থ্য ইনস্যুরেন্স প্রকল্প—এসব অনেক নাগরিকের জীবনে ইতিবাচক বদল নিয়ে এসেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে এ জন্যই অনেকে দীর্ঘদিন ধরে মনে রাখবে। সুতরাং ইমরান খানকে বাদ দিয়ে তাঁর সরকারের সময়কালকে তুলে ধরার চেষ্টা বোকামি হবে।
বিরোধী দলে যখন থাকেন, তখন ইমরান খান ভয়ংকর প্রতিপক্ষ, নিজের লক্ষ্যপূরণে অবিশ্বাস্য রকমের লড়াকু। নিরলস সাধনা ও ঐশী গুণাবলি তাঁকে পাকিস্তানের একজন দুর্দান্ত নেতায় পরিণত করেছে। অনেকে মনে করেন, ইমরানের যে জননায়কোচিত গুণাবলি রয়েছে, সেখান থেকেই ভবিষ্যতে নতুন পর্যায়ের ইমরানের আবির্ভাব হবে। একজন সত্যিকারের নেতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা, বিভাজন সৃষ্টিকারী বর্ণনা ও ক্ষয়কারী রাজনীতি দিয়ে জাতিকে বিষিয়ে তোলা নয়। বিষয়টি ইমরানকে ভালোভাবে অনুধাবন করতে হবে।