আপাতদৃষ্টে ভ্লাদিমির পুতিনের পারমাণবিক হামলার সম্ভাব্যতা নিয়ে নানা মন্তব্যকে কারও কাছে শিশুতোষ আচরণ বলে মনে হতেই পারে। কারণ, পুতিন পৃথিবীর একমাত্র পারমাণবিক বোমার অধিকারী মানুষ নন; তাঁর হামলার জবাবে তিনিও তো শিকার হতে পারেন পাল্টা হামলার। তাই এমন হামলা তাঁর না করারই কথা। কিন্তু বিষয়টি কি এতটাই সরল?
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিকেই পুতিন তাঁর পারমাণবিক অস্ত্র ও সেটির পরিচালনাকারী বাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তখন বিষয়টিকে নিছকই একটি হুমকি বলে অনেকের মনে হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন ধরে ইউক্রেনে পুতিন পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করবেন কি না, সেই সম্ভাব্যতা নিয়ে অনেক আলাপ-আলোচনা চলছে এবং সেটা যৌক্তিক কারণেই। এই আলোচনায় বিস্তারিতভাবে যাওয়ার আগে রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের সর্বশেষ কিছু পরিস্থিতি জেনে নেওয়া জরুরি।
কিছুদিন আগেই পুতিন ঘটা করে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে তাঁর অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করে জানান, তাঁর বাহিনী পূর্বাঞ্চলীয় দোনেস্ক এবং লুহানস্কের ‘রুশভাষী মানুষদের নব্য-নাৎসিদের হাত থেকে রক্ষা করায়’ মনোযোগ দেবে। একটা জিনিস মোটামুটি স্পষ্ট, সর্বাত্মক আক্রমণের মাধ্যমে কয়েক দিনের মধ্যে কিয়েভ দখল করে সেখানে বেলারুশের আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর মতো একজন ‘পুতুল’ শাসক বসিয়ে রুশ বাহিনী ন্যূনতম ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়ে সুন্দরভাবে দেশে ফিরে যাবে, সে আশায় একেবারেই গুঁড়েবালি হয়েছে।
ইউক্রেন আগ্রাসনে কমপক্ষে আটজন জেনারেলসহ বহু হাজার রুশ সৈন্যের মৃত্যু হয়েছে (সংখ্যাটি স্পষ্ট নয়)। রাশিয়ার শত শত ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান বিধ্বস্ত হয়েছে। ভূপাতিত হয়েছে বেশ কিছু হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমান। এমনকি ইউক্রেনে আক্রমণ পরিচালনাকারী রাশিয়ার কৃষ্ণসাগরীয় নৌবহরের নেতৃত্বদানকারী জাহাজ, যেখানে কমান্ডার থাকেন (ফ্ল্যাগশিপ) সেই মস্কোভাকে নিজের তৈরি ‘নেপচুন’ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ডুবিয়ে দিয়েছে ইউক্রেন।
আসলে প্রতিটি স্বৈরশাসককেই ফ্যান্টাসির জগতে বাস করতে হয়। স্বৈরশাসকেরা যেহেতু চরিত্রগতভাবে তাঁদের চিন্তার বাইরের কথা পছন্দ করেন না, তাই চিরকালীন চাহিদা-জোগান তত্ত্ব মেনে তাঁর চাহিদার ভিত্তিতেই তাঁর চারপাশে আসতে থাকে সেসব তথ্য, যেসব তিনি পছন্দ করেন; এমনকি যদি সেগুলো ডাহা মিথ্যা কথাও হয়। তাঁদের চারপাশ ঘিরে থাকে, তাঁদের প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন এমন সব মানুষ, যাঁরা তাঁদের পছন্দমতো তথ্য, বিশ্লেষণ হাজির করতে পারেন।
ইউক্রেনের বলা ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে একমত না হলেও রাশিয়া প্রকাশ্যে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধে তাদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
কাগজে-কলমে অ-পারমাণবিক অস্ত্রের (কনভেনশনাল উইপন) বিচারে পৃথিবীর দ্বিতীয় শক্তিশালী সেনাবাহিনীটির এই পরিণতি হবে, এটা অনেকেই ভাবেননি। প্রবল পরাক্রমশালী রুশ সামরিক বাহিনীর প্রতি যে ভীতি থাকার কথা, সেটা অনেকটাই কেটে গেছে বলা যায়। কাঁধে বহনযোগ্য ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র (বিশেষত জ্যাভলিন) এবং নিচু দিয়ে উড়ে যাওয়া যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টারবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র (বিশেষত স্টিংগার) আর তুরস্কের অত্যাধুনিক সশস্ত্র ড্রোন রীতিমতো জাদু দেখিয়েছে।
ন্যাটোর সরবরাহ করা তুলনামূলক অনেক হালকা যুদ্ধাস্ত্রের সামনে রাশিয়ার ভারী সামরিক যন্ত্র যেভাবে নাকানিচুবানি খেয়েছে, সেটা রাশিয়ার অস্ত্রের ওপরে বৈশ্বিক আস্থা কমাবেই। ভবিষ্যতে রাশিয়ার অস্ত্র ব্যবসা বড় ধরনের ক্ষতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে, এটা নিশ্চিত। দনবাস অঞ্চলে রুশ বাহিনী কতটা সফল হবে, সেটা এখনো বলা কঠিন। কিন্তু তাতে যদি তারা পুরোপুরি সফল হয়ও, গত দুই মাসের যুদ্ধে রুশ বাহিনী যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে, সেটাকে তাদের সামরিক পরাজয় বলাই যায়।
ইউক্রেন আক্রমণের ক্ষেত্রে রাশিয়ার পরিস্থিতি বোঝার ঘাটতি, পর্যাপ্ত প্রস্তুতির অভাব এবং মূল উদ্দেশ্য সফল না হওয়া নিয়ে এখন বিশ্বব্যাপী আলোচনা হচ্ছে। বলা বাহুল্য, পশ্চিমা মিডিয়ায় আলোচিত বহু বিষয়কে এসব মিডিয়ার পূর্বের কিছু স্খলন সামনে এনে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা পুতিনপন্থীদের আছে। মজার ব্যাপার, দিন কয়েক আগেই ইউক্রেন আগ্রাসনে নানা ক্ষেত্রে রাশিয়ার ব্যর্থতার স্বীকৃতি দিয়েছেন রাশিয়ার সাবেক উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বর্তমানে পুতিনের পররাষ্ট্রবিষয়ক অন্যতম উপদেষ্টা আন্দ্রেই ফেদরভ।
হার্ড টকের বিখ্যাত সাবেক উপস্থাপক টিম সেবাস্তিয়ানের সঙ্গে ডয়চে ভেলের কনফ্লিক্ট জোন অনুষ্ঠানে জনাব ফেদরভ আরও স্বীকার করেন ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার আগ্রাসন (তিনি যদিও এটাকে স্পেশাল মিলিটারি অপারেশনই বলেছেন) বেসামরিক নাগরিকদের জন্য যে দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে, সেটা দীর্ঘ মেয়াদে রাশিয়ার স্বার্থের পরিপন্থী হবে। তিনি স্বীকার করেন, ইউক্রেনের জনগণ (জাতিতে একই, স্লাভিক) এখন রাশিয়ার ক্ষমতাসীন রেজিম তো বটেই, সাধারণ রুশ নাগরিকদেরও শত্রুজ্ঞান করছে। সবচেয়ে জরুরি কথা, সেবাস্তিয়ানের প্রশ্নের জবাবে ফেদরভ স্বীকার করেন রাশিয়ার ক্ষমতাসীনরা বাস্তবতা-বিবর্জিত একটা ফ্যান্টাসির জগতে (ফেদরভের ভাষায় আইভরি টাওয়ারে) বসবাস করেন।
আসলে প্রতিটি স্বৈরশাসককেই ফ্যান্টাসির জগতে বাস করতে হয়। স্বৈরশাসকেরা যেহেতু চরিত্রগতভাবে তাঁদের চিন্তার বাইরের কথা পছন্দ করেন না, তাই চিরকালীন চাহিদা-জোগান তত্ত্ব মেনে তাঁর চাহিদার ভিত্তিতেই তাঁর চারপাশে আসতে থাকে সেসব তথ্য, যেসব তিনি পছন্দ করেন; এমনকি যদি সেগুলো ডাহা মিথ্যা কথাও হয়। তাঁদের চারপাশ ঘিরে থাকে, তাঁদের প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন এমন সব মানুষ, যাঁরা তাঁদের পছন্দমতো তথ্য, বিশ্লেষণ হাজির করতে পারেন।
অর্থাৎ রাশিয়া-ইউক্রেন আগ্রাসনের আগে কোনো জেনারেলের মাথায় কোনো অপ্রিয় সম্ভাবনার কথা থাকলেও সেটা তিনি পুতিনকে বলেননি। তাই যখন ন্যাটোর সদস্যদেশগুলোর সরবরাহ করা কিছু হালকা অস্ত্রের সামনেই নাকানিচুবানি খেল ‘পরাক্রমশালী’ রুশ সেনাবাহিনী, তখন সেই পরিস্থিতি নিশ্চয়ই ‘বিনা মেঘে বজ্রপাত’ হয়েছে পুতিনের জন্য।
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, পুতিনের একটি পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করার জবাবে পশ্চিম এ রকম একটি যুদ্ধ শুরু করতে যাচ্ছে কি না। উদার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ব্যবহারিক কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে আমরা যতই সমালোচনা করি না কেন, এখনো পশ্চিমা দেশগুলোতে গণতন্ত্রের যে মান আছে, সেখানে রাষ্ট্রীয় নানা স্বাধীন প্রতিষ্ঠান, মিডিয়া, বিরোধী দল, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত মতপ্রকাশ এবং প্রতিবাদ সবকিছুকে এড়িয়ে গিয়ে পারমাণবিক বোমা হামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া ভীষণ কঠিন।
অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ দখল করে সেখানে নিজের একজন পুতুল বসিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা সফল হলো না। দনবাসের পুরো এলাকার নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবেন কি না, অনিশ্চিত সেটাও। ইউক্রেন আক্রমণ করার আপাত যে কারণ বলা হয়েছিল, ইউক্রেনের ন্যাটোর অন্তর্ভুক্তকরণ ঠেকিয়ে নিজের সীমানা থেকে ন্যাটোকে দূরে রাখার চিন্তা, সেটাও এগোচ্ছে না ঠিক পথে।
রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন শুরুর আগেই ন্যাটো সদস্য তিন বাল্টিক দেশেরই সীমান্ত ছিল রাশিয়ার সঙ্গে। এর মধ্যে এস্তোনিয়া ও লাটভিয়ার আছে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে আর লিথুয়ানিয়ার আছে রাশিয়ার ছিটমহল কালিনিনগ্রাদের সঙ্গে। এখন ইউক্রেনের পরিণতি দেখে স্নায়ুযুদ্ধের সময়ও নিরপেক্ষ থাকা দেশ ফিনল্যান্ড ও সুইডেন ন্যাটোতে যোগ দিচ্ছে, এটা প্রায় নিশ্চিত। এর জবাবে বাল্টিক অঞ্চলে পারমাণবিক বোমা মোতায়েনের হুমকিকে দেশগুলো খুব একটা পাত্তা দেবে বলে মনে হয় না। কারণ, বাল্টিক অঞ্চলে রাশিয়ার ছিটমহল কালিনিনগ্রাদে এখনই পারমাণবিক বোমা মোতায়েন করা আছে, এটা প্রায় নিশ্চিত।
আলোচিত দেশ দুটি যোগ দিলে ফিনল্যান্ডের সীমান্ত যুক্ত করলে ন্যাটোর সঙ্গে রাশিয়ার সীমান্তের দৈর্ঘ্য বর্তমানের দ্বিগুণের বেশি হয়ে যাবে। পুতিন ইউক্রেন আক্রমণ করে ন্যাটো দেশের সংখ্যা যেমন বাড়াচ্ছেন, তেমনি বাড়াচ্ছেন ন্যাটোর সঙ্গে নিজ দেশের সীমানা। এদিকে এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করেই ট্রাম্পের সময় দূরত্ব তৈরি হওয়া ইউরোপ আমেরিকার সঙ্গে আবার যূথবদ্ধ হয়েছে। ন্যাটো অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। জার্মানিসহ ইউরোপের দেশগুলো সামরিক ব্যয় অনেক বৃদ্ধি করছে।
সর্বোপরি পশ্চিমের কঠোর নিষেধাজ্ঞার ফলে ও ইউরোপের দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাশিয়ার তেল-গ্যাসনির্ভরতা ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত রাশিয়াকে নানা ক্ষেত্রে কার্যত চীনের করুণানির্ভর একটি রাষ্ট্রে পরিণত করছে। পরাশক্তির ‘যোগ্য মর্যাদা’ চাওয়া রাশিয়া নানা দিক থেকেই আগের তুলনায় অনেক দুর্বল একটি রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা এখন প্রবল।
এখন এই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে কোথাও একটা ট্যাকটিক্যাল (যুদ্ধফ্রন্টে ব্যবহার্য কম শক্তির) পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করবেন। এই বোমা ব্যবহার করার আশঙ্কা এখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি করছেন। পেন্টাগনের পক্ষ থেকেও এই ধরনের আশঙ্কার ভিত্তি আছে বলে স্বীকার করা হয়েছে।
আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের পর থেকে পৃথিবীতে পারমাণবিক বোমা হামলার ঝুঁকি বেড়ে গেছে অনেক বেশি। তুলনামূলক দুর্বল শক্তিগুলো জেনে গেল, তাদের অস্ত্রসম্ভার ইউক্রেনের মতো একই ধরনের হলে সে বৃহৎ একটি শক্তিরও পারমাণবিক অস্ত্র (কনভেনশনাল উইপন) ঠেকিয়ে দিতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতে বৃহৎ কোনো শক্তি তুলনামূলকভাবে ক্ষুদ্র কোনো শক্তিকে আক্রমণ করতে গেলেও তার যুদ্ধ পরিকল্পনায় শুরুতেই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের অপশন মাথায় রাখবে।
পুতিন যদি সত্যিই একটা ট্যাকটিক্যাল পারমাণবিক বোমা ইউক্রেনে ব্যবহার করেন, তার তাৎক্ষণিক পশ্চিমা প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে? এ রকম একটা হামলার পরে ন্যাটো কি রাশিয়ায় পাল্টা পারমাণবিক বোমা হামলা করবে? রাশিয়ায় পাল্টা পারমাণবিক বোমা হামলা করার অর্থ রাশিয়া ন্যাটো দেশগুলোর ওপরও হামলা করবে। সেই হামলাগুলো হবে অবশ্যই স্ট্র্যাটেজিক পারমাণবিক (অকল্পনীয় ধ্বংসক্ষমতার থার্মোনিউক্লিয়ার/হাইড্রোজেন বোমা) বোমা দিয়ে। অর্থাৎ পারমাণবিক বোমা দিয়ে যুদ্ধ করে নিশ্চিতভাবে পরস্পরকে ধ্বংস করার এক যুদ্ধ (মিউচুয়ালি অ্যাশুয়ার্ড ডেস্ট্রাকশন—ম্যাড) শুরু হয়ে যাবে।
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, পুতিনের একটি পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করার জবাবে পশ্চিম এ রকম একটি যুদ্ধ শুরু করতে যাচ্ছে কি না। উদার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ব্যবহারিক কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে আমরা যতই সমালোচনা করি না কেন, এখনো পশ্চিমা দেশগুলোতে গণতন্ত্রের যে মান আছে, সেখানে রাষ্ট্রীয় নানা স্বাধীন প্রতিষ্ঠান, মিডিয়া, বিরোধী দল, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত মতপ্রকাশ এবং প্রতিবাদ সবকিছুকে এড়িয়ে গিয়ে পারমাণবিক বোমা হামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া ভীষণ কঠিন। এই সবকিছু এড়িয়ে গিয়ে ন্যাটো রাশিয়ার পারমাণবিক বোমা হামলার জবাবে পাল্টা পারমাণবিক হামলার সিদ্ধান্ত না নেওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট। এমন সম্ভাবনাই পুতিনকে একটি কম সক্ষমতার ট্যাকটিক্যাল পারমাণবিক বোমা হামলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রলুব্ধ করতে পারে।
কোনো পণ্য বা সেবা বাজারজাত করার ক্ষেত্রে বাজারজাতকারীরা সেই পণ্যের কোনো গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যকে আলাদাভাবে জানান ভোক্তাদের। সেই বৈশিষ্ট্যই সেই পণ্যকে বাজারে থাকা অন্য উৎপাদকের পণ্য থেকে আলাদা করে। এটাকেই বলে ইউনিক সেলিং প্রপোজিশন/পয়েন্ট (ইউএসপি)। মানুষের ক্ষেত্রে যদি ইউএসপি খুঁজে দেখার চেষ্টা করা হয়, তাহলে পুতিনের ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে অযৌক্তিক, অন্যায্য, বর্বর বল প্রয়োগ করার ক্ষমতাজনিত ভীতি। দেশের ভেতরে কেউ তাঁর ক্ষমতার প্রতি ন্যূনতম চ্যালেঞ্জ তৈরি করলে তাঁকে কারারুদ্ধ করা, দেশে-বিদেশে গুলি করে কিংবা বিষ প্রয়োগে হত্যা করতে পারেন পুতিন—এটা দেশের ভেতরে তাঁর ক্ষমতাকে অনেকটা নিরাপদ রেখেছে।
দেশের বাইরেও এই ভীতিই পুতিনের ইউএসপি। আমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছি, ইউক্রেন আক্রমণের পর পুতিনের ইউএসপি হুমকির মুখে পড়ে গেছে। ইউক্রেনে পারমাণবিক বোমা হামলার মাধ্যমে সেখানকার বর্তমান যুদ্ধে তাঁর ভীষণ খারাপ পরিস্থিতি থেকে বেঁচে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতেই পারেন পুতিন। আবার সেই বোমা ফিনল্যান্ড, সুইডেনের মতো দেশের ন্যাটোর সদস্য হওয়া ঠেকানোর ক্ষেত্রে চরম বার্তা দিতে পারবেন বলেও ভাবতে পারেন তিনি।
সবচেয়ে বড় কথা, বোমাটি ফাটালে পুতিন যেকোনো সময় যাচ্ছেতাই করে ফেলতে পারেন, এই ভীতি জারি রাখতে পারবেন বিশ্বজুড়ে। দনবাসে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সাফল্য পেয়ে ‘মুখরক্ষা’ করতে না পারলে পুতিনের ইউএসপি রক্ষার একমাত্র পথ হতে পারে ইউক্রেনে পারমাণবিক হামলা করা।
ডা. জাহেদ উর রহমান ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষক