ডাকসু নির্বাচন

আশা, আশঙ্কা ও স্বেচ্ছাসেবামূলক পর্যবেক্ষণের অঙ্গীকার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)।

২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন এ জন্য ধন্যবাদার্হ হবেন। নির্বাচনকে ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একধরনের আগ্রহ ও চঞ্চলতা সৃষ্টি হয়েছে, যা ক্যাম্পাসের বাইরেও আন্দোলন তুলেছে। এই নির্বাচন ঠিকমতো অনুষ্ঠিত হলে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে তৈরি হবে, যার মাধ্যমে ক্যাম্পাসগুলোয় একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি হবে, শিক্ষার্থীরা তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ভাবনাগুলো তুলে ধরার একটি ফোরাম পাবে এবং দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব বিকশিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক হিসেবে আমরাও এই নির্বাচনের দিকে আগ্রহসহকারে চোখ রাখছি। শিক্ষকসমাজ এই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নানান দায়িত্বও পেয়েছেন।

ডাকসু নির্বাচনে সক্রিয় প্রায় সব দল, যেমন: ছাত্রলীগ, বাম জোট ও ছাত্রদল প্যানেল দিয়েছে। পাশাপাশি ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ (কোটা সংস্কার আন্দোলনরে মাধ্যমে যারা পরিচিত হয়েছে উঠেছে) ও স্বতন্ত্র একাধিক প্যানেলও ঘোষণা হয়েছে। সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এবং রাজনৈতিক মহলে আশাবাদ তৈরি করেছে। যেহেতু অতীতে জাতীয় রাজনীতিকে প্রভাবিত করার একটা ঐতিহ্য ডাকসুর ছিল, তাই পরিস্থিতি অনেক পাল্টালেও এই নির্বাচন ছাত্ররাজনীতির প্রকৃতিনির্ধারণী এক নির্বাচন হবে। কারণ, এত দিন ক্যাম্পাসে সরকারি ছাত্রসংগঠনের প্রায় একক আধিপত্য বিরাজমান ছিল, তাই এই নির্বাচন তাদের জন্যও এক পরীক্ষা হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছে।

তবে ইতিমধ্যেই নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের কিছু অভিযোগ আমরা শুনতে পেয়েছি, গণমাধ্যমে সেসবের খবর প্রকাশিত হয়েছে। কিছু ছাত্রাবাসে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে, ফলে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কিছু পদে জয়ী হয়েছে। এ ছাড়া মঞ্চ তৈরি করে প্রচারাভিযান, ক্লাসরুমে প্রচারাভিযান, মাইক ও ড্রামের ব্যবহার, রঙিন ও ব্যয়বহুল পোস্টার-ব্যানার ব্যবহার, গণরুমের শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠনের জন্য প্রচারাভিযানে নামতে বাধ্য করা ইত্যাদি ঘটনার কথা জানা গেছে। কিন্তু সেসবের বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তেমন কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে বলে শোনা যায়নি। অন্যদিকে, সংবাদপত্রের মাত্র দুজন সাংবাদিক এবং টেলিভিশনের ক্ষেত্রে চারটি ক্যামেরা ইউনিটের জন্য অনুমোদন সীমিত রাখা এবং সরাসরি টেলিভিশন সম্প্রচার ও ইন্টারনেট স্ট্রিমিং নিষিদ্ধ করার বিষয়গুলো নির্বাচনের স্বচ্ছতার পরিধিকে সীমিত করে ফেলেছে। এ ছাড়া মাত্র ছয় ঘণ্টায় ৪৩ হাজার শিক্ষার্থীর ভোট কীভাবে নেওয়া সম্ভব, তা নিয়েও সংশয় থেকে যাচ্ছে।

সাম্প্রতিক জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়নি বলে আমরা জানি। জনমনে প্রশ্ন আছে, ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে তো? এই প্রশ্ন আমাদেরও ছুঁয়ে যাচ্ছে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী আমরা ডাকসু নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে—এটাই চাই। এই চাওয়া একটি ন্যূনতম চাহিদা। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাব, নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, এ জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। শিক্ষকবৃন্দের মধ্যে যাঁরা দায়িত্বপ্রাপ্ত রয়েছেন, তাঁরা সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে সজাগ থাকবেন, আমরা সেই আহ্বান জানাই।

আমরা এও অঙ্গীকার করছি যে নির্বাচনের দিনে স্বেচ্ছাসেবী পর্যবেক্ষক দল হিসেবে ভোটকেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করব এবং আমাদের অভিজ্ঞতা জাতির সঙ্গে শেয়ার করব। এ–সংক্রান্ত একটি আবেদনপত্র ডাকসু নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তার (চিফ রিটার্নিং অফিসার) কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।

লেখক: গীতি আরা নাসরীন, কামরুল হাসান, ফাহমিদুল হক, মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, সামিনা লুৎফা, রুশাদ ফরিদী, কাজী মারুফুল ইসলাম, অতনু রব্বানী, তাহমিনা খানম, সাজ্জাদ এইচ সিদ্দিকী। লেখকেরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক।