আমেরিকার ভেতর সামলাতেই গলদঘর্ম বাইডেন

জো বাইডেন
জো বাইডেন

জো বাইডেন ১১ মার্চ বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ‘প্রাইম টাইম’ ভাষণ দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের সরকার ও গণতন্ত্র সত্যিকার অর্থেই আমেরিকান জনগণের জন্য বড় কিছু করতে পারবে কি না, সেই বিশ্বাস আমরা হারিয়ে ফেলেছি।’ বাইডেনের এ কথাকে সাম্প্রতিক বছরগুলোর গভীর তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্যের একটি হিসেবে ধরা যেতে পারে। কয়েক দশক ধরে ওভাল অফিসের কর্তৃত্বের আশায় থাকার পর অবশেষে তা বাইডেনের করায়ত্ত হয়েছে। এখন আমেরিকার প্রশাসনিক ব্যবস্থা সামাল দেওয়ার বিষয়টি তাঁর কর্মক্ষমতা ও নেতৃত্বের ওপর নির্ভর করছে।

বাইডেনকে শুধু কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলোকে আবার চালু করলেই হবে না, এর পাশাপাশি এক বছরের মধ্যে পাঁচ লাখের বেশি আমেরিকানকে হত্যা করা ভয়ানক করোনাভাইরাসের হাত থেকে জাতিকে উদ্ধারও করতে হবে। এর অংশ হিসেবে প্রাইম টাইম ভাষণ দেওয়ার ঘণ্টা কয়েক আগে বাইডেন ‘আমেরিকান রেসকিউ প্ল্যান অ্যাক্ট ২০২১’ নামের একটি বিলে সই করে সেটিকে আইনে পরিণত করেছেন। এটিকে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে আমেরিকার অভ্যন্তরীণ নীতিবিষয়ক সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী আইন হিসেবে মনে করা হচ্ছে।

নতুন এ আইন মূলত একটি গুচ্ছ প্রকল্প। এ প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে বাইডেন সরকার কোভিড-১৯ মহামারির প্রাণ হরণের সক্ষমতাকে নিষ্ক্রিয় করা ও করোনার কারণে মুখ থুবড়ে পড়া অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করবে। পাশাপাশি আগে থেকে বিদ্যমান ধনিকশ্রেণিবান্ধব অর্থনীতিকে একটি জনমুখী ও বৈষম্যহীন নীতিকাঠামোতে আনাও এর উদ্দেশ্য।

প্রায় সমানসংখ্যক আসনে বিভক্ত সিনেটে রিপাবলিকান পার্টির সর্বসম্মত বিরোধিতার পর মাত্র এক ভোটে আইনটি পাস হয়েছে। আইনটি পাসের ক্ষেত্রে প্রতিনিধি পরিষদেও রিপাবলিকান পার্টির সর্বসম্মত বিরোধিতা ছিল।

এ গুচ্ছ প্রকল্পের আওতায় বেশির ভাগ নাগরিককে সর্বোচ্চ মাসে ১ হাজার ৪০০ ডলার করে দেওয়া, শিশুদের সহায়তা দেওয়ার পরিসর বাড়ানো, শিশুরা যাতে স্কুলে এবং তাদের অভিভাবকেরা নিশ্চিন্তে কাজে ফিরতে পারেন, সে জন্য অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় সরকারের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো, ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যাতে আবার তাঁদের ব্যবসা খুলতে পারেন, সে জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখার বিষয়টি অনুমোদন করেছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার চালু করা অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট (যেটি ‘ওবামাকেয়ার’ নামে পরিচিত) নামের স্বাস্থ্যসেবাবিষয়ক কর্মসূচিকে এ বিলের আওতায় আরও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এ বিলে অতিদরিদ্রদের জন্য বিশেষ থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ বিশাল কর্মযজ্ঞে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯ হাজার কোটি ডলার। উদার ডেমোক্র্যাটরা আমেরিকানদের যে আশা দেখিয়েছেন, সেই আশা পূরণের কাছাকাছি যেতে এ অর্থের পরিমাণ খুব বেশি নয়।

এ বিলে নিম্নতম মজুরি হিসেবে ঘণ্টায় ১৫ ডলার বেঁধে দেওয়ার কথা প্রস্তাব করা হয়েছিল কিন্তু পার্লামেন্টারি রুলিংয়ের কারণে তা বাতিল হয়ে যায়।

পাস হওয়া নতুন এ পুনরুদ্ধার বিলের বিষয়ে রিপাবলিকানরা প্রথম থেকেই বিরোধিতা করে এলেও দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত সাধারণ জনগণের কাছে তা খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে এ আইন বাস্তবায়নে রিপাবলিকান দলের সহযোগিতা দরকার হবে। বাইডেনের জন্য চিন্তার বিষয় হলো এ গুচ্ছ প্রকল্প বাস্তবায়নে রিপাবলিকান নেতারা সহায়তা করার বদলে এসব প্রকল্পের বিভিন্ন নেতিবাচক দিকে জনগণের কাছে তুলে ধরবেন। বিশেষ করে, ধনিকশ্রেণির আমেরিকানরা এ আইনে খুবই নাখোশ হয়েছেন। কারণ, এ প্রকল্পে যেসব সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে, তার খরচ মেটাতে দিন শেষে তাদের ওপরই বাড়তি কর চাপানো হবে। এ ক্ষমতাধর শ্রেণির সহযোগিতা ছাড়াই বাইডেন প্রকল্পগুলো কতটা সহজে বাস্তবায়ন করতে পারবেন, সেটি এখন দেখার বিষয়।

ইংরেজি থেকে অনূদিত, স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট

এলিজাবেথ ড্রু ওয়াশিংটনভিত্তিক সাংবাদিক ও লেখক